গরমে শুষ্কতা দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন?

গরমে প্রত্যেকের শরীর থেকে ঘাম বের হওয়ার কারণে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। ত্বকে বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেকেই ভেবে থাকেন শীতকালেই ত্বকের শুষ্কতার সমস্যা দেখা যায়, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে গরমেও ত্বক শুকিয়ে যেতে পারে।কারণ এই সময় শরীরে থাকা বেশির ভাগ পানি ঘামের মাধ্যমে বেড়িয়ে যায়। আর ত্বকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না থাকার ফলে ত্বক রুক্ষ-শুষ্ক হয়ে যায়।


শুধু যে শীতেই ত্বক ফাটে এমনটা নয়। গরমেও শুকিয়ে যেতে পারে আমাদের ত্বক। শীতকালে আমরা বিভিন্ন উপায়ে রুক্ষ-শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিয়ে থাকি। কিন্তু, গরমের সময় তেমন একটা যত্ন নেওয়া হয় না ত্বকের। আপনাদের ত্বক যদি শুষ্ক হয়, তাহলে গরমের সময়ও ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত বিশেষজ্ঞদের মতে । 

আর যাদের ত্বক তেলতেলে হয় , গরম আর ঘামের জন্য তাঁদের অবস্থা তো আরও নাজেহাল হয়ে যায়। তাই, ত্বক শুষ্ক হোক বা তৈলাক্ত গরমেও ত্বকের যত্ন প্রয়োজন হয়। তাই এই গরমে নিজের ত্বককে তরতাজা করবেন কিভাবে, আপনাদের জন্য রইল সেই উপায় । 

তেমন কিছু নয় বরং, লক্ষ্য করুন আপনাদের রান্নাঘরে। রান্নাঘরেই লুকিয়ে রয়েছে এমন অনেক সাধারণ উপাদান যা নিখুঁতভাবে যত্ন নেবে আপনাদের ত্বকের।

তার আগে জেনে নিই, ত্বক রুক্ষ হওয়ার কারণ কি?

বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমে শরীরের বেশির ভাগ পানি ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। আর সেই পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ না খাওয়া হলে, রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে ওঠে ত্বক।

গরমের দিনগুলোতে আমাদের বেশির ভাগ সময়টাই এয়ারকন্ডিশনের মধ্যে কাটায়, ফলে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে যায়।

অনেকেই দেখা যায়, এই সময় দীর্ঘক্ষণ সুইমিং পুলে কাটায়, ফলে ত্বকের স্বাভাবিক PH মাত্রা কমে যায়। আর যার ফলে ত্বক আরও নিষ্প্রাণ হয়ে উঠে।

গ্লিসারিন এবং গোলাপ জলের মিশ্রণ

বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্লিসারিন ত্বককে নরম করে তুলে এবং হাইড্রেট করে, অপরদিকে গোলাপ জল ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলে এবং সুন্দর রাখে।

এই প্যাকটি তৈরি করার জন্য লাগবে, ১ চা চামচ পিওর গ্লিসারিন তার সাথে ১০০ মিলিলিটার গোলাপ জল ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। মুখ ও শরীরের ময়েশ্চারাইজ হিসেবে মিশ্রণটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে।

অ্যালোভেরা জেল

অ্যালোভেরা জেল আমাদের ত্বকে অনেক ভালো কাজ করে। এতে ভিটামিন A, C, E, B12 এবং ত্বকের জন্য উপকারী প্রচুর মিনারেলও আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালোভেরাতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড আমাদের ত্বককে আরও ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজ করে তুলে। ত্বককে আরো উজ্জ্বল করে তুলে ।

প্রথমে অ্যালোভেরার জেল বা জুস বের করে ত্বকে ভালোভাবে প্রলেপ দিতে হবে। অনেকের ত্বকে পিওর এলোভেরা স্যুট করে না ফলে ত্বকে সমস্যা হতে পারে, তাই তারা বাজারে কিনতে পাওয়া এলোভেরা জেলও ইউজ করতে পারে।

অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে, এবং ২০ মিনিট পর নরমাল পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। অ্যালোভেরা ত্বককে তৈলাক্ত করে না, ময়েশ্চারাইজ করবে।

মধু ব্যবহার করতে পারেন

মধু একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এর জন্য পানির সাথে মধু মিশিয়ে লাগিয়ে নিতে হবে এবং ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। ১৫ মিনিট পর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে মুখে, ঘাড়ে এবং হাতে লাগাতেও লাগানো যায়, এতে ত্বক কোমল ও মশ্চারাইজ থাকবে।

অলিভ অয়েল এবং চিনি 

চিনির স্ক্রাব এজেন্ট হিসেবে ভীষণ ভালো কাজ করে। এটি ত্বকের বাইরের স্তর থেকে ত্বকের মৃত কোষগুলোকে এক্সফোলিয়েট করতে সহায়তা করে এবং ত্বকের কোমলতা বজায় রাখে। অপরদিকে, অলিভ অয়েল ত্বকের শুষ্কতা দূর করে আদ্রতা বজায় রাখে।

আধা কাপ চিনির সাথে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এর সাথে ল্যাভেন্ডারের তেলও এড করা যায়। এর পরে ত্বকে হালকাভাবে স্ক্রাবটি ঘষতে হবে। ৫ মিনিট এর পর ভালো করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

এই গরমে ত্বকের যত্নে আরো কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে 

১। সানস্ক্রিন ব্যবহার 

প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ । অন্তত এসপিএফ ৩০ বা ৫০ সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন বাছই করতে হবে। বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই শরীরের খোলা অংশে লাগিয়ে নিতে হবে। কয়েক ঘন্টা পর আবার নতুন করে লাগাতে হবে।

২। ক্লিনজার ব্যবহার করা 

দিনে কমপক্ষে দুইবার, সকাল এবং রাতের স্কিনকেয়ার রুটিনে রাখতে হবে ক্লিনজার। ত্বকের ধরনের সাথে মানানসই ক্লিনজার বাছাই করতে হবে। সকালে উঠে মুখ ধুয়ার ফলে দূর হবে সারারাত জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া। এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ধুয়ে নিলে দূর হবে মেকআপ ও সারাদিনের জমে থাকা ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া।

৩। পানি জাতীয় সিরাম ব্যবহার করা

গ্রীষ্মের তাপ এবং আর্দ্রতার মাত্রা উঠানামা করার সাথে সাথে ত্বক মাঝে মাঝে শুষ্ক আবার কখনও কখনও তৈলাক্ত হয়ে যায়। হাইড্রেশনের মাত্রা সবসময় সামঞ্জস্য রাখা জরুরি। ত্বকের যত্নে পানি জাতীয় সিরাম ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে শুষ্ক ত্বক এবং ডিহাইড্রেটেড ত্বকের মধ্যে পার্থক্য আছে। শুষ্ক ত্বকের জন্য এক ধরন, কিন্তু ডিহাইড্রেটেড ত্বক পানিশূন্যতার ফলে হয়ে থাকে।

৪। প্রতিদিন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার 

পানি জাতীয় সিরামের পাশাপাশি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। অনেকেই এই গরমের সময় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে না। কিন্তু এতে ত্বক অনেকটাই নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। এই সময় হালকা ওজনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে । 

এতে ত্বকে তেলতেলে ভাব হবে না। হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এবং সিরামাইডের মতো উপাদানগুলো খুবই হাইড্রেটিং। এসব উপাদান সমৃদ্ধ আছে এমন ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে হবে।

৫।পরিমাণমতো পানিপান

গরমের সময় শরীরে জলের ঘাটতি হতে দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ, শরীরে ডিহাইড্রেশন হলে চলবে না। শরীরকে সব সময় হাইড্রেটেড রাখতে হবে। এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। শুধু পানি নয়, রসালো ফল এবং ফলের রসও খেতে হবে। 

গরমের দিনে এমনিতেই ডাবের জল, বিভিন্ন রসালো ফল যেমন- আম, তরমুজ এবং আরো অনেক ফলেরই জুস খেতে হবে। বেশি পরিমাণে ফল খেলে শরীরে পানির ঘাটতি হয় না। অর্থাৎ, শরীর ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা থাকে না।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url