জ্ঞানের উৎস হিসেবে আল কোরআন_সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

মহাগ্রন্থ আল কুরআন জ্ঞানের ভান্ডার। কুরআন যারা মানেন এবং যারা মানেন না সকলেই কুরআনের বিভিন্নমুখী হেদায়াত থেকেই আলো নিয়েছেন। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের মূল উৎসই হলো আল-কোরআন। অন্য কোন ধর্মগ্রন্থে আল কোরআনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নেই। 


আল কোরআনে রয়েছে ভ্রূণতত্ত্ব বিদ্যা, শরীরতত্ত্ব বিদ্যা, জীববিজ্ঞান বিদ্যা, প্রাণিবিজ্ঞান বিদ্যা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান বিদ্যা, সমুদ্রবিজ্ঞান বিদ্যা, ভূতত্ত্ব বিজ্ঞান বিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান বিদ্যা, সমাজ বিজ্ঞান বিদ্যা, ভাষাবিজ্ঞান বিদ্যা, সমরবিজ্ঞান বিদ্যা ও মহাকাশ বিজ্ঞান বিদ্যা প্রকৃতি।

এগুলো ছাড়া মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শাখার প্রশাখাগত বিজ্ঞান ও রয়েছে। মাহাগ্রন্থ আল-কোরআনের প্রতিটি আয়াতই বিজ্ঞান বহন করে।

وَ الۡقُرۡاٰنِ الۡحَکِیۡم

অর্থ: বিজ্ঞানময় কোরআনের শপথ" (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ২)।

যেহেতু কুরআন হলো সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস তাই এখানে বিজ্ঞানময় কোরআন এর শপথ করে এর গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে। কোরআন থেকে বিজ্ঞানের চর্চা করে মুসলমানরা কয়েক শতাব্দীব্যাপী বিশ্বে বিজ্ঞানের আগিয়ে ছিল। 

এরপর বাগদাদ ও স্পেনের রাজনৈতিক পতনের ফলে বিজ্ঞানের ও পতন ঘটে। তাদের রেখে যাওয়া বিজ্ঞানকে অনুসরণ করে বস্তুবাদী ইউরোপ আজ উন্নতির শিখরে আরোহন করছে।

আল কোরআন যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস তার কয়েকটি নমুনা নিচে আলোচনা করা হলো:-

জগৎ সৃষ্টির রহস্য: বিশ্ব জগত সৃষ্টি সম্পর্কে বিজ্ঞান বলে, কোটি কোটি বছর পূর্বে বিশ্বজগত একটি অখন্ড জড় বস্তুরূপে বিদ্যমান ছিল। পরে তার কেন্দ্রে একটি মহা বিস্ফোরণ ঘটে যাকে বিগ ব্যাং বলা হয়। বিস্ফোরণের ফলে আমাদের সৌরজগৎ, ছায়াপথ, তারকারাজি ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। অথচ কুরআন বহু পূর্বে এই তথ্য প্রদান করেছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,

اَوَ لَمۡ یَرَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ کَانَتَا رَتۡقًا فَفَتَقۡنٰهُمَا ؕ وَ جَعَلۡنَا مِنَ الۡمَآءِ کُلَّ شَیۡءٍ حَیٍّ ؕ اَفَلَا یُؤۡمِنُوۡنَ

অর্থ: অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী পরস্পরে মিশ্রিত ছিল। অতঃপর আমরা উভয়কে পৃথক করে দিলাম (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩০)।

জগৎ সৃষ্টির পূর্বে আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী মন্ডলী একত্রে মিশ্রিত ছিল। আল্লাহ তাআলা আসমান ও জমিনকে আলাদা করে দেয়। পরবর্তীতে সেখান হতে সকল সৃষ্টি জগতের সৃষ্টি হয়।

ভ্রূণতত্ত্ব বিদ্যা: ভ্রুণতত্ত্বের মূলে আল্লাহ পাক বলেছেন,

اِقۡرَاۡ بِاسۡمِ رَبِّکَ الَّذِیۡ خَلَقَ

خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ عَلَقٍ

অর্থ: পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট বাধা রক্ত থেকে (সূরা আলাক, আয়াত: ১-২)।

আলাক একটি আরবি শব্দ অর্থ জামাট রক্ত। এর অন্য আরেকটি অর্থ হলো দৃঢ়ভাবে আটকে থাকে এমন আঠালো জিনিস। যেমন জোঁক কামড় দিয়ে আটকে থাকে। এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বিশ্বজাহানের সৃষ্টির কথা বলার পর মানুষ সৃষ্টির কথা বলেছেন। 

মানুষকে আল্লাহ তাআলা জমাত বাধা রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছেন সেটি উক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এভাবেই আল কোরআন থেকে ভ্রূণতত্ত্ব বিদ্যা সম্পর্কে জানা যায়।


মানুষ সৃষ্টির রহস্য: মানুষের সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَلۡيَنۡظُرِ الۡاِنۡسَانُ مِمَّ خُلِقَ

خُلِقَ مِنۡ مَّآءٍ دَافِقٍۙ‏

يَّخۡرُجُ مِنۡۢ بَيۡنِ الصُّلۡبِ وَالتَّرَآٮِٕبِؕ‏

অর্থ: "সুতরাং মানুষের ভেবে দেখা উচিত যে থেকে সে সৃজিত হয়েছে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সমবেগে বের হয়ে আসা পানি থেকে। যা বের হয় মেরুদন্ড ও বক্ষ পাজরের মাঝখান থেকে" (সূরা তারিক, আয়াত: ৫-৭)

আল্লাহ তাআলা পানি থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। উক্ত পানি বের হয় মেরুদন্ড ও পক্ষ পাঁজরের মাঝখান থেকে। আল কোরআন দ্বারা মানুষের সৃষ্টির রহস্যও জানা যায়।

হাদিসে ইবন আব্বাস বলেন, পুরুষের মেরুদণ্ড ও নারীর পঞ্জরাস্থির পানি হলদে ও তরল। সে দু’টো থেকেই সন্তান হয়। [ইবন কাসীর]

সকল প্রাণী সৃষ্টির রহস্য: বিজ্ঞানীরা নানান গবেষণা করে এটি ঘোষণা করেন যে, পানি থেকেই প্রাণী জগতের উদ্ভব। অথচ আল কুরআনে এ কথা আল্লাহ তাআলা আগেই বলেছেন।

اَوَ لَمۡ یَرَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ کَانَتَا رَتۡقًا فَفَتَقۡنٰهُمَا ؕ وَ جَعَلۡنَا مِنَ الۡمَآءِ کُلَّ شَیۡءٍ حَیٍّ ؕ اَفَلَا یُؤۡمِنُوۡنَ

অর্থ: যারা কুফরী করে তারা কি দেখে না যে, আসমানসমূহ ও যমীন মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, তারপর আমরা উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং পানি হতে প্রাণবান সবকিছু সৃষ্টি করলাম তবুও কি তারা ঈমান আনবে না? (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩০)

এ আয়াত দ্বারা এটা পরিষ্কার যে, প্রতিটি প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে পানি থেকে।আসমান-জমিন একত্রে মিশে ছিল অতঃপর আল্লাহ তাআলা আসমান ও জমিনকে আলাদা করেন দেন। এরপর আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হয় এবং এই বৃষ্টির পানি হতেই আল্লাহ তাআলা প্রাণবান সব কিছু সৃষ্টি করেন।

জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টির রহস্য: বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রতিটি প্রাণ সত্তার মধ্যে রয়েছে বিপরীত ধর্মী দুটি শক্তির জোর। যার একটি পজেটিভ বা প্রোটন এবং অপরটি নেগেটিভ বা ইলেকট্রন। এমনকি বিদ্যুতের মত প্রাণহীন বস্তুর মধ্যেও রয়েছে জোড়ার সম্পর্ক। অথচ কুরআন বহু পূর্বে এ তথ্য দিয়ে বলেছেন,

سُبۡحٰنَ الَّذِیۡ خَلَقَ الۡاَزۡوَاجَ کُلَّهَا مِمَّا تُنۡۢبِتُ الۡاَرۡضُ وَ مِنۡ اَنۡفُسِهِمۡ وَ مِمَّا لَا یَعۡلَمُوۡنَ

অর্থ: মহাপবিত্র সেই সত্তা, যিনি ভূ-উৎপন্ন সকল বস্তু এবং মানুষ ও তাদের অজানা সবকিছুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৩৬)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ও আমাদের জানা অজানা সকল বস্তুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। সকল বস্তুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করার মাধ্যমে সকল সৃষ্টিকুলের সকল প্রয়োজন পূরণ করেছেন। তার সৃষ্টি সকল প্রকার অপূর্ণতা ও ত্রুটির উর্ধ্বে এবং তার সৃষ্টি করার জন্য কোন শরিক বা সহযোগীর প্রয়োজন নেই। 

উক্ত আয়াত দ্বারা এটি প্রমাণিত যে মানুষের জ্ঞান অতি সামান্য, সৃষ্টি কুলের মধ্যে আল্লাহর অনেক রহস্যময় সৃষ্টি রয়েছে যার জ্ঞান মানুষের নেই।


মহাকাশ বিজ্ঞান বিদ্যার দিন ও রাত্রি সম্পর্কে বিদ্যা: আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَآَيَةٌ لَهُمُ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُمْ مُظْلِمُونَ

অর্থ: “তাদের জন্য আরেক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারণ করি, তখনই তারা (নিজেদের অজান্তে) অন্ধকারে তলিয়ে যায়। ” (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৩৭)

এ আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর দিন ও রাত্রির আগমন ঘটে। আর এটি ঘটে মূলত আল্লাহর হুকুমে। সূর্য ও চন্দ্রের আবর্তনের ফলে দিন ও রাতের আগমন ঘটে।

সূর্য সম্পর্কে বিদ্যা: আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

অর্থ: “এবং সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর বিধান (ও পরিমাপ) অনুযায়ী সম্পন্ন হয়। ” (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৩৮)

চন্দ্র সম্পর্কে বিদ্যা: আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ الۡقَمَرَ قَدَّرۡنٰهُ مَنَازِلَ حَتّٰی عَادَ کَالۡعُرۡجُوۡنِ الۡقَدِیۡمِ

অর্থ: “এবং চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারণ করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ অর্ধচন্দ্রাকৃতি হয়ে যায় (এবং ক্রমেই পূর্ণ চন্দ্রে পরিণত হয়)। ” (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৩৯)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,

لَا الشَّمۡسُ یَنۡۢبَغِیۡ لَهَاۤ اَنۡ تُدۡرِکَ الۡقَمَرَ وَ لَا الَّیۡلُ سَابِقُ النَّهَارِ ؕ وَ کُلٌّ فِیۡ فَلَکٍ یَّسۡبَحُوۡنَ

অর্থ: “না সূর্য নাগাল পেতে পারে চন্দ্রের, না রাত্রি অগ্রে চলে দিনের এবং প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে। ” (সুরা ইয়াসিন, আয়াত: ৪০)

আল্লাহ তাআলা সূর্য ও চন্দ্রের জন্য নির্দিষ্ট কক্ষপথ ও গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যার যার কক্ষপথের মধ্যে সূর্য ও চন্দ্র আবর্তন করে। কক্ষপথে আবর্তনের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় না এবং কখনোই পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না। পৃথিবীর কোন নিজস্ব আলো নেই। 

পৃথিবী সূর্যের দ্বারা আলোকিত হয়। পৃথিবীর যে অর্ধাংশে সূর্যের আলো পতিত হয় সেই অংশ কেবলমাত্র আলোকিত হয়। কিন্তু নিজ অক্ষের ওপর পৃথিবীর ঘুর্ণয়নের ফলে ওই অংশ ধীরে ধীরে সূর্য থেকে দূরে চলে যায় এবং সেখানে রাতের অন্ধকার নেমে আসে।

তবে আল্লাহ তা'আলা মানুষের সুবিধার জন্য রাতের অন্ধকার দূর করে মিটিমিটি আলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি চন্দ্র নামক একটি আয়নাকে পৃথিবীর অপর প্রান্তে স্থাপন করেছেন যার ওপর সূর্যের আলো নিক্ষিপ্ত হয়ে তার প্রতিবিম্ব পৃথিবীতে এসে পড়ে। 

আর এই মিটি মিডিয়া আলোর রাতে মানুষের বিশ্রাম করা ভালো হয় এবং মানুষের মনে প্রশান্তি আসে। আল কোরআন থেকে দিন ও রাত এবং সূর্য ও চন্দ্র সম্পর্কে ও জ্ঞান পাওয়া যায়। অর্থাৎ আল কুরআনের মধ্যে মহাকাশ বিজ্ঞান বিদ্যা রয়েছে প্রমাণিত।


বিজ্ঞানের উৎস: বিজ্ঞানের উৎস অনুমান ভিত্তিক। যেকোনো সময় ভুল প্রমাণিত হতে পারে। যেমন বিজ্ঞানীরা বলেন বিজ্ঞান আমাদেরকে কেবল আংশিক সত্যের সন্ধান দেয়। তারা শুধু অনুমানের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে থাকেন। 

তারা বলেন আমরা বাহ্যিক বস্তুকে দেখি মাত্র মূল বস্তুকে দেখিনা। যেমন ধুয়া দেখে মানুষ আগুনের সন্ধানে ছুটে থাকে। কিন্তু আল্লাহর ওহী হিসেবে কুরআন বিজ্ঞানের উৎস যেখানে ভুলের কোন অবকাশ নেই।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِالذِّكْرِ لَمَّا جَاءَهُمْ ۖ وَإِنَّهُ لَكِتَابٌ عَزِي

لَّا یَاۡتِیۡهِ الۡبَاطِلُ مِنۡۢ بَیۡنِ یَدَیۡهِ وَ لَا مِنۡ خَلۡفِهٖ ؕ تَنۡزِیۡلٌ مِّنۡ حَکِیۡمٍ حَمِیۡدٍ

অর্থ: সম্মুখ থেকে বা পিছন থেকে এর মধ্য মিথ্যার কোন প্রবেশাধিকার নেই। এটি ক্রমান্বয়ে অবতীর্ণ হয়েছে প্রজ্ঞাময় ও প্রশংসিত সত্তার পক্ষ হতে (সূরা হা-মীম-আস্-সাজদা, আয়াত: ৪১-৪২)।

আল কোরআন সব দিক দিয়ে সর্বপ্রকার ত্রুটি থেকে সুরক্ষিত। ‘সম্মুখ হতে মিথ্যা অর্থাৎ অর্থ হ্রাস এবং ‘পশ্চাৎ হতে মিথ্যা’ অর্থাৎ অর্থ, বৃদ্ধি। অর্থাৎ, বাতিল বা মিথ্যা তার সামনের দিক দিয়ে এসে কোন কিছু হ্রাস করতে পারবে, আর না তার পিছন দিক দিয়ে এসে তাতে কোন কিছু বৃদ্ধি সাধন করতে পারবে। 

আর তাতে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে সফল হবে না। কারণ, এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, যিনি তাঁর যাবতীয় কথা ও কাজে সুকৌশলী ও প্রশংসিত। অতএব বিজ্ঞানেরও উৎস যে আর কোরআন সেটিও প্রমাণিত।

উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিদ্যা: উদ্ভিদের জীবন আছে এ কথা বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ) কিছুদিন পূর্বে আবিষ্কার করলেন। অথচ এর বহু পূর্বেই এ কথা কুরআন বলে দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَّالنَّجۡمُ وَالشَّجَرُ یَسۡجُدٰنِ

অর্থ: নক্ষত্র রাজি ও উদ্ভিদরাজি আল্লাহকে সিজদা করে (সূরা আর রহমান, আয়াত: ৬)

সৃষ্টি কুলের সব আল্লাহ তাআলার হুকুম মেনে চলে। কুরআন মাজীদে কয়েক জায়গায় ইরশাদ হয়েছে, সমস্ত সৃষ্টির মধ্যেই কিছু না কিছু অনুভূতি আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানে পাথর ও বৃক্ষসমূহ ঝুঁকে পড়ে তাকে সম্মান জানিয়েছে এবং সালাম দিয়েছে। এসবই উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তার প্রমাণ বহন করে।

تُسَبِّحُ لَهُ السَّمٰوٰتُ السَّبۡعُ وَ الۡاَرۡضُ وَ مَنۡ فِیۡهِنَّ ؕ وَ اِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ اِلَّا یُسَبِّحُ بِحَمۡدِهٖ وَ لٰکِنۡ لَّا تَفۡقَهُوۡنَ تَسۡبِیۡحَهُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ حَلِیۡمًا غَفُوۡرًا

অর্থ: সাত আসমান ও যমীন এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রসংশায় তাসবীহ পাঠ করে না; কিন্তু তাদের তাসবীহ তোমরা বুঝ না। নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ। (সূরা বনী ইসরাইল আয়াত: ৪৪)

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাবার খেতাম, এমতাবস্থায় আমরা খাবারের তাসবীহও শুনতাম।” (বুখারীঃ ৩৫৭৯)

অনুরূপভাবে, মরা খেজুরগাছের কাঠের কান্না। (বুখারী: ৩৫৮৩)

মক্কার এক পাথর কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দেয়া। (মুসলিম: ২২৭৭)

إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ

অর্থ: “আমি পাহাড়সমূহকে আজ্ঞাবহ করে দিয়েছি। তারা দাউদের সাথে সকাল-বিকাল তাসবীহ পাঠ করে”। (সূরা ছোয়াদ, আয়াত: ১৮)

"كم من حجر يهبط من خشية الله"

অর্থ: “কতক পাথর আল্লাহর ভয়ে নীচে পড়ে যায়” (সূরা আল-বাকারাহ্‌, আয়াত: ৭৪)

নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে প্রানের অস্তিত্ব: কোরআনে এমন এক বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করেছে যা বিজ্ঞানীরা আজও প্রমাণ করতে পারেনি। আর তা হলো আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর প্রাণ আছে এবং আছে বোধশক্তি। এমনকি এরা সর্বদা আল্লাহর গুনোগান করে। যেমন আল্লাহ বলেন,

ثُمَّ اسۡتَوٰۤی اِلَی السَّمَآءِ وَ هِیَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَ لِلۡاَرۡضِ ائۡتِیَا طَوۡعًا اَوۡ کَرۡهًا ؕ قَالَتَاۤ اَتَیۡنَا طَآئِعِیۡنَ

অর্থ: অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধূম্রবিশেষ। তারপর তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে বললেন তোমরা উভয়ে এসো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বলল আমরা এলাম অনুগত হয়ে। (সূরা হা-মীম সাজদাহ, আয়াত; ১১)

এই আয়াত দ্বারা এটি বোঝা যায় যে, আল্লাহ আকাশকে নির্দেশ দিলেন যে, সূর্য, চাঁদ এবং তারকারাজি বের কর এবং পৃথিবীকে বললেন যে, নদ-নদী প্রবাহিত এবং ফল-মূল উৎপন্ন কর।


আধুনিক বিজ্ঞানের তত্ত্বের সঙ্গে কোরআনের কোন বিরোধ নেই, আবিষ্কারে যত উৎকর্ষ সাধিত হবে কোরআন জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎস তা দ্রুত উপলব্ধিতে আসবে। নতুন প্রজন্মকে যথাযথ উৎসাহ, সাহস এবং প্রযুক্তির সঠিক জ্ঞান দিলে বিশ্ববরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের জ্ঞান চর্চা করে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে অবদান রাখার সৌভাগ্য দান করুন। (আমিন)

লেখকের মন্তব্য: আমরা অনেক নিখুঁত ভাবে সবকিছুর ইনফরমেশন দিয়ে থাকি। আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনাদের একটুও উপকার হয়ে থাকে তাহলে আপনারা আপনাদের বন্ধু বান্ধবের সাথে সেয়ার করুন। এবং নিচে কমেন্ট বলে যান পরবর্তীতে কি সম্পর্কে জানতে চান আমরা চেষ্টা করবো সেগুলো নিয়ে লেখার। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url