পবিত্র কুরআনকে কেন রমজান মাসে নাজিল করা হয়েছে?

আল কোরআন হলো আসমানী গ্রন্থের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। যা আমাদের শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর শ্রেষ্ঠ মাস রমজানের ২৪ তারিখ নাজিল হয়। সপ্তম আকাশের লাওহে মাহফুজ থেকে রমজান মাসে কুরআন বাইতুল ইজ্জতে একবার নাযিল হয়। 


পরবর্তীতে আবার সেখান থেকে জিব্রাইল আলাই সালাম এর মাধ্যমে মক্কা নগরীর হেরা পর্বতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ৬১০ খ্রিস্টাব্দের রমজান মাসে অল্প অল্প করে নাজিল হতে শুরু করে। সম্পূর্ণ কোরআন দীর্ঘ ২৩ বছরে নাযিল হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, রমজান মাসেই কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল মানবজাতির জন্য পথপ্রদর্শক, সুস্পষ্ট বাণী যা দিকনির্দেশনা প্রদানকারী এবং ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্যকারী। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)

আল্লাহ তাআলা বলেন,

اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ

‘নিশ্চয় আমি কদরের রাতে কোরআন নাজিল করেছি (সুরা কদর, আয়াত: ১)

রমজানের সাথে আসমানী গ্রন্থগুলোর বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। তবে সকল আসমানী গ্রন্থের মধ্যে আল কোরআনের সাথে রমজানের রয়েছে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। কোরআনের সাথে রমজানের সম্পর্ক এতটা গভীর যে, রমজানকে কোরআনের মাস বলা হয়। ইমাম যুহরি রহ. বলেন, রমজান হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত ও আহার বিতরণের মাস। (ইবনে আব্দুল বার, আত তামহিদ, ৬/১১১)

রমজান মাসে কেন আল কুরআন নাযিল করা হয়েছে তা একমাত্র আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। তবে কোরআনের আল্লাহ তাআলার বাণী ও হাদিসের বাণী থেকে অনুমান করা যায় তিনটি বিশেষ কারণে কোরআন রমজান মাসে নাযিল করা হয়েছে।
  1. আসমানী গ্রন্থ নাযিলের মাস রমজান
  2. রমজান ও কোরআনের উদ্দেশ্য একই
  3. কোরআনের সংরক্ষণের মাস রমজান
১.আসমানী গ্রন্থ নাজিলের মাস রমজান: আল্লাহ তাআলা কুরআনের পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাব রমজান মাসের অবতীর্ণ করেছেন। অর্থাৎ বলা যায় রমজান হচ্ছে আসমানী গ্রন্থ নাজিলের মাস। সে অনুযায়ী আল কোরআন কেউ আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসে নাজিল করেন।

এ সম্পর্কে বিশুদ্ধ ভাবে হাদিসে বলা হয়েছে - রাসূল (সা.) বলেন, রমজান মাসের পহেলা ইবরাহিম (আ.) সহিফা লাভ করেন, ৬ তারিখে মুসা (আ.) এর কাছে ‘তাওরাত’ নাজিল হয়। দাউদ (আ.) এর কাছে পবিত্র যবুর নাজিল হয় এ পবিত্র মাসের ১২ তারিখে, আর ঈসা (আ.) পবিত্র ‘ইঞ্জিল’লাভ করেন এবং কোরআন নাজিল হয় রমজানের ২৪ তারিখে। (তাবারানি, হাদিস ১৮৫; তাফসিরে তাবারি, ২৪/৩৭৭)

২. রমজান ও কোরআনের উদ্দেশ্য একই: আল কোরআন ও রমজান মাসের উদ্দেশ্য একই, তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন আমরা যাতে মুত্তাকি হতে পারি।

এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকেদের প্রতি ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)

রমজান মাসের উদ্দেশ্য আমাদেরকে মুত্তাকি করা। আরে কই উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা'আলা সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব আল কোরআন অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ তাআলা পুরো মানবজাতির হেদায়েতের জন্য আল কোরআন নাজিল করেছেন। তবে আল কোরআনের মূল অর্থ বুঝে মনে উপলব্ধি করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালার মুত্তাকী বান্দারাই কেবল কোরআন পাঠ করে হিদায়াত পেতে পারে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

ذٰلِکَ الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚۖۛ فِیۡهِ ۚۛ هُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ

এটি আল্লাহর কিতাব। এতে কোনো সন্দেহ নেই, মুত্তাকিদের জন্য হিদায়াত। (সুরা বাকারা, আয়াত ২)

ইবনে বাত্তাল রহ. বলেন : রাসূলের এ কোরআন শিক্ষা ও অনুশীলনের একমাত্র কারণ ছিলো পরকালের আকাঙ্ক্ষা ও ব্যাকুল ভাবনার জাগরণ এবং পার্থিব বিষয়ে অনীহার সৃষ্টি করা। (ইবনে বাত্তাল, শরহে বোখারি, ১/১৩)

ইবনে হাজার রহ. বলেন : তেলাওয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য আত্মিক উপস্থিতি ও উপলব্ধি। (ফাতহুল বারি, ৯/৪৫)

এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, রমজান মাস ও আল কুরআনের উদ্দেশ্য একই। তাই রমজান মাসে কোরআন নাযিল করেছেন বলে ধারণা করা যায়।

৩. কোরআন সংরক্ষণের মাস রমজান: আল কোরআন সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নিজে নিয়েছেন। তবুও রমজানকে আল কোরআন সংরক্ষণের মাস বলা হয়।

তিনি বলেছেন :

اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوۡنَ

আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। (সূরা হিজর, আয়াত ৯)

আল্লাহ তাআলা বলেন,

اِنَّ عَلَيۡنَا جَمۡعَهٗ وَقُرۡاٰنَهٗۚ  ۖ‏

فَاِذَا قَرَاۡنٰهُ فَاتَّبِعۡ قُرۡاٰنَهٗ​ۚ‏

এটা সংরক্ষণ ও পাঠ করার দায়িত্ব আমার। যখন আমি তা পাঠ করি, তখন তুমি সে পাঠের অনুসরণ কর। অত:পর তা ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব আমারই। (সূরা কিয়ামাহ, আয়াত ১৭, ১৮)

আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াতে ঘোষণা করেছেন যে, আল কোরআন সংরক্ষণ ও পাঠ করার দায়িত্ব আল্লাহর অর্থাৎ ফিরিশতা (জিবরীল (আঃ)) এর দ্বারা যখন আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর কোরআন পঠের কাজ সম্পূর্ণ করে নেন তখন তার যাবতীয় বিধি-বিধান লোকদেরকে পাঠ করে শুনাতে এবং তার অনুসরণও করতে বলেছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এর জীবন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, আল কোরআন অনুশীলন করার জন্য রমজান মাস কে বাছাই করে নিয়েছেন। আর তাকে অনুসরণ করে তার সাহাবী গন ও একই কাজ করেছেন। এর সাথে তিনি রমজানে রোজা ফরজ করে দিয়ে তার সঙ্গে তারাবির মতো একটি কোরআনি আমল জুড়ে দিয়েছেন। 

আর বর্তমান সময়ে তারাবির নামাজ হাফেজে কোরআনদের কোরআন চর্চার জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ। এভাবে বিশ্বজুড়ে হাফেজদের ঐক্যবদ্ধ অনুশীলন করা হচ্ছে কোরআন। নবী (সাঃ) কে অনুসরণ করা হচ্ছে।

জিব্রাইল আলাইহি সাল্লাম আল্লাহ তাআলার হুকুমে সমস্ত রমজান মাস ব্যাপী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সঙ্গে প্রতি রাতে অবস্থান করতেন তার সহপাঠী হিসেবে। এই মাসে তিনি কোরআন অনুশীলনে ব্যস্ত থাকতেন। হাদিসে ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, জিবরাইল (আ.) রমজানের প্রতি রাতে রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং ফজর অবধি তার সাথে অবস্থান করতেন। (বুখারি, হাদিস ১৯০২)

জিবরাইল (আঃ) কে তিনি কোরআন শোনাতেন এবং তিনি ও শুনতেন। আর লাইলাতুল কদরের রাতে দীর্ঘ সময় ধরে কোরআন তিলাওয়াত করতেন। হাদিসে এসেছে, রাসূল তার প্রিয়তমা কন্যা ফাতেমাকে (রা.) গোপনে জানালেন যে, জিবরাইল প্রতি বছর (রমজানে) আমাকে একবার কোরআন শোনাতেন এবং শুনতেন, এ বছর তিনি দু বার আমাকে শুনিয়েছেন-শুনেছেন। একে আমি আমার সময় সমাগত হওয়ার ইঙ্গিত বলে মনে করি। (বুখারি, হাদিস ৩৬২৪)

ইবনে হাজার বলেন : জিবরাইল প্রতি বছর রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এক রমজান হতে অন্য রমজান অবধি যা নাজিল হয়েছে, তা শোনাতেন এবং শুনতেন। যে বছর রাসূলের ওফাত হয়, সে বছর তিনি দুইবার শোনান ও শোনেন। (ফাতহুল বারি, ১/৪২)

অন্য সব মাসের তুলনায় এই মাসে কোরআন তিলাওয়াতের সাওয়াব ৭০গুন বেশি। যেহেতু এই মাসেই সব চেয়ে বেশি কোরআন তিলাওয়াত ও অমুশীলন করা হয় তাই এই মাসকে কোরআন সংরক্ষণের মাস বলা যায়। রমজান মাড যেহেতু কোরআন সংরক্ষণের মাস সেহেতু এই মাসেই কোরআনকে নাজিল করা হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রমজান মাসে গুরুত্ব বোঝার ও বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত এর তৌফিক দান করুন। (আমিন)

লেখকের মন্তব্যঃ আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url