মানবাধিকার কি? মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভূমিকা
মানবাধিকার কি
বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে কালজয়ী চিরন্তন আদর্শ হিসেবে একমাত্র ইসলামই সকল যুগে মানব সমাজে মানুষের মৌলিক অধিকার তথা মানবাধিকার প্রদানের সুনিশ্চিত ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে। অসীম জ্ঞানময় নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধানই মানবাধিকার নিশ্চয়তার গ্যারান্টি।
আজকের বিশ্বে মানবাধিকারের যথার্থ বাস্তবায়নের জন্য ইসলামী জীবন বিধানের বিকল্প নেই। ইসলাম মানব জাতিকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে সমাসীন করেছে। সাথে সাথে মানুষের সকল ধরনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। ইসলাম প্রদত্ত মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা গেলে আজকের এই অশান্ত পৃথিবীতে সুখ- শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব।
মানবাধিকারের পরিচয়
মানবাধিকার শব্দের অর্থ হলো মানুষের অধিকার। অর্থাৎ মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার ক্ষমতাকে মানুষের অধিকার বলা হয়। মূলত অধিকার বলতে সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত কতকগুলো সুযোগ সুবিধাকে বুঝায়, যা ছাড়া ব্যক্তির মানবাধিকার বিকাশ ঘটে না।
- আদর্শবাদী দার্শনিক টি.এইচ.গ্রীন ( T.H.Green) এর মতে- "অধিকার হচ্ছে সে সব বাহ্যিক অবস্থা যা মানসিক পরিপুষ্টি সাধন করে।" ( Rights are the outer conditions essential for men's inner development)
- অধ্যাপক লাস্কি (Lasky) বলেন- "অধিকার সমাজ জীবনের সে সকল অবস্থা যা ব্যতীত মানুষ তার ব্যক্তিত্বকে পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারে না"। ( Rights are those conditions of social life without which no man can seek to be himself at his best)
- প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ এর মতে- "অধিকার হচ্ছে সে সকল সুযোগ-সুবিধা যা ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এবং যা সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত"।
- বোসাংকেট ( Bosanquet) এর মতে- "অধিকার হলো সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত এবং রাষ্ট্র কর্তৃক প্রযুক্ত দাবি।" (A rights is a claim recognised by society and enforced by the state)
- বার্কার (Barker) এর মতে- "অধিকার হলো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযোগী সেই সকল সুযোগ সুবিধা যা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত। " (Rights are those necessary conditions of the greatest possible development of the capacities of all individuals which are secured and guaranted by the state
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভূমিকা
ইসলাম এমন জীবন ব্যবস্থা যা প্রতিটি মানুষকে ; প্রত্যেক সৃষ্টিকে তার প্রাপ্য অধিকার প্রদান করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্ঠে ঘোষণা করেছেন,
"তোমরা প্রত্যেক হকদারের প্রাপ্য হক আদায় করে দাও "। প্রাচীন ও আধুনিক কোনো ইতিহাসই এমন রাষ্ট্র ব্যবস্থা দেখেনি, যে রাষ্ট্রব্যবস্থা ধর্মীয় আদর্শের ওপরে প্রতিষ্ঠিত তার অনুসারী ও অভিন্ন মত পোষণকারীদের মধ্যে এমন ভারসাম্য স্থাপন করেছে- যেমনটি ইসলাম ও ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রদান করেছে।
মুসলিম-অমুসলিম, ধনী-গরীব, সাদা-কালো ও দেশ থেকে দেশান্ত নির্বিশেষে সবার জন্য ইসলাম সমান মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। ইসলাম পিতা-মাতা, ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষকে পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করে তাদের প্রত্যেকের প্রাপ্য বা হক ও অধিকার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অনুরূপভাবে, ইসলাম শ্রেণিগতভাবে মুসলমান খ্রিস্টান ও শরণার্থীদের উল্লেখ করে তাদের প্রাপ্য অধিকার প্রদান করেছে। ইসলাম প্রত্যেকের ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَاۤ اِكۡرَاهَ فِی الدِّیۡنِ
অর্থ: "ধর্মীয় ব্যাপারে কোন জোর জবরদস্তি নেই।"
যেমন: নাজরানের অধিবাসীদের সঙ্গে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জিম্মাদারী রয়েছে - তাদের সম্পদ, জীবন, ভুমি, ধর্ম, উপস্থিত, অনুপস্থিত, বংশ, পরিবার, উপাসনালয়, তাদের মালিকানাধীন স্বল্প বা অধিক সবকিছু রক্ষার দায়িত্ব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর।
কোনো খ্রিস্টধর্ম যাজক তার নিভৃতাবাস অবতরণ করতে বাধ্য নয়। কোন পাদ্রী তার বৈরাগ্য থেকে বিরত থাকতে বাধ্য নয়। সুতরাং ইসলাম মুসলিম অমুসলিম সবার মধ্যে রক্ত, সম্পদ ও সম্ভ্রম রক্ষার ক্ষেত্রে সমতা বিধান করেছে।
যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনি পারেন মানুষকে যথাযথাই অধিকার দিতে। মানব সমাজকে সুবিচার দিতে এবং পূর্ণ মানবাধিকার প্রদান করতে সক্ষম। তাই বলা যায় ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের অধিকার নিশ্চিত ভাবে লাভ করা সম্ভব।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন।
কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url