মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

মাশরুমে থাকা নিউক্লিক এসিড ও অ্যান্টি এলার্জেন অবস্থিত থাকায় এবং সোডিয়ামের মাত্রা কম থাকার ফলে কিডনির রোগ ও এলার্জি রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। মাশরুমে থাকা স্ফিংগলিপিড এবং ভিটামিন-১২ অধিক থাকায় স্নায়ুতন্ত্র ও স্পাইনাল কর্ড সুস্থ ও সবল রাখে। তাই মাশরুম খেলে হাইপার টেনশন দূর হয় এবং মেরুদ- দৃঢ় থাকে। হেপাটাইটিস বি ও জন্ডিস প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে।

প্রথমে জানা যাক, মাশরুমের ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে 

১। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

মাশরুমে বেশি মাত্রার আঁশ থাকে, সোডিয়াম পরিমাণে কম থাকে এবং অধিক পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদপিণ্ডের কাজে সহায়তা করে।

২। ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা রাখে

মাশরুমের ফাইবার বা আঁশ পাকস্থলিকে দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখতে সহায়তা করে। মাশরুম রক্তে থাকা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। উচ্চমাত্রার ফ্যাট সংযুক্ত লাল মাংসের পরিবর্তে মাশরুম গ্রহণ করলে ওজন কমাতে সহায়তা করে। FASEB তে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে যে, লাল মাংসের পরিবর্তে সাদা মাশরুম গ্রহণ করলে ওজন কমাতে সহায়তা করে।

৩। ত্বক সুস্থ রাখে

মাশরুমে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাবিন থাকায় ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।এই ছত্রাকে ৮০-৯০ ভাগ পানি থাকে যা ত্বককে নরম ও কোমল রাখতে সহায়তা করে ।

৪। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

মাশরুমে পলিফেনল ও সেলেনিয়াম নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সালফারও থাকে। অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মারাত্মক ক্ষতিকর কিছু রোগ নিরাময় করে, যেমন- স্ট্রোক, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ এবং ক্যান্সার থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে

এটি মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শিটাকে মাশরুম দৈনন্দিন গ্রহণ করলে কিছু অসুস্থতা দূর হয়, যেমন- কফ ও ঠান্ডা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

৬। ভিটামিন ডি ধারণ করে থাকে

সূর্যের আলোর সংস্পর্শে কারণে যে মাশরুম উৎপন্ন হয় তাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকে, যা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের শোষণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।

৭। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে

নিয়মিত মাশরুম গ্রহণ করলে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। মাশরুমের ফাইটোকেমিক্যাল টিউমারের বৃদ্ধিতেও বাঁধা সৃষ্টি করে থাকে।

৮। স্নায়ুতন্ত্র

মাশরুমের ভিটামিন বি স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী এবং বয়সজনিত রোগ যেমন- আলঝেইমার্স রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।

৯। ডায়াবেটিস

মাশরুম খাওয়ার ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। মাশরুমে এনজাইম ও প্রাকৃতিক ইনসুলিন থাকায় চিনিকে ভাঙ্গতে সহায়তা করে।

১০। পরিপাক

এতে থাকা ফাইবার ও এনজাইম হজম করতে সহায়তা করে। এটি অন্ত্রে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার কাজ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং কোলন এর পুষ্টি উপাদান শোষণও বাড়তে সাহায্য করে।

খাদ্যগুণে পরিপূর্ণ মাশরুম অত্যন্ত স্বাস্থ্যপ্রদ একটি খাদ্য। মাশরুমের পুষ্টিমান তুলনামূলকভাবে অত্যধিক এবং এর প্রোটিন অতি উন্নতমানের এবং মানব দেহের জন্য অতিশয় উপকারী একটি খাদ্য। একটি পরিপূর্ণ প্রোটিনের পূর্বশর্ত হলো মানব দেহের অত্যাবশ্যকীয় ৯টি অ্যাসিডের উপস্থিতি থাকা। মাশরুমে প্রয়োজনীয় এই ৯টি অ্যামাইনো অ্যাসিড বিদ্যমান থাকে । 

অন্যান্য প্রাণিজ আমিষ যেমন -মাছ, গোস্ত, ডিম অতি নামি-দামি খাবার হলেও এগুলো মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর, কারণ এতে অধিক চর্বি অবস্থিত থাকায় যা অধিক মাত্রায় গ্রহণ করলে শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে, যার ফলে মেদ-ভুঁড়ির বৃদ্ধি করে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো আরো অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পায়।

মাশরুমের প্রোটিনে-ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অনেক অল্প থাকায় এবং কোলেস্টেরল ভাঙার উপাদান-লোভস্ট্রাটিন, অ্যান্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকার ফলে শরীরের কোলেস্টেরলস জমতে পারে না বরং মাশরুম খেলে শরীরে বহু দিনের জমানো কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে নষ্ট করে থাকে । 

১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ২৫-৩৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। অপরদিকে,আমরা যে নামি-দামি খাবার হিসেবে মাছ ,গোশত, ডিম গ্রহণ করে থাকি তার মধ্যে ১০০ গ্রাম মাছ, মাংস ও ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ হলো ১৬-২২ গ্রাম , ২২-২৫ গ্রাম ও ১৩ গ্রাম মাত্র।

মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করাই ভিটামিন ও মিনারেলের প্রধান কাজ। শরীরের চাহিদামতো প্রতিদিন ভিটামিন ও মিনারেল খেতে না পারলে শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে নানারকম জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। মাশরুমে আছে অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম ও সেলেনিয়াম। 

সেলেনিয়াম উপাদানটি শুধুমাত্র মাশরুমেই পাওয়া যায়, মাশরুমে আরও আছে এরগোথিওনেইন নামে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা মানব দেহের জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করে। মাশরুমে ভিটামিন বি-১২ আছে অধিক পরিমাণে যা অন্য কোনো উদ্ভিজ্জ উৎসে পাওয়া যায় না । মাশরুম কোলেস্টেরলের মাত্রা শূন্য। এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণও খুবই অল্প। এতে যে এনজাইম ও ফাইবার আছে তা দেহে উপস্থিত বাকি খারাপ কোলেস্টেরলের নষ্ট করে দেয়।

মাশরুম খাওয়ার অপকারিতা 

বিভিন্ন ধরণের প্রজাতির মাশরুম আছে যা বিষাক্ত এবং এতে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন থাকে যা মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে থাকে । সবচেয়ে সাধারণ বিষ যা মারাত্মক বিষক্রিয়া ঘটায় তা হল অ্যামাটক্সিন , যা বিভিন্ন মাশরুমে পাওয়া যায় যা প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

খাদ্য উপযোগী প্রজাতি হিসাবে ভুল মাশরুম শনাক্ত করার ফলে বন্য মাশরুম খাওয়ার জন্য মানবদেহে ঘটে বিষক্রিয়া। এই ভুল শনাক্তকরণের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল খাদ্য উপযোগী মাশরুম প্রজাতির সাথে বিষাক্ত মাশরুম প্রজাতির রং এবং সাধারণ আকারের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। 

মাশরুমের বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করার জন্য, মাশরুম সংগ্রহকারীরা যে মাশরুম সংগ্রহ করতে চায় এমন মাশরুমের সাথে সাথে একই ধরণের দেখতে বিষাক্ত প্রজাতির সাথে পরিচিত হয়। বন্য মাশরুম খাওয়ার নিরাপত্তা রান্নার প্রস্তুতির পদ্ধতির উপর নির্ভর হয়ে থাকে। সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করতে অনেক মাশরুমে থাকা বিষক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। 

কিন্তু কিছু টক্সিন আছে, যেমন: অ্যামাটক্সিন, থার্মোস্টেবল এবং এই ধরনের টক্সিন ধারণকারী মাশরুম রান্না করে খাওয়ার জন্য মোটেও নিরাপদ হবে না। মানবদেহের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক ও ক্ষতিকর হতে পারে।

বিভিন্ন প্রজাতির মাশরুম বিষাক্ত হয়ে থাকে এবং এগুলোতে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন পাওয়া যায় যা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে থাকে। অতি সাধারণ বিষ যা মারাত্মক বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে তা হল অ্যামাটক্সিন , বিভিন্ন মাশরুমের প্রজাতির মধ্যে এটি বিদ্যমাম থাকে যা প্রতি বছর অধিক বেশি প্রাণহানির কারণ হয় থাকে। অ্যামানিটা, যা "ডেথ ক্যাপ" নামে পরিচিত। 

 এটি হলো এক ধরনের মাশরুম যার নামকরণ করা হয় যথেষ্ট পরিমাণে অ্যামাটক্সিন থাকার কারণে, যার প্রতি মাশরুমে প্রায় ১০ মিলিগ্রাম রয়েছে, যা প্রাণঘাতী ঘটানোর ডোজ। অ্যামাটক্সিন ডিএনএর প্রতিলিপিকে ব্লক করে দেয় , যা কোষের মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করে থাকে। 

এটি কোষগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে যা ঘন ঘন প্রতিলিপি করে, যেমন: কিডনি, লিভারএবং অবশেষে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র। এটি পেশী সংকোচন এবং লিভারের ব্যর্থতার কারণও হয়ে থাকে। গুরুতর এবং বিপজ্জনক লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও, অ্যামাটক্সিন বিষক্রিয়া দ্রুত, পেশাদার যত্নের মাধ্যমে চিকিৎসাযোগ্য হয়ে থাকে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url