নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আমাদের চারপাশে অনেক ঔষধি বৃক্ষ রয়েছে যার ব্যবহার আমাদের অনেকেরই জানা থাকে না। আজকে আমরা এমনই একটি বৃক্ষ বা তার পাতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো, যার সঠিক গুণাবলি টা আমাদের জানা অত্যন্ত জরুরি। আপনারা অনেকেই এই বৃক্ষ টা চিনেন বা জানেন, তবে তার সঠিক ব্যবহার জানেন না।
আজকে আমরা সেটা নিয়েই আলোচনা করবো। বৃক্ষটির নাম হলো নিম। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই গাছটি চিনেন। আমাদের চারপাশে এই গাছটির দেখা মিলে। নিম একটি ঔষধি গাজ, যার ছাল, পাতা, রস সবই কার্যেযোগী। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই নিম গাছ দেখা যায়। নিমের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে।
নিমের উপকারিতা
নিমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। আমাদের শুধু তার ব্যবহার গুলো জানতে হবে। আসুন দেখে নি নিম পাতার উপকারিতা :-
ত্বক
নিম পাতা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। অনেক আগে থেকেই রূপচর্চায় নিমের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতে নিম পাতা অনেক ভালো কাজ করে থাকে। এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। ব্রণ দূর করতে নিমপাতা বেটে লাগাতে পারেন।
অনেকেরই মাথার ত্বকে চুলকানি ভাব হয়। নিমপাতার রস মাথায় নিয়মিত লাগালে মাথার শুষ্কতা ও এ চুলকানি কমে। এছাড়াও মাথার ত্বকের মাইক্রোবায়াল দূর করে। নিয়মিত নিমপাতার সঙ্গে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগালে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধি পায়।
চুল
চুল পড়া বন্ধ করতেও নিম পাতার ব্যবহার করা যায়। উজ্জ্বল ও দৃষ্টিনন্দন চুল পেতে নিম পাতার ব্যবহার বেশ কার্যকর। চুলের খুসকি দূর করার জন্য শ্যাম্পু করার সময় নিমপাতার সিদ্ধ পানি দিয়ে চুল ম্যাসেজ করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। খুসকি দূর হয়ে যাবে।
নিমপাতা সপ্তাহে এক দিন ভালো করে বেটে চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা মতো রাখুন, এরপর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া কমবে এবং কোমল হবে। এবং কি নিম পাতার সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে চুলে লাগালে চুল পড়া বন্ধ হবে।
কৃমিনাশক ও উঁকুননাশক
শিশুদের পেটে অনেক সময়ই কৃমি হয়ে থাকে। পেটে কৃমি হলে শিশুরা রোগা হয়ে যায়। পেট বড় হয়। শিশুদের এই পেটের কৃমি নিরাময় করতে নিমের পাতার ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও যাদের মাথায় উঁকুন রয়েছে তারা নিম পাতার ব্যবহার করতে পারেন। নিম পাতা উঁকুন নাশক হিসেবে কাজ করে।
দাঁতের রোগ
নিম পাতা দাঁত মজবুত করে। প্রাচীনকাল থেকেই নিমের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করার প্রচলন রয়েছে। নিমের পাতা দিয়ে মেসওয়াক করলে দাঁত মজবুত হয়। নিমের পাতা ও ছালের গুঁড়া বা নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলে দাঁত মজবুত হবে এবং দন্ত রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
রোগ নিরাময়
নিম পাতা দিয়ে অনেক রোগ নিরাময় করা সম্ভব। নিম পাতার সেই গুণাবলি রয়েছে। যেমন:- নিমের পাতা পেট পরিষ্কার রাখে, রক্ত পরিষ্কার রাখে, লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, কফজনিত বুকের ব্যাথা দূর করে, ডায়বেটিস কমাতে সাহায্য করে, রক্তনালি কে প্রসারিত করে রক্ত সংবহন উন্নত করে। এছাড়াও নিমের পাতা সুগার লেভেলকে কমাতে সাহায্য করে।
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে সুগার ভালো হয়। পোকামাকড় কামড় দিলে নিমের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে লাগালে ব্যাথা কমে যায়। কারও জন্ডিস হলে এক চামচ নিমের রসের সাথে একটু মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান উপকার পাবেন।
এছাড়াও গ্যাডোনিন উপাদান সমৃদ্ধ নিমপাতা ম্যালেরিয়ার ঔষধ হিসেবে কাজ করে। কারও এলার্জির সমস্যা থাকলে নিম পাতা ফুটিয়ে স্লান করলে এলার্জি কমে যাবে। নিম পাতা বহুমূত্র রোগ নিরাময় করে।
নিম পাতার অপকারিতা
আপনাদের মনে এখন প্রশ্ন আসতেই পারে! নিম তো একটি ঔষধি গাছ, তাহলে এর আবার অপকারিতা কোথায় আছে? জ্বি বন্ধুরা নিম পাতারও কিছু অপকারিতা রয়েছে। যেমন:-
- ছোট বাচ্চাদের নিম পাতা খাওয়াবেন না, এতে তাদের রুচি নষ্ট হতে পারে এবং বমি বমি ভাবও হতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিম পাতা গর্ভপাতের অন্যতম কারণ হতে পারে।
- নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের নিম পাতার ব্যবহার করা যাবে না।
- সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা থাকলে নিম পাতা থেকে দূরে থাকতে হবে।
- নিম পাতা গ্রহণের পর যদি বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, মাথা যন্ত্রণার সমস্যা গুলো হয় তবে নিম পাতা বর্জন করুন।
- খালি পেটে নিম পাতা বেশিদিন খাওয়া যাবে না।
দেখুন নিম পাতার যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন কিছু অপকারিতাও রয়েছে। সবগুলোই আপনাদের সাথে সেয়ার করলাম। অতএব আপনারা খুবই সাবধানতা ও নিয়ম মেনে নিম পাতার ব্যবহার করবেন। দেখবেন অনেক উপকৃত হচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ গরমে শুষ্কতা দূর করার উপায়
লেখকের মন্তব্য
আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন।
কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url