বোর পরমাণু মডেলঃ বোর পরমাণু মডেলের সাফল্য এবং সীমাবদ্ধতা!
বোর পরমাণু মডেল
রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলের ভুলগুলো কে সংশোধন করে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী নীলস বোর পরমাণুর একটি মডেল প্রদান করেন। এই মডেলকে বোরের পরমাণু বলা হয়। বোর পরমাণু মডেলের মতবাদগুলো এরকমঃ
(a) পরমাণুতে যে সকল ইলেকট্রন থাকে সেগুলো নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে ইচ্ছামতো যেকোনো কক্ষপথে ঘুরতে পারে না। শুধু নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধের কতগুলো অনুমোদিত বৃত্তাকার কক্ষপথে ঘুরে। এই নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধের অনুমোদিত বৃত্তাকার কক্ষপথগুলো কে অনুমোদিত কক্ষপথ বা প্রধান শক্তিস্তর বা কক্ষপথ বা শেল বা অরবিট বা স্থির কক্ষপথ বলে। স্থির কক্ষপথে ঘুরার সময় ইলেকট্রন গুলো কোনোরূপ শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করে না। স্থির কক্ষপথ কে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়। n=1,2,3 হলে M প্রধান শক্তিস্তর, n=1 হলে K প্রধান শক্তিস্তর, n=2 হলে L প্রধান শক্তিস্তর, n=3 হলে M প্রধান শক্তিস্তর, n=4 হলে N প্রধান শক্তিস্তর ইত্যাদি।
(b) বোর পরমাণু মডেল অনুসারে কোনো শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ।
mvr= nh÷2π
- m হচ্ছে ইলেকট্রনের ভর'
- r হচ্ছে ইলেকট্রন যে কক্ষপথ বা শক্তিস্তরে ঘুরবে তার ব্যাসার্ধ '
- v হচ্ছে ইলেকট্রন যে কক্ষপথ বা শক্তিস্তরে ঘুরবে সেই কক্ষপথে ইলেকট্রনের বেগ
- h হচ্ছে প্লাংক ধ্রুবক
- n হচ্ছে প্রধান শক্তিস্তর বা প্রধান কোয়ান্টাম সংখ্যা (n=1,2,3,4.......ইত্যাদি।)
এখানে যে শক্তিস্তরের n এর মান কম সেই শক্তিস্তর নিম্ন শক্তিস্তর এবং যে শক্তিস্তরের n এর মান বেশি সেই শক্তিস্তর উচ্চ শক্তিস্তর হিসেবে পরিচিত।
(c) কোনো প্রধান শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ঘুরার সময় ইলেকট্রনের কোনো শক্তি শোষিত বা বিকিরিত হয় না, তবে ইলেকট্রন যদি নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তর এ যায় তখন শক্তি শোষিত হয়। আবার, যদি ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে যায় তখন শক্তি বিকিরিত হয়। ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে যাবার সময় যে আলো বিকিরণ করে তাকে প্রিজমের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করালে পারমাণবিক বর্ণালি (atomic spectra) সৃষ্টি হয়।
বোরের পরমাণু মডেলের সাফল্য
(a) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুসারে সৌরজগতে সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহ-উপগ্রহগুলো যেমন ঘুরছে, পরমাণু তে ইলেকট্রনগুলোও তেমন নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে ঘুরছে। এখানে ইলেকট্রনের শক্তিস্তরের আকার সম্পর্কে কোনো কথা বলা হয়নি কিন্তু বোরের পারমাণবিক মডেলে পরমাণুর শক্তিস্তরের আকার বৃত্তাকার বলা হয়েছে।
(b) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলে পরমাণু শক্তি শোষণ করলে বা শক্তি বিকিরণ করলে পরমাণুর গঠনে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে সে কথা বলা হয়নি কিন্তু বোর পরমাণু মডেলে বলা হয়েছে পরম শক্তি শোষণ করলে ইলেকট্রন নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে ওঠে। আবার, পরমাণু শক্তি বিকিরণ করলে ইলেকট্রন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে নেমে আসে।
(c) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুসারে কোনো মৌলের পারমাণবিক বর্ণালি ব্যাখ্যা করা যায় না কিন্তু বোরের পরমাণু মডেল অনুসারে এক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণু হাইড্রোজেন (H) বর্ণালি ব্যাখ্যা করা যায়।
বোরের পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা
বোর পরমাণু মডেলেরও কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো হচ্ছেঃ
(a) বোরের পরমাণু মডেলের সাহায্যে এক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুর পারমাণবিক বর্ণালি ব্যাখ্যা করা যায় সত্যি কিন্তু একাধিক ইলেকট্রন বিশিষ্ট পরমাণুর পারমাণবিক বর্ণালি ব্যাখ্যা করা যায় না।
(b) বোরের পারমাণবিক মডেল অনুসারে এক শক্তিস্তর থেকে ইলেকট্রন অন্য শক্তিস্তরে গমন করলে পারমাণবিক বর্ণালিতে একটিমাত্র রেখা পাবার কথা। কিন্তু শক্তিশালী যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যায় প্রতিটি রেখা অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রেখার সমষ্টি। প্রতিটি রেখা কেন অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রেখার সমষ্টি হয় বোর মতামত অনুসারে তার ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
(c) বোরের পরমাণুর মডেল অনুসারে পরমাণুতে শুধু বৃত্তাকার কক্ষপথ বিদ্যমান। কিন্তু পরে প্রমাণিত হয়েছে পরমাণুতে ইলেকট্রন শুধু বৃত্তাকার কক্ষপথেই নয় উপবৃত্তাকার কক্ষপথেও ঘুরবে।
বোরের পরমাণু মডেলের মধ্যে উপরোক্ত এই কয়েকটি সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না।আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url