ঈদের নামাজ একাকী পড়ার বিধান

প্রত্যেক নামাজেরই কিছু রোকন বা শর্ত রয়েছে। ঈদের নামাজেরও কিছু শর্ত রয়েছে। ঈদের নামাজের শর্ত ও জুম্মার নামাজের শর্ত একই। জুম্মার নামাজ আদায়ের জন্য যেমন জামাতের প্রয়োজন ঠিক তেমনি ঈদের নামাজ মসজিদ, খোলা জায়গা, যেখানেই পড়া হোক না কেন , ঈদের নামাজ আদায়েয় শর্ত হলো জামাতে নামাজ আদায় করা। সুতরাং জামাত ছাড়া ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে না।


শহরের মসজিদগুলোতেও ঈদের নামাজ জায়েজ আছে। (বুখারি : ১/১৩১, ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৫, ১/৫৫৭)

ঈদের নামাজ একাকী পড়ার বিধান সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত বলা হলো-

এখানে জুম্মা হচ্ছে সপ্তাহের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন আর পুরো বছরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে ঈদের দিন। আর এ বিশেষ দিন গুলিতে আল্লাহ তাআলা তার জন্য বিশেষ ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন। জুম্মার নামাজ ও ঈদের নামাজ, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তুলনায় ভিন্ন পদ্ধতিতে আদায় করা হয়। আর এ দুটি বিশেষ দিনের ইবাদতের মধ্যে কিছু মিল ও কিছু অমিল রয়েছে। জুম্মার ও ঈদের নামাজের শর্ত একই। জুম্মার ও ঈদের দুই নামাজেই খুতবা দেওয়া হয়।

নামাজ শেষে খুতবা দেওয়া ইমামের জন্য সুন্নত আর তা শোনা নামাজির জন্য ওয়াজিব। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৯, ৫৬০)

জুম্মার নামাজে আজান ও ইকামত দেওয়া হয় কিন্তু ঈদের নামাজে আজান ও ইকামত নেই। জুম্মার নামাজ ফরজ ও ঈদের নামাজ ওয়াজিব (অন্য মাযহাবে সুন্নত)। জুম্মার নামাজের খুতবা ওয়াজিব কিন্তু ঈদের নামাজের খুতবা সুন্নত। জুম্মার নামাজের পূর্বে দুটি খুতবা দিতে হয় আর ঈদের নামাজের পডরে খুতবা দিতে হয়। 

জুম্মার ও ঈদের নামাজের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য হলো ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর দিতে হয়। তিন তাকবীর প্রথম রাকাতের তাকবীরে তাহরীমা ও সানা পড়ার পর ও বাকি তিন তাকবীর দ্বিতীয় রাকাতের রুকু করার পূর্বে দিতে হয়।

রাসূল (সা.) ঈদের দিন সম্পর্কে বলেন, "হে মুসলিম উম্মাহ! এটা আমাদের ঈদ"। (বুখারী ১/১৩৪)

সূর্য উদিত হয়ে এক বর্শা (অর্ধহাত) পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত ঈদের নামাজের সময় থাকে। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত, যেন নামাজের আগেই বেশি বেশি সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদির : ২/৭৩, আল-মুগনি : ২/১১৭)

ঈদ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা রহমতপুর্ণ দিন। আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের আনন্দ উৎসব করার জন্য বছরের দুটি দিন ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই উৎসবের দিনে আল্লাহ তাআলা কোন কঠোর বিধান দেননি। আল্লাহ তাআলা ঈদের দিন আসমানে ফেরেশতাদের সামনে বলেন, যারা ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেছে তাদের সমস্ত গুনাহ মাফ।

রাসূল সা. ইরশাদ করেন, ‘আসমানে ঈদের দিনকে পুরস্কার দিবস নামকরণ করা হয়। ঈদের নামাজ শেষে ফেরেশতারা ঘোষণা করতে থাকে, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের পাপসমূহ মাফ করে দিয়েছেন, তোমরা পূত পবিত্র হয়ে গৃহে ফিরে যাও। (তাবারানি কাবির, সাদ ইবন আউস রা. থেকে বর্ণিত, তারগিব ২/১৫৯)

কোরআন হাদিসের কোন জায়গায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ও সাহাবীদের মধ্যে কারও ঈদের নামাজ একাকী পড়ায় বিধান পাওয়া যায় নি। তবে শাফেয়ী মাযহাবে ঈদের নামাজ জামাত ছাড়া একাকী পড়ার বিধান আছে। কিন্তু হানাফি মাজহাবে ঈদের নামাজ একা পড়ার বিধান নেই। হানাফি মাজহাবের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, জামাত ছাড়া একাকী ঈদের সালাত আদায় করা যায় না। (ইবন রুশদ, ১/১৫৯, মুহিতে বুরহানি ২/২২৯)

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই হানাফি মাজহাবের অন্তর্ভুক্ত। কোন সমস্যার জন্য যদি কেউ মসজিদে না যেতে পারে তাহলে সে বাড়িতে জামাতের আয়োজন করে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবে। বাড়িতে সম্ভব না হলে যে কোন খোলা জায়গাতেও জামাত করে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবে। তবে শর্ত হলো ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিন জন বয়স্ক পুরুষ থাকতে হবে।

হযরত আনাস রা. একবার ঈদের নামাজ পড়তে পারেননি, তো তিনি বাড়ির সবাইকে একত্র করে তার গোলামকে ঈদের নামাজের ইমামতি করতে বললেন। (বুখারী শরীফ ১/১৩৪)

এর পরেও যদি ঈদের নামাজ না পড়তে পারে তবে ঈদের নামাজের বদলে দুই রাকাত চাশতের নামাজ আদায় করার বিধান আছে। এখানে ঈদের নামাজের কোন কাযা নাই। আতা ইবন রাবাহ বলেছেন, কোনো কারণে ঈদের নামাজ পড়তে না পারলে দু’রাকাত চাশতের নামাজ আদায় করবে। (বুখারী ১/ ১৩৪)

হানাফি মাজহাবে এ জন্য দু রাকাত ও চার রাকাত উভয়টির অনুমোদন রয়েছে। তবে চার রাকাত পড়া উত্তম লেখা হয়েছে ফতোয়ার কিতাবাদিতে। (মুহিত ২/২২৯, শামী, আলমগিরি, বাদায়ে, বাহর, মাজমাউল আনহুর, মুখতাসারুত তাহাভি)

ঈদের নামাজের বদলে চাশতের নামাজ দুই বা চার রাকাত আদায় করা যায়। আর চাশতের নামাজে ঈদের নামাজের মত অতিরিক্ত ছয় তাকবির দেওয়া লাগবে না। নফল নামাজের মতই নিয়ত করে যে কোন সুরা মিলিয়ে পড়ে নামাজ আদায় করতে হবে।

ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম-

ঈদের নামাজে নিয়ত করে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত বাঁধা। এরপর সানা পড়ে অতিরিক্ত তিন তাকবির দেওয়া। তাকবির দেওয়া সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে এক তাকবির থেকে আরেক তাকবিরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত থাকে। 

 প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া এবং তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত বেঁধে নেওয়া। আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়ে সুরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সুরা মিলিয়ে পড়া । অতঃপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সিজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।

এরপর দ্বিতীয় রাকাতে বিসমিল্লাহ সহ সুরা ফাতিহা ও তার সাথে অন্য সুরা মিলিয়ে পড়া। এরপর অতিরিক্ত তিন তাকবির দেওয়া। প্রথম রাকাতের মতো দুই তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে ছেড়ে দেওয়া। এরপর তৃতীয় তাকবির দিয়ে হাত বাঁধা। তারপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া। সিজদা আদায় করে তাশাহহুদ, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সুস্থ ভাবে ঈদ উদযাপন করার ও ঈদের নামাজ জামাতে আদায় করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url