সৃষ্টি ও মানব কল্যাণে মুসলিম মনীষীগণের অবদান বিস্তারিত জেনে নিন

জ্ঞান ও বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি চর্চায় মুসলমানগণ যুগে যুগে অসাধারন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জ্ঞান ও বিজ্ঞান সেবায় মুসলমানগণ একসময় সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সৃষ্টি ও মানবতার কল্যাণী আত্মনিয়োগ করেছেন। আধুনিক যুগের জ্ঞান বিজ্ঞানের মধ্য চিকিৎসা শাস্ত্র ও রসায়ন শাস্ত্রে মুসলিম মনিষীগণের অবদান নিম্মে উল্লেখিত করা হলো :


চিকিৎসাশাস্ত্র

চিকিৎসা শাস্ত্র মুসলমানদের অবদান অপরিসীম। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির মূলে রয়েছে মুসলমানদের অবদান। যাদের অবদানের কারণে চিকিৎসা শাস্ত্র উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে, তাদের মধ্য উল্লেখযোগ্য হলো ইবনে সিনা, আবু বক্কর আল রাজি, ইবনে রুশদ ও হাসান ইবনে হাইসাম প্রমুখ। আমরা তাদের পরিচয় এবং জ্ঞান চর্চায় তাদের অবদান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।

ইবনে সিনা

ইবনে সিনার পুরো নাম হল আবু আলি আল, হোসাইন ইবনে সিনা আব্দুল্লাহ ইবনে সিনা। তিনি উজবেকিস্তানের বখারার নিকটবর্তী আফসানা নামক গ্রামে ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিল আব্দুল্লাহ। পুত্রের জন্মের কিছুকাল পরে আব্দুল্লাহ তাকে বোখারায় নিয়ে আসেন। সে সময় বোখারা ছিল মুসলিম জাহানের জ্ঞান বিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্র। 

দশ বছর বয়সে তিনি পবিত্র কোরআন হিফজ করেন। তিনি দার্শনিক, চিকিৎসক, গনিতক্ত,জ্যোতিবিদ এবং মুসলিম জগতের একজন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও সর্ববিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। ১৬ বছর বয়স থেকে ইবনে সিনার ডাক্তারি নেশা জাগে পড়তে পড়তে আবিষ্কার করতে থাকেন চিকিৎসার নতুন নতুন উপায়। 

১৮ বছর বয়সে এই পুরো দমে ডাক্তার হয়ে গেলেন। বিনা পয়সায়ী চিকিৎসা করতেন ইবনে সিনা। হলে তার ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ল দূর দূরান্তে। ৯৯৭ সালে আমির নূর ব্যক্তিগত ডাক্তার পদে ইবনে সিনা কে নিয়োগ দেন। কারণ তিনি নূরের কঠিন রোগের চিকিৎসা করেছিলেন এবং তাদের তিনি সেরে উঠেছিলেন। 

ইবনে সিনা রচিত অসংখ্য গ্রন্থ রয়েছে। তবে চিকিৎসা শাস্ত্রের আল-কানুন তিব্ব একটি অমর গ্রন্থ। এ গ্রন্থটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিপ্লব এনে দেয়। এত বিশাল গ্রন্থ সে যুগে আর কেউ রচনা করতে পারেনি। এটি ল্যাটিন,হিব্রু,ইংরেজি প্রভৃতি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ইউরোপের মেডিকেল কলেজগুলোতে আল-কানুন গ্রন্থটি বহু কাল যাবত পাঠ্য ছিল। আল কানুন পাঁচটি বিশাল খন্ডে বিভক্ত। 

বইগুলো সব লেখা শেষ হয় ১০২৫ সালে। গ্রন্থটিতে শতাব্দিক জটিল রোগের কারণ লক্ষণ ও পথ্যাদির বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। ড.ওসলার এ গ্রন্থ টিকে চিকিৎসা শাস্ত্রের বাইবেল বলে উল্লেখ করেন। আধুনিক বিশ্বে ও তার গ্রন্থটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পাঠ্য দান করা হয়েছে। চিকিৎসায় তার অসাধারণ অবদানের জন্য তাকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

ইবনে সিনা ৫৮ বছর বয়সে ১০৩৭ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইন্তেকাল করেন। তাকে ইরানের হামাদানে সমাহিত করা হয়।

ইবনে রুশদ

ইবনে রুশদের পুরো নাম আবু ওয়ালিদ মুহাম্মদ ইবনে আহাম্মদ ইবনে রুশদ।তিনি স্পেনের কর্ডোভায় ১১২৮ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করে। যুবক ইবনে রুশদ প্রাথমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করেন কর্ডোভাতে। তিনি জ্ঞান আহরণে ছিলেন পুরোপুরি অর্তনিবেদিত। তিনি ব্যাপকভাবে দর্শন ও ভেষজ বিষয়ে লেখাপড়া করেন। 

দুই প্রকার শিক্ষকের কাছে লেখা পড়া করার সুযোগ পেয়েছেন। তারা হচ্ছেন আবু জাফর হারুন ও ইবনে বাজা। মধ্যযুগে মুসলিমের বাধ্য যারা জ্ঞানবিজ্ঞানের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তিনি তাদের একজন। ইবনে রুশদ ছিলেন আধুনিক সার্জারির জনক। সেই সঙ্গে ছিলেন একজন বড় মাপের আধ্য আধ্যাত্মিক সার্থক। 

কাজেই কর্মে ছিলেন সর্বশক্তিমান আল্লাহর অনুগত। তার বিশ্বাস ছিল আমি ক্ষতস্থান বেঁধে দেব ক্ষতস্থান সারাবেন আল্লাহ। এই বিশ্বাসই তাকে অনেক উপরে ওঠার সুযোগ করে দেয়। হয়ে ওঠেন আল্লাহর প্রিয় পাত্র। এই খন্নজন্মা পুরুষ জ্ঞানের সকল শাখায় বিচরণ করেছেন। চিকিৎসা আছে তার লেখা গ্রন্থের নাম হল কিতাব আল কল্লিয়াত। 

চিকিৎসা শাস্ত্রে এটি একটি অন্যতম গ্রন্থ।এতে রয়েছে চিকিৎসা শাস্ত্রের তিনটি মৌলিক বিষয়ের রোগ বিশ্লেষণ (ডায়াগনোসিস), নিরাময় (কিউর) এবং প্রতিরোধ (প্রিভেনশন)।বইটিতে ইবনে সিনার আল কানুন সম্পর্কে সর্বশেষ উল্লেখ্য রয়েছে।। এতে ইবনে রুশদের আসল পর্যবেক্ষণের বিষয় বিধৃত আছে। ইবনে রুশদ এই বইটি লিখেছেন ১১৬২ খ্রিস্টাব্দের আগে। এটি বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সমাদৃত হয়েছে।

ইবনে রুশদ অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল আল জামি। এগ্রন্থে তিনি জ্যোতিবিদ্যা, দর্শন ও চিকিৎসার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। কিতা ফি হারাকাত আল ফালাক হচ্ছে ইবনে রুসদ জ্যোতি বিদ্যা বিষয় একটি বই। এই বৌয়ের ভূমন্ডলের গতি বিষয়ে তিনি আলোচনা করেন। তার রচিত গ্রন্থ সমূহ ল্যাটিন ও হিব্রু বাসায় অনুবাদ করা হয়। তিনি ১১৯৮ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।

আবু বক্কর মোঃ ইবনে জাকারিয়া আল রাজী

আবু বকর মোহাম্মদ ইবনে আল জাকারিয়া রাজ এর নাম মোহাম্মদ, উপর নাম আবু বক্কর, পিতার নাম জাকারিয়া। তার পুরো নাম আবু বক্কর মোহাম্মদ ইবনে জাকারিয়া আল রাজী। তিনি আল রাজি নামে পরিচিত। ইউরোপের অবশ্য তিনি আর রাজেশ নামে পরিচিত। তিনি ৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইরানে জন্মগ্রহণ করেন। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে আল রাজির অবদান অপরিসীম। চিকিৎসা শাস্ত্রে মুসলমান বিজ্ঞানীদের অবদানের কথা বলতে গেলে প্রথমে তার কথা বলতে হয়। তবে তিনি শুধু চিকিৎসক কি ছিলেন না, ছিলেন একাধারে গণিতবিদ, রসায়নবিদ ও দার্শনিক। দীর্ঘদিন তিনি জুনদেরশাহপুর ও বাগদাদের সরকারি চিকিৎসালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। 

তৎকালে তার সুনাম ও সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে পশ্চিম এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে অনেক রোগী তার নিকট আসতেন। শল্যচিকিৎসায় আল রাজি ছিলেন তৎকালের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তার অস্ত্রোপচারের পদ্ধতিরশীল লোকদের থেকেও উন্নত। তিনি মোট দুইশোদার দিক গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে শতাব হল চিকিৎসা বিষয়ক। 

তিনি বসন্ত হাম রোগের ওপর আল জুদাইরী ওয়াল হ্যাস বাহ নামক একখানি গ্রন্থ রচনা করেন। তার আরেকটি গ্রন্থের নাম হল আলমান শুরি। এটি দশ খন্ডে রচিত। এ গ্রন্থ দুটি আল রাজি কে চিকিৎসাশাস্ত্রে অমর করে দেখেছে। আল রাজীর ২৩টি ভলিউমে রচিত আল কিতাব আল হাওড়ি, গাইনোকোলজি, অফনেট্রিক্স এবং অপথলমিক সার্জারির ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে। 

নয়টি ভলিউমে রচিত দ্য ভার্চুয়ালস লাইফ বইটিতে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টোটল ও প্লেটোর কাজ সম্পর্কে আলোচনা সমালোচনা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন বিষয়ের সৃষ্টি সালি ধারণা দেন। এই বইটিতে আল রাজী তার বিভিন্ন বই পড়ে অর্জিত জ্ঞান, নানা রকম রোগ এবং তার চিকিৎসা নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ, তার রাখার সমস্ত নোটকে একত্রিত করেছেন। এ বইটির জন্য অনেক পন্ডিত তাকে মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক বিবেচনা করেন।

তিনিই প্রথম চিকিৎসক যিনি হাম ও গুটিবসন্তকে আলাদা রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এর আগে দুটি রোগকে একই ভাবা হত। হাম ও গুটি বসন্ত সম্পর্কিত তার পর্যবেক্ষণ স্থান পেয়েছে তার আজ জুদাইডি ওয়ার্ল হাসবা গ্রন্থে। আল মানসুরি গ্রন্থে তিনি অ্যানাটমি,ফিজিওলজি, মেজাজ, ঔষধ, স্বাস্থ্যরক্ষা বিধি, চর্মরোগ ও প্রসাধনদ্রব্য,শল্যচিকিৎসা, বিষ,জ্বর ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ্য করেন। 

তিনি পেডিয়ার্ট্রিকস,অপথালমোজি, নিউরোসার্জারি, সংক্রামক রোগ সহ চিকিৎসা বিদ্যার অনেক শাখার গোড়া পর্যন্ত করেছেন। তিনি ৯২৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মস্থান ইরানি ইন্তেকাল করেন। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গৌরবময় অবদানের জন্য তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

হাসান ইবনে হাইসাম

হাসানী মিয়া হাই সাম ইরাকের বসরা নগরীতে ৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সবই তিনি বাগদাদে লাভ করেন। তিনি ছিলেন ধনী পরিবারের সন্তান। যে সময়ে আধিক ব্যয়বহুল হওয়ার কেবল সমাজের ধ্বনি শ্রেণী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে তে পারতো। হাসান ইবনে আল হাইসাম এর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বসরার একটি মক্তব থেকে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে। 

হাসান ইবনে হাইসাম একজন চক্ষু বিজ্ঞানই ছিলেন। দর্শন, জ্যোতি বিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত প্রভৃতি বিষয়ে তিনি শতাব্দিক গ্রন্থ রচনা করেন। চক্ষু বিজ্ঞান বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থ কিতাবুল মানার জির তাকে ইতিহাসের অমর করে রেখেছে। মধ্য যুগে আলোকবিজ্ঞানের এটি একমাত্র গ্রন্থ ছিল।

গবেষক রোজার বেকন,নিউলার্ডো,কেপ্লাট প্রমুখ এ গ্রন্থের ওপর নির্ভর করে তাদের গবেষণা করেন। তিনি দৃষ্ট শক্তির প্রতিসরণ ও প্রতিফলন বিষয়ে গ্রিকদের ভুল ধারণা খন্ডন করেন। তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, বাহ পদার্থ থেকে আমাদের চোখে আলোক রশ্মি প্রতিফলিত হয়। চোখ থেকে বের হওয়া আলো বাহ্ব পদার্থকে দৃষ্টিগোচর করায় না। তিনি ম্যাগনিফাইং গ্লাস আবিষ্কার করেন।

আধুনিককালের বিজ্ঞানীরা গতি বিজ্ঞানকে তাদের আবিষ্কার বলে দাবি করলেও ইবনে হাই সাব এ বিষয়ে বহু পূর্বে বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলেন। বায়ুমণ্ডলের ওজন, জনপদার্থের ওজনেও তারতম্য ঘটে। মধ্যাকর্ষণ বিষয়ে তিনি তার গ্রন্থ সমূহে বর্ণনা করেছেন। 

স্যার আইজ্যাক নিউটনকে (১৬৪২ থেকে ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত) মধ্যাকর্ষণ সম্প্রতিক শক্তির আবিষ্কারক মনে করা হলেও ইবনে হাই সাম এ বিষয়ে প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। হাসান ইবনে হাই সাম ১০৪৪ খ্রিস্টাব্দে মিশরের কায়রো শহর ইন্তেকাল করেন।

রসায়ন শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান

বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নেই রসায়ন শাস্ত্রেও মুসলমানদের অবদান ছিল উল্লেখ্য করার মতো। আলকেমি তথা রসায়ন শাস্ত্রে মুসলিম বিজ্ঞানী জাফির ইবনে হাইয়ান, আল কিদ্নি,জুন নুন মিসরি,ইবনে আব্দুল মালিক আল কাসি বিশেষ অবদান রাখেন। তাদের নিরলস পরিশ্রম ও অকৃতিম অবদানের ফলে রসায়ন স্বাস্থ্য আজ উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছেছে।

জাবির ইবনে হাইয়ান

জাবির ইবনে হাইয়ান এর পূর্ণ নাম আবু আব্দুল্লাহ জাবের ইবনে হাইয়ান। তিনি আবু মুসা জাবের ইবনে হাইয়ান নামে পরিচিত। তিনি দক্ষিণ আরবের তুষনগরে আযদ বংশের ৭২২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন জ্ঞান আগ্রহী। গণিত শাস্ত্রে তিনি শিক্ষা লাভ শেষে তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রেও শিক্ষা গ্রহণ করেন। 

তৎকালীন বিখ্যাত পন্ডিত ইমাম জাফর সাদিকের অনুপ্রেরণায় তিনি রসায়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা শুরু করেন। খুব অল্প সময়ের তার সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন বিষয়ের নতুন নতুন তথ্য বিভিন্ন পদার্থ আবিষ্কার করতে আরম্ভ করেন এবং খুব অল্পদিনে মধ্যই শ্রেষ্ঠ রসায়ন বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হন। তিনি কুফা একটি বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠা করেন মৃত্যু পর্যন্ত সেখানে গবেষণারত ছিলেন।

রসায়নকে তিনি সর্বপ্রথম বিজ্ঞানের একটি প্রয়োজনীয় শাখায় সে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি চিকিৎসা শাস্ত্র , ইউক্লিড ও আল মাজেস্টের ভাষ্য, দর্শন, যুদ্ধবিদ্যা, রসায়ন, জ্যামিতি, জ্যোতিবিজ্ঞান, সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। 

তার বিখ্যাত গ্রন্থ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে :জিবাকুশ শরকি,কিতাবুল আরকানিল আরবা, কিতাবুল আহজার, কিতাবুল কালী, কিতাবুল রাহা, কিতাবুল ফিদ্দা, কিতাবুল মিহান, কিতাবুল রিয়াদ,কিতাবুল নুহাস,কিতাবুল ইহ রাক ইত্যাদি। রসায়ন ও বিজ্ঞানের কর্তৃপয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যথা পরিসর্গন দ্রবণ,ভস্মীকরণ,বাষ্পীকরন,গলানো ও প্রভৃতি তার এই আবিষ্কার। 

তিনি তার গ্রন্থে ধাতুর শোদন, তরলীকরন, বাষ্পিয়করণ, ইস্পাত তৈরীর প্রক্রিয়া, লোহার মরিচা রোধক বার্নিস ও চুলের কলপ,লেখারকালীয় কাচ ইত্যাদি দ্রব্য প্রস্তুত প্রণালী ও বিধি সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা করেন। জাবির ইবনে হাইয়ান রসায়ন স্বাস্থ্যের পরিপূর্ণতা দান করেছেন বিদায় তাকে এ শাস্ত্রের জনক বলা হয়।

জাবের ইবনে হাইয়ান বস্তুগজগত কে প্রধানত তিনভাবে গিয়ে বিভক্ত করেন। প্রথম ভাগে স্পিরিট,দ্বিতীয় ভাগে ধাতু এবং দি তৃতীয় ভাগে যৌগিক পদার্থ। তারে আবিষ্কারের ওপর নির্ভর করে বিজ্ঞানীরা বস্তুজকে তিন ভাগে ভাগ করেন। যথা, বাষ্পীয়, পদার্থ ও পদার্থ বহির্ভূত।বিজ্ঞানের এমন কোন শাখা নেই, যেখানে তার অবাধ্য বিচরণ ছিল না। 

তিনি সর্বদা হাতে কলমে কাজ করতেন। প্রতিটি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে তার ফলাফল লিখে রাখতেন।জাবের ইবনে হাইয়ান প্রথম কাপূর,আর্সেনিক ও অ্যামোনিয়াম তাপ দিলে বাষ্প হওয়ার তথ্য তুলে ধরেন। মিশ্র ও যৌগিক পদার্থ সোনা, রুপা, তামা ও দস্তা চূর্ণ করা যায় বলে তথ্য প্রধান করেন। জাবের ইবনে হাইয়ান সর্বপ্রথম নাইট্রিক এসিড এবং সালফিউরিক এসিড আবিষ্কার করেন।

এই দুই এসিডের মিশ্রণে তৈরি স্বর্ণ গোলানোর পদার্থ, অ্যাকোয়া রিজিয়া, নামটি তার দেওয়া হয়। জাবের ইবনে হাইয়ান স্বর্ণ ও পরশ পাথর তৈরির করতে পারতেন। জাবের ইবনে হাইয়ান ৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।

আল কিন্দি

আবু ইয়াকুব ইবনে ইছহাক কিন্দি ৮০১ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের কুফার জন্মগ্রহণ করেন। এখানে শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেছেন। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য বাগদাদ যান। দর্শন নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে আল কিন্দি নিজস্ব দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেন। এই জ্ঞানী তাকে ইসলামিক গণিত থেকে ঔষধ বিজ্ঞানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মৌলিক গ্রন্থ ও ভাষ্য রচনার অনুপ্রাণিত করেছিলেন। 

গণিত ও চিকিৎসা বিজ্ঞান কে গনিত চিকিৎসা বিজ্ঞানের জ্ঞানকে ব্যবহার করে ডাক্তারদের জন্য একটি স্কেল নির্ধারণ করেছিলেন। এই স্কেল দিয়ে ডাক্তাররা তাদের প্রস্তাবিত ঔষধ এর কার্যকারিতা পরিমাপ করতে তা পারতেন। তার পিতা ইছহাক খলিফা মামুনের শাসনামলে কুফাই গর্ভনর ছিলেন। তিনি এরিস্টটলের ধর্মতন্ত্র (technology of Aristotle) আরবিতে অনুবাদ করেন। 

খলিফা মামুনের সময় জ্যোতিবিদ, রসায়ন বিদ, চিকিৎসক ও দার্শনিক হিসেবে তার সুনাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ইনি অর্ন দিক ৩৬৫ টি গ্রন্থ রচনা করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার মতে গণিত ছাড়া দর্শন শাস্ত্র অসম্ভব। দর্শন ছাড়াও তিনি চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতি বিদ্যা, রসায়ন ও গণিত বিষয়ের বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি মাতৃভাষা আরবি ছাড়াও পাহলবি,সংস্কৃত, গ্লিকো ও সিরিও ভাষায় সু পন্ডিত ছিলেন। আলকিন্দি ৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।

জুন্নুন মিসরি

জুন্নুন মিসরি এর পুরো নাম ছাওবান, পিতার নাম ইব্রাহিম। তিনি জুনুন মিশ্রি নামে পরিচিত। তিনি মিশরের আখমিম নামক স্থানে ৭৯৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সুফি হিসেবে প্রসিদ্ধ হলেও আরো মুসলিম বিজ্ঞানীদের মধ্যে রসায়ন শাস্ত্রের ওপর যারা প্রথমদিকে গবেষণা করেন তাদের মধ্যে অন্যতম। 

তিনি রসায়নশাস্ত্রের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি করেন। তার লেখায় শোনা, রুপা সহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থের বর্ণনা পাওয়া যায়। তিনি মিশরীয় সাংকেতিক বর্ণের মর্মার্থ বুঝতেন। তিনি মিশরের আল জিজাহ নামক স্থানে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।

ইবনে আব্দুল মালিক আল কাসি

ইবনে আব্দুল মালিক আল কাসি এর পুরো নাম আবুল হাকিম মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল মালী আল কাসিম। তিনি একাদশ শতাব্দীতে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাগদাদের এই অবস্থান করতেন। তার লেখালেখি আইনুস ছানা ওয়া আই ওয়ানুস সানা ( Essence of the art and aid of Worker)গ্রন্থটির রসায়ন শাস্ত্রে মূল্যবান একটি সংযোজন। 

তিনি এ গ্রন্থের রসায়নের প্রতিটি প্রয়োজনীয় শাখা এর সরল ও সহজ প্রথা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করেন। যে সকল বস্তু সাদা এবং যে সকল বস্তু লাল এগুলো ব্যবহার ও পার্থক্য বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।রসায়ন শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান অনেক। আমাদের অনেকে হয়তো জানি না মুসলমানদের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া পৃথিবীর বড় বড় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। 

যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে।আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url