কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁচা রসুনের এক কোয়া বদলে দিতে পারে আপনার জীবন-

গৃহস্থ বাড়ির প্রত্যেক রান্নাঘরেই রসুন মজুত থাকে। এটা যে কোনও আমিষ খাবারের স্বাদ দ্বিগুণ করে দেয়। কিন্তু কিছু লোক উপকার পাওয়ার জন্য রসুন কাঁচাই খেয়ে থাকেন। এতে রয়েছে ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন-সি, ফাইবার, প্রোটিন এবং ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি পুষ্টিকর তত্ত্ব। আপনি কি জানেন প্রতিদিন সকালে এক কোয়া রসুন খেলে আপনি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেক উপকার পেতে পারেন। 


স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রসুনের কোয়ার প্রতিটি অংশকে লবঙ্গ বলা হয়। একটি রসুনে প্রায় ১০-২০টি লবঙ্গ থাকে। খালি পেটে হালকা গরম জলের সঙ্গে ১ কোয়া রসুন খেলে উপকার পাওয়া যায়।আর এর উপকারিতার পাশাপাশি মানুষের মুখে স্বাদ আর মুখরোচক মাত্রা যোগ করে দেয় সুস্বাদু রসুনের আচার।

কাঁচা রসুনের উপকারিতা

প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিকঃ রসুনকে বলা হয় প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক। কারণ এর মধ্যে সকল ধরনের রোগ প্রতিরোধী উপাদান থাকে যা কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। সাধারণত রসুনে ভিটামিন, খনিজ উপাদান এবং বিভিন্ন প্রকারের এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এসব উপাদান দেহের বিভিন্ন রোগ সারিয়ে তুলে এবং পুষ্টি উপাদানের অভাব পূরণ করে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করেঃ মানব দেহে দুই ধরনের কোলেস্টেরল পাওয়া যায় যার একটি উপকারী এবং অপরটি অপকারী। অপকারী কোলেস্টেরল এলডিএল দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকারক বিশেষ করে হার্টের জন্য। কারণ এই কোলেস্টেরল হার্টের পেশি দুর্বল করে দেয় এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। তবে নিয়ম করে রসুনের আচার খেলে তাতে থাকা পুষ্টি উপাদান ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে আনে এবং উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।

হার্ট সুরক্ষিত রাখেঃ হার্ট মানব দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর সুরক্ষিত থাকা অনেক জরুরি না হলে শরীর অচল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। রসুনের আচার রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এবং হার্টে সঠিক মাত্রায় রক্ত সঞ্চালন করে। এতে হার্টের মাংসপেশী সতেজ এবং কর্মক্ষম থাকে। যা হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত এবং স্বাভাবিক রাখে। রসুনের আচারে সরিষার তেল থাকে যা রসুনের পুষ্টিগুণের মাত্রা বাড়িয়ে একে আরও বেশি পুষ্টিকর করে তোলে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজন পরে প্রাকৃতিক উপাদানের। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রকারের খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন ও মিনারেল দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সে দিক থেকে রসুনের আচার দেহে সকল ধরনের পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার জন্য একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। তাছাড়া রসুনের আচারের সাথে সরিষার তেল মিশ্রিত থাকায় তা দেহের জন্য প্রয়োজনীয় এন্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করতে সক্ষম হয়।

খনিজের চাহিদা পূরণ করেঃ সরিষার তেল এবং রসুনে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন থাকে। এই সকল উপাদান শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদান সরবরাহ করে। এই কারণে রসুনের আচারকে খনিজ পদার্থের উৎকৃষ্ট সরবরাহকারী বলা হয়।

রুচি বৃদ্ধি করেঃ প্রায় সকল ধরনের আচার মুখরোচক হয় যা রুচি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। কারণ কোন খাবারের কালার, ঘ্রাণ, স্বাদ ও পুষ্টি উপাদানের উপর নির্ভর করে মস্তিষ্ক মুখের রুচি বৃদ্ধি করে। সে দিক থেকে আচারের নাম শুনলেই আমাদের মুখে পানি চলে আসে। সেই আচার যদি আবার হয় রসুনের আচারের মত টক, ঝাল, মিষ্টি তাহলে তো কোনো কথাই নেই।

রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করেঃ রক্ত চলাচল শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সঠিক পদ্ধতিতে রক্ত চলাচল সংঘটিত হলে তা শরীরের মরা কোষ জীবিত করে। যে কারণে অপুষ্টি দূর হয় এবং গঠনগত নানা সমস্যা দূর হয়। অন্যদিকে সঠিক মাত্রায় রক্ত চলাচল হওয়ায় হৃৎপিণ্ড পরিপূর্ণ রক্ত সরবরাহ পায়। যা আমাদের সর্বোপরি শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

হাড় মজবুত করেঃ রসুন এবং সরিষার তেল শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করে। এই উপাদান গুলো হাড়, মাংসপেশি ও অস্থিমজ্জার গঠন ঠিক করে। অন্যদিকে হাড়ের বোন ডেনসিটি নিয়ন্ত্রণ করে এবং সঠিক মাত্রা বজায় রাখে। এতে হাড় শক্তিশালী থাকে এবং হাড়ের ব্যথা নিরাময় হয়।

জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করেঃ জীবনী শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য যে সকল খাবার পাওয়া যায় তাদের মধ্যে রসুন অন্যতম। রসুনের সাথে যখন সরিষার তেল এবং অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে আচার তৈরি করা হয় তখন এর পুষ্টি উপাদান আরও বৃদ্ধি পায়। এই কারণে প্রতিদিন খালি পেতে কাঁচা রসুন খাওয়া সম্ভব না হলেও খাবারের সাথে রসুনের আচার খাওয়া যেতে পারে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ সকল ধরনের আচারের মধ্যেই হজম শক্তি বৃদ্ধি করার ক্ষমতা আছে। কারণ আচার তৈরি করার সময় যে সকল উপাদান এবং মশলা ব্যবহার করা হয় তা হজমের এনজাইম বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। বিশেষ করে টক স্বাদের আচার সব থেকে বেশি হজমে সহায়তা করে। সে দিক বিবেচনা করলে রসুনের আচার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ রসুন একটি প্রাকৃতিক আয়রনের আধার। অর্থাৎ রসুনে প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে যা দেহে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। রক্ত বেশি উৎপাদিত হলে তা ব্লাড সার্কুলেশনে সহায়তা করে এবং মানুষিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। এই কারণে রসুনের আচার রক্ত স্বল্পতার রোগীদের জন্য বেশি বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

রক্তচাপ ও রক্তজমাট বাঁধা কম করেঃ রক্তচাপ কমাতে রসুন খুবই উপকারী কারণ এটি নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং এইচ২এস-এর মতো ভাসোডিলেটিং এজেন্ট উভয়ের উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে। উপরন্তু, এটি ভ্যাসকনস্ট্রিকশন এজেন্ট উৎপাদন হ্রাস করে।

বাত ব্যথা দূর করেঃ যে কোন ধরনের ত্বকের প্রদাহ এবং বাত ব্যথা উপশম করার জন্য সরিষার তেল অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যখন রসুনের আচার খাওয়া হয় তখন সরিষার তেল এবং রসুনের উপাদান গুলো প্রদাহ সহ সকল ধরনের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে।

ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করেঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে রসুন দেহের চর্বি কমাতে কাজ কাজ করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত জমা থাকা ক্যালোরি যা চর্বি বৃদ্ধি করে তা বার্ন করার জন্য রসুনের আচার কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এই কারণে ওজন কমানো থেকে শুরু করে বাড়তি মেদ কমাতে পরিমাণ মত রসুনের আচার খাওয়া যেতে পারে।

হজম শক্তি বাড়ায় এবং অ্যাসিডিটি কমায়ঃ প্রতিদিন ১ কোয়া রসুন খাওয়া গ্যাস্ট্রিক জুসের পিএইচ উন্নত করে এবং হজমের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। পুরনো রসুনের নির্যাস গ্যাস্ট্রিক মিউকোসাল আস্তরণ নিরাময়ে সাহায্য করে। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি অন্ত্রের বিভিন্ন ধরণের পরজীবী এবং মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণকে মেরে ফেলে। রসুনের বায়োঅ্যাকটিভ যৌগগুলি কোলাইটিস, আলসার এবং অন্যান্য গ্যাস্ট্রিক সংক্রান্ত রোগ কমাতে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরল কমায়ঃ কাঁচা রসুনের ঘনত্ব রক্তনালীতে এলডিএল কোলেস্টেরল অক্সিডেশন এবং প্লাক প্রতিরোধ করে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

কিডনি রোগে সহায়কঃ এলিসিন নামের যৌগিক পাওয়া যায় রসুনে। এটা কিডনির শিথিলতা, রক্তচাপ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দূর করতে সাহায্য করে। এটিতে অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং নেফ্রোপ্রোটেক্টিভ প্রভাব রয়েছে

কাঁচা রসুন খাওয়ার নিয়ম 

আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেবাশীষ ঘোষ বলেন সকালে খালি পেটে খেতে হবে এমনটা নয়। বিকেল দুপুর বা রাতেও আপনি খেতে পারেন। পুরো উপকার পেতে হলে খেতে হবে কাঁচা যা আপনাদের আগেও বলা হয়েছে এবং কি খেতে অসুবিধা হলে আপনারা ধোঁনে পাতার সাথে বেঁটেও খেতে পারবেন। নারকেল বা কচু পাতার সাথেও মেশানো জাবে। আপনারা চাইলে এটা সালাট বা আরো অন্যান্য যা কিছুর সাথেও মিশিয়ে খেতে পারবেন।

কাঁচা রসুন খাওয়ার অপকারিতা

গর্ব অবস্থায় রসুন না খাওয়াই ভালো। ডাইরিয়া বোমি বা বুকে জ্বালা পোড়া হলে রসুন না খাওয়াই ভালো। অনেকের রসুনে এলার্জি থাকতে পারে তারা রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url