খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায় কি বিস্তারিত জানুন

খুসখুসে কাশি একটি বিরক্তিকর ও বিব্রতকর অসুখ। একবার কাশি শুরু হলে যেন থামতেই চাই না। আর এটি যদি রাত্রে বেলা হয় তাহলে আরও বেশি বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন। বিরক্তিকর কাশি দূর করা নিয়ে আমাদের আজকের এ আলোচনা।


খুসখুসে কাশি হলে শ্বাস নালিতে জ্বালাপোড়া করে ও পরিষ্কার করার জন্য আমাদের একটি আকৃতি প্রতি ছবি। আমরা যখন কোনো কিছু শ্বাস নেই গলা ও ফুসফুসে জ্বালা করে তখন ওইটাকে বের করার জন্য বা শ্বাস নালি কে পরিষ্কার করার জন্য খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি সূত্রপাত হয়ে থাকে।

কাশি প্রধানত দুই প্রকার

  • উৎপাদনশীল কাসি
  • অ উৎপাদনশীল কাশী

শুষ্ক কাশির কারণ কি?

  • এয়ারওয়ে হাইপার প্রক্রিয়াশীল: এয়ারওয়ে বিভিন্ন ট্টিগারের প্রতি বিভিন্ন প্রক্রিয়া দেখা যায় তার মধ্যে হাপানি একটি বৈশিষ্ট্য
  • G E R D: পেটের এসিড ব্যাকাপের কারনে গলা জ্বালাপোড়া ও কাশি হয়ে থাকে।
  • অনুনাসিক ড্রিপ-পরিবর্ত: সাইনাস থেকে অত্যধি শ্লেষ্মা গলা থেকে নেমে আসে এবং খুসখুসে বিরক্তিকর কাশির সূত্রপাত ঘটায়।
  • ভাইরাস সংক্রামন।
  • সিগারেট এর ধোঁয়া ও ধুলো বালি দূষিত পরিবেশ থেকে খুসখুসে বিরক্তিকর কাশির প্রস্পট হয়ে থাকে।
  • এসিই ইনহিবিটরস: রক্তচাপের এই ঔষধ ও অনেক মানুষ এর কাছে কাশির কারণ হতে পারে।
কম সাধারণ কারণ গুলোর মধ্যে অনেক কিছু রয়েছে যেমন-ফুসফুসের ক্যান্সার হৃদ যন্ত্রের ব্যর্থতা ও হুপিং কাশি।এসব অন্তনির্হিত সমস্যা কার্যকর হলে চিকিৎসা করার জন্য শুকনো কাশির অব্যাহত থাকলে অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে।

খুসখুসে কাশির জন্য ঘরোয়া প্রতিকার 

খুসখুসে বিরক্তিকর কাশির জন্য অসংখ্য ঘরোয়া প্রতিকার হয়েছে। ঘরে বসেই কিভাবে এই খুসখুসে বিরক্তিকর কাশির চিকিৎসা করবে তা এখানে জেনে নিন।

মধু : মধুতে রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক এন্টি মাইক্রোবিয়াল ও ক্ষত নিরাময়ের বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা খুসখুসে কাশি গলা ব্যাথা প্রশমিত করতে সাহায্য করে থাকে।
  • এর পুরু সান্দ্র গঠনের গলার স্ফীত টিসুর একটি প্রতিরক্ষা মূলক আবরণ সৃষ্টি করে থাকে।
  • খুসখুসে কাশি দূর করার জন্য ১ থেকে ২ চামচ কাঁচা অপাস্তরাইজড মধু প্রয়োজন মতো গলার আবরণ ও জালা দূর করে।
  • শিশুর বোটুলিজমেট ঝুঁকির কারণে ১২ মাসের নিচে কম বয়সী শিশুদের মধু না দেওয়ায় ভালো।
উষ্ণ নোনা জল গার্গেল
বাষ্প: শ্বাস নালীর শ্লেষ্মা দূর করতে উষ্ণ, আর্দ্র বাতাস সাহায্য করে । এটি কাশির মাধ্যমে শ্লেষ্মা দূর করে থাকে।
  •  বাষ্প ছাড়াও জ্বালা প্রশমিত।
  • একটি পাত্রে হালকা গরম পানি নিয়ে তা থেকে উপরের দিকে যাওয়া বাষ্প শ্বাসের মাধ্যমে নেওয়ার জন্য একটি তোয়ালে মাথার উপর নিয়ে ভাপ নিতে হবে।
  • একটি শীতল কুয়াশার হিউমিডিফায়ার বাতাসের আর্দ্রতাকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • বর্ধিত আদ্রতা শুষ্ক এয়ারওয়ে প্যাসেজগুলি হাইড্রেট করে এবং প্রশমিত করতে সাহায্য করে থাকে।
আদা: আদার মধ্যে রয়েছে জিঞ্জেরল নামক যোগ পদার্থ যা শ্বাস নালী পেশীর শীথিক করতে পরিচিত। এটি কাশির সময় খুব সহজে শ্লেষ্মা করতে সাহায্য করে।
  • আদার তাজা গ্রেট করা শিকর হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে একটা মসলাদার আদা চা তৈরি করুন এবং খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার জন্য অন্যান্য ভেষজ চায়ের মিশ্রণে আদা যুক্ত করুন।
  • আদায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি গলা ফোলা এবং অস্বস্তি ভাব কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকে।

টাইম: থাইমে থাইমল একটি সক্রিয় যোগ পদার্থ রয়েছে, যা গলার পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে থাকে। 
  • এটি antispasmodic কাজ করে কাশি ফিট করতে সাহায্য করে।
  • খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার জন্য থাইম ব্যবহার, ৩ থেকে ৪ চামচ শুকনো থাইম পাতা ও গুঁড়ো ফুটন্ত পানিতে ৮ থেকে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে থাইম চা তৈরি করতে হবে।
  • থাইম চা খেলে অনেক সময় কাশির জন্য ব্যবহার করলে মৃদু স্বস্তি পাওয়া যায়।
  • থাইম পরিমাণ মত ব্যবহার করতে হবে,অতিরিক্ত থাইম ব্যবহার এর ফলে পেটে সমস্যা দেখা যায়।
মার্সম্যালো রুট: মার্সম্যালো রুটে মিউকলেজ থাকে ও এটি একটি জেলের মত পদার্থ যা গলায় স্ফীত ঝিল্লির উপর একটি প্রশান্তি দায়ক প্রতিরক্ষা মূলক আবরন তৈরি করে থাকে।যা গলায় ব্যাথা ও খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • এটি খুসখুসে শুকনো কাশি থেকে জ্বালা কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকে।
  • এটি গলার পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে এবং গলা ব্যাতা থেকে মুক্তি দেই। মার্সম্যালো রুট চা এবং কাশির ড্রপ ও লজেন্স আকারে পাওয়া যায়।
  • মিউকিলেজ গলার উপর একটি ফিল্ম তৈরি করে এবং গলার মূলে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে ও গলার পেশি শিথিল রাখে।
মেন্থল: মেন্থল একম একটা প্রক্রিয়া যা গলায় ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে ও গলা শীতল করে।পিপারমেন্ট এ মেন্থল থাকে যা গলার অসার স্নায়ু কমাতে সাহায্য করে এবং যেটাতে কাশি শুরু হয় ওইটাকে শেষ করে।
  •  মেন্থল গলা ব্যাথার জন্য ব্যাথা উপশম প্রদান করে এবং কাশির ঝুকি কমায়।
  •  মেন্থল শ্লেষ্মা নিঃসরনকে পাতলা করে থাকে এবং ডিকনজেস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করে থাকে।
  •  খুসখুসে বিরক্তিকর কাশির জন্য তাজা বা শুকনো পাতা থেকে মেন্থল চা তৈরি করে পান করুন, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে, রাতের কাশি ফিট হওয়ার প্রতিরোধ করে থাকে।

হলুদ: হলুদে রয়েছে কারকিউমিন, এ রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি যা এন্টিভাইরাস বা এন্টিবায়োটিকেলের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি খুশখুশে বিরক্তকর কাশি প্রশমিত করতে সাহায্য করে থাকে।

  • কালো মরিচ এর সাথে মিশিয়ে হলে কার্কিউমিন প্রধানত শোষিত হয়ে থাকে।
  • এক চামচ হলুদ গুঁড়ো এবং ১/৮ চামচ কালো মরিচ ঠান্ডা কমলার রস বা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন।
  • ব্রঙ্কাইটিস,হাপানি এবং কাশির মত উপরের শ্বাসযন্ত্রের অবস্থান চিকিৎসার জন অনেক বছর ধরে আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে হলুদ ব্যবহার হয়।
  • হলুদের প্রভাব শ্বাসনালীতে ফোলাভাব কমাতে অনেক সাহায্য করে।
  • হলুদ খুশখুশে কাশিট জন্য মশলা ও ক্যাপশুল আকারে পাওয়া যায়।

মসলা চা: বাংলাদেশে মশলা চা সুস্বাদু সাধের জন্য অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

  • বাংলাদেশে ( চা ) ঐতিহাসিকভাবে গলা ব্যথা ও খুসখুসে কাশির জন্য চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।
  • এত লবঙ্গ,এলাচ,ও দারচিনির মত মসলা থেকে অক্সিডেন্ট থাকে
  • লবঙ্গ একটি কফ কারে হিসাবে কাজ করতে পারে, যা শ্লেষ্মা নিঃসরণকে পাতলা করে থাকে।
  • দাতচিনিতে প্রদাহ - বিরোধীর বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা গলা ব্যাথা ও শ্বাসনালীর ফোলা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
  •  এভাবেই এটি একটি চিকিৎসা সংবেদন প্রদান কারী হিসেবে কাজ করে থাকে।

উক্যালিপটাস অ্যারোমাথেরাপি: উক্যালিপটাস এসেনশিয়াল তেল অ্যারোমা থেরাপি তা ব্যবহার করতে হয়।এটা ব্যবহার করলে ফুসফুসের কাশি কমাতে সাহায্য করে।

  • ডিকনজেস্ট্যান্টের মধ্যে যে উপাদান গুলো পাওয়া যায় সেগুলো শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
  • ইউক্যালিপটাস অয়েল সহ একটি ডিফিউজার, স্প্রিটজার ও ইনহেলার ব্যবহার করতে হবে এবং কি ধোঁয়া শ্বাস নিন।
  • তাছাড়া হালকা গরম পানিতে ২ থেকে ৩ ফোটা রেখে ভাব নিন।
  • এরপর আপনি বাষ্প গুলো শুঁকে নিতে পারবেন কারণ এটি আপনার শ্বাসনালী গুলোকে খুলতে সাহায্য করে এবং আপনাকে ভালো মত শ্বাস নিতে অনুমতি দিবে।
  • রাতে খুসখুসে কাশি যদি বিরক্তকর হয়ে যায় তাহলে আপনার ঘুম বাড়ানোর জন্য বিচ্ছুরিত ইউক্যালিপটাস ব্যবহার করা জাবে।

পিচ্ছিল ইউরোপের একধরনের বৃক্ষ: পিচ্ছিল এমন একটি গাছ যার ছালের ভিতরে মিউলিলেজ থাকে যেটা মার্সম্যালো মূলের মত।

  • এটা পানির সাথে মিশালে, এটি জেলের মত পদার্থ তৈরি করে যা প্রলেপ দেই এবং গলা কে রক্ষা করে থাকে।
  • শ্লেষ্মা নিঃসরণকে পাতলা করতেও সাহায্য করে পিচ্ছিল এলম।
  •  এটি ব্যবহার করার জন, চা তৈরি করে নিতে হবে এবং হালকা গরম পানিতে খাঁড়া গুঁড়ো করে দিতে হবে পিচ্ছিল এলম এর ছাল।
  • এতে করে খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি প্রসমিত করতে প্রতিদিন কয়েক কাপ পান করতে হবে।

লিকোসির রুট: Glycyrrhizin,এটা একটি বিরোধী প্রদাহ পদার্থ, লিকোসির রুট এর অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে।
  • লিকোসির রুট কাশি ও গলার ব্যাথা ও এবং ফোকা কমাতে সাহায্য করে থাকে।
  • লিকোসির রুট এর শিকার ও মূলের নির্যাস ব্যবহার করে লিকোসির রুট এর চা পান করে নিতে পারেন।
  • মদ্যপান ও ধুমপান সেবন করা থেকে এড়িয়ে চলতে হবে, এটি অনেক দিন ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপের মত আরো অনেক কিছু হতে পারে।

উপসংহার

খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি অনেক সময় খিটখিটে হতে থাকে। অনেক সময় ঘোরয়া পদ্ধতিতে প্রতিকার করা যায় যেমন, মধু,বাষ্প, ও প্রশান্তিদায়ক ভেষজ ব্যবহারের ফলে কাশি ও গলা ব্যাথা দূর করা যায়। অনেক সময় কিছু কিছু ওভার- দ্যা কাউন্টার ( OTC) খুসখুসে কাসি বা গলা ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে থাকে।

এরপরেও যদি আপনার খুসখুসে বিরক্ত কর খাসি দূর না হয় এবং আপনি উপসর্গে ভুলে গিয়ে থাকেন তাহলে সবসময় একজন ভালো ডাক্তার এর পরমর্শ নিতে হবে। এবং প্রথমিক কারণে সম্বোধন করা এবং চিকিৎসা করতে হবে। কেন না হাঁপানি, GERD এবং কি আরো গুরুতর কিছু হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী সুস্থ কাশি উপশম হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য: আমরা আপনাদের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করে থাকি। এতে যদি আপনাদের একটুও উপকার হয় তাহলে এটা আপনাদের বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে দিন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url