সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার ফজিলত ও পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার ফজিলত ও পড়ার নিয়ম
আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। তিনি তওবা কারীকে পছন্দ করেন। তওবা বা ইস্তেগফারের মধ্যে সর্বোত্তম ইস্তেগফার হচ্ছে সাইয়েদুল ইস্তেগফার। ইস্তেগফার মানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিজের ভুল ত্রুটির জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং নিজের অপরাধ ও পাপের জন্য আল্লাহ দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলা বান্দার ডাকে সাড়া দেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি অবশ্যই তার প্রতি ক্ষমাশীল , যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অটল থাকে।’ (সুরা: ত্বহা, আয়াত ৮২)
আল্লাহ তায়ালা আারও বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’ (সুরা: নিসা, আয়াত ১১০)
সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার ফজিলত
জান্নাত পাওয়া যায়: রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ়বিশ্বাসের সঙ্গে সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে পাঠ করে সারা দিনের কোনো অংশে যদি সে মারা যায়, তবে সে জান্নাতি হবে তাদের প্রতি রাতে পাঠ করে তাহলে রাতে মারা গেলেও সে জান্নাতি হবে। অর্থাৎ সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকাল-বিকাল দুবার পাঠ করলে সারা দিনে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে থাকে তবে সে জান্নাত লাভ করবে।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পাপমুক্ত নিষ্পাপ, তাও তিনি আল্লাহর কাছে দিনে রাতে বহু বার কেঁদে কেঁদে ক্ষমা পার্থনা করতেন।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামকে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর কসম! আমি প্রত্যহ আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তেগফার ও তাওবা করে থাকি।’ (বুখারি, হাদিস ৬৩০৭)
হতাশাও দুশ্চিন্তা দূর হয়: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, যদি কেউ বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাআলা তাকে সকল প্রকার দুর্দশা থেকে মুক্তি দান করেন, হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে পরিত্রাণ দান করেন। তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (আবু দাউদ)
দারিদ্রতা দূর হয়: হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি তার পাপাচারের জন্য ইস্তিগফারের মাধ্যমে নিয়মিত আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাইবে, আল্লাহ তাআলা তার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেবেন। তাকে সব বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে সচ্ছলতা ও নিরাপত্তা দান করবেন। সে আল্লাহর রহমতে এমন উৎস থেকে রিজিকপ্রাপ্ত হবে, যা সে চিন্তাও করেনি।
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ গুনাহ মাফের উদ্দেশে্য ইস্তেগফার করাকে নিজের ওপর আবশ্যক করে নেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে তিনটি পুরস্কার দেবেন—তার জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করবেন, তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, তাকে অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন’
সাইয়েদুল ইস্তেগফার আরবিতে
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْت
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা আন্তা রব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খলাকতানি ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা, ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সনাতু, আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবুউ লাকা বিজাম্বি, ফাগফিরলি, ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ-জুনুবা ইল্লা আন্তা।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার এর বাংলা অর্থ
হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই। আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনারই গোলাম। আর আমি আছি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আমার সাধ্যমতো। আমি আপনার কাছে পানাহ ও আশ্রয় চাই আমার অনাসৃষ্টির অকল্যাণ এবং অপকার ও ক্ষতি হতে। আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি আপনার সব নিয়ামত।
আরও স্বীকার করছি আপনার সমীপে আমার সকল অপরাধ। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। আর অবশ্যই আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই। (সুনানে নাসায়ি ৫৫২১, বুখারি ও মুসলিম)।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার নিয়ম
সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়ার অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যখনই পাপের জন্য অনুতপ্ত হবে তখনই আল্লাহর কাছে অনুতপ্তের সাথে দুই নয়ন অশ্রু শিক্ত করে বিনয়ের ভঙ্গিতে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহ তাআলা তওবাকারীকে পছন্দ করেন।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ়বিশ্বাসের সঙ্গে সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকালে পাঠ করে সারা দিনের কোনো অংশে যদি সে মারা যায়, তবে সে জান্নাতি হবে তাদের প্রতি রাতে পাঠ করে তাহলে রাতে মারা গেলেও সে জান্নাতি হবে।
সুতরাং সাইয়েদুল ইস্তেগফার সকাল বিকাল দুবার পাঠ করলে সারা দিনে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে থাকে তবে সে জান্নাতি হবে। তাহলে সকলের উচিত দিনে অন্তত দুইবার (সকাল-বিকেল) সাইয়েদুল ইস্তেগফার পড়া।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url