আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত | আয়াতুল কুরসির আমল সমূহ
মহাগ্রন্থ আল কোরআন অনেক বেশি ফজিলত পূর্ণ একটি কিতাব। এ কিতাবের প্রতিটা অক্ষর পাঠের বিনিময়ে দশটি নেকি পাওয়া যায়। তবে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বিশেষ কিছু সূরা ও আয়াত রয়েছে। যেগুলোর গুরুত্ব অন্যসব সূরা ও আয়াতের তুলনায় অনেক বেশি।
তবে কুরআনের একটি আয়াত আছে যে আয়াতটি অন্য সকল সূরার আয়াতের তুলনায় অনেক বেশি মর্যাদাপূর্ণ। এ আয়াত এত বেশি মর্যাদা পূর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো এই আয়াতে আল্লাহ তাআলার পরিচয় ও তার গুনবাচক নামগুলো এই আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়াতুল কুরসি সকাল সন্ধা পাঠ করা অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ। যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে সে সারা দিন শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে সে ব্যক্তি সারারাত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকবে। একই সাথে রাতের বেলায় কোন স্থানে বা কোন বাড়িতে যদিআয়াতুল কুরসি পাঠ করা হয় তাহলে সেই স্থানে চুরি হওয়ার থেকে আল্লাহ রক্ষা করে।
উবাই বিন কাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) উবাই বিন কাবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার দৃষ্টিতে কোরআন মাজিদের কোন আয়াতটি সর্ব শ্রেষ্ঠ? তিনি বলেছিলেন, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুআল হাইয়্যুল কাইয়্যুম তথা আয়াতুল কুরসি। তারপর রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ হাত দিয়ে তাঁর বুকে মৃদু আঘাত করে বলেন, আবুল মুনজির! এই জ্ঞানের কারণে তোমাকে মোবারকবাদ। (মুসলিম, হাদিস : ১৩৯৬)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত আছে। সেটি হলো আয়াতুল কুরসি। সুরা বাকারার ২৫৫ আয়াতকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়।
আয়াতুল কুরসি-
اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।
অর্থ
আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তারই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁকে সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন।
তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান।
আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও আমল সমূহ
হজরত আলী (রা:) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। (সুনানে বাইহাকী)
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকে না। (শুআবুল ঈমান : ২৩৯৫)
হজরত আবু জর জুনদুব ইবনে জানাদাহ (রা.) রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনার প্রতি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন কোন আয়াতটি নাজিল হয়েছে? রাসুল (সা.) বলেছিলেন, আয়াতুল কুরসি।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিটি বস্তুরই চূড়া আছে। কোরআনের চূড়া হলো সুরা আল বাকারা। এতে এমন একটি আয়াত আছে, যা কোরআনের আয়াতগুলোর প্রধান; তা হলো আয়াতুল কুরসি।
তবে কেউ যদি প্রত্যেক নামাজের পর তা পাঠ করতে না পারে, তাহলে অন্তত ফজরের নামাজের পর এবং মাগরিবের নামাজের পর পাঠ করবে। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা পুরো রাত ও পুরো দিন পাঠকারীকে যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ রাখবেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমজানের যাকাত রক্ষার কাজে নিয়োজিত করলেন। অতঃপর আমার কাছে এক ব্যক্তি আসল। অতঃপর সেই খাদ্য থেকে অঞ্জলি ভর্তি করে নিতে শুরু করল। আমি বললাম অবশ্যই আমি তোমাকে রাসূলের কাছে উপস্থাপন করব। চোর বলল, আমি তো অভাবী।
আমার তো পরিবার আছে, আর আমার অত্যন্ত প্রয়োজন আছে। আবু হুরায়রা বললেন, (এ কথা শুনে) আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। অতঃপর সকাল হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবু হুরায়রা! গত রাতের তোমার বন্দীর কি অবস্থা? তিনি বললেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
সে বিশাল প্রয়োজনের অভিযোগ করেছে এবং সে বলেছে তার নাকি পরিবার আছে। তাই আমি দয়া করে তাকে ছেড়ে দিলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে। অতঃপর আমি ভাবলাম সে আবার আসবে। অতঃপর সে আবার এসে থলে ভরে খাদ্য নিচ্ছে।
আমি তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, এবার অবশ্যই তোমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যাব। সে আবার একই অভিযোগ করল। এবারও আমি তাকে দয়া করে ছেড়ে দিলাম। অতঃপর সকাল হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বন্দীর অবস্থা কি? আমি বললাম, সে অভাবের অভিযোগ করেছে, তাই দয়া করে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।
তিনি বললেন, সে মিথ্যা বলেছে, সে আবার আসবে। অতঃপর তৃতীয়বার সে আবার এসে থলে ভরে খাদ্য নিচ্ছিল। আমি বললাম, এবার অবশ্যই তোমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে যাব। আবু হুরায়রা বললেন, তুমি বারবার বল আসবে না তবুও আসো। চোর বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কিছু কালিমা শিক্ষা দিব যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমার উপকার করবে।
আমি বললাম, সেটা কি? চোর বলল, যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে। তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন। যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না। এটি শুনে আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন রাসুল (সা.) আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের কথা বললেন।
তখন রাসুল (সা.) বললেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে। রাসুল (সা.) আবু হুরায়রাকে (রা.) বললেন, তুমি কি জানো সে কে? আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, না। রাসুল (সা.) আবু হুরায়রাকে (রা.) বললেন, সে হচ্ছে শয়তান। ( সহীহ বুখারী, হাদিস ২৩১১)
উক্ত হাদিসে শয়তান নিজেই স্বীকার করেছে যে, আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে সে আসতে পারে না।
হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. থেকে বর্ণিত, তাঁর একটি খেজুর শুকানোর জায়গা ছিল। তাতে খেজুর হ্রাস পেত। এক রাতে তিনি পাহারায় রইলেন। হঠাৎ তিনি কিশোরের মতো এক প্রাণী দেখতে পেলেন। সে তাকে সালাম দিল। তিনি সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন্ জাতির? জিন না মানব? সে বলল, জিন।
তিনি বললেন, তোমার হাত দাও তো দেখি। সে হাত বাড়িয়ে দিল। দেখা গেল তার হাত ও পশম কুকুরের হাত ও পশমের মতো। সে বলল, এটা জিনের গঠন। সে আরো বলল, জিনেরা জানে, তাদের মধ্যে আমার চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো পুরুষ নেই। তিনি বললেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছ? সে বলল, আমি জানতে পেরেছি, আপনি সাদাকা করতে পছন্দ করেন।
তাই আপনার খাদ্যবস্তু (খেজুর) থেকে নিতে এসেছি। তিনি বললেন, তোমাদের (অনিষ্ট) থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী? সে বলল, সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত। যে তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে। আর যে সকালে পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের (অনিষ্ট) থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকবে।
সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বিষয়টি জানালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, খবীস সত্য বলেছে। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৭৮৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২০৬৪)
শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে, জান্নাতে প্রবেশের পথকে শুগম করতে আমাদের সকলের উচিত বেশি বেশি করে আয়তুল কুরসি পাঠ করা। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে বেশি বেশি আয়াতুল কুরসি পাঠ করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)
লেখকের মন্তব্য
আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন।
কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url