ওমরাহ করার নিয়ম ও কুরবানীর তাৎপর্য বিস্তারিত জেনে নিন

ওমরাহ করার নিয়ম

ওমরাহ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো ভ্রমণ করা, কোন স্থানে জিয়ারত করা। হজের নির্দিষ্ট দিনগুলো তথা আট যিলহজ থেকে ১৩ যিলহজ পর্যন্ত ছয় দিন ব্যতীত বছরের যে কোন সময় ইসলামের শরীয়ত নির্ধারিত পর্যায়ে কাবা শরীফ তাওয়াফ ও সাফা মারওয়ার সাঈ করাকে ওমরাহ বলে।


ওমরাহ এর ফরজ দুইটি যথা:
  1. ইহরাম বাধা 
  2. বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করা।
ওমরাহ এর ওয়াজিব দুটি। 
যথা
  1. সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করা.
  2. মাথা মুন্ডান অবস্থায় চুল ছাটা।

ওমরাহ এর সুন্নত সমূহ

  1. ইহরামের আগে গোসল করা।গোসল সম্ভব না হলে ওযু করলেও চলবে।
  2. একটি চাদর ও একটি সেলাই বিহীন লুঙ্গিতে ইহরাম বাধা।
  3. উচুস্বরে তালবিয়া পাঠ করা।
  4. তাওয়াফের সময় ইজতিবা করা। ইজতিবা হল ডান বগলের নিচে দিয়ে চাদর পেঁচিয়ে বাম কাঁধের উপর রাখা।
  5. সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা
ইহরাম বাধার পূর্বে গোফ,চুল ও নখ কেটে গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ইহরামের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। গোসল সম্ভব না হলে ওযু করে নিলেও যথেষ্ট হবে। অতঃপর আতর বা সুগন্ধি থাকলে ব্যবহার করতে হবে। তবে সেন্ট ব্যবহার করা যাবে না।

এরপর মিকাত থেকে ওমরাহ এর নিয়তে ইহরাম বাঁধতে হবে। সেলাই বিহীন দুটি কাপড় এবং চাদর ও লুঙ্গির মতো পরিধান করতে হবে। এই কাপড়ের রং সাদা হওয়া উত্তম। ইয়োরামের কাপড় পরিধানের পর দুই রাকাত সালাত আদায় করে ওমরাহ এর নিয়ত করার সঙ্গে সঙ্গে তালবিয়া পাঠ করতে হবে। পুরুষ বোন জোরে জোরে আর নারীরা আস্তে আস্তে তালবিয়া পড়তে হয়। 

এরপর কাবা শরীফ সাতবার তাওয়াফ করতে হবে। হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করে আবার হাযরে আসওয়াদ নিকট গিয়ে তাওয়াফ শেষ করতে হবে। এভাবে সাতবার চক্কর দিতে হবে। সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে হবে। আর সম্ভব না হলে ইশারা করে হাতে চুম্বন করলেও যথেষ্ট হবে। 

তাওয়াব শেষে মাকামে ইব্রাহিমে বা এর পিছনে বরাবর কিছু দূরে এখানে সম্ভব না হলে মসজিদের হারামের যেকোন স্থানে দুই রাকাত তাওয়াফের সালাত আদায় করে নিতে হবে। অতঃপর কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তিন চুমুকে জমজমের পানি পান করতে হবে।

অতঃপর সাতবার সাফা মারওয়ার মাঝে সাঈ বা দৌড়াতে হবে। সাফা মারওয়া মাঝ পথে দুই সবুজ চিহ্নের মধ্যবর্তী স্থানে পুরুষদের জোরে দৌড়াতে হবে। সাঈর জন্য নির্ধারিত কোন দোয়া নেই।

সাঈ সমাপ্ত হলে মাথামন্টন বা মাথা চুল ছোট করে ছেটে নিতে হবে। এভাবেই ওমরা সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং ইহরামের পর যা হারাম ছিল এখন দা হালাল হয়ে যাবে।

ওমরাহ এর ফযিলত

সক্ষম হলে সারা জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নত মুয়াক্কাদা। আর সুন্নতে মুয়াক্কাদা হলো ওই সকল যা মহানবী সাঃ নিজের সর্বদা পালন করতেন এবং অন্যদের তা পালন করতে তাগিদ দিতেন। এটা যখনই করা হোক তার জন্য প্রতিদান ও বরকত রয়েছে। তবে রমজান মাসে উমরাহ করা ফযিলত বেশি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, নিশ্চয়ই রমজান মাসের ওমরাহ একটি হজের সমান। 

ওমরাহ পালন করলে মহান আল্লাহর হুকুম পালন করা হয়। আল্লাহতালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরাহ পরিপূর্ণ পালন করো।

ওমরাহ বান্দার গোনা সমূহ মোচন করে দেয়। দারিদ্রতা দূর করে জীবনে সচ্ছলতা আনয়ন করে। মনে সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেছেন, তোমরা হজ ও ওমরাহ আদায় কর। কেননা হজ ও ওমরাহ দারিদ্র্য বিমোচন করে ও গুনাহ দূর করে দেয় ঠিক সেভাবে যেভাবে হাঁ পরে আগুন লোহা সোনা রুপা থেকে ময়লা দূর করে দেয়।

তিনি আরো বলেন, এক ওমরাহ থেকে পরবর্তী ওমরাহ এর মধ্যবর্তী সময়ের সংগঠিত সগিরা গুনাহ জন্য কাফফারাদ বা প্রায়শ্চিত করে।

ওমরাহ এর ফযিলত ইবাদাত। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জীবনে অন্তত একবার ওমরাহ পালন করা উচিত। মহানবী সাঃ জীবনে চারবার ওমরাহ পালন করেছেন। সুতরাং আমরা ওমরাহ পালনের নিয়ম-কানুন আর ভালোভাবে জানবো এবং যখনই সামর্থ্য হবে তা আদায় করব।

কোরবানি

কোরবানি আরবি শব্দ উদহিয়্যাহ।এর অভিধানিক অর্থত্যাগ, উৎসর্গ এবং নিবেদন করাই ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় যিলহজের মাসের ১০ তারিখ সকাল শুরু থেকে শুরু করে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পূর্ব পর্যন্ত মহান আল্লাহ সন্তুষ্টি ও তার নৈকট অর্জনের জন্য পশু জবাই করার নাম কোরবানি।

মহান আল্লাহতালা পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতদেরকেও বিভিন্ন সময় কোরবানি করার আদেশ দিয়েছেন। তবে বর্তমানে প্রচলিত কোরবানি মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আলাই সালাম এর সময় থেকে শুরু হয়েছে। এ কোরবানির সঙ্গে জড়িত রয়েছে আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাসার খাতিরে ইব্রাহিম আলাই সালাম এর সুমহান ত্যাগের অন্যান্য ইতিহাস।

এটি ছিল মহান আল্লাহতালার কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি ঘটনা। কিয়ামত পর্যন্ত তার এই স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং মহান আল্লাহ ভালবাসার ত্যাগের মহিমায় উদ্দীপ্ত হওয়ার বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে মুসলিম জাতির সামনে আসে ইসলামের এ পর্বটি।এর মাধ্যমে প্রিয় বস্তু আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে তার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।

কোরবানি হচ্ছে সকল ব্যাপারে নিজেকে আল্লাহর কাছে নিবেদন ও সৌপথ্য করার একটি প্রতীকী ইবাদত। মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন

قل صلاتي ونسكي ومحياتي ومماتي في سبيل الله رب العالمين والزمان

অর্থ :বলুন আমার সালাত আমার কোরবানি আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎ সময়ের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে।(সূরা আল আনআম আয়াত ১৬২)

কোরবানির পটভূমি

আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম আলাই সালামকে বহুবার বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন। সকল পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হন। একবার তিনি এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হলেন। এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেন আল্লাহ তাআলা তাকে পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করতে ইঙ্গিত আদেশ করেছেন। তিনি আল্লাহর নবী। নবীগণের স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী। 

বৃদ্ধ বয়সে একমাত্র সন্তানের ভালোবাসার ওপর আল্লাহর ভালবাসা তার কাছে আধিক প্রাধান্য পায়। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আল্লাহ যাতে খুশি হোন তাকে তাই করতে হবে। তিনি আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়নের দীপ্তি হলেন। এ ঘটনাটি কুরআন মাজিদে এভাবে বর্ণিত আছে,

فلما بلغ العمل مع أبيه قال إبراهيم على سلام: يا بني رأيت في المنام أني أذبحك. الآن أخبرني ما رأيك؟ الذي قال يا أبت افعل كما تؤمر. وإن شاء الله تجدني صابرا.

অর্থ : অতঃপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করার মতো বয়সে উপনীত হলো তখন ইব্রাহিম আলাই সালাম বললেন, বৎস আমি স্বপ্নে দেখি যে তোমাকে আমি জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি বলো? কে বলল হে আমার পিতা আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। (সূরা আস- সাফফাত আয়াত ১০২)

সন্তানের এ তাকওয়াপূর্ণ উত্তর পেয়ে ইব্রাহিম আলাই সালাম খুশি হলেন। শেষ পর্যন্ত ইব্রাহিম আলাই সালাম পুত্রকে কোরবানির জন্য উপর করে শুয়ে দিলেন। আল্লাহতালা এবারের পরীক্ষাতেও ইব্রাহিম আলাই সালাম উত্তীর্ণ হলেন। তখন আল্লাহতালা ইব্রাহিম আলাই সালাম কে ডেকে বললেন হে ইব্রাহিম আপনি তো স্বপ্ন সত্যি পালন করলেন। 

এভাবেই আমি শত কর্ম পরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। (সূরা আস'সাফফাত আয়াত ১০৪ ও ১০৫)

ইব্রাহিম আলাই সালাম এর তাকওয়া দেখে মহান আল্লাহতালা খুশি হলেন এবং আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম আলাই সালাম জান্নাত থেকে একটি দুম্বা এনে ইসমাইলের স্থানে ছুরির নিচে ছুঁয়ে দিলেন। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়ে গেল। 

আল্লাহতালা ইব্রাহিম আলাই সালাম এর ত্যাগের এই অপরূপ ঘটনাটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য কোরবানি রীতি ইবাদাত সম্পন্ন ধন্যবাদ মুসলিমদের ওপর আবশ্যক করে দিয়েছেন। তখন থেকে মুসলিম জাতির জন্য ইব্রাহিম আলাই সালাম এর সুন্নাত হিসেবে কোরবানি পালিত হয়ে আসছে।

কোরবানির কতিপয় মাসআলা

  1. যে ব্যক্তি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ভোর থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশাপ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। সফরদ ব্যক্তির ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
  2. জিলহজ মাসের দশম, একাদশ ও দ্বাদশে দিন দিনের যেকোনো একটি দিন কোরবানির সময়. তবে প্রথম দিন বা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে কোরবানি করা উত্তম।
  3. ঈদুল আযহার সালাত এর আগে কোরবানি করা জায়েজ নয়। সালাতের পর কোরবানি করতে হয়।
  4. সুস্থ গৃহপালিত ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট দ্বারা কোরবানি করতে হবে।গরু মহিষ ও উট ১ থেকে ৭ জন পর্যন্ত অংশীদার মিলে কোরবানি করা যায়। ছাগল ভেড়া ও দুম্বা কেবল একজনের পক্ষ থেকে কুরবানী করতে হয়।
  5. ছাগল বেড়াও দুম্বা বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে। গরুও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। উটের বয়স কমপক্ষে ৫ বছর হতে হবে।তবে ছয় মাসের বেশি বয়সের দুম্বা বাচ্চা যদি এত মোটা হয় যে এক বছরের অনেক দুম্বার মাস যে রেখে দিলে তা চেনা যায় না, তাহলে সে বাচ্চা দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। কিন্তু ছাগলের বাচ্চার বয়স এক বছর না হলে কোরবানি জায়েজ হবে না।
  6. কুরবানীর গোশত সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যার একটি অংশ গরিব ও ও ভাবিদের কে দেওয়া হয়, এক অংশ আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়া হয় এবং এক অংশ নিজের জন্য রাখা হয়। এভাবে তিনভাগ করা মুস্তাহাব।।
  7. কোরবানির বছর নিজ হাতে জবাই করা উত্তম।
  8. কোরবানির পশুটিকে কিবলার দিকে মুখ করে দাও দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে একটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে জবাই করতে হয়।

কোরবানির তাৎপর্য

কোরবানি কেবল পশু জবাই করাকে বুঝায় না। কোরবানি মনের কলুষতা দূর করে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের একটি প্রথা। হযরত ইব্রাহিম আলাই সালাম ও হযরত ইসমাইল আঃ এর অতুলনীয় ত্যাগের স্মৃতি বহন করে কোরবানি। মুসলমানদের কাজে নিজে সম্পদের চেয়ে আল্লাহ সন্তুষ্টি সবচেয়ে বড়। এটাই প্রমাণ করার জন্য ইসলামে কোরবানি এর রীতি প্রচলন করা হয়েছে। 

মুসলমানরা পশু কোরবানি দিয়ে এটাই প্রমাণ করে যে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যেভাবে পশু কোরবানি করেছে প্রয়োজনে এভাবে আল্লাহর দ্বীনের জন্য আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য তাদের নিজেদের জানমাল উৎসর্গ করে দিতেও তারা সর্বদা প্রস্তুত।

কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বান্দার তাকওয়ার পরীক্ষা। তাই যোশ ও খেতির প্রলোভন থেকে মুক্ত হয়ে কেবল আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করতে হবে। কে কত টাকা দিয়ে কোরবানি করছে কার পশু কত বেশি মোটাতাজা এ বিষয়গুলো মূল্যহীন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা শুধু মানুষের মনের তাকওয়া ও ভালোবাসা লক্ষ্য করেন। মহান আল্লাহতালা বলেন,

إن لحمهم ودمائهم لا يصل إلى الله إلا تقواهم

অর্থ : কখনোই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না উহাদের গোশত এবং রক্ত বরং পৌঁছে তাদের তাকওয়া। (সূরা আল হাজ্জ,আয়াত ৩৭)।

কোরবানি একটি উত্তম ইবাদত। এটি ইসলামের একটি নির্দেশেও বটে। সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর কুরবানী করা ওয়াজিব। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, কুরবানীর দিনে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কাজ আল্লাহর নিকট আর কিছুই নেই। ওই ব্যক্তি কি আমাদের দিন কোরবানির পশুর নিয়ে হাজির হবে। 


কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগে তা আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদার স্থানে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা কোরবানির দ্বারা নিজেদেরকে পবিত্র কর। তিনি আরো বললেন কুরবানীর পশু যত পশম থাকবে প্রতিটি বসমের পরিবর্তে ১ একটি নেকি লেখা হয়।

মানবতার চেতনার বিকাশ ঘটাতে কোরবানি শিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে কোরবানি শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমরা একটি সুন্দর সফল ও কল্যাণ সমাজ গঠন করতে পারি। ত্যাগের শিক্ষায় উদ্দীপ্ত হয়ে আমরা পরোপকারী, সহানুভূতিশীল, আত্মত্যাগী ও আত্মসংজমি হব। নিজের সুখ ও স্বাস্থ্যদ্বকে বড় করে না দেখে সমাজের কল্যাণে কাজ করব। এভাবে আমরা সমাজের মানুষ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে অবদান রাখতে পারব।

আকিকা

আকিকায় আরবি শব্দ। এর অর্থ কাটা, ভাঙ্গা এবং পৃথক কড়া ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় আকিকা বলতে সন্তানের জন্ম লাভের পর হালাল পশু জবাই করার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নিকট কৃতজ্ঞতা আদায় ও নবজাতক সন্তানের কল্যাণ কামনা করাকে বোঝায়।

আকিকা একটি অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত ইবাদত। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্মের পূর্বে আকিকা প্রচলিত ছিল। আল্লাহ তাআলার অন্য অনুমতিক্রমে তিনি আকিকার বিধান বহাল রেখেছেন এবং প্রত্যেক নবজাতক শিশুর আকিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ সাঃ নবজাতকের জন্মের সপ্তম দিন নাম রাখা তার আবর্জনা দূর করা (মাথামুন্ঠন করা) ও আকিকার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইহুদিরা শুধু ছেলে সন্তানের আকিকা করত। মহানবী সাঃ ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য আকিকা করা নির্দেশ দিয়েছেন। আর সন্তান জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা উত্তম ও সুন্নাত। হাদিসে বর্ণিত আছে জন্মের সপ্তম দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম হাসান ও হোসাইনের আকিকা দিয়েছেন, তাদের নাম রেখেছেন এবং তাদের মাথা থেকে কষ্ট (চুল) দূর করেছেন।

রাসূলুল্লাহ সাঃ হাসান এর আকিকা আদায় করার পর হরযত ফাতিমারা আনহুকে বললেন এ ফাতিমা এর মাথার চুল ফেলে দাও এবং চুলের ওজনের সম পরিমাণ রুপা সাদ্দো কা করে দাও। অতঃপর ফাতেমার রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাপ পরিমাপ করলেন, এর ওজন হল এক দিরহাম বা এক দিরহামের কাছাকাছি।

উল্লিখিত হাদিস সমূহ থেকে শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে চারটি কাজ করা সুন্নত প্রতিয়মান হয়।
  1. শিশুর জন্য ইসলামী নাম রাখা
  2. মাথামন্টন করা
  3. আকিকা কর
  4. মাথার চুলের ওজনের সমপরিমাণ সোনা বা রুপা সাধুকা করা
সপ্তম দিনে আকিকা করতে না পারলে ১৪ তম দিন বা 21 তম দিন আকিকা আদায় করা উচিত। তাও সম্ভব না হলে পরবর্তী সময় আকিকা করা যাবে। অভাবের কারণে যদি কোন ব্যক্তি তার সন্তানের আকিকা করতে না পারে, ওই সন্তান বড় হওয়ার পর সামর্থ্যবান হলে সে তার নিজের আত্মা নিজে আদায় করবে। 

আমাদের প্রিয় নবী সাঃ নিজের আকিদা নিজেই আদায় করেছেন। যে বসুধারা কোরবানি আদায় করা যায় তা দিয়ে আকিকা আদায় করতে হয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম ইরশাদ করেন, নবজাতক সন্তান ছেলে হলে দুটি ছাগল আর মেয়ে হলে একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করবে। গরু মহিষ বা উট হলে সাতটি ছাগলের সমান ধরে পুত্র সন্তানের জন্য দুই ভাগ আর কন্যা সন্তানের জন্য এক ভাগ দিতে হয়।


একই পশুতে কুরবানীর সঙ্গে আকিকা আদায় করা যায়। আকিকার গোশত নিজে খেতে পারবে, আত্মীয়-স্বজন ও গরিব মিসকিনকে খাওয়াতে পারবে। কোরবানির গোশতের মতো আকিকার গোশত তিন ভাগে ভাগ করতে করতে হয় এক তৃতীয়াংশ নিজের জন্য, এক তৃতীয়াংশ আত্মীয় স্বর্ণের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ গরিব মিসকিনদের মধ্য বণ্টন করে দেওয়া সুন্নত।

প্রত্যেক পিতা-মাতার নিকট সন্তান সন্ততি অতিপ্রিয়। সন্তান লাভ করা দুনিয়ার অন্যতম সেরা নিয়ামত। প্রত্যেক নবজাতক শিশুর জন্ম পরিবারের আনন্দের বন্যা বইয়ে দেয়। আল্লাহতালা প্রতি সন্তান প্রাপ্তির শুকরিয়া আদায় করে নবজাতক শিশুর আকিকা করা পিতা মাতার দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা কৃত বান্দাকে পছন্দ করেন এবং তাকে আরও বেশি নিয়ামত দান করেন। অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।

আকিকার মাধ্যমে নবজাতক শিশু আল্লাহর রহমত লাভের ধন্য হয় এবং নবজাতকের বিপদ আপদ, বালা মুসিবত দূর হয়। আগেকার গোস্ত বিতরণের মাধ্যমে পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে নতুন শিশুর শুভকামনা মনের খুশি উদযাপন করা যায়। নবজাতক শিশুর জন্য সবাই দোয়া করেন।তাই আমাদের উচিত প্রত্যেক নবজাতকের জন্য আকিকা আদায় করা।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না।আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url