দুধে হলুদ মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
এক গ্লাস হলুদ মিশ্রিত দুধ শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। হলুদ শুধু তরকারির স্বাদই বাড়ায় না। হলুদ স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। দুধের সাথে হলুদ মেশালে হলুদের গুনাগুন বেড়ে যায় বহুগুণ। প্রাচীনকাল থেকেই হলুদ মিশ্রিত দুধ নানান রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদের অ্যান্টিসেপটিক এবং এসটিজেন উপাদান দুধের সঙ্গে মিলে শরীরের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
হলুদের আন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান দুধের সঙ্গে মিশে প্রাকৃতিক অ্যাসপিরিনের কাজ করে। যা মাথাব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকরী।
দুধে হলুদ মিশিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
হাড় মজবুত করে: একজন মানুষকে সুস্থ সবল ও শক্তিশালী থাকার জন্য তার হাড়ের গঠন শক্ত হওয়া প্রয়োজন। মানুষের শরীরের হাড়ই শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সুরক্ষিত ভাবে ধরে রাখে। আর বাইরের আঘাত থেকে সেগুলোকে রক্ষা করে।
স্বাভাবিকভাবে মানুষের বয়স যখন ৩০ এর অধিক হয়ে যায় তখন হাড় ক্ষয় হতে থাকে। যারা নিয়মিত দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খায় তাদের হাড় মজবুত থাকবে এবং ৩০ এর বেশি বয়স হলেও হাড় ক্ষয় হবেনা।
মাসিকের ব্যথাও অনিয়মিত মাসিক সমস্যা দূর করে: অনেকেই থাকে যাদের মাসিকের প্রথম দিকে তল পেটে ব্যথা করে। নিয়মিত দুধ হলুদ খেলে মাসিকের কারণে হওয়ায় তলপেটের ব্যথা দূর হয়। আর অনেকে থাকে যাদের মাসিক অনিয়মিত।
দীর্ঘ একটানা কয়েক মাস মাসিক বন্ধ থাকে। আবার কোন মাসে ২-৩ বার মাসিক হয়ে থাকে। এই অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা দূর করে দুধ হলুদ। এবং প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নত করে।
ডায়াবেটিস ভালো করে: এক গ্লাস দুধের সাথে হাফ চামচ হলুদ মিশিয়ে ফুটিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করা যায়। এমনকি ডায়াবেটিস যদি প্রথম স্টেজের দিকে হয় তাহলে ডায়াবেটিস সম্পূর্ণরূপে নির্মূলও করা যায়।
অনেকেই ধারণা করে যে, ডায়াবেটিস সম্পূর্ণরূপে ভালো করা সম্ভব নয়। কিন্তু এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি ওষুধ খেয়ে ডায়াবেটিস গোড়া থেকে নির্মূল করা সম্ভব।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে: দুধ খেলে ত্বকের উজ্জ্বলা বাড়ে। আর হলুদ মিশ্রিত দুধ খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা আরও বেশি বাড়ে এবং ত্বকের নানা ধরনের সমস্যা যেমন: পিম্পল, রাসেস দূর করে। অনেকে আছে যাদের ত্বকে দূর হতে চান নানা ধরনের পদ্ধতি করার পরেও ব্রণ দূর করতে ব্যর্থ।
তাদের জন্য দুধ হলুদ উপকারী। নিয়মিত দুধ হলুদ খেলে ব্রণের সমস্যা ত্বকের ভেতর থেকে দূর করে এবং ত্বকের উপরের ব্রণের কারণে হওয়া দাগও দূর করে। আর হলুদ এমনিতেই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য এবং ত্বকের নানা সমস্যা দূর করার জন্য উপকারী।
দুধ হলুদ ত্বকের অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এক মাস হলুদ মিশ্রিত দুধ খেলে ত্বকে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। ভেতর থেকে ত্বক আরো বেশি উজ্জ্বল, পরিষ্কার ও সুন্দর হয়। ত্বক বেশি গ্লোয়িং হয়। বয়সের কারণে ত্বক কুচকে যায়। এই কুঁচকে যাওয়ার সমস্যাও দূর করে। ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর করে। ত্বকের তারুন্য ধরে রাখে।
গিরার ব্যথা ও শরীর ফুলে যাওয়ার সমস্যা দূর করে: অনেকেই থাকে যাদের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে (কনুই, হাটু, মাজা ইত্যাদি ) ব্যথা করে। এসব ব্যথার কারণ হচ্ছে হাড় ক্ষয় বা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি। নিয়মিত যদি দুধ হলুদ খাওয়া যায় তাহলে বাতের ব্যথা, কোমর ব্যথা সহ বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা কমে যায়। এমনকি নিয়মিত দুধ হলুদ খেলে জয়েন্টের ব্যথা সম্পূর্ণ ভালো করাও সম্ভব হয়।
সর্দি-কাশির সমস্যা দূর করে: আমাদের দাদি, নানিরা সর্দি কাশি হলে দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতে। কিন্তু আমরা সেই পদ্ধতি অনুসরণ না করে সর্দি কাশি হলেই ওষুধ খুঁজি। হলুদ হলো অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি প্রপার্টিজ যুক্ত।
তাই সর্দি কাশি হলেই সবার আগে আমাদের কাজে আসে এই হলুদ দুধ। সর্দি কাশি হলেই আমাদের ওষুধ খাওয়া উচিত নয় যতক্ষণ না তা উচ্চতর পর্যায়ে যায়। এখনকার মানুষের শরীরের ইমিউনিটি এতটাই কমে গেছে যে সাধারণ ফ্লু অর্থাৎ সর্দি কাশি ও সহ্য করতে পারছেনা।
আর জ্বর ঠান্ডা মাথা ব্যথা লেগেই থাকে। কারণ তারা খাবারই ঠিক মতো খায় না। মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে খাবার খাওয়ার মধ্যে অনিয়ম। শরীরের যেরম ইমিউনিটির প্রয়োজন সেরম খাদ্য খেলে কোন মানুষ অসুস্থ হবার সম্ভাবনা কম থাকে। নিয়মিত দুধ হলুদ খেলে জ্বর, ঠান্ডা, মাথা ব্যথা হয় না।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়: প্রতিদিন নিয়মিত দুধ হলুদ খাওয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
মেজাজ ভালো রাখে: দুধ হলুদ মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা কারকিউমিন , নিউরোটাক্সিন ফ্যাক্টরের মাত্রা বাড়িয়ে বিষন্নতার মাত্রা হ্রাস করে।
হৃদপিণ্ড ভালো রাখে: হৃদপিণ্ড ভালো রাখা এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় দুধ হলুদ। দুধ হলুদ পরিষ্কার করার মাধ্যমে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে এরফলেহৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে: হলুদে রয়েছে কারকিউমিন। আর কারকিউমিন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষকে ধ্বংস করে। এমনকি ক্যান্সার যদি প্রথম স্টেজে থাকে তাহলে নিয়মিত হলুদ দুধ খাওয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে ভালো করা সম্ভব।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার কারণে ঘনঘন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তারা হলুদ মিশ্রিত দুধ নিয়মিত পান করলে তাদের শরীরের ইমিউনিটি বাড়বে অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ঘন ঘন অসুস্থও হবে না। অল্পতে ক্লান্ত হবেনা শরীর হবে সুস্থ সবল ও সতেজ।
কোষের ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে: দুধ হলুদে রয়েছে আন্টি অক্সিডেন্টউপাদান। এই আন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান কোষকে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে।
ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে: প্রতিনিয়ত চারপাশে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেই থাকে। দুর্ঘটনার কারণে হওয়া শরীরের ক্ষত শুকানোর কাজেও দুধ হলুদ উপকারী। দুধ হলুদ খেলে অতি দ্রুত ক্ষত শুকিয়ে যায়। দুধ হলুদ মূলত ক্ষতস্থানে এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
স্ট্রেস বা টেনশন দূর করে: এই হলুদ মিশ্রিত দুধ টেনশন কমাতেও সাহায্য করে। কটিশল নামক হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায় টেনশন করলে। হলুদ দুধ এই হরমোনের পরিমাণকে কমায়। নিয়মিত হলুদ দুধ খেলে টেনশন বা চিন্তা করতে চাইলেও চিন্তা আসবেনা।
ঘুমের সমস্যা দূর করে: অনেকে আছে যারা রাতে ঘুমোতে পারে না ঘুমের সমস্যা হয়। দুধে রয়েছে স্যারটনিন ও মেলাটনিন যা হলুদের বিভিন্ন পুস্টি উপাদানের সাথে মিশে ঘুমে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে হলুদ মিশ্রিত দুধ খেয়ে ঘুমালে ঘুম হবে গভীর ও শান্তিময়।
হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে: রাতে ঘুমানোর পূর্বে হলুদ মিশ্রিত দুধ খেয়ে ঘুমালে সকালে পেট পরিষ্কার হবে খুব ভালো ভাবে। গ্যাস, পেট ফোলা, ফাঁপা, ডায়রিয়া, পেটের আলসার ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে দুধ হলুদ সাহায্য করে।
শরীরের এক্সট্রা ফ্যাট দূর করে: শরীরের ওজন কমায়। শরীরের বাড়তি ফ্যাট বা মেদ কমাতে সাহায্য করো এই হলুদ দুধ। মেটাপলিজম ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে রাখে। আগের মানুষের শরীর ছিল আমাদের চেয়ে ভালো তাদের শরীরে কোন ধরনের মেদ ছিল না, তারা ছিল সুস্থ সবল। নির্মল কারণ হলো তাদের সকলের ঘরে ঘরে ছিল দুধ। তাদের খাবার ছিল নিয়ন্ত্রিত।
শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে: হলুদ মিশ্রিত দুধ খেলে শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়। শরীর থেকে খারাপ টক্সিন বের হয়ে যায়। একই সাথে দুধ হলুদ রক্তনালী পরিষ্কার করে। রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
দুধ হলুদ খাওয়ার নিয়ম
কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। খাওয়ার একটা নিয়ম এবং পদ্ধতি অনুসরণ করলে সে খাবারের পুষ্টি গুন সম্পন্নরূপে পাওয়া যায় এবং সেটা শরীরের জন্য হয় উপকারী। দুধ হলুদ খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি হলো প্রথমে এক গ্লাস দুধ গরম করে নিতে হবে। এরপরে দুধটা হালকা ঠান্ডা হওয়ার পর হলুদ মিশ্রিত করে নিতে হবে।
হলুদ যদি গুড়া হয় তাহলে এক গ্লাস দুধের মধ্যে এক চামচ হলুদ দিতে হবে। আর হলুদ যদি কাঁচা হয় তাহলে সেটা বেটে নিতে হবে। এক গ্লাস দুধের মধ্যে কাঁচা হলুদের পরিমাণ হবে ২৫০ থেকে ৫০০ মিলিগ্রাম। এখানে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করা অধিক স্বাস্থ্যসম্মত এবং উপকারী।
কাঁচা হলুদের পরিমাণ যদি বেশি হয়ে যায় তাহলে খাওয়ার কারণে উপকারের পরিবর্তে অপকার লক্ষ্য করা যায় অর্থাৎ শরীরের ক্ষতি হতে পারে। তাই দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশানোর পূর্বে সেটা মেপে নিতে হবে। দুধ হলুদ সকালে, বিকেলে অথবা রাতে খাওয়া যেতে পারে।
যেহেতু দুধ হলুদ আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। আমাদের খাদ্য তালিকায় দুধ হলুদ রাখা উচিত।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url