লেবুর রস খেলে কি হয়? এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আমাদের অনেকের এখনো অজানা লেবুর রস খেলে কি হয়? এর উপকারিতা কি কি । আপনি কি লেবুর রস খেলে কি হয়? এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এই পোস্টটি আপনাকে লেবুর রস খেলে কি হয়? এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
লেবুর রস খেলে কি হয়?
আপনাদের অনেকেই জানতে চান লেবুর রস খেলে কি হয়? এই পোস্ট টি পড়লে আপনারা ধারণা পেয়ে যাবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক লেবুর রস খেলে কি হয়?
লেবু হলো রসালো ও ছোট আকৃতির সবুজ একটি ফল। লেবুতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, পটাসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জিঙ্ক। লেবুর রস হলো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সাইট্রাস ফল। চলুন জেনে নেই প্রতিদিন লেবুর রস খেলে কি হয়?
লেবু মুখের রুচি বৃদ্ধি করে। হঠাৎ হওয়া বমিবমি ভাব দূর করে। হজম শক্তি বাড়ায়। লেবুকে সুপার ফুডও বলা হয়ে থাকে। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি, শরীরের ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে। স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর হয়। ক্ষতিকর ফ্রি-র্যাডিকেল থেকে শরীরের কোষকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। লেবু পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সহায়তা করে। এটি শরীরকে ডিটক্সিফাই করে, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে শরীর ও মনকে তরতাজা রাখে। চিকিৎসকদের মতে, ভিটামিন সি সংবহনতন্ত্রের রোগ, রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
আর লেবু ভিটামিন সি-এর অন্যতম একটি উৎস। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত লেবু খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। মুখের দুর্গন্ধ রোধে লেবুপানি উপকারী।
রসুন, পেঁয়াজ বা মাছের মতো তীব্র গন্ধযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে তৈরি হওয়া নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে লেবু পানি। লেবুপানি দিয়ে কুলকুচি করলে মুখের স্বাদকোরক সতেজ ও সুস্থ থাকে।
বিভিন্ন পদ্ধতিতে লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা
লেবুর রস মুখে দেওয়ার উপকারিতা
লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি অন্যতম একটি গুনাগুন। রূপচর্চায় বাজার জাত বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করা থেকে লেবুর রসের সাহায্যে প্রাকৃতিক উপায়ে রূপচর্চা করে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা অনেক বেশি উপকারী ও নিরাপদ।
অনেকের ত্বকে অনেক ধরনের সমস্যা বা জটিলতা দেখা দিয়ে থাকে। আর ত্বকের অধিকাংশ সমস্যা দূর করতে ভিটামিন সি কর্যকরি ভূমিকা রাখে। লেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন সি যার ফলে লেবুর রস ত্বকের নানান ধরনের সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
লেবুর রসে রয়েছে ভিটামিন সি যা ত্বকের জন্য অনেক উপকারী ভূমিকা রাখে। লেবুর রস ত্বকের প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে কাজ করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির কারণে ত্বকে যে কালচে ভাব আসে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে।
আমাদের অনেকের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে থাকে। যার ফলে ব্রণ আরও বেশি হয়। লেবুর রসের ভিটামিন সি ব্রণ ভালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লেবুর রস ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে।
ত্বককে ব্রণ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। লেবুর রাস ত্বককে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে। লেবুর রস ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে ত্বককে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রে নিয়ম হলো ত্বকে লেবুর রস ও কাঁচা দুধের মিশ্রণের ব্যবহার।
এতে করে ত্বকের ভাব ও সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ফলে হওয়া কালচে ভাব দূর হয়। তবে ত্বকে অতিরিক্ত লেবুর রস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ ত্নকে অতিরিক্ত লেবুর রস ব্যবহার করার ফলে ত্বক অধিক শুষ্ক হয় এবং ত্বকে এলার্জি সমস্যা হতে পারে।
চুলে লেবুর রস দেওয়ার উপকারিতা
লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা শুধু ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের উপকারীতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। লেবুর রসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা কোলাজেন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
যার ফলে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। এছাড়াও লেবুর মধ্যে প্রাকৃতিক অ্যাসিডিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চুলের ফলিকলকে উন্মুক্ত করতে সাহায্য করে। এর ফলে খুশকি ও চুল পড়ার সমস্যা দূর হয়। অধিক ফলাফল পেতে লেবুর রস দিয়ে হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
লেবু দিয়ে তিন ধরনের হেয়ার মাস্ক তৈরি করা যায়। লেবুর রস, গ্রিন টি ও হেনা একত্রে মিশিয়ে। গ্রিন টি বানিয়ে তার মধ্যে সারারাত ধরে হেনা ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে এই মিশ্রণে ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিতে হবে।
চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হলে এতে টকদই মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর হেয়ার মাস্ক বা মিশ্রণটি ভাল করে চুলে লাগিয়ে ৪০ মিনিট রাখার পর শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এই হেয়ার মাস্ক ব্যাবহারের ফলে পাকা চুলের সমস্যাও দূর হবে।
মধু ও লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা
লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান দেহের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে মধু শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে। সকাল বেলা একগ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে ১-চামচ মধু ও অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে ওজন ও পেটের মেদ কমে।
মধুতে বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের কালো দাগ দূর করতে লেবুর রস ও মধু বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে।
এমনকি ত্বকের ব্রণ কমিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে লেবু সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল দেখা যাবে। মধুতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যার ফলে লেবু ও মধুর মিশ্রণটি খেলে গলা ব্যথা সহ গলার নানান ধরনের সমস্যা দূর হয়।
যেমন ঘনকফ ও শ্লেষ্মা, প্রতিদিন হালকা গরম পানি সাথে এক চা চামচ মধু ও২ চা-চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে গলার এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। লেবু ও মধুর মধ্যে রয়েছে পরিশোধনকারী শক্তি। আর লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিডও শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।
যার ফলে প্রতিদিন সকালে এ মিশ্রণটি পান করলে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়। যকৃতের বিষাক্ত পদার্থ ও দূর করে। এটা কিডনির পাথর অপসারণ করতে সহায়তা করে। আবার এ মিশ্রণটি ত্বকের PH লেভেলও নিয়ন্ত্রণ করে। এ পানীয় মুখের ভেতরের জীবাণু ও দুর্গন্ধ দূর করে।
গরম পানির সাথে লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা
গবেষণায় দেখা গেছে, লেবুর শরবত লিভারে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর টক্সিক উপাদান বের করে। ফলে লিভারের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
আমরা অনেকেই জানি, সকালে খালি পেটে লেবুর রস খেলে শরীরের ওজন কমে। ত্বককে উজ্জ্বল ও টান টান করে। এ পানীয় শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চাহিদা পূরণ করে এবং দেহের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এমনকি লেবু ত্বকে ব্যবহার করা্লে ত্বকে বয়সের ছাপ কমবে। একই সাথে সারাদিনের জন্য দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে।
লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, চিনি ছাড়া লেবুর শরবত খাওয়া শরীরের জন্য বেশি উপকারী। আর অতিরিক্ত লেবু খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ মাত্রাতিরিক্ত লেবু খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতি করা হতে পারে। দিনের দুই থেকে তিনটির অধিক লেবু খাওয়া ক্ষতিকর। তাই আমাদের এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
লেবুর রস খেলে কি হয়? আজকের পোস্ট এই পর্যন্তই ছিল। আশা করি লেবুর রস খেলে কি হয়? এর উপকারিতা কি তা আপনারা জানতে পেরেছেন। এরপরও যদি লেবুর রস খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন বা জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাতে পারেন। আমরা তার উত্তর দেওয়ার সম্পূর্ণ চেষ্টা করবো।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url