মৃত্যুর পরে ও সাওয়াব পাওয়ার ৬টি আমল জেনে নিন

মৃত্যুর পর ও সাওয়াব পাওয়ার ৬টি আমল

মানুষ মরণশীল। কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে মানুষকে প্রেরণ করেছেন তার ইবাদত করার জন্য পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন , যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে কে সর্বাধিক উত্তম।


মৃত্যুর পর মানুষের সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে কিছু আমল রয়েছে যেগুলোর সাওয়াব মৃত্যুর পরও আমলনামায় যোগ হতে থাকবে। মানুষের পার্থিব জীবনের কৃতকর্মের ফল পরলোকে দেওয়া হবে। মৃত্যুর পরও সাওয়াব পাওয়া যায় এমন ৬টি আমল নিম্নে বর্ণনা করা হলো:-

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. এমন ইলম যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও ৩. এমন নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৩১০)

ইলম শিক্ষা দেয়া

মানুষকে এমন জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া যা মানুষকে হেদায়েতের পথে নিয়ে আসে। আল্লাহর নিকটবর্তী করে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে। ইলম শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তির মৃত্যুর পরও আমলনামায় উক্ত ব্যক্তির সমান নাকি লেখা হয়। যেমন কোরআন শিক্ষা দেওয়া। কোন ব্যক্তিকে কোরআন শিক্ষা দিলে সে ব্যাক্তি কোরআন পড়ে যতটুকু সাওয়াব পাবে তার সমপরিমাণ সাওয়াব কোরআন শিক্ষা দান কারীর আমলনামায় যোগ হবে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে মানুষকে ইলম শিক্ষা দিলো, এ ইলম অনুযায়ী আমলকারীর সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায়ও যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের কারো সওয়াবে কোনো কমতি হবে না। (ইবনু মাজাহ, হাদিস নং : ২৪০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে আল্লাহর কিতাব থেকে একটি আয়াত শিক্ষা দেবে, যত তেলাওয়াত হবে তার সওয়াব সে পাবে।’ (সহিহ কুনুজুস সুন্নাহ আননবুবিয়্যা : ০৭)

নেক্কার সন্তান রেখে যাওয়া

 সন্তান শুধু থাকলেই হবে না সন্তানকে হতে হবে নেককার ব্যক্তি। যে কোন পাপাচারের সাথে যুক্ত থাকবে না। বর্তমানের কোন ফিতনার সাথে জড়িত থাকবে না। যে সন্তান হবে আল্লাহর নেক্কার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। আর পিতা মাতার অনুগত্য হবে। এমন সন্তান রেখে যাওয়া কল্যাণকর। নেক্কার সন্তানরা তার বাবা মায়ের জন্য দোয়া করবে এবং যা হতে পারে তার মা-বাবার মুক্তির উপায়।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, ‘শিশু (অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী) মুসলিম সন্তানেরা জান্নাতের ‘শিশু খাদেম’ হবে। তারা তাদের মাতা-পিতাকে পেলে কাপড় ধরে টেনে জান্নাতে না নেওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না।’ (মেশকাত : ১৭৫২)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর ৪ টি আমলের সাওয়াব অব্যাহত থাকে : ১. যে ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দিল তার সাওয়াব, ২. ভাল কাজ চালু করার ফলে তাকে যারা অনুসরণ করল তার সাওয়াব, ৩. যে ব্যক্তি এমন সাদাকাহ করলো, যা প্রবাহমান থাকে তার সাওয়াব, ও ৪. এমন নেক সন্তান রেখে যাওয়া- যে তার জন্য দোয়া করে। ’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং : ২২২৪৭)

হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর পর কোনো বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। তখন সে বলে, হে আমার রব, এ পুরস্কার কোন আমলের বিনিময়ে? (আমি তো এত আমল করিনি) তখন বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে।’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩৬)

আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া

কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়ার পরে, যদি সে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে তাহলে এর চেয়ে উত্তম আমল আর কি হতে পারে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো আমি একজন মুসলমান। (সুরা হামিম সিজদাহ, আয়াত : ৩৩)

রাসুল (সা.) তার সাহাবাদের বলেন, ‘মানুষকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না। (মুসলিম, হাদিস নং : ৬৯৮০)

মসজিদ তৈরি করা

মসজিদ হলো ইবাদতের ঘর। যেখানে মানুষ আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আল্লাহর জিকির করার জন্য অবস্থান করে। মসজিদ তৈরি করলে সেখানে মানুষ ইবাদত করে যত সাওয়া পাবে তার সমপরিমাণ সাওয়াব মসজিদ তৈরি কারী বান্দার আমলনামায় যোগ হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মাসজিদ তৈরি করল, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর তৈরি করবেন। (মুসলিম, হাদিস নং : ১২১৮)

কোরআন বিতরণ করা

 যদি কোন ইসলামিক প্রতিষ্ঠানে মসজিদ, মাদরাসায় বা অন্য কোথাও কোরআন বিতরণ করে। তাহলে কোন ব্যক্তি উক্ত কোরআন পড়ে যত সাওয়াব পাবে তার সমপরিমাণ সাওয়াব কোরআন বিতরণকারী ব্যক্তির আমলনামায় লিখা হবে। তা মৃত্যুর উড়বে বা পরে হোক আমলনামায় যোগ হতে থাকবে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর কবরে ৭টি আমলের সাওয়াব অব্যাহত থাকে : ১. যে ইলম শিক্ষা দিল, ২. যে পানি প্রবাহিত করল, ৩. কুপ খনন করল, ৪. খেজুর গাছ লাগালো (গাছ রোপন), ৫. মাসজিদ তৈরি করল, ৬. কারো দায়িত্বে কিতাব দিয়ে গেল ও ৭. এমন নেক সন্তান রেখে গেল- যে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (মুসনাদুল বাজ্জার :৭২৮৯)

সীমান্ত রক্ষা

 ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেওয়া অর্থাৎ মানুষকে নিরাপদ ও শান্তিতে রাখার জন্য শত্রুর হাত থেকে ইসলামি রাষ্ট্র পাহারা দেওয়ার সওয়াব ব্যক্তির মৃত্যুর পরও জারি থাকবে। এ বিষয়ে হাদিসে উল্লেখ আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা অবস্থায় মারা যায়, তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল মরার পরও তা তার জন্য সওয়াব জারি থাকবে, তার রিজিকও জারি থাকবে, কবরের পরীক্ষা থেকে সে থাকবে নিরাপদ এবং আল্লাহতায়ালা কেয়ামতে তাকে ভয় থেকে মুক্ত অবস্থায় ওঠাবেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৩৪)

অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মৃত্যুর পর প্রত্যেক মৃতের কর্মের ধারা শেষ করে দেওয়া হয়। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ইসলামি রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয় তার আমল কেয়ামত পর্যন্ত বাড়তে থাকবে এবং কবরের ফেতনা থেকেও সে নিরাপদ থাকবে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৬২৪)

আমাদের সকলেরই এমন কিছু আমল করা প্রয়োজন যা আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের আমল নামায় সাওয়াব যোগ করতে সাহায্য করবে।

লেখকের মন্তব্যঃ পোস্ট টি ভালো লাগলে অবশ্যই আত্মীয় স্বজন দের সাথে সেয়ার করুন। আপনার মাধ্যমে হয়তো একজনেরও ঈমান শক্তিশালী হবে। অন্যের উপকার করা শক্তিশালী মুমিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url