কোন ব্যক্তি পানিতে ডুবে গেলে তৎকালীন যে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে জেনে নিন!

আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত পানিতে ডুবে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটছে। এরমধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। পুকুর ও খালের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যুর দৃশ্যটি বেশি লক্ষ্য করা যায়। পানিতে ডুবে মৃত্যুর মূল কারণ হলো পানি শ্বাসনালী ও ফুসফুসের মধ্যে ঢুকে যায় ফলে শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ থাকা। 

দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ থাকার কারণে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয় এবং ডুবন্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে।

কেউ পানিতে ডুবে গেলে সর্বপ্রথম তাকে পানি থেকে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য আশেপাশের মানুষের সাহায্য নিতে হবে। 

উপরে তোলার পর দেখতে হবে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কিনা? সে ডাকে সাড়া দিচ্ছে কিনা? শ্বাস-প্রশ্বাস আছে কিনা সেটি বোঝা যাবে বুকের উঠানামা লক্ষ্য করলে। যদি ডুবন্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ থাকে তাহলে তাকে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে কি কি করণীয় তা নিচে ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো:-

ধাপ-১: ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে প্রথমে পানি থেকে উঠাতে হবে। এরপর আশেপাশের কারো সাহায্য নিতে হবে যাতে সে এ্যাম্বুলেন্স বা ডাক্তার ডেকে নিয়ে আসে। আর ডুবন্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

ধাপ-২: ডুবন্ত ব্যক্তির জিহ্বা সামনের দিকে টেনে দেখতে হবে এর মুখ তালু বা গলায় কিছু আটকে আছে কিনা, যদি কিছু আটকে থাকে তাহলে আঙ্গুলের সাহায্যে বের করে আনতে হবে।

ধাপ-৩: ডুবন্ত ব্যক্তিকে শক্ত খাট, টেবিল বা মাটিতে চিত করে এমন ভাবে শুইয়ে দিতে হবে যাতে তার নাক সোজা আকাশের দিকে থাকে। এরপর যতটুকু সম্ভব তার হা করাতে হবে। এতে তার শ্বাস নালীর ভিতর বাতাস ঢুকে শ্বাস-প্রশ্বাস কিছুটা শুরু হবে।

ধাপ-৪: শ্বাস প্রশ্বাসের লক্ষণ দেখা না গেলে ডুবন্ত ব্যক্তিকে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এই অবস্থায় কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস দেওয়ার সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম হলো মুখে মুখে শ্বাসনের ব্যবস্থা করা।

শিশুদের ক্ষেত্রে:- এ কাজের শুরুতে গভীর শ্বাস নিতে হবে। শিশুর নাক মুখ ঢেকে নিজের মুখ চেপে ধরতে হবে যাতে সামান্য পরিমাণ বাতাসও বেরোতে না পারে। 

এরপর আস্তে আস্তে ফু দিতে হবে, লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিশুর বুক সামান্য ফুলে ওঠে। জোড়ে ফু দেওয়া যাবে না, কারণ জোরে ফু দিলে শিশুর ফসফুসের কোথাও ছিড়ে যেতে পারে।

একটু বয়স্কদের ক্ষেত্রে:- একহাতে নাক চেপে ধরে মুখের উপর মুখ স্থাপন করতে হবে। এরপর সজোরে ফু দিতে হবে। এভাবে দুইবার ফু দিতে হবে। বুক যদি উঠানামা না করে তাহলে ধাপ 2 আবার প্রয়োগ করতে হবে।

ধাপ-৫: ধাপ ৪ চলাকালীন কখনো কখনো রোগীর হৃদপন্দন থেমে যেতে পারে। এমন অবস্থায় দুবার প্রশ্বাস দেওয়ার পর রোগীর নাড়ি চেপে দেখতে হবে। কনুইয়ের সামনে দু আঙ্গুলে হালকা চাপ দিয়ে নাড়ির অবস্থা বুঝতে হবে। 

সামান্য বয়স্ক শিশুর ক্ষেত্রে ঘাড়ে শ্বাসনালির পাশে আঙ্গুলের চাপে নাড়ির স্পন্দন একেবারেই না পাওয়া গেলে বুকের মাঝখানে উরঃফলকে চাপ দিয়ে মালিশ করতে হবে।

ধাপ-৬: ঘটনাস্থলে একাধিক ব্যক্তি থাকলে একজন বুকে মালিশ করবে, আর একজন মুখে মুখে শ্বাস চালিয়ে যেতে হবে। কম বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে তিন আঙ্গুল দিয়ে নিপলের ঠিক নিচে চাপ দিয়ে মালিশ করতে হবে। ঘটনাস্থলে যদি আর কেউ না থাকে তাহলে একবার মুখে মুখে শ্বাস দিয়ে পাঁচবার মালিশ করতে হবে। 

আরেকটু বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি চাপের প্রয়োজন পড়তে পারে তখন হাতের তালুর গোড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। মালিশের সময় বুক প্রায় দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত চেপে নিচে নামিয়ে দিতে হবে। 

নাড়ির স্পন্দন না পাওয়া পর্যন্ত কিংবা মৃত্যু নিশ্চিত না জানা পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চালিয়ে রাখতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ করতে, আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। যেহেতু পানিতে ডুবে শিশুদের মৃত্যু হার বেশি সেহেতু শিশুর মায়েদের বেশি সচেতন থাকতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে তাদের শিশু কোথায় যাচ্ছে কি করছে। তাহলেই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url