থানকুনি পাতা খেলে কি হয়? এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন!
থানকুনি পাতা খেলে কি হয়? এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে থাকছে আজকের আমাদের এই আর্টিকেল। অতএব আপনি যদি থানকুনি পাতা খেলে কি হয়? এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেল টি পড়ুন।
থানকুনি পাতা খেলে কি হয়?
অনেকেই জানে না থানকুনি পাতা খেলে কি হয়? তাদের উদ্দেশ্য করেই আজকের এই আর্টিকেল। চলুন থানকুনি পাতা খেলে কি হয়? এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা গ্রহণ করা যাক।
থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক। চিকিত্সকদের মতে, থানকুনি পাতায় রয়েছে এমন ভেষজ গুণ যা, নিয়মিত খেলে পেটের অসুখে কোনও দিনও ভুগতে হয় না। দীর্ঘ জীবন লাভ করতে এ পাতা উপকারিতা অনেক।
এছাড়াও থানকুনি পাতায় সাভিসিয়াল এন্টি অক্সীডেন পপারটিজ থাকে, যা আমাদের ইমিউনিটি বাড়াতে এবং দেহকে সুস্থ রাখে। তাছাড়া এ পাতা প্রতিদিন খেলে এটি আমাদের দেহকে বিভিন্ন রোগ থেকে বাচতে সাহায্য করে।
যাদের গ্যাস, পেট ব্যথা রয়েছে তাদের জন্য এ পাতা অনেক উপকারি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ৮-১০ টি পাতা চিবিয়ে খেলে গ্যাস, বদহজম, এসিডিটি ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যদি কারো অনেক পুরনো আমাশা থাকে তাহলেও এপাতার গুরুত্ব অপরীসিম।
তারা যদি এ পাতা প্রতিদিন খায় তাহলে তার আমাশা ধিরে ধিরে ভালো হয়ে যাবে। তাছাড়া এ পাতা আমাদের মস্তিষ্কের কার্জ ক্ষমতা বাড়ায় ও মানসিক সমস্যা থেকে দূরে রাখে।মানুষেরই শরীর হাত-পা জ্বালা পুড়া করে।
তারা যদি প্রতিনিয়ত ৮-১০ টি পাতা চিবিয়ে খেয়ে পানি পান করেন তাহলে তাদের এসব সমস্যা আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাবে। থানকুনি পাতা আমাদের খিদে বাড়ায় সেই ফলে যাদের খিদে পায় না বা খেতে পারে না তাদের মুখের রুচি বাড়ায়।
যারা অনিয়মিত মল ত্যাগ অথবা কষ্ট কাঠিন্যেতে ভুগছেন তাদের জন্য এ পাতা অনেক কার্যকরী।তাদের ক্ষেত্রে সকাল এবং সন্ধা ৮-১০ টি পাতা চিবিয়ে খেয়ে পানি পান করতে হবে তাহলে তার এ সমস্যা ভালো হয়ে যাবে।
এছাড়াও বিভিন্ন কাজে এ পাতা ব্যবহার কার হয় যেমন শরীরের কোনো জায়গায় কেটে গেলে এ পাতার রস লাগালে অনেক তারাতাড়ি ভালো হয়ে যায় এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে য়াই। থানকুনি পাতা পেটের প্রায় সকল সমস্যার ক্ষেত্রেই কাজে দেয়। থানকুনি পাতা খেলে কি হয়? এর উপকারিতা কি তা জানতে আরও পড়ুন।
থানকুনি পাতার উপকারিতা
- শীতের সময় মানুষের ত্বকে শুষ্কতা দেখা যায়। শীতের সময় মৃতকোষের কারণে শুষ্ক হয়ে যায় শরীরের ত্বক। থানকুনি পাতার রস মৃতকোষগুলোকে পুনর্গঠন করে ত্বককে কোমল ও মসৃণ করে।
- পেটের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে থানকুনি পাতার বিকল্প নেই। প্রতিদিন থানকুনি পাতার রস খেলে যে কোনও পেটের অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তার সাথে পেট নিয়ে কোনদিনও কোন ধরনের সমস্যায় ভুগতে হয় না।
- শুধু পেটই নয়, আলসার, এগজিমা, হাঁপানি-সহ নানান চর্মরোগ ভালো হয়ে যায় থানকুনি পাতার রস খেলে। ত্বকেরও উজ্জ্বলতা বাড়ে।
- থানকুনি পাতার রস প্রতিদিন খেলে স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায় ।
- থানকুনির পাতা স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে থাকে ।
- থানকুনি পাতা বেটে ক্ষতস্থানে লাগালে দ্রুত সেরে উঠে।
- থানকুনি পাতা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয় নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।
- বয়স বাড়লেও, যৌবন ধরে রাখতে সহায়তা করে থানকুনি পাতার রস। প্রতিদিন একগ্লাস দুধে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে, যৌবন থাকবে আগের মতোই।
- থানকুনি পাতার রস ১ চামচ ও শিউলি পাতার রস ১ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে জ্বর ভালো হয়ে যায়।
- কোন জায়গা থেঁতলে গেলে থানকুনি পাতা বেটে তা অল্প গরম করে আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় প্রলেপ দিলে আরাম পাওয়া যায় ।
- থানকুনি পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান হজমে সহায়ক হিসেবে অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিকমতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। যার ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
- ৪/৫ টি থানকুনি গাছের শিকড়সহ ভালো করে ধুয়ে এক সাথে বেটে রস করে খালি পেটে খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা বেশ উপকারি।
- ২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে অল্প একটু চিনি মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে কাশি কম হয়ে যায় । আর যদি এক সপ্তাহ খাওয়া যায় , তাহলে কাশির কোনও চিহ্নই থাকবে না।
- প্রতিদিন সকালে খালিপেটে ৪ চা চামচ থানকুনি পাতার রস ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে ৭ দিন খেলে রক্তের দূষণ দূর হয়।
- হাফ লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিশ্রি এবং অল্প পরিমাণে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে একটি মিশ্রন তৈরি করে সেই মিশ্রন থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে এক সপ্তাহ পরেই উপকার পাওয়া যাবে ।
- বেগুন আর পেঁপের সাথে থানকুনি পাতা মিশিয়ে রান্না করে এক মাস খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- যেসব বাচ্চা কথা বলতে দেরি করে অথবা অস্পষ্ট, সে ক্ষেত্রে ১ চামচ করে থানকুনি পাতার রস গরম করে ঠাণ্ডা হলে ২০/২৫ ফোঁটা মধু মিশিয়ে ঠাণ্ডা দুধের সাথে কিছুদিন খাওয়ালে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
থানকুনি পাতার পরিচিতি
এর আগে আপনারা পড়লেন থানকুনি পাতা খেলে কি হয়? এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে। এবার জেনে নিন থানকুনি পাতার পরিচিতি।
অতীত কাল থেকেই থানকুনি পাতার অনেক উপকারিতা বর্ণিত রয়েছে। শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে থানকুনি পাতা অনেক কার্যকরী। অনেক আগে থেকে থানকুনি পাতার ব্যবহার হয়ে আসছে। কিছু বছর আগেও এ পাতা প্রায় সকলের বাড়ির আশেপাশে পাওয়া যেত।
তবে বর্তমানে থানকুনি পাতা বিলুপ্ত প্রায়। অনেক কম দেখা যায় থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতার রস রোগ নিরাময়ে ভীষণ উপকারী একটি ভেষজ উপাদান।প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বহু রোগের উপশম হয় এর ভেষজ গুণ থেকে।
থানকুনি অনেক রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।স্বাদটা একটু তিতকুটে, তবে কার্য ক্ষমতা বেশ উপকারী।অঞ্চলভেদে এই পাতাটিকে টেয়া, মানকি, তিতুরা, থানকুনি, আদামনি, ঢোলামানিক, থুলকুড়ি, মানামানি, ধুলাবেগুন, আদাগুনগুনি নামে ডাকা হয়।
তাছাড়াও থানকুনি পাতায় থাকে প্রচুর ভিটামিন 'সি' যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মুখের ঘা দূর করে, সর্দি কাশির জন্য উপকারী, পেটের অসুখে থানকুনির জুস কার্যকরী এক উপাদান । আমাশয়ের পাশাপাশি কাশি ও গলা ব্যথায় থানকুনি পাতার ভেষজগুণ অপরিহার্য।
থানকুনি পাতা খাওয়ার পদ্ধতি
থানকুনি পাতা খাওয়ার পদ্ধতি অনেকেরই জানা নেই। থানকুনি পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি পান করা যায় আবার ভর্তা করেও খাওয়া যায়, আবার অনেকেও ভাজি করে খাই, বা থানকুনি পাতা বেটেও তা ব্যবহার করা যায় অনেক কাজেই।
থানকুনি পাতার অপকারিতা
ইতিমধ্যেই আপনারা জেনেছন থানকুনি পাতা খেলে কি হয়? এর উপকারিতা ও পরিচিতি সম্পর্কে। এবার এর অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।
থানকুনি পাতার অপকারিতা রয়েছে? জ্বি বন্ধুরা। থানকুনি পাতার অপকারিতা রয়েছে। উপকারিতা রয়েছে এমন প্রতিটি জিনিসেরই বিপরীত দিক থাকে। তেমনি থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটি দিকই রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক থানকুনি পাতার ক্ষতিকর দিকগুলো।
থানকুনি পাতা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে, নানা রকম সমস্যা যেমন, এলার্জি, মাথা ঘোরা, বমি ভাব, পেটে অস্বস্তি, ঝিমানো ভাব, মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকা, এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। থানকুনি পাতা যেমন পেটের ব্যথা দূর করে তেমনি প্রয়োজনের বেশি খেলে পেটের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
তাই পরিমাণ মতো খেতে হবে। প্রয়োজনের বেশি খেলে মাথা ঘোরাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের লিভারের সমস্যা আছে তাদের থানকুনি পাতা কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। অপারেশনের রোগী যারা আছে তাদের থানকুনি পাতা না খাওয়ায় ভালো। থানকুনির পাতা থেকে অ্যালার্জি, খোশ-পাচড়াও হতে পারে।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url