গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

পটাশিয়ামে ভরপুর পেয়ারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে । গর্ভপাত হওয়ার এবং অসময়ে প্রসবের ঝুঁকি কমায়। গর্ভাবস্থায় সাধারণত ২৪ সপ্তাহের পর অনেক গর্ভবতীর রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে যায়। পেয়ারাতে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারে ভরপুর যা শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা পালন করে ।


গর্ভাবস্থায় দিনে এক কাপ (165 গ্রাম) পেয়ারা ফল দৈনিক মূল্যের 20% এর বেশি ফোলেটের জন্য এবং 400% এর বেশি ডিভি ভিটামিন C এর জন্য প্রদান করে, যা এটিকে গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য একটি চমৎকার খাবার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পেয়ারার একাধিক উপকারিতা রয়েছে। তাই গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খেলে যে উপকার গুলো পাওয়া যায় 

পেয়ারা এমন একটি ফল যা স্বাস্থ্যোপযোগী এবং অনেকেই এটি পছন্দ করে । তবে গর্ভবতী স্ত্রীরা পেয়ারা খেতে পারেন কী না, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থেকে যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: পেয়ারায় থাকা ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে । মেটাবলিজম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরে থাকা নানা রকম রোগ ও সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে ।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

গর্ভাবস্থায় যদি গর্ভবতীর রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাহলে পেয়ারা এ ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে । পেয়ারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে গর্ভপাত এবং প্রিম্যাচিওর প্রসবের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় পেয়ারা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে এবং এটি বাড়তে দেয় না।

কোষ্ঠকাঠিন্য ও হেমোরয়েড দূর করে

হরমোনের গতি স্লথ হয়ে পড়ায় গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও হেমোরয়েডের সমস্যা দেখা দিতে পারে । ফাইবারে সমৃদ্ধ পেয়ারা এই সমস্যার দূর করতে সহায়তা করে।

হজমশক্তি বৃদ্ধি

গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।যার ফলে বুক জ্বালা, গা গোলানো-সহ একাধিক সমস্যার সমাধান করা যায়। গর্ভাবস্থায় অ্যালকালাইন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে , কারণ এটি অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রোফেজিয়াল রিফ্ল্যাক্সের ঝুঁকি কম করতে সহায়তা করে । পেয়ারা অ্যালকালাইন প্রকৃতির হওয়ায় এটি পেটের অ্যাসিড উপাদানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। দুটি আহারের মাঝে পেয়ারা খেলে পেটের pH উপাদান নিয়ন্ত্রিত ও ভারসাম্য রক্ষা করে ।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কম 

গর্ভবতী মহিলাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে । ১০০০ জনের মধ্যে ১ জন গর্ভবতী মহিলা ক্যান্সারের শিকার হতে পারে । তবে নিরাময়ের চেয়ে বেশি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা অনেক বেশি ভালো। পেয়ারায় এমন কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বর্তমান, যা ক্যান্সার মোকাবিলায় সাহায্য করে থাকে । এতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপিন ও ভিটামিন সি থাকে যা শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সহায়তা করে।

দৃষ্টিশক্তি উন্নত 

ভিটামিন এ-তে সমৃদ্ধ থাকায় পেয়ারা অন্ধত্ব রোধ করতে সহায়তা করে। পাশাপাশি গর্ভস্থ ভ্রুণ ও মায়ের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।

শিশুর স্নায়ুতন্ত্র উন্নতি 

পেয়ারায় ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি৯ থাকে। যা শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে । গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফলিক অ্যাসিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটি স্পিনিয়া বিফিডার মতো নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধ করে থাকে । গর্ভাবস্থায় পুরো পাকা পেয়ারা খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে ।

মস্তিষ্ক শান্ত 

গর্ভাবস্থায় কর্টিসোলের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। যা আপনার পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে থাকে । পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম থাকে যা স্নায়ু ও পেশীকে স্বস্তি প্রদান করে । যার কারণে অবসাদ মুক্ত থাকা যায় এবং মস্তিষ্ক শান্ত থাকে

পেয়ারা খাওয়ার অপকারিতা

অন্যান্য ফলের মতো পেয়ারাও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। তবে, অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়ার ফলে অনেক রোগের শিকার হতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, পেয়ারা ভালো, তবে যখন অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হয়ে যায় তখন তা ক্ষতিকারক হয়ে যায়। 

পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমে সমস্যা হতে পারে। তাই, যদি পেয়ারা বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়ে গেলে তরল গ্রহণের পরিমাণও বাড়িয়ে নিন। আজ এই নিবন্ধে, আমরা আপনাকে পেয়ারার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলব।

সর্দি-কাশির আশঙ্কা রয়েছে

যাদের প্রায়ই সর্দি এবং কাশির সমস্যা রয়েছে তাদের পেয়ারা খাওয়া এড়ানো উচিত। কারণ পেয়ারা খুব ঠান্ডা। এটি বেশি খাওয়ার কারণে সর্দি-কাশি বাড়তে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের বেশি খাওয়া উচিত নয়

গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারী মহিলাদের এটি বেশি খাওয়া উচিত নয়। এর অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে ফাইবার বাড়ে, যা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে।

স্বাস্থ্য সমস্যা

যদি অন্য কোনও স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকে, তাহলে পেয়ারা এড়ানো শ্রেয়। এর মধ্যে পটাসিয়াম এবং ফাইবার থাকে, যা ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার আগে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে ।

পাতাও ক্ষতি করে

শুধু পেয়ারা নয়, এর পাতাগুলি খাওয়াও ক্ষতিকর। পেয়ারা পাতা রক্তাল্পতা, মাথাব্যথা এবং কিডনির সমস্যা তৈরি করতে পারে।

পেট খারাপ হতে পারে

পেয়ারার বেশি খেলে পেটের রোগও হতে পারে। এটি শরীরে হজম সিস্টেমে খারাপ প্রভাব ফেলে এবং হজম শক্তি দুর্বল হতে শুরু করে।

পেট ফুলে যায়

বেশি পরিমাণে পেয়ারা খেলে পেট ফাঁপা হতে পারে। আসলে এই ফলের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি থাকে, যা ফ্রুক্টোজ হিসাবে পরিচিত। আমাদের শরীরে ফ্রুকটোজ হজম ও শোষণ করতে সমস্যা হয়। খাওয়ার কারণে পেটে ফোলাভাব এবং গ্যাস হতে পারে।

দাঁতে ব্যথা হতে পারে

অনেক মহিলাকে পাকা পেয়ারা বেশি সুস্বাদু মনে হয় তবে পাকা বা আন্ডার রান্না করা পেয়ারা খাওয়ার ফলে দাঁত ব্যথা বা অন্য কোনও দাঁতজনিত রোগ হতে পারে।

একজিমার ঝুঁকি

পেয়ারা পাতার নির্যাস একজিমা হতে পারে। এই পাতা ত্বকের জ্বালাভাব সৃষ্টি করে। যদি একজিমা গুরুতর অবস্থায় থাকে তবে সাবধানতার সঙ্গে পেয়ারা পাতার নির্যাস ব্যবহার করতে হবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের খেতে দেওয়া যাবে না

ডায়াবেটিস রোগীদের পেয়ারা খাওয়া উচিত নয়। পেয়ারা রক্তে শর্করাকে হ্রাস করে। যেসব গর্ভবতী মহিলার শরীরে ডায়াবেটিস হয় এবং সে পেয়ারা খেতে চায় তাহলে প্রথমে গর্ভবতীর রক্তে চিনির পরীক্ষা করে নিতে হবে ।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url