সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভবস্থায় যে ৯ টি বিষয় মাথায় রাখবেন বিস্তারিত জেনে নিন

সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভাবস্থায় যে যে বিষয় গুলো মাথা রাখতে হবে জেনে নিন আমাদের এখানে। অনেকই এই বিষয় গুলো জানে না যার ফলে পেটের বাচ্চার অনেক সমস্যা দেখা যায়। তাই আমাদের আজকের এই আলোচনায় আমরা আপনাদের জন্য সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভাবস্থায় কি কি করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।


একটি শিশু সুস্থ সবল ভাবে জন্মাবে কিনা সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করে থাকে মায়ের জীবনযাত্রার উপর। তাই গর্ব অবস্থায় কোন কাজগুলো করবেন আর কোনগুলো করবেন না সেগুলো নিয়ে আজকের বিস্তারিত আলোচনা করবো। এটিকে ৯ টি উপায়ে ব্যাখ্যা করব। সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভাবস্থায় যে যে কাজ করণীয় চলুন জেনে নেওয়া যাক।

কোন ধরনের খাবার খেতে হবে

শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে এক গর্ভবতী নারীকে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম, আইরন ও আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেটা কিনা মৌসুমী ফল, টাটকা শাকসবজি, ডাল, বাদাম, মাছ, মাংস, ডিম ও পাস্তরিত দুধে পাওয়া যায়। 

তাই ভাত কম খেয়ে এসব খাওয়ার বেশি বেশি করে খাওয়া উচিত। এছাড়া দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি খাওয়াও বেশ উপকারী। তবে হ্যাঁ ফল বা সবজী গুলো খাওয়ার আগে সুন্দর করে ধুয়ে পরিষ্কার করে তারপর খেতে হবে। 

মাছ মাংস ডিম যেটাই খান না কেন পুরো পুরিভাবে সেদ্ধ করে খেতে হবে। কাঁচা আদাসেদ্ধ খাবার, বাসি ও ভেজাল মেশানো খাবার টেস্টিং সল্ট, প্রসেসড ফুড,জাঙ্ক ফুড,ফাস্টফুড - এইসব খাবার থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই উত্তম। 

কারণ এই সবে ক্ষতিকর তেল চর্বি চিনি ও লবণ থাকে। ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন চা কফি চকলেট ও কমল পানীয় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন ২০০ মিলিগ্রামের বেশি খাবেন না। তবে সবচেয়ে জরুরী হলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ধূমপান এড়িয়ে চলুন।

ঘুমানোর নিয়ম ও সময়

গর্ভবতী মায়ের রাতের বেলা ৮ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমের কোন বিকল্প নেই বললেই চলে। এছাড়াও দিনের বেলাতেও ২-১ ঘন্টা বিশ্রাম করার ও পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন বিছানায় বাম সাইড হয়ে ঘুমানো উচিত। সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ঘুমানো প্রয়োজন। এর ফরে গর্ভবতী মা ও বাচ্চা দু'জনে সুস্থ থাকে। 

একজন গর্ভবতী নারীর সঠিক নিয়মে ঘুমের কোনো বিকল্প নেই এর ফলে শরীর ও মন ভালো থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা রাতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

গর্ভবতী মায়েদের প্রতি প্রতিদিন দুইবার ব্রাশ করা উচিৎ এবং এর পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়মিত সাবান পানিতে গোসল করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে গোসল করার স্থান যেন পিচ্ছিল না হয়। চেষ্টা করুন টুল বা চেয়ারে বসে গোসল সম্পন্ন করার। পানির গামলা, মগ, কল,সাবান যা যা প্রয়োজন সেগুলো সব হাতের কাছে রাখবেন যেন ঝুঁকে পড়তে না হয়। 

পুকুর পাড়ে বা টিউবয়েল চেপে গোসল করতে গেলে আরেকজনের সাহায্য নিতে হবে না হলে বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভাবস্থায় পরিষ্কার-পরিছন্নতা থাকা আবশ্যক। এছাড়াও ত্বকের যে কোন প্রসাধনী ও অ্যান্টিসেপটিক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞ রা বলেন সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা কে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

কেমন পোশাক পরিধান করতে হবে

গর্ভবতী মায়েদের এমন পোশাক পড়তে হবে যেন আরামদায়ক হয় ও চলাচলে সুবিধাজনক। তবে কোনো অবস্থায় উঁচু হিল বা ফিতাওয়ালা জুতা ও স্লিপকার্টে এমন ধরনের জুতা পড়া যাবে না এতে করে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। পায়ের মাপ অনুযায়ী ঢিলা ও আরামদায়ক ফ্যাল্ট জুতা পরুন। সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভাবস্থায় এইসব বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

চলাফেরা ও করনীয় কি

বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভকালীন অবস্থায় প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস অনেক সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। শরীর বা মনে কোনরকম বাড়তি চাপ নেওয়া যাবে না। দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে না থেকে চলাচল করুন।এ সময় দূরে কোথাও ভ্রমণ বা বিমান যাত্রা উত্তম বলে বিশেষজ্ঞরা।অব্রো থেব্রো রাস্তা বা পিচ্ছিল রাস্তায় চলাচল বা সিঁড়ি দিয়া ওঠা নামার সময় সাবধান হতে হবে। 

কোন অবস্থাতে ভারী কোন বস্তু তুলবেন না। এ সময় অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলায় উত্তম। গর্ভকালীন অবস্থায় নিচে ঝোঁকে কোন কিছু তোলা বা উঠানো জাবে না।

চিকিৎসা, টিকা, ও ওষুধ

আপনি যদি বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসককে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল ইতিহাস জানিয়ে রাখবেন। যেমন আপনি আগে কতবার গর্ভধারণ করেছেন, গর্ভপাত হয়েছিল কিনা, শিশুর মা বাবা ও তাদের পরিবারের কারো গুরুতর অসুস্থতা আছে কিনা সেগুলো খুলে বলতে হবে। এর ফলে চিকিৎসকরা আপনার পরিস্থিতি বুঝে আপনাকে প্রয়োজনীয় টেস্ট অনুযায়ী টিকা,ও ঔষধ দিবে। সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভাবস্থায় এইসব আবশ্যক।

মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য

গর্ভবতী মায়েদের হরমোনের নানা রকম পরিবর্তন দেখা যায় এর ফলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পরে। এ সময় তারা শিশুর ভবিষ্যৎ বা গর্ভকালীন শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে অতিরিক্ত মানসিক আবেগ, মানসিক চাপ,হীনমন্যতা, দুশ্চিন্তা বা হতাশায় ভোগে। এক্ষেত্রে অনেক গর্ভবতী নারীরা ধ্যান বা ধর্মচর্চার মাধ্যমে মনকে স্থির রাখার চেষ্টা করে।

তুমি ছাড়াও বই পড়ে, ভালো সিনেমা দেখে কিংবা পরিবার /বন্ধু-বান্ধবের সাথে হাসিখুশি সময় কাটাতে পারেন। বাড়ি হোক কিংবা অফিস কোথাও গর্ভবতী নারীকে অতিরিক্ত কাজের চাপ বা মানসিক চাপে রাখা যাবে না। 

গর্ভবতী নারীর প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও গর্ভধারণের প্রথম ও শেষের তিন মাস সহবাসের থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভাবস্থায় শাড়ি কমানো উচিত চাপ নেওয়া আমি নিষিদ্ধ বলে চিকিৎসকরা।

শিশুর সাথে যোগাযোগ

চিকিৎসকদের মতে গর্ভধারণের কয়েক মাসের মধ্যে শিশুরা বাইরের জগতের শব্দ শুনতে তাই এবং মায়ের অনুভূতি শিশু উপলব্ধি করতে পারে।তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেয় এ সময় মা বাবা দুইজনেরই উচিত হবে শিশুর সাথে কথা বলা, গল্প করা। এ সময় চেষ্টা করুন ডিভাইসের ব্যবহার করা যতটা কমানো যায়। 

কারণ এর থেকে নির্গত বিকিরণ শিশুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। বিশেষ করে উচ্চ শব্দ যুক্ত পরিবেশ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভাবস্থায় মায়েদের এইসব বিষয় গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

পোষা প্রাণী

আপনার বাড়িতে যদি সব প্রাণী অথবা বাড়ির আশেপাশে যদি কোন খামার থাকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে। 

সময় প্রাণীর সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেই বৃটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ প্রাণী দেহে অনেক ক্ষতিকার জীবাণ থাকে যার ফলে বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়

লেখকের মন্তব্য

আমরা চেষ্টা করি আপনাদের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরার। আমাদের আজকের আলোচনায় আপনার সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য গর্ভাবস্থায় কি কি করনীয় তা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আমাদের এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনাদের একটুও উপকার হয় তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনারা আমাদের কাছে কোনো কোন ধরনের পোস্ট চান। আমরা চেষ্টা করবো সেইসব পোস্ট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url