ইসলামের দৃষ্টিতে চুপ থাকার উপকারিতা ও গুনা-গুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
চুপ থাকার উপকারিতা
কুফর, মিথ্যা, গীবত, ঝগড়াঝাঁটি, চোগলখোরী, গালি, অশ্লীল কথাবার্তা ইত্যাদি গোনাহ জিহ্বা দ্বারা হয়ে থাকে। এসব পাপ থেকে মুক্তির সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে চুপ থাকা বা অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা। চুপ থাকা হচ্ছে পরিশ্রমহীন একটি ইবাদত। মানুষ যখন রেগে থাকে তখন তার বিবেক কাজ করে না সে অবস্থায় কথা বলার থেকে চুপ থাকা উত্তম। এর মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি পাওয়া যায়।
ইসলামের দৃষ্টিতে চুপ থাকার উপকারিতা
মানুষ বেশি জিব্বা ও লজ্জাস্থান এই দুই অঙ্গের দ্বারা পাপে জড়িয়ে থাকে। তাই পাপ থেকে বাঁচতে হলে জিব্বা ও লজ্জাস্থান এই দুই অঙ্গের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। যে ব্যক্তি এই দুই অঙ্গের যথাযথ ব্যবহার করার ও নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্ব নিবে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জান্নাতে প্রবেশের দ্বায়িত্ব নিবেন। কারণ এই দুই অঙ্গের দাঁড়ায় মানুষ অসংখ্য গুনাহে লিপ্ত হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দু’চোয়ালের মাঝখানের (জিহ্বা) এবং তার দু পায়ের মাঝখানের (লজ্জাস্থান) অঙ্গের জামানত দিবে আমি তার জন্য বেহেস্তের জামানত দিবো। ( বুখারি, হাদিস, ৬৪৭৪)
মানুষ ইবাদতের প্রতি যতটা গুরুত্ব দেয় ও সচেতন থাকে, ততটা সচেতন যদি পাপ থেকে বাঁচার জন্য থাকতো, তাহলে মানুষের জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথ আরও সহজ হতো। পরকালে মুক্তির জন্য নফল ইবাদত পালনের চেয়ে পাপ থেকে বাঁচা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর চুপ থাকার মাধ্যমে মানুষ অনেক পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
হাদিসে হজরত মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেছেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমান, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, সদকা, তাহাজ্জুদ ও জিহাদের আলোচনার পর বললেন, আমি কি তোমাদের এই ইবাদতগুলোর ভিত্তি বা উৎস সম্পর্কে বলবো?
মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু বলেন, হে রাসূলুল্লাহ! অবশ্যই বলুন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জিহ্বা ধরে বললেন, এ জিহ্বাকে সংযত রাখো। (তিরমিজি)
চুপ থাকলে ও নিজের জিব্বাকে সংযত রাখলে মানুষ অনেক পাপ করা থেকে বেঁচে যায়। মানুষ পাপ থেকে যত দূরে থাকে মানুষের মানে তত আত্মিক শক্তি জাগে এবং নুর তৈরি হয়। আর ইবাদত করার জন্য মানুষের মনে আগ্রহ জন্মে। অনেক সময় মানুষ এমন কথা বলে থাকে যার কারণে ফিতনা ফাসাদের সৃষ্টি হয়। ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেনা। তাই আমাদের নিজের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ব্যবহার করা উচিত।
এ সম্পর্কে আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, প্রত্যেক দিন সকালে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিহ্বাকে অনুরোধ করে যে, আপনি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। আপনি সহজ সরল পথে থাকলে আমরাও সহজ সরল পথে থাকবো। আপন পথভ্রষ্ট হলে আমরাও পথভ্রষ্ঠ হবো। (তিরমিজি)
প্রয়োজনীয় কোন কথা বলা থেকে বিরত থাকা বা চুপ থাকাও একটা ইবাদত যার ৬০ বছরের নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ সম্পর্কে "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চুপচাপ ও নীরব থাকলে মানুষের এমন মর্যাদা লাভ হয় যা ৬০ বছরের ইবাদতের থেকেও উত্তম। (বায়হাকী) "
চুপ থাকার কারণে মানুষ অনেক ধরনের পাপ থেকে বিরত থাকে। মূল কথা শয়তানের প্রতারণা থেকে বিরত থাকতে পারে। এতে মানুষের আত্মশুদ্ধি ঘটে। মনের মাঝে দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা জন্মে। এতে আল্লাহর ইবাদত করা বান্দর জন্য সহজ হয়।
রাসূলুল্লাহ (সা:) হজরত আবু গিফারি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলেছেন, তুমি চুপ থাকো, কেননা নিরবতা শয়তানকে দূরীভূত করে এবং দ্বীনের কাজে বিশেষ সহায়ক হয়। (বায়হাকী)
মানুষের মুখের কথা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ কথা বলতে বলতে অনেক সময় নিজের অজান্তেই এমন কথা বলে ফেলে যার কারণে আল্লাহর নারাজ হয়ে যায়। এর সম্পর্কে "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরেক হাদিসে বলেছেন, মানুষ নিজের অজান্তে অনেক সময় এমন কথা বলে ফেলে যার ওপর আল্লাহ তায়ালা চিরদিনের জন্য নারাজ হয়ে যান। (শরহুসসুন্নাহ)"
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে চুপ থাকার উপকারিতা
অনিদ্রা দূর হয়: দিনের যদি কয়েক মিনিট মেডিটেশন করা যায় তাহলে মানুষ অনিদ্রা জনিত সমস্যা দূর হয়। শরীরের ক্লান্তি দূর করে এবং শরীর ও মন তরতাজা হয়ে ওঠে।
রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে: নীরবতা রক্তচাপের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। যাদের রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা যদি দিনের কোন এক সময় নীরব সময় কাটায় তাহলে তাদের রক্তচাপের সমস্যা দূর হয়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে শুরু করে।
হার্ট ভালো থাকে: হার্ট ভালো থাকে মূলত রক্তের চাপ স্বাভাবিক থাকলে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে দিনের কিছুটা সময় শান্ত পরিবেশে কাটানো উপকারী ভূমিকা পালন করে। রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে গেলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় এবং হার্ট ভালো থাকে।
মানসিক চাপ কমে: অতিরিক্ত শব্দ মানুষের মস্তিষ্ককে বিচলিত করে। এর প্রভাব সম্পূর্ণ শরীরের উপর পড়ে। নিঃশব্দতা মানুষের মস্তিষ্ককে শান্তি দেই। মানুষ যখন অতিরিক্ত চিন্তার মধ্যে থাকে তখন কোন নির্জন জায়গায় গিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিলে মানুষের মন হালকা হয়, মানসিক চাপ কমে।
মনোযোগ বাড়ে: মানুষ যত বেশি নিঃশব্দ থাকে তার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা তত বেশি বাড়ে। আর মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়লে মনোযোগও বাড়ে। এর ফলে মানুষ যে কোন কাজে মনোযোগী হতে পারে এবং সফল হয় অতি দ্রুত। দিনের শুরুতে কিছুক্ষণ চুপ থাকলে কর্মক্ষমতা বেড়ে যায় বহুগুণ।
জিহ্বা সংযত রাখার মাধ্যমে আমরা অনেক রকমের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারি সে সাথে আমাদের শরীরেরও অনেক উপকার হয়ে থাকে সুতরাং আমাদের সকলের উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ও পরকালে মুক্তির জন্য এবং শরীরকে সুস্থ ও তরতাজা রাখার জন্য অপ্রয়োজনীয় কোন কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থেকে নিজের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ব্যবহার করা।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url