কর্ডাটা পর্বের প্রাণীদের উদাহরণ এবং কর্ডাটা পর্বের বৈশিষ্ট্য
আজকে আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হলো কর্ডাটা পর্বের উদাহরণ এবং কর্ডাটা পর্বের বৈশিষ্ট্য। বিস্তারিত জানতে আমাদের পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন। ছেড়ে বা বাদ দিয়ে দিয়ে পড়লে অনেক কিছুই আপনার বোধগম্য হবে না। অতএব পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কর্ডাটা পর্বের প্রাণীদের উদাহরণ
প্রাণীজগতের সকল পর্বের মধ্যে এই কর্ডাটা পর্বের সাথেই আমরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত, কারণ আমরা নিজেরা, অর্থাৎ মানুষসহ সকল মেরুদণ্ডী প্রাণী কর্ডাটা পর্বের অন্তর্ভুক্ত। তবে আমাদের একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি, কর্ডাটা পর্বের সকল প্রানীই কিন্তু মেরুদণ্ডী নয়। কর্ডাটা শব্দের অর্থ হলো রজ্জু বা নালি।
কর্ডাটা পর্বের সকল প্রাণীর দেহে পিঠ বরাবর লম্বালম্বি একটি নালি দেহের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, একে বলা হয় নটোকর্ড। এটি নিরেট ও দণ্ডাকৃতির। আর এই নটোকর্ডের ঠিক উপরে সমান্তরালভাবে আরেকটা দণ্ডাকৃতির নালি থাকে, এটি হলো স্নায়ুরজ্জু বা নার্ভকর্ড। তবে এটি নটোকর্ডের মতো নিরেট নয়, বরং ফাঁপা নলের মতো হয়ে থাকে।
মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ক্ষেত্রে নটোকর্ড আরও বিকশিত হয়ে শক্ত মেরুদণ্ডে রূপ নেয়। আর নার্ভকর্ড বিকশিত হয়ে দেহের উপরে বা সামনের দিকে সুগঠিত মস্তিষ্ক গঠন করে। কর্ডাটা পর্বের সকল প্রাণীর দেহে লেজ, এবং গলবিলের দুইপাশে ফুলকা রন্ধ্রের উপস্থিতি দেখা যায়। এটা জেনে তোমরা নিশ্চয় অবাক হচ্ছো, কারণ মানুষ এবং অনেক মেরুদণ্ডী প্রাণীর দেহে আমরা এর কোনোটাই দেখিনা।
আসলে বিষয় টি হলো, ভ্রূণ অবস্থায় যদি মানুষ, পাখিসহ কর্ডাটা পর্বের যে কোনো প্রাণী কে দেখো, তবে দেখবে প্রত্যেকেরই লেজ ও ফুলকা রন্ধ্র রয়েছে। বেড়ে ওঠার একটা পর্যায়ে মানুষের ক্ষেত্রে এই ফুলকা রন্ধ্র পরিবর্তিত হয়ে কানের অংশ ও টনসিল গঠন করে।
অন্যদিকে মাছের ক্ষেত্রে পানির নিচে শ্বাসপ্রশ্বাস চালিয়ে যাওয়ার জন্য এই অঙ্গ আরও সুগঠিত হয়ে ফুলকায় রূপ নেয়। লেজের ক্ষেত্রেও ব্যাপার টা এমনই। ভ্রূণ অবস্থায় মানুষ, পাখি ইত্যাদি সকল প্রাণীর লেজ স্পষ্ট দেখা যায়, কিন্তু মানুষসহ অনেক প্রাণীর ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে এগুলো লুপ্ত হয়ে যায়।
কর্ডাটা পর্বকে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উপপর্বে ভাগ করা যায়ঃ
ইউরোকর্ডাটা
এরা চলনক্ষম নয়, সামুদ্রিক উদ্ভিদের মতোই কোনো শক্ত বস্তুর সাথে স্থায়ীভাবে দেহকে আটকে রাখে। ফোলানো শরীর আর নলের মতো গঠন এদের পানি সংবহন করাতে সাহায্য করে। লার্ভা অবস্থায় নটোকর্ড আর স্নায়ুরজ্জু থাকলেও পরিণত বয়সে এই দুটোই বিলুপ্ত হয়। উদাহরণঃ অ্যাসিডিয়া।
সেফালোকর্ডাটা
সারাজীবনঈ এদের দেহে নটোকর্ড ও স্নায়ুরজ্জুর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। দেখতে মাছের মতো। এই উপপর্বের প্রাণীদের বিবর্তনের ধারায় মেরুদণ্ডী প্রাণীদের পূর্বপুরুষের সবচেয়ে কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলে ধারণা করা হয়। উদাহরণঃ অ্যাস্ফিঅক্সাস।
ভার্টিব্রাটা
এই উপপর্বের প্রাণীরাই মেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে পরিচিত। এদের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এদের সুনির্দিষ্ট মস্তক থাকে, স্নায়ুরজ্জুর উন্নত রূপ হিসেবে স্পাইনাল কর্ড গঠিত হয় এবং স্পাইনাল কর্ডের সুরক্ষা দানের জন্য দৃঢ় মেরুদণ্ড থাকে। এছাড়া এদের মস্তিষ্ক শক্ত খুলির ভেতরে সুরক্ষিত থাকে, এবং স্পাইনাল কর্ডের সঙ্গে তা যুক্ত থাকে। অন্তঃকঙ্কাল এই প্রাণীদের চলনে সহায়তা করে।
গঠন ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ৭টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলো হলোঃ
- চোয়ালবিহীন মাছ (Cyclostomata)
- অস্থিযুক্ত মাছ (Osteichthyes)
- কোমলাস্থিযুক্ত মাছ (Chondrichthyes)
- উভচর প্রাণী (Amphibia)
- সরীসৃপ (Reptilia)
- পাখি (Aves)
- স্তন্যপায়ী (Mammalia)
কর্ডাটা পর্বের বৈশিষ্ট্য
- গঠন ও কোষের বিন্যাসঃ একাধিক অঙ্গের সমন্বয়ে সুগঠিত তন্ত্র গঠিত হয় এবং এর মাধ্যমে জটিল শরীরবৃত্তীয় কাজ সম্পাদন হয়।
- দেহের প্রতিসাম্যঃ এদের দেহে দ্বি-পাশ্বীয় প্রতিসাম্য দেখা যায়।
- দেহগহ্বরঃ সুগঠিত দেহগহ্বর বিদ্যমান থাকে।
- দেহখণ্ডের উপস্থিতিঃ দেহখণ্ডের উপস্থিতি বিদ্যমান।
- কঙ্কালতন্ত্রের ধরনঃ দেহের অভ্যন্তরে ক্যালসিয়াম কার্বনেট দিয়ে তৈরি অন্তঃকঙ্কাল থাকে।
- অন্যান্য বৈশিষ্ট্যঃ সুগঠিত ও সম্পূর্ণ পরিপাকতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র ও সংবহনতন্ত্র রয়েছে।
- জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এদের সবার দেহে লেজ ও ফুলকা গ্রন্থি দেখা যায়।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন।
কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url