জীববিজ্ঞান কাকে বলে? জীববিজ্ঞানের শাখা কয়টি ও কি কি

মানবসভ্যতা বিকাশে বর্তমানে শতকের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন, চিকিৎসাশাস্ত্রের উন্নয়ন এবং বিরূপ পরিবেশে জীবনের অস্তিত্ব রক্ষা। এসব ক্ষেত্রে জীববিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম। আজকে আমরা জীববিজ্ঞানের সংজ্ঞা, শাখাসমূহের নাম এবং জীবের নামকরণের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। বিস্তারিত জানতে অবশ্যই পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন।

জীববিজ্ঞান কাকে বলে

বিজ্ঞানের যে শাখায় জীব ও জীবন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গবেষণা করা হয় তাকে জীববিজ্ঞান বলে। তাদের গঠন, বৃদ্ধি, বিবর্তন ও শ্রেণী বিন্যাস বিদ্যার অংশ আলোচনাও এর অন্তর্ভুক্ত। জীববিজ্ঞান বেশ প্রাচীন বিজ্ঞান। জীববিজ্ঞানকে ইংরেজিতে Biology বলে। এটি গঠিত হয়েছে গ্রিক bios (জীবন) এবং logos (জ্ঞান) শব্দ দুটির সংযোগের মাধ্যমে। 

যেহেতু চিকিৎসা ও কৃষিসংক্রান্ত ব্যাপারে জীববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, সেহেতু সভ্যতার একেবারে আদিকাল থেকে গ্রিস, মিশর, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতবর্ষ ও চীনসহ বিভিন্ন জায়গার সভ্যতায় জীববিজ্ঞানের কিছু না কিছু চর্চা হয়েছে। যদিও সেসব চর্চাকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিচারে ঠিক বিজ্ঞান বলা যায় না, তবুও জ্ঞানের এই শাখার বিকাশের জন্য তা অপরিহার্য ছিল।

জীববিজ্ঞানের ধারণা

আমরা অনেকে জানি বা শুনে এসেছি যে যাদের প্রাণ বা জীবন আছে তারা জীব, আর যেসব জিনিসের জীবন নেই সেগুলো জড়। ভালো ভাবে বোঝার জন্য বিশ্বের সব পদার্থ কে এরকম দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, কিন্তু বিজ্ঞানের সূক্ষ্ম বিচারে কোথায় জড়-অচেতনের শেষ আর কোথায় জীবনের শুরু, তা অনেক সময় বলা মুশকিল। 

আসলে, জীবনের ভিত্তিমূলে কাজ করে পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নের সেই একই নিয়ম, যা কিনা জড় জগৎকেও নিয়ন্ত্রণ করে। তাই জীবজগৎকে বুঝতে হলে ভৌত বিজ্ঞান তথা পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের জ্ঞান জরুরি। কিন্তু এটা ভাবলে ভুল হবে যে ভৌতবিজ্ঞান জানলে আলাদা করে জীববিজ্ঞান পাঠ নিষ্প্রয়োজন। 

বরং জীবকে ভাবা যেতে পারে অনেকগুলো জড়ের এমন এক জঠিল সমাবেশ হিসেবে, যেখানে ঐ জটিলতার কারণে নতুন কিছু গুণের উদ্ভব ঘটেছে। ঠিক যেমন হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের নির্দিষ্ট আনুপাতিক সংযোগে পানি তৈরি হয়, যার বৈশিষ্ট্য হাইড্রোজেন বা অক্সিজেন কোনোটার মতোই হয়না। 

তাই জড়ের সুনির্দিষ্ট সন্নিবেশে জীব গঠিত হলেও তার মধ্যে এমন সব নতুন ধরনের বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব ঘটে, যা তার জড় গাঠনিক উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল না।

জীববিজ্ঞানের শাখা

জীবের যে দুটি ধরন আমরা চারপাশে তাকালেই তা উপলব্ধি করতে পারবো, সেগুলো হলো উদ্ভিদ এবং প্রাণী। তাই বহুদিন পর্যন্ত জীববিজ্ঞান পাঠের সুবিধার জন্য একে দুটি শাখায় ভাগ করে নেওয়ার প্রচলন ছিল। তাহলো উদ্ভিদবিজ্ঞান এবং প্রাণীবিজ্ঞান। এ রীতি এখনও কিছুটা প্রচলিত আছে। যদিও জীববিজ্ঞান আজ এতটাই বিস্তৃত লাভ করেছে যে শুধু দুটি শাখায় ভাগ করে পাঠ আর চলবে না। 

এমন অনেক জীব আছে যা উদ্ভিদ বা প্রাণী কোনোটাই নয়। যেমন: ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি। আবার কখনো কখনো প্রাণী, উদ্ভিদ, ব্যাকটরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস প্রভৃতির কোনো সাধারণ বৈশিষ্ট্যকে একসাথে বিশ্লেষণ করার দরকার হয়, তখন আর জীবের ধরনভিত্তিক শাখা লাগসই হয় না। তাই প্রয়োজনের তাগিদে জীববিজ্ঞান এখন বহুসংখ্যক শাখায় বিভক্ত হয়েছে। 

জ্ঞানের প্রায় প্রতিটি বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত শাখাগুলোকে ভৌত বা মৌলিক এবং ফলিত এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। জীববিজ্ঞানও তার ব্যতিক্রম নয়। ভৌত শাখা বলতে যেসব শাখা বোঝানো হয়, যেখানে তার তাত্ত্বিক ভিত্তি অনুসন্ধান করাটা প্রয়োগ-সংক্রান্ত দিকের তুলনায় বেশি গুরুত্ব পায়। আর যেখানে প্রয়োগটাই বড়, সেটা হচ্ছে ফলিত শাখা।

ভৌত জীববিজ্ঞান

ভৌত জীববিজ্ঞান শাখায় তত্ত্বীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। এতে সাধারণত নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়:
  • অঙ্গসংস্থান(Morphology): জীবের সার্বিক অঙ্গসংস্থানিক বা দৈহিক গঠন বর্ণনা এ শাখার আলোচ্য বিষয়। দেহের বাহ্যিক বর্ণনায় বিষয়কে বহিঃ অঙ্গসংস্থান (External Morphology) এবং দেহের অভ্যন্তরীণ বর্ণনার বিষয়কে অন্তঃ অঙ্গসংস্থান (Internal Morphology) বলা হয়।
  • শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা বা ট্যাক্সোনমি (Taxonomy): জীবের শ্রেণিবিন্যাস এবং তার রীতিনীতিগুলো এ শাখার আলোচিত বিষয়।
  • শারীরবিদ্যা (physiology): জীবদেহের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জৈবরাসায়নিক কার্যাদি, যেমন: শ্বসন, রেচন, সালেকসংশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয় এ শাখায় আলোচিত হয়৷ এছাড়া জীবের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় কাজের বিবরণ এ শাখায় পাওয়া যায়।
  • হিস্টোলজি (Histology): জীবদেহের টিস্যুসমূহের গঠন, বিন্যাস এবং কার্যাবলি এ শাখায় আলোচনা করা হয়।
  • ভ্রুণবিদ্যা (Embryology): জনন কোষের উৎপত্তি, নিষিক্ত জাইগোট থেকে ভ্রুণের সৃষ্টি, গঠন পরিস্ফুটন, বিকাশ প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা এ শাখার প্রধান বিষয়।
  • কোষবিদ্যা (Cytology): জীবদেহের কোষের গঠন, কার্যাবলি ও বিভাজন সম্পর্কে যাবতীয় আলোচনা এ শাখার বিষয়।
  • বংশগতিবিদ্যা বা জেনেটিক্স (Genetics): জিন ও জীবের বংশগতিধারা সম্পর্কে এ শাখায় আলোচনা করা হয়।
  • বিবর্তনবিদ্যা (Evolution): পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ, জীবের বিবর্তন এবং ক্রমবিকাশের তথ্যসমূহের আলোচনা এ শাখার বিষয়।
  • বাস্তুবিদ্যা (Ecology): এ শাখায় প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে জীবের আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়।
  • এন্ডোক্রাইনোলজি (Endocrinology): জীবদেহে হরমোনের (hormone) কার্যকারিতা বিষয়ক আলোচনা এ শাখার বিষয়।
  • জীবভূগোল (Biogeography): এ শাখায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগোলিক সীমারেখায় জীবের বিস্তৃতি এবং অভিযোজন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। জীবের ভৌগোলিক বিস্তারের সাথে ভূমন্ডলের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কিত বিদ্যা।

ফলিত জীববিজ্ঞান

এ শাখায় রয়েছে জীবন সংশ্লিষ্ট প্রায়োগীক বিষয়গুলো। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য যোগ্য শাখার কথা নিচে উল্লেখ করা হলো:
  • জীবাশ্ম বিজ্ঞান (Palaeontology):  প্রাগৈতিহাসিক বিবরণ এবং জীবাশ্ম সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • জীব পরিসংখ্যানবিদ্যা (Biostatistics): জিপ পরিসংখ্যান বিষয়ক বিজ্ঞান।
  • পরজীবী বিদ্যা (parasitology): পরজীবিতা, পরজীবী জীবের জীবন প্রণালী এবং রোগ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • মৎস্য বিজ্ঞান (Fisheries): মাছ, মাছ উৎপাদন, মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • কীটতত্ত্ব (entomology): কীট পতঙ্গের জীবন, উপকারিতা ও অপকারিতা, ক্ষয়ক্ষতি, দমন ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • অনুজীববিজ্ঞান (microbiology): ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অণুবীক্ষণিক ছত্রাক এবং অন্যান্য অনুজীব সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • কৃষি বিজ্ঞান (agriculture): কৃষি বিষয়ক বিজ্ঞান।
  • চিকিৎসা বিজ্ঞান (medical science): মরদেহ, রোগ, চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • জিন প্রযুক্তি (genetic engineering): জিন-প্রযুক্তি ও এর ব্যবহার সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • প্রাণরসায়ন (biochemistry): জীবের প্রাণ রাসায়নিক কার্যপ্রণালী, রোগ ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • পরিবেশ বিজ্ঞান (environment science): পরিবেশ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান (Marine biology): সামুদ্রিক জীব সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • বনোবিজ্ঞান (forestry): বন, বন সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এবং সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • জীব প্রযুক্তি (biotechnology): মানব এবং পরিবেশের কল্যাণে জিব ব্যবহারের প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • ফার্মেসি (pharmacy): ঔষধ শিল্প ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিজ্ঞান।
  • বন্যপ্রাণীবিদ্যা (wildlife): বন্যপ্রাণী বিষয়ক বিজ্ঞান।
  • বায়োইনফরমেটিকস (bioinformatics): কম্পিউটার প্রযুক্তি নির্ভর জীববিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য, যেমন ক্যান্সার বিশ্লেষণ বিষয়ক ইত্যাদি।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url