হজ্জ করার নিয়ম ও হজ্জ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা

হজ্জ

হজ্জ ইসলামী শরীয়তের অন্যতম ফরজ ইবাদাত। শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ্জের প্রথম ১০ দিনকে হজ্জের সময় ধরা হলেও মূলত 8 থেকে 12 জিলহজ্জ পর্যন্ত 5 দিনই হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। হজ্জের নির্ধারিত স্থান হলো কাবা শরীফ, সাফা-মারওয়া,মিনা, আরাফা ও মুযদালিফা। 


হজ্জের প্রতি গুরুত্ব করে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সূরা হজ্জ নামে একটি সূরা নাযিল করেছেন। মহান আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে হজ্জের নির্দেশ দিয়ে বলেন,

والحج إلى ذلك البيت في سبيل الله واجب على من استطاع إليه سبيلاً

অর্থ: মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়া সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই গৃহের হজ্জ করা তার আবশ্যক কর্তব।(সূরা আলে ইমরান আয়াত ৯৭)

হজ্জে আর্থিক ও শারীরিক শ্রমের সর্বনয় রয়েছে যা অন্য কোনটিতে নেই। ফরজ আদায় না করলে ইহুদি আশারার মত মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। রাসূল সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি হজ্জ করার সামর্থ্য রাখে তবুও করেনা সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খ্রিস্টান হয়ে তার কোন বড় আল্লাহর নেই। 

অন্যদিকে হজ্জের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জ করলো এবং এমন সময় অশ্লীল ও গুনাহের কাছ থেকে বিরত থাকলো সে নবজাতক শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে। আর মাবরুর হজ্জের বিনিময় তা জান্নাত ভিন্ন অন্য কিছু নয়। হজ্জ মানুষকে সফলতা প্রদান করে। 

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বলেন, হজ্জ ও ওমরা পরপর করতে থাকো। কারণ হজ্জ ও ওমরা উভয়েই দারিদ্র্য, অভাব এবং গুনাহ গুলোকে এমন ভাবে দূর করে দেয় যেমন আগুনের ওহাটি লোহা সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়।

হজ্জের প্রথম দিন মিনার (উদ্দেশ্যে যাত্রা)

৮ জিলহজ্জ হজ্জ থেকে ১২ জিলহজ্জ পর্যন্ত এই পাঁচ দিনকে হজ্জের প্রথম দিন বলা হয়। ৮ জিলহজ্জ সকালে হাজিগঞ্জ ইহরাম বাধা অবস্থায় মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। ৮ জিলহজ্জ যোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং ৯ জিলহজ্জের ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করা এবং রাতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নত।

হজ্জের দ্বিতীয় দিন (আরাফায় অবস্থান)  

হজ্জের দ্বিতীয় দিন ৯ জিলহজ্জ আরাফায় অবস্থান করা ফরজ। ফজরের নামাজ মিনায় পড়ে আরাফায় ময়দানের দিকে রওনা করতে হয়। প্রয়োজনে ফজরের আগে রাতেও আরাফার উদ্দেশ্যে রওনা করা যায়। আরাফার ময়দানে দুপুর ১২ টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হয়। আরাফার ময়দানে দোয়া কবুল হয়।

মুযদালিফায় অবস্থান

মিনা ও আরাফার মাঝখানে অবস্থিত ময়দানের নাম মুযদালিফা। এখানে দশ জিলহজ্জ রাত (নয় জিলহজ্জ দিবাগত রাত) অতিবাহিত করা হাজীদের জন্য ওয়াজিব। মুযদালিফায় পৌঁছে এশার ওয়াক্ত হলে এক আজান ও এক ইকামতে প্রথম মাগরিবের ফরজ তারপর এশার ফরজ পড়তে হয়।। 

এরপর মাগরিব ও এশার সুন্নাত এবং বিতর পড়তে হয়। মাগরিব ও এশার সালাত আদায়ের পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। এখানে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করা ওয়াজিব। এ রাতে জাগ্রত থাকা ও ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া মুস্তাহাব।

হজ্জের তৃতীয় দিন (পাথর নিক্ষেপ, কোরবানি, চুল মুন্ঠন ও তাওয়াফ)

হজ্জের তৃতীয় দিন ১০ জুলহজ মিনায় পৌঁছার পর এদিনের চারটি কাজ ধারা বাহিক ভাবে পালন করতে হয়।
  1. পাথর নিক্ষেপ করা : এই দিনে প্রথম কাজ হল জামা রায়ে আখ বাই গিয়ে সাতটি পাথর নিক্ষেপ করা। এটাকে জামা রাতুল কুবরা ও বলা হয়।
  2. কুরবানী করা : এই দিনে দ্বিতীয় কাজ হল দমে শুকর বা হজের সুপ্রিয়া সম্পন্ন কোরবানি করা। কিরান ও তামাত্তু হজ পালনকারীদের জন্য এটা ওয়াজিব। আরে ইফরাদ হজ্জ পালনকারীদের জন্য মুস্তাহাব।
  3. চুন মন্থন বা কর্তন করা : এই দিনের দ্বিতীয় কাজ হল হালোক বা কসর করা। চুল মুন্ঠন বা কতন করা ওয়াজিব। কুরবানী করার পর পুরো মাথার চুল মুন্টন করে ফেলা উত্তম। মন্টনকারীদের জন্য রাসুল সাঃ ৩ বার দোয়া করেছেন। তাই এতে ফজিলত বেশি। তবে মহিলারা চুলের অগ্রভাগ থেকে  সামান্য পরিমাণ কেটে ফেলবেন।
  4. তাওয়াফে জিয়ারত : এদিনের চতুর্থ কার্য হল তাওয়াফে জিয়ারত। একে তাওয়াফে ইফাজা বলা হয়। এটা হজ্জের শেষ রোকন। মিনাই উপরোক্ত কাজগুলো সেরে হাজিগণ মক্কাশরিফে গিয়ে তাওয়াফ জিয়ারত করবেন। তাওয়াফে জিয়ারতের কোন বদলা নেই এ তাওয়াফ করতে হবে এর কোন বিকল্প নেই।

হজ্জের চতুর্থ দিন (মিনায় রাতযাপন এবং পাথর নিক্ষেপ)

১১ ই জিলহজ্জ মিনায় রাত যাপন সুন্নত। এদিন মিনায় তিন জামারায় পাথর মারা ওয়াজিব। দুপুরের পর প্রথমে জামাটায়ের সুগ্রা, (মসজিদে খাই ফের সন্নিকটে) অতঃপর জামা রায়ে উসতা,সর্বশেষ জামারায় আকাবায় সাতটি করে মোট ২১ টি পাথর নিক্ষেপ করতে হবে। প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সময় তাকবির বলতে হবে।

হজ্জের পঞ্চম দিন ( মিনায় রাতযাপন এবং পাথর নিক্ষেপ)

১২ ই জিলহজ্জ এর আগের দিনের মতো মিনায় রাতযাপন সুন্নত। মিনায় তিন জমানায় পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব।

বিদায় তাওয়া

পবিত্র মক্কা থেকে বিদায় এর আগে বিদায়ী তাওয়াফ ওয়াজিব। প্রত্যক্ষ হাজী সাহেবের উচিত মাকামে ইব্রাহিমে দুই রাকাত নামাজ পড়ে মূল তাজাম, কাবার দরজা ও হাতিমে দোয়া করা জমজমের পানি পান করেও দোয়া করা এবং বিদায়ের বেদনা দিয়ে কাবাঘর থেকে বিদায় নেওয়া। তাওয়াফে বিদায় না করলে দম দিতে হবে।

হজ্জের প্রকারভেদ

 হজ্জ তিনভাবে আদায় করা যায় যথা: 
  • তামাত্তু,
  • কিরান ও 
  • ইফরাদ।

তামাত্তু হজ

হজ্জের মাস গুলোতে হজের সফরে বের হওয়ার পর প্রথমে শুরু ওমরা এর ইহরাম বাধা এবং ওমরা সম্পন্ন কাজের হালাল হয়ে যাওয়া। এরপর ৮ জিলহজ্জ তারিখে হজ্জের ইহরাম বেদে হজের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করাকে তামাত্তু হজ্জ বলে।

তামাত্তু  হজ্জের নিয়ম

হজ্জ পালনকারী হজ্জের মাসগুলোতে প্রথমে শুরু ওমরা এর জন্য তাল বিয়া পাটের মাধ্যমে ইওরাম বাঁধবেন। তারপর তাওয়াফ ও সাই সম্পন্ন করে মাথামুণ্ড অথবা চুল ছোট করার মাধ্যমে ওমরা পালন সম্পন্ন করে ইহরান থেকে হালাল হয়ে যাবেন এবং স্বাভাবিক কাপড় পরে নেবেন। ইওরাম অবস্থায় হারাম কাজগুলো তার তার জন্য হালাল হয়ে যাবে। 

তারপর জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে মিনা যাওয়ার আগে নিজ অবস্থান থেকে  হজ্জের ইহরাম বাঁধবেন। তারপর যথাযথ নিয়মে  হজ্জে যাবতীয় কার যুবলী সম্পন্ন করবেন। আমার তো হজ্জ কারীর জন্য এক শহরের দুটি ইবাদতের সুযোগ লাভের শুকরিয়া সম্পন্ন আদিবা পশু জবাই করা ওয়াজিব।

কিরান হজ্জ

এক সফর ও এক ইউরামে ওমরা ও হজ্জ আদায় করাকে কিরান হজ্জ বলে। অর্থাৎ  হজ্জের সফরে ইহর আম্বেদে প্রথমে ওমরা আদায় করা এবং ওই ইহরাম বেদে হজে নির্ধারিত দিনে  হজ্জের কার্যবলি সম্পন্ন করাকে কিরান হজ্জ বলে।

কিরান হজ্জ এর নিয়ম

মিকা থেকে ইউরাম বাধার সময় একই সঙ্গে হজ্জ ও উমরার জন্য লাব্বাইকা ওমরা দান ওয়াহজ্জান বলে তাল বিয়া পাট শুরু করা। তারপর মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরা আদায় করা এবং ইহরাম অবস্থায় মক্কা অবস্থান করা। অতঃপর হজ্জের সময় আরজিল হজ্জ ইউরাম সহ মিনা আরাফা মুজদালিফাই গমন এবং হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।

ইরান হজ্জ কারের জন্য এক সফরের দুটি ইবাদতের সুযোগ লাভের সুপ্রিয়া সম্পন্ন আদিবা পশু জবাই করা ওয়াজিব।

৩.ইফরাদ হজ্জ

হজ্জের মাসগুলোতে শুরু হজে ইহরামবেদে হজ্জের কার্যক্রম সম্পন্ন করাকে ইফরাদ হজ্জ বলে।

ইফরাদ হজ্জের নিয়ম

হজ্জের মাসগুলো তো শুরু হজে ইহরা বাধার জন্য লাব্বাইকা হজ্জান বলে তালবিয়া পাট শুরু করা। এরপর মক্কায় প্রবেশ করে তাওয়াফে কদম অর্থাৎ আগমনী তাওয়াফ এবং হজ্জের জন্য সাই করা।অতঃপর 10ই জিলহজ্জ কুরবানী দিন হালাল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থাকা। এরপর হজ্জের অবশিষ্ট কাজগুলো সম্পাদন করা।

উত্তম হজ্জ

এ তিন প্রকার হজের মাধ্যমে সওয়াবের দিক দিয়ে ও সর্বোত্তম হলো কিরান, এরপর তাম্মাতু, এরপর ইফরাদ। তবে আদার সহজ হওয়া দিক থেকে প্রথমে তাম্মাতু, এরপরই ইফরাদ তারপর কিরান। পালন করা সবচেয়ে সহজ হওয়ার অধিকাংশ বাংলাদেশী তামা তো হজ্জ আদায় করে থাকেন। 

আর যারা অন্যের বদলি হজ্জ করতে জান বা যাদের অবস্থান মিকাতে মধ্য, তারা সাধারণত ইফরাদ হজ্জ করেন। এছাড়া কিছু সংখ্যক হাজী কিরণ হজ্জ করেন, যাদের সংখ্যা খুবই কম। ইওরাম দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে নিষেধগুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে না পারায় আশঙ্কা থাকে হজ্জের তাম্মাত্ত ই উত্তম।

বদলি হজ্জ

ইসলামের পঞ্চম স্তবও হচ্ছে হজ্জ। এটি মুসলিম উমরাহর অন্যতম ইবাদত। একে জিহাদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এতে সাওয়াব বেশি এবং উপকারিতা অনেক। এই ইবাদতের জন্য রয়েছে বিশেষ দুটি শর্ত। একটি হলো সম্পদশালী হওয়া আর অন্যটি হলো শারীরিকভাবে সক্ষম হওয়া। বিধানগত দিক থেকে হজ্জ আদায় করা সহজ কিন্তু এর জন্য সফর করতে হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জমায়েত। 

বিশেষ বিশেষ স্থানে একসঙ্গে এই ইবাদত আদায় করতে হয়। তাই এটি কঠিনও কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে অনেক মানুষের আর্থিক সমস্ত থাকা সত্ত্বেও শারীরিক অক্ষমতার কারণে তা আদায় করা অসম্ভব হয় না। এ ধরনের মাজুরদের প্রতি দয়া করে আল্লাহ তায়ালা বদলি হজ্জ এর অবকাশ দান করেছেন।

অনেকে মনে করেন বদলি হজ্জের ওর জন্য আলাদা কোন নিয়ম আছে। তা ঠিক নয় যেভাবে নিজের হজ্জ আদায় করা হয় সেভাবে বদলি হজ্জ আদায় করা হয়। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে নিহত ও তাল বিয়ার সময় বদলি হজ্জেরপ্রেরণকারীর পক্ষ থেকে হজ্জের নিয়ত করতে হয়। 

এরপর হজ্জের সকল কার্যক্রম শেষ করতে হয়। হজ্জের নিয়ম এক হলেও বদলি হওয়ার সংক্রান্ত কিছু সময় এমন আছে যা বদলি হজ্জের প্রেরণকারী ও প্রেরিত উভয়ের জানা থাকা জরুরী।

বদলি হজ্জের প্রামাণ্যতা

যদি কোন ব্যক্তি ফরজ হজ্জ আদায় করতে অক্ষম হয় তাহলে তার পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে অন্য কোন ব্যক্তি হজ্জ পালনকে বদলি হজ্জ বলে। কয়েকটি হাদিস থেকে বদলি হজ্জের বিধান পাওয়া যায়। যেমন:
  • খাস আম গোত্রের জন্য মহিলার আসল সালামকে বললেন ইয়া রাসুল আল্লাহ সাঃ তার বান্দাদের ওপর যে ফরজ অপরূপ করেছেন তা আমার পিতা কে খুব বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েছে। তিনি বাহনের ওপর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না। তবে কি আমি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করে দেব? তিনি বললেন হ্যাঁ। ঘটনাটি ছিল বিদায় হজ্জের সময়কার।
  • রাসুলুল্লাহ সাঃ এক ব্যক্তিকে বললেন শুনলেন শুভ্র আমার পক্ষ থেকে লাব্বাইক। তিনি বললেন শুভ্রা মাকে? লোকটি বললো আমার ভাইবা আত্মীয়। তিনি বললেন তুমি কি নিজের হজ্জ করেছ ? সে বলল না। তিনি বললেন আগে নিজের হজ্জ করো। তারপর শুভ্রমার হজ্জ।
তিন প্রকার হজ্জের মধ্য বদলি হওয়ার জন্য কোন প্রকার হবে তা যে ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ করা হচ্ছে তিনি নির্ধারণ করে দেবেন। যদি ইফরাদ করতে বলেন তাহলে ইফরাদ করতে হবে যদি কিরান করতে বলে তাহলে কিরান করতে হবে আর যদি তামাত্তু করতে বলে তাহলে তাই করতে হবে। এরনাক্ত হলে হবে না। বদলি হজ্জ ইফরাদ হতে হবে এমন কোন কথা নেই।

বদলি হজ্জ যখন করতে হয়

  1. হজ্জ ফরজ হওয়ার পর আদায় না করে মৃত্যুবরণ করলে।
  2. হজ্জ ফরজ হওয়ার পর তা আদায়ের আগে বন্দি হলে।
  3. এমন অসুস্থ হলে যাতে ভালো হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
  4. শারীরিকভাবে চলাচলের এর অক্ষম হয়ে গেলে।
  5. দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেললে বা একেবারে অন্ধ হয়ে গেলে।
  6. এমন বড় বৃদ্ধ হয়ে গেলে যে বাহনে চলাচলের ক্ষমতা নেই।
  7. নারী তার হজের সফরে স্বামী বা উপযুক্ত মাহোরম পুরুষ সঙ্গী না পেলে।
  8. কোন কারনে রাস্তা ও নিরাপদ হলে।
  9. সফর করতে গেলে যান মালের ক্ষতি আর সংখ্যা থাকলে।
এসব কারণে ওই ব্যক্তিকে মাজুর বা অক্ষম গণ্য করা হবে এবং সে নিজের পক্ষ থেকে বদলি হজ্জ করাতে পারবে।

বদলি হজ কে করবেন

যে ব্যক্তি নিজের জন্য হজ্জ আদায় করতে ফরজ হয়ে গেছে, তার নিজের ফরজ হজ্জ আগে আদায় করতে হবে, তারপর অন্যের বদলেও যাচাই করতে পারবেন,। আর যে ব্যক্তির উপর হজ্জ ফরজ হয়নি তিনি নিজে হজ্জ না করলেও অন্যের বদলি হজ্জ আদায় করতে পারবেন। 

তাই প্রত্যেক বিবেকবান মুসলিমের উচিত বদলি হজ করানোর আগে ব্যক্তির সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানা। তারপর ওই ব্যক্তির মাধ্যমে বদলে হজ করানো। যিনি বদলিহজ্জ আদায় করবেন তাকে ইহরামের সময় অবশ্যই যার বদলি হজ আদায় করেছেন তার নামে নিয়ত করতে হবে।

যে ব্যক্তি নিজের ফরজ হজ্জ আদায় করেছেন তার জন্য নফল হজ্জ করার চেয়ে অন্য কারো বদলি হজ্জ করার উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ইরশাদ করেছেন কোন ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে বদলি হজ্জ করলে সেও মিথ্যের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।

হযরত হাসান বস্তি রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু বলেছেন, যে ব্যক্তি কারো পক্ষ থেকে বদলি হজ্জ করবে তার জন্য ওই ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াবের আশা করা যায় ।

সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় হজের গুরুত্ব

জুম্মা ও ঈদের সালাত সীমিত বরিশালে মুসলমানদের মাঝে সাম্য ও ঐক্য সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু বিশ্ব মুসলিমের মাঝে সাম্য ও ঐক্য সৃষ্টি ভূমিকা রাখতে পারে একমাত্র হজ্জ। ইওরাম বেদে লাব্বাইক বলে যখন হারাম শরীফের চতুর্দিক থেকে মানুষ ছুটে আসে এবং বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করতে থাকে তখন সাদা কালো ছোট বড় ধনী-দরিদ্র সকল ভেদাভেদ লোভ পায়। 

জগৎ সময়ে স্রষ্টা আমাদের একমাত্র প্রভু ডাকে সাড়া দিয়ে তারা সেখানে হাজির হয়। সাম্য প্রতিষ্ঠায় সেখানে সুগন্ধি ব্যবহার করা টুপি জামা-পাগড়ি পরিধান করা নিষিদ্ধ, এমনকি মাথার চুল পর্যন্ত ছেঁটে ফেলতে হয়। হজ ব্যতীত এমন কোন অনুষ্ঠান নেই যা এত ভিন্ন ভিন্ন দেশের এত ভিন্ন ভিন্ন বংশের ও বর্ণের মানুষকে একই রূপে বিচিত্র করতে পারে। 

সাম্যের অপূর্ব চিত্র ফুটে উঠে যখন সবাই একত্রে চিরসূত্র শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করে, সাফা মারওয়ায় দৌড়াই, আরাফার ময়দানে অবস্থান করে। মিনাই গমন করে এবং আল্লাহর রাহে একত্রে পশু কোরবানি করে। ফলে দুনিয়ায় প্রচলিত ভেদাভেদের কথা মাথায় মনে স্থাপন করে না। এমন অগ্রিম সাম্য ও ঐক্য আর কোথায় দেখা যায়।

বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় হজ

মুসলমানদের ইতিহাসে সর্ব বৃহত্তর ইসলামী মহাসম্মেলন হচ্ছে হজ্জ। এটি আদায়ের লোককে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মুসলমান পবিত্র মক্কা নগরীতে মিলিত হয়। নানাবিদ ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও এ সময় সকলে ভাই ভাই হয়ে সম্মিলিতভাবে হজের কার্যাবলী পূর্ণ করে, একে অপরকে সহযোগিতা করে। ফলে মুসলমানদের মাঝে বিশ্ব ভাতৃত তৈরি হয়।মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন

وأعلن في الناس الحج، سيأتونك إلى مكة سيرًا على الأقدام، ويأتيون على الإبل بجميع أنواع الطعام. سوف يأتون عبر مسافة طويلة

অর্থ: এবং মানুষের নিকট হজের ঘোষণা দিন তারা আপনার নিকট আসবে মক্কায় পায়ে হেঁটে ও সর্বপ্রকার ক্ষিন্নকার উটের পিঠে আহরণ করে। তারা আসবে দূর দূরান্ত পথ অতিক্রম করে। (সূরা আল হাজ্জ, আয়াত ২৭)

হজ্জ পালনের সময় সবার পোশাক একই ধরনের থাকে। সকলের সম্মিলিত কন্ঠে আওয়াজ করে বলতে থাকে লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক অর্থাৎ হাজির হে আল্লাহ। আমরা তোমার দরবারে হাজির। এক অতুলনীয় আবেগঘণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। 

পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষ একত্রিত হয়। ফলে বিভিন্ন দেশের মানুষের বিভিন্ন বৈচিত্র্য পূর্ণ সংস্কৃতি দেখা ও জানার সুযোগ হয়। তাদের মাঝে আলোচনা করার জন্য ও সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি হয়।

জিলহজ্জের নয় তারিখ আরাফার ময়দানের ইমাম সাহেব বিশ্ব মুসলিমদের উদ্দেশ্যে জ্ঞানগর্ভ খুতবা দেয়। তাতে আগামী বছরের জন্য মুসলিম উমরা হওয়ার করনীয় ও বর্জনীয় বিশেষ বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকে।

হজ্জ থেকে শিক্ষা লাভ করে আমরা বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধ করবো। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সাম্য প্রতিষ্ঠার শপথ নেব।

লেখকের মন্তব্যঃ আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url