আবেদনকারী ও দরখাস্তকারী বলতে কি বুঝায়?_বিস্তারিত জেনে নিন
আবেদনকারী বা দরখাস্তকারী (Applicant) :
যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা কোন পক্ষ দেওয়ানী আদালতে আবেদন বা দরখাস্ত করে সেই ব্যক্তিকে বা ব্যক্তিবর্গ বা পক্ষসমূহকে আবেদনকারী বা দরখাস্তকারী বলা হয়। আবেদনকারী বা দরখাস্তকারী এক বা একাধিক হতে পারে। তামাদি আইনের ২(১)ধারায় আবেদনকারী ও দরখাস্তকারী সম্পর্কে বলা হয়েছে।
বিনিময় বিল বলতে কি বুঝায়?
বিনিময় বিল (Bill of exchange) : বিনিময় বিল বলতে বোঝায় একপ্রকার টাকা প্রদানের আদেশ। কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমূহ চাওয়া মাত্র বা ভবিষ্যৎ কোন সময়ে অর্থ বা টাকা প্রদানের আদেশ যে দলিলে লেখা হয় তাকেই বিনিময় বিল বলা হয়।
তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২(২)ধারায় বিনিময় বিল সম্পর্কে বলা আছে। এই ধারার অধীন বিনিময় বিল বলতে হুন্ডি ও চেক কেও বোঝানো হয়েছে।
মুচলেকা বলতে কী বোঝায়?
মুচলেকা (Bond) : মুচলেকা এক ধরনের অঙ্গীকার। অঙ্গীকারনামাকেও মতলেখা বলা হয়। মুচলেকা হল একটি দলিল, যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি কোন কাজ করা বা করা হতে বিরত থাকবে বলে অন্য কোন ব্যক্তির নিকট অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। তামাদি আইন, ১৯০৮এর ২(৩)ধারায় মুচলিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে।
এই ধারা অনুসারে, মুচলেকা বলতে এমন কোন দলিলও অন্তর্ভুক্ত হবে, যার দ্বারা কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে অর্থ প্রদানের জন্য নিজেকে এই শর্তে বাধ্য করে যে, নির্দিষ্ট কোনো কাজ সম্পাদিত হলে বা না হলে ঐ বাধ্যবাধকতা বাতিল হয়ে যাবে।
বিবাদী বলতে কী বোঝায়?
বিবাদী (Defendant) : যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানী মকদ্দমা দায়ের করা হয় তাকে বা তাদেরকে বিবাদী বলা হয়। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন দেওয়ানী আদালতে প্রতিকারের জন্য আরজি দাখিল করা হয় তাকে বিবাদী বলা হয়। বিবাদী এক বা একাধিক হতে পারে। তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২(৪)ধারাই বিবাদী সম্পর্কে বলা আছে।
ব্যবহারস্বত্ব বা সুখাধিকার বলতে কি বুঝায়?
ব্যবহারস্বত্ব বা সুখাধিকার (Easement) : তামাদি আইনের ২৬ ধারায় বলা আছে যে, কোন স্থলপথ, পানি বা জলপথ, আলো, বাতাস যদি কোন ব্যক্তি কোন বাধা ছাড়া ২০ বছর ধরে ভোগ করে তাহলে তার অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হয় বা দাবি করা যায়।
আলো, বাতাস, পানি প্রভৃতি যদি একটানা ২০ বছর ধরে কোন ব্যক্তি নিরবচ্ছিন্নভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে বা অধিকার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে তাহলে এগুলোর প্রতি তার ব্যবহারস্বত্ব বা সুখাধিকার অর্জিত হয়। তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২(৫)ধারায় ব্যবহারস্বত্ব বা সুখাধিকার এর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।
সরল বিশ্বাস বলতে কি বুঝায়?
সরল বিশ্বাস( Good Faith) : দন্ডবিধির ৫২ ধারার অর্থ অনুসারে কোন কাজ করা হলে এবং সেটা বিশ্বাস করা হলে, সেটা সরল বিশ্বাসে করা হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়। তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২(৭) ধারায় অনুরূপ কথা বলা হয়েছে।
এই ধারা অনুসারে, সরল বিশ্বাসে করা হয়েছে বলে এমন কিছু অন্তর্ভুক্ত হবে না, যা যথাযথ যত্ন বা মনোযোগ এর সাথে করা হয়নি। দন্ডবিধির ৭৬ ধারা অনুসারে কোন কাজ আইন দ্বারা করতে বাধ্য করলে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না।
বাদী বলতে কি বুঝায়?
বাদী (Plaintiff) : যে পক্ষ বা পক্ষসমূহ দেওয়ানীআদালতে মোকদ্দমা দায়ের করে সেই পক্ষ বা পক্ষসমূহকে বাদি বলা হয়। কোন ব্যক্তি যদি কোন দেওয়ানি প্রতিকারের জন্য যদিও মে দেখা কোন দেওয়ানি আদালতে আরজি দাখিল করে তাকে বাদী বলা হয়।
কোন মোকদ্দমায় এক বা একাধিক বাদী থাকতে পারে। তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২(৮) ধারায় বাদী সম্পর্কে বলা আছে।
অঙ্গীকার পত্র বলতে কি বুঝায়?
অঙ্গীকারপত্র (Promissory note) : তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২(৯) ধারায় অঙ্গীকার পত্রের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অঙ্গীকার পত্র বলতে এমন কোন দলিল কে বোঝায়, যার দ্বারা এর প্রণেতা নির্দিষ্ট অংকের টাকা এতে নির্ধারিত কোনো সময়ে বা চাওয়া মাত্র অথবা দলিলটি তার নিকট উপস্থাপিত করা মাত্র কে প্রদানের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে দায়বদ্ধ করে।
মোকদ্দমা বলতে কি বুঝায়?
মোকদ্দমা (Suit) : মোকদ্দমা বলতে সাধারণত দেওয়ানী মামলা কে বোঝায়। ফৌজদারি কোন মামলা কে বোঝায় না। ফৌজদারি মামলাকে মূলত ইংরেজিতে Case বলে। যে মামলা আরজি দাখিল বা পেশের মাধ্যমে আরম্ভ হয় তাকে মোকদ্দমা বলে। তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২(১০) ধারায় মোকদ্দমা সম্পর্কে বলা হয়েছে।
ট্রাস্টি বলতে কি বুঝায়?
ট্রাস্টী (Trustee) : ১৮৮২ সালের ট্রাস্ট আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি আস্থা গ্রহণ করে তাকে ট্রাস্টি বলে। ট্রাস্টের তিনটি পক্ষ থাকে। এর মধ্যে অন্যতম পক্ষ হল ট্রাস্টি। বিশ্বাসপূর্বক যার উপর সম্পত্তি অর্পণ করা হয় তাকে ট্রাস্টি বলা বলে।
তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২(১১) ধারায় ট্রাস্টি বলতে বোঝায়, বেনামদার, রেহেনী অর্থ পরিশোধের পরেও দখলকারীর রেহেনগ্রহীতা বা স্বত্বহীন অন্যায় দখলকারী এর অন্তর্ভুক্ত হবে না। কারণ হলো, এই সকল ব্যক্তিগণ ট্রাস্ট এর দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়।
ট্রাস্ট আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, একজন সাধারন বুদ্ধিবৃত্তি সম্পূর্ণ মানুষ তার নিজের সম্পত্তি যে রূপ সতর্কতার সাথে দেখাশোনা করে একজন ট্রাস্টীকে ট্রাস্ট সম্পত্তিও সেরূপ সতর্কতার সাথে দেখাশুনা করতে হবে।
এবং এইভাবে দেখাশোনা করার পরেও যদি সম্পত্তির কোন ক্ষতি, ধ্বংস বা অবনতি হয় তাহলে ট্রাস্টি কোন ভাবে দায়ী হবে না।
এসব দায়িত্ব বেনামদার, রেহেনী অর্থ পরিশোধের পরেও দখলকারী রেহেনগ্রহীতা অথবা স্বত্বহীন অন্যায় দখলকারী দ্বারা পালন করা সম্ভব নয়। আর এই কারনেই তামাদি আইনে ট্রাস্টীর সংজ্ঞা থেকে এদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url