পবিত্র কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা এবং তার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন
আল কুরআনের প্রথম সূরা হচ্ছে সূরা ফাতিহা। ফাতিহা শব্দের অর্থ সূচনা। এ সূরা দ্বারা কোরআনের সূচনা করা হয়েছে বিধায় এর নাম করণ করা হয়েছে সূরা ফাতিহা। ফাতিহাশব্দটি এসেছে ফাতহুন থেকে যার অর্থ উন্মুক্তকরণ। সূরা ফাতিহার আয়াত সংখ্যা ৭ টি রুকু সংখ্যা ১ টি। সূরা ফাতিহার মধ্যে ২৯ টি শব্দ রয়েছে। সূরা ফাতিহাকে মক্কী সূরা বলা হয় কারণ এসূরা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
সূরা ফাতিহা হলো হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। নবুওয়াত প্রাপ্তির প্রথমদিকেই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সূরা ফাতিহা অবতীর্ণ হয়।
সুরা ফাতিহার মূল বিষয়বস্তু হলো আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা। এই সূরার সুরা ফাতিহা ছাড়াও আর কয়েকটি নাম রয়েছে। যেমন- ফাতিহাতুল কিতাব, উম্মুল কিতাব, সূরাতুল-হামদ, সূরাতুস-সালাত, আস্-সাবউল মাসানী এবং সূরাতুস শেফা। প্রতিটি নামের পেছনে নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে।
সূরা ফাতিহা কে ফাতিহাতুল-কিতাব" বা "কুরআনের উপক্রমণিকা" বলা হয়। কারণ, সূরা ফাতিহা হচ্ছে আল-কোরআনের সর্বপ্রথম এক নম্বর সূরা। আর নামাজের কেরাতের সূচনা স্থলেও সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক।
আরও পড়ুনঃ সুরা ইয়াসিনের ফজিলত
সূরা ফাতিহা কে উম্মুল কিতাব বা কোরআনের জননী ও বলা হয়ে থাকে। কারণ আল কুরআনের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে সুরা ফাতিহা। সুরা ফাতিহার মূল বিষয় দুইটি আল্লাহর প্রশংসা করা ও আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা। সূরা ফাতিহার এ বিষয়বস্তুগুলো আল কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এ সূরাকে উম্মুল কিতাব বা কোরআনের জননীও বলা হয়।
সূরা ফাতিহাকে সূরাতুল-হামদও বলা হয়। হামদ শব্দের অর্থ প্রশংসা। সুরা ফাতিহায় আল্লাহ তায়ালা প্রশংসা করা হয় তাই এই সূরা সুরাতুল-হামদ নামেও পরিচিত। সূরা ফাতিহা কে সূরাতুস-সালাতও বলা হয়। কারণ সুরা ফাতিহা নামাজে পাঠ করা অবশ্যক করে দিয়েছেন আল্লাহ তা'আলা।
অনেক হাদিস বিশারদের মতে, হাদিসে ‘আসসাবউল মাছানি’ বলতে এ সূরাকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, আসসাবউ অর্থ সাত, আর আল মাছানি অর্থ প্রশংসা করা। এ সূরার আয়াত সাতটি এবং প্রত্যেক আয়াত পাঠ করে আল্লাহর প্রশংসা করা হয়। আবার মাছানির আরেক অর্থ আছে পুনরাবৃত্তি। প্রত্যেক নামাজের প্রত্যেক রাকাতে এ সূরা পাঠের পুনরাবৃত্তি করা হয়। তাই সুরা ফাতিহাকে আস্-সাবউল মাছানিও বলা হয়।
সূরা ফাতিহাকে সূরাতুস-সশফাও বলা হয়ে থাকে। কারণ এর সুরার ব্যবহারে অনেক জটিল ও কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য পাওয়া যায়। সূরা ফাতিহার রোগ মুক্তির বৈশিষ্ট্যের জন্য এই সূরাকে সূরাতুস-শেফা বলা হয়ে থাকে।
পবিত্র কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা কোনটি?
পবিত্র কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা হচ্ছে সূরা ফাতিহা। এ সুরা প্রসঙ্গে হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সব আসমানি গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ সুরা ‘শুধু কোরআনুল কারিমে তো নয়-ই; বরং কোরআন ছাড়া যতো আসমানি কিতাব দুনিয়ায় নাজিল হয়েছে তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল; কোনো গ্রন্থেই মর্যাদার দিক থেকে সুরা ফাতিহার সমকক্ষ কোনো সুরা বা কোনো অংশ নাজিল হয়নি।’ (মুসনাদে আহমাদ)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সুরা ফাতেহা শেখানোর সময় বলেছিলেন, কোরআনুল কারিমে যত সুরা আছে তার মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে সবচেয়ে আজম, সবচেয়ে মহত, সবচেয়ে মহান ও শ্রেষ্ঠতম সুরা।’ (বুখারি)
একবার আল্লাহর নবী (সা.) এক সাহাবিকে বললেন, আমি কি তোমাকে বলে দিব, কোরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সূরা কোনটি? সাহাবি বললেন, অবশ্যই। তিনি বললেন, আল হামদু সূরার আরেক নাম সাবয়ে মাছানি। আর এটাই কোরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সূরা। আমাকে এ সূরা দান করা হয়েছে।
আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, এ সূরার মতো মর্যাদাপূর্ণ কোনো সূরা আল্লাহতায়ালা তাওরাতে অবতীর্ণ করেননি, ইঞ্জিলে অবতীর্ণ করেননি। এমনকি কোরআনেও দ্বিতীয়টি অবতীর্ণ করেননি।
আবু সা'ইদ বিন আল-মু'আললা বলেছেন, "যখন নবী আমাকে ডেকেছিলেন তখন আমি প্রার্থনা করছিলাম, সুতরাং নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি তাকে উত্তর দিলাম না। আমি তখন তার কাছে গেলাম এবং সে বলল, 'তোমাকে আসতে বাধা দেয় কি?' আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি প্রার্থনা করছিলাম।' তিনি বললেন, 'আল্লাহ কি বলেননি,' হে ইমানদারগণ! আল্লাহকে (তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে) এবং (তাঁর) রাসূলের উত্তর দিন, যখন তিনি আপনাকে তাঁর কাছে ডাকেন, যা আপনাকে জীবন দান করে। " ?
' তিনি তখন বলেছিলেন, 'আপনি মসজিদ ছেড়ে যাওয়ার আগে আমি আপনাকে কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা শিখিয়ে দেব।' তিনি আমার হাতটি ধরেছিলেন এবং যখন তিনি মসজিদ ছেড়ে যাচ্ছেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলেছিলেন: "আমি আপনাকে কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা শিখিয়ে দেব।" উত্তরে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ' "আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল-আলামীন," এটি সাতটি বারবার আবৃত (আয়াত) এবং আমাকে দান করা মহিমান্বিত কুরআন। " (আল বুখারী, আবু দাউদ, আন-নাসাই এবং ইবনে মাজাহ)
উক্ত হাদিস গুলো দ্বারা প্রমাণিত যে, আল কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বা সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা হচ্ছে সূরাতুল ফাতিহা।
আরও পড়ুনঃ সূরা ইখলাস পড়ার ফজিলত
সুরা ফাতিহার গুরুত্ব-
উম্মুল কোরআন: সূরা ফাতিহা কে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ কোরআনের জননী বলা হয়। কারণ, আল কোরআনে যে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তার মূল কথা অর্থাৎ সারমর্ম হলো সুরা ফাতিহা। আল-কোরআনে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের স্বীকৃতি রয়েছে। মানুষকে শিরকমুক্ত ইবাদতে একনিষ্ঠ হওয়ার আদেশ রয়েছে। আল কোরআনের মৌলিক বিষয়গুলো সূরা ফাতিহার মধ্যে থাকার কারণে সূরা ফাতিহা কে উম্মুল কোরআন অর্থাৎ কোরআনের জননী বলা হয়।
নামাজের জন্য আবশ্যক: আল্লাহ তাআলা সূরা ফাতিহাকে এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ সূরা হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন যে, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ- নামাজের জন্য সুরা ফাতিহা কে আবশ্যক করে দিয়েছেন। ফরজ, সুন্নাত, নফল, কিংবা ওয়াজিব যে নামাজই হোক না কেন সূরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক সুরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ আদায় হবে না।
সূরা ফাতিহা এতো বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে আল-কোরআনের ১১৪ টি সূরার মধ্যে সুরা ফাতেহাকে নামাজের জন্য আবশ্যক করে দিয়েছেন। হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বলেছেন যে নবী বলেছেন, "যে ব্যক্তি এমন কোন সালাত আদায় করে যাতে সে উম্মুল কুরআন (যেমন, আল-ফাতিহা) পড়ে না, তবে তার সালাত অসম্পূর্ণ।" (সহিহ মুসলিম)
দোয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ: আবু হুরায়রাহ বলেছিলেন যে মুহাম্মাদ বলেছেন, কেউ যদি এমন প্রার্থনা দেখে যেখানে সে উম্মুল কুরআন তিলাওয়াত করে না, তবে এর ঘাটতি রয়েছে [তিনি এই তিনবার বলেছেন] এবং তা সম্পূর্ণ হয় না। ( মুসলিম ইবনে আল-হাজ্জাজ, সহিহ মুসলিম)
সূরা ফাতিহার ফজিলত-
আলোর সুসংবাদ: হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিলেন, আমি আপনাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দুইটি নুর তথা আলোর সুসংবাদ দিচ্ছি। তার একটি হলো- সুরাতুল ফাতেহা। আর দ্বিতীয় হলো- সুরা বাকারার শেষের আয়াতসমূহ।’ (মুসলিম)
হযরত জিব্রাইল (আঃ) যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বসে ছিলেন, তখন তিনি তাঁর উপরে একটি শব্দ শুনলেন এবং মাথা উঠালেন। তিনি বললেন: 'এটি আকাশের একটি দরজা যা আজ খোলা হয়েছে এবং যা আজকের আগে কখনও খোলা হয়নি।' সেখান থেকে একজন ফেরেশতা নেমে এসেছিলেন।
এবং তিনি (হযরত জিব্রাইল) বলেছেন: 'এটি এমন এক ফেরেশতা যিনি পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন, যিনি এর আগে কখনও অবতরণ করেননি।' তিনি (সেই ফেরেশ্তা) শান্তির শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেনঃ দুটি নূরের সুসংবাদ দাও; যার পূর্বে আপনার কোন নবীকে দান করা হয়নি: কিতাবের সূরা ফাতিহা (সূচনা অধ্যায়) এবং সূরা বাকারার শেষ। আপনি তাদের এটি দেওয়া ছাড়া একটি শব্দও পাঠ করবেন না। ( মুসলিম ইবনে আল-হাজ্জাজ, সহিহ মুসলিম)
একবার হজরত জিবরাঈল (আ.) নবী করিম (সা.)-এর কাছে বসাছিলেন। হঠাৎ উপরের দিকে বিকট একটি শব্দ শোনে উপরের দিকে তাকালেন। বললেন, এটা আকাশের একটি দরজা খোলার শব্দ। এ দরজা আগে কখনোই খোলা হয়নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতরণ করলেন। যিনি আগে কখনোই দুনিয়াতে আসেননি। তিনি নবীজীকে সালাম করলেন।
আরও পড়ুনঃ কে রাসুল (সাঃ) কে ঋণ দিয়েছিলেন
বললেন, আপনাকে দু’টো আলোর সুসংবাদ দিচ্ছি। যা আপনার পূর্বের কোনো নবীকে কখনো দেওয়া হয়নি। একটি হলো- সূরা ফাতিহা। দ্বিতীয়টি হলো- সূরা বাকারার শেষ অংশ। (সহিহ মুসলিম: ১৯১৩) এই সূরার মাঝে আল্লাহ তায়ালা এতো বেশি আলো রেখেছেন যে, এ সূরার নিয়মিত আমলে আমাদের ইহকাল ও পরকাল দুটি আলোকিত হবে।
আরোগ্য লাভ: এই সূরা তেলাওয়াত করে কোন তেল বা পানির মধ্যে ফু দিয়ে যে কোন ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি তা গ্রহণ করলে উক্ত রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করে। রোগ যত জটিল বা কঠিন হোক না কেন সুরা ফাতিহা যেকোনো ধরনের জটিল রোগ নিরাময় করে।
মানুষের শরীরের কোন অংশে পীড়া থাকলে সে অংশে সূরা ফাতিহা পড়ে মাসেহ করে ফু দিলে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় উক্ত পীড়া দূর হয়ে যায়। এই সূরার মাঝে রোগ নিরাময়ের আত্মিক শক্তি নিহিত আছে। সুরা ফাতিহার এ বৈশিষ্ট্য সূরা ফাতিহার মার্যাদাকে আরও বৃদ্ধি করে থাকে।
ইমাম তিরমিযী আবু হুরাইরাহ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন যে, সূরায়ে ফাতিহা প্রত্যেক রোগের ঔষধবিশেষ।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, একদা আমরা সফরে ছিলাম। আমাদের যাত্রা বিরতিকালে এক বেদুঈন মহিলা আমাদের কাছে এসে বলল, আমাদের গোত্রপতিকে সাপে দংশন করেছে। তার চিকিৎসা করার মতো কেউ এখন আমাদের মাঝে নেই। তোমাদের মধ্যে ঝাড়-ফুঁক করার কেউ আছে কী? আমাদের একজন মহিলার সঙ্গে গেল।
সে ঝাড়-ফুঁক করল আর তাতে রোগী ভালো হয়ে উঠল। তারা খুশি হয়ে তাকে ত্রিশটি ছাগল উপহার দিল। সে ওগুলো নিয়ে আমাদের কাছে ফিলে এলে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমি কী ঝাড়-ফুঁক করতে জান?
সে বলল, না। তবে, আমি সূরা ফাতিহা দিয়ে এ রোগীকে ঝেড়ে দিয়েছি। আমরা বললাম, মদিনায় যেয়ে নবী (সা.) কে জিজ্ঞাসা না করে আমরা এ ব্যপারে কোনো মন্তব্য করতে পারি না। আমরা মদিনায় পৌঁছার পর নবী করিম (সা.) কে বিষয়টি জানালে তিনি বললেন, ঝাড়-ফুঁকের জন্য সূরা ফাতিহা উৎকৃষ্ট। তোমরা যা পেয়েছ তা ভাগ কর এবং আমাকেও এক ভাগ দাও। (সহিহ বোখারি: ৫০০৭)
আবু সাইদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন আমরা আমাদের একটি যাত্রায় ছিলাম, আমরা এমন এক জায়গায় ফিরে গেলাম যেখানে একজন দাসী মেয়ে এসে বলল, "এই গোত্রের প্রধান বিচ্ছু দ্বারা আহত হয়েছিল এবং আমাদের লোকেরা উপস্থিত নেই; তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে তাকে চিকিৎসা করতে পারে (কিছু পাঠ করে)?" তারপরে আমাদের একজন লোক তার সাথে চলে গেল।
যদিও আমরা মনে করিনি যে তিনি এই জাতীয় কোনও চিকিৎসা জানতেন। কিন্তু তিনি কিছু পাঠ করে চিকিৎসা করলেন এবং অসুস্থ লোকটি সুস্থ হয়ে উঠল এবং তারপরে তিনি তাকে ত্রিশটি ভেড়া উপহার দিয়েছিলেন এবং (পুরস্কার হিসাবে) আমাদেরকে দুধ পান করান।
তিনি ফিরে আসলে, আমরা আমাদের বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, "আপনি কি কিছু পাঠ করে চিকিৎসা করা জানেন?" তিনি বলেছিলেন, "না, তবে আমি কেবল সূরা আল-ফাতিহা আবৃত্তি করে চিকিৎসা করেছি।"
আমরা বললাম, আমরা মদীনা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বা নবীকে জিজ্ঞাসা করার আগ পর্যন্ত কিছু না বলতে (এ সম্পর্কে), আমরা রাসূলের নিকট উল্লেখ করেছিলাম (আমরা যে মেষগুলি নিয়েছিলাম তা গ্রহণ করা বৈধ ছিল কি না তা জানতে) ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি কীভাবে জানতে পেরেছিলেন যে এটি (আল-ফাতিহা) চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে? আপনার পুরস্কার বিতরণ করুন এবং আমার জন্য এটির একটি অংশও অর্পণ করুন।" ( মুহাম্মদ আল বুখারী, সহীহ আল বুখারী)
আবু সাইদ আল খুদরী বলেছেন, "আমরা যখন আমাদের একটি যাত্রায় ছিলাম, তখন আমরা এমন এক জায়গায় ফিরে গেলাম যেখানে একজন দাসী এসে বলল," এই গোত্রের প্রধান বিচ্ছু দ্বারা আহত হয়েছিল এবং আমাদের লোকেরা উপস্থিত নেই; তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে তাকে চিকিৎসা করতে পারে (কিছু পাঠ করে)? " তারপরে আমাদের একজন লোক তার সাথে চলে গেল যদিও আমরা মনে করি নি যে তিনি এই জাতীয় কোনও চিকিৎসা জানেন।
কিন্তু তিনি কিছু পাঠ করে চিকিৎসা করলেন এবং অসুস্থ লোকটি সুস্থ হয়ে উঠল এবং তারপরে তিনি তাকে ত্রিশটি ভেড়া উপহার দিয়েছিলেন এবং আমাদেরকে দুধ পান করান (পুরস্কার হিসাবে)। তিনি ফিরে আসলে, আমরা আমাদের বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, "আপনি কি কিছু পাঠ করে চিকিৎসা করা জানেন?" তিনি বলেছিলেন, "না, তবে আমি কেবল সূরা আল-ফাতিহা আবৃত্তি করে চিকিৎসা করেছি।"
আমরা বললাম, আমরা মদীনা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বা নবীকে জিজ্ঞাসা করার আগ পর্যন্ত কিছু না বলতে (এ সম্পর্কে), আমরা রাসূলের নিকট উল্লেখ করেছিলাম (আমরা যে মেষগুলি নিয়েছিলাম তা গ্রহণ করা বৈধ ছিল কি না তা জানতে) ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি কীভাবে জানতে পেরেছিলেন যে এটি (আল-ফাতিহা) চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে? আপনার পুরস্কার বিতরণ করুন এবং আমার জন্য এটির একটি অংশও অর্পণ করুন। " (আল বুখারী ০০৬.০৬১.৫২৯ - কুরআনের ফজিলত)
মুহাম্মদ (সাঃ) একবার জাবির ইবনে আবদাল্লাহ আনসারিকে জিজ্ঞাসা করলেন, "আমি কি আপনাকে এমন একটি সূরা শিখিয়ে দেব যার সাথে পুরো কুরআনে আর কোন তুলনা নেই?" জাবির জবাব দিলেন, "হ্যাঁ, এবং হে আল্লাহর নবী (সাঃ) আমার পিতা-মাতা আপনার উপর বন্দিত্বমোচন করতে পারেন।" সুতরাং মুহাম্মদ (সাঃ) তাকে সূরা আল-ফাতিহা শিখিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনঃ আল কোরআনের মুজিজা _
তখন মুহাম্মদ (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, "জাবির, আমি কি এই সূরা সম্পর্কে কিছু বলতে পারি?" জাবির জবাব দিলেন, "হ্যাঁ, এবং হে আল্লাহর নবী আমার পিতা-মাতা আপনার উপর বন্দিত্বমোচন করতে পারেন।" মুহাম্মদ বলেছিলেন, "এটি (সূরা আল-ফাতিহা) মৃত্যু ব্যতীত প্রতিটি অসুস্থতার নিরাময়।"
ইমাম আবুআবদিল্লাহ জাফর আস-সাদিক বলেছেন যে যার রোগ সুরা আল ফাতিহার দ্বারা নিরাময় করা যায় না, তবে সেই ব্যক্তির কোন চিকিৎসা নেই। একই বর্ণনায় লেখা আছে যে এই সূরাটি শরীরের যে অংশে ব্যথা হচ্ছে, সে অংশে ৭০ বার তেলাওয়াত করা হলে ব্যথা অবশ্যই দূর হবে।
প্রকৃতপক্ষে এই সূরার শক্তি এতটাই বেশি যে বলা হয়ে থাকে যে, যদি কেউ এটি একটি মৃত দেহের উপরে ৭০ বার তেলাওয়াত করে, তবে সেই দেহটি চলতে শুরু করলে (অর্থাৎ জীবনে ফিরে আসে) তা আপনাকে অবাক করা উচিত নয়। সুরা ফাতিহা শারীরিক ও আধ্যাত্মিক অসুস্থতাও নিরাময় করে।
সূরা ফাতিহা-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহি-ম।
অর্থ : শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ -লামি-ন।
অর্থ : যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ : আররহমা-নির রাহি-ম।
অর্থ : যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
উচ্চারণ : মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন।
অর্থ : বিচার দিনের একমাত্র অধিপতি।
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
উচ্চারণ : ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-ন
অর্থ : আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
উচ্চারণ : ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’-ম
অর্থ : আমাদের সরল পথ দেখাও।
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
উচ্চারণ : সিরাতা’ল্লা যি-না আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ-ল্লি-ন।
অর্থ : সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
উপরোক্ত বর্ণনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, আল-কোরআনে সূরা ফাতিহা আতিব গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদাপূর্ন একটি সূরা। আর এটি একটি রোগ মুক্তিরও সুরা তাই আমাদের সকলের উচিত এ সূরা কে গুরুত্ব সহকারে তেলাওয়াত করা। আর নিরাময়ের জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি সূরা আমল করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ সুরা বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url