সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ও তার ফজিলত

আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হেদায়াতের জন্য আল কুরআন নাজিল করেছেন। এতে রয়েছে মোট ১১৪ টি সুরা। ১১৪ টি সুরার মধ্যে সুরা ইখলাস সবচেয়ে বেশি মর্যাদাপূর্ণ। আর আয়াতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। একই সাথে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের গুরুত্বও বাড়িয়ে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। নিচে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত অর্থসহ দেওয়া হলো-

সুরা বাকারার ২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত

آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ

لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

উচ্চারণ 

আমানার রাসুলু বিমা উংঝিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহ। লা-নুফাররিকু বাইনা আহাদিম মির রুসুলিহ। ওয়া কালু সামি’না ওয়া আত্বা’না গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।

লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন্না সীনা আও আখত্ব’না রাব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইসরাং কামা হামালতাহু আলাল্লাজীনা মিং কাবলিনা রাব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বাকাতালানা বিহ। ওয়া’ফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন। ( সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৫-২৮৬)

অর্থ 

২৮৫- রাসূল, তিনি বিশ্বাস করেছেন ওই বিষয়ে যা তার তার রবের পক্ষ থেকে নাযিল করা হয়েছে আর ঈমানদারগণও ( রাসূলের সাথে বিশ্বাসী)। এরা ইমান এনেছে আল্লাহর উপর, তার ফেরেশতাদের ও আসমানী কিতাবসমূহ এবং তার রাসূলগণের উপর। তারা বলে, আমরা তার রাসূলগণের মাঝে কারো পার্থক্য করি না। এবং তারা আরও বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! তোমার কাছে ক্ষমা চাই। এবং তোমারই কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে।

২৮৬- আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার শক্তির চেয়ে বেশি দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেন না। সে যে পূর্ণ অর্জন করেছে তা তার জন্য, আর যে পাপ অর্জন করেছে তাও তার জন্য। (ঈমানদার দোয়া করে এ বলে) হে আমাদের রব! আমাদেরকে শাস্তি দিও না যদি (তোমার কোন বিধান পালনে) ভুলে যাই অথবা আমরা ত্রুটি করে বসি। হে আমাদের রব! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিও না যেমন আমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের ওপর তুমি চাপিয়ে দিয়েছো। হে আমাদের রব! আমাদের উপর চাপিয়ে দিও না তার বোঝা যা বহনের শক্তি আমাদের নেই এবং আমাদের থেকে ত্রুটি মোচন করে দাও, আমাদের ক্ষমা করো এবং আমাদের ওপর রহম কর। তুমি আমাদের অভিভাবক, তাই কাফের সম্প্রদায়ের উপর আমাদের সাহায্য কর।

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত

রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কোরআনের কোন সুরা সবচেয়ে বেশি মর্যাদাবান? তিনি বললেন, সুরা ইখলাস। এরপর ব্যক্তিটি আবার প্রশ্ন করলেন, কোরআনের কোন আয়াতটি মর্যাদাবান? তিনি বললেন, আয়াতুল কুরসি। 

এরপর লোকটি আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি কোন আয়াতটি পছন্দ করেন, যাতে আপনার উম্মত লাভবান হবে। নবীজি (সা.) বললেন, সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত।

আবু মাসুদ আল বাদরি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রাতে যে ব্যক্তি সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বে এই দুটি তার জন যথেষ্ট হবে। (বুখারী)

কোন ব্যক্তি যদি সূরা বাকারা শেষ দুই আয়াত পাঠ করে তাহলে তার জন্য এই দুটি আয়াতকেই আল্লাহ তাআলা তার জন্য যথেষ্ট করে দিবেন।

নু'মান বিন বাশির রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে দুই আয়াত দ্বারা সুরা বাকারার সমাপ্তি ঘটেছে সে দুইআয়াত যদি কোন ঘরে তিন রাত্রি পাঠ না করা হয় তাহলে শয়তান সে ঘরের নিকটবর্তী হয়। (সহিহ ইবনে হিব্বান)

এই হাদিসটি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, কোন ঘরে যদি সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত নিয়মিত পাঠ করা হয় তাহলে শয়তান সেই ঘরের নিকটবর্তী হবে না।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনটি জিনিস দান করা হয়: ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, ২. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, ৩. উম্মতদের মধ্যে যারা শিরক করে না, তাদের কবিরা গুনাহ মাফ হওয়ার সুসংবাদ।’ (মুসলিম, তাফসিরে মাজহারি)

জুবাইর ইবনু নুফাইর (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা আল-বাকারাকে আল্লাহ এমন দুটি আয়াত দিয়ে শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নিচের ভান্ডার থেকে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলো শিখবে, স্ত্রীদেরও শেখাবে। কারণ এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্য লাভের উপায় ও (দীন দুনিয়ার সকল) কল্যাণ লাভের দোয়া।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ: ২১৭৩)

হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘আমার মতে যার সামান্য বুদ্ধিজ্ঞান আছে, সে এ দুটি আয়াত পাঠ করা ছাড়া নিদ্রা যাবে না।’

সুতরাং আমাদের সকলের উচিত প্রতিদিন একবার হলেও সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে ঘুমাতে যাওয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url