হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল পড়ার ফজিলত সম্পর্কে জেনে নিন

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল পড়ার ফজিলত এতো বেশি যে আপনি জেনে অবাক হবেন। এ দোয়ার মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করা সম্ভব। যে কোন বিপদ আপদ থেকে মুক্তির অন্যতম পান্তা হচ্ছে আল্লাহর নিকট দোয়া করা। 

দোয়া বান্দাকে আল্লাহ নিকটবর্তী করে। হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল, নিমাল মাওলা ওয়া নিমান নাসির।’ এই দোয়া জিকির যেকোনো অবস্থায় করা যায়। বিপদগ্রস্ত ও অসুস্থ অবস্থায় বা কোন শত্রুর আক্রমণ হতে ক্ষতির আশঙ্কা করলে মুক্তির জন্য এ দোয়াটি কার্যকরী।

দোয়াটি কোথায় থেকে পাওয়া?

পবিত্র কোরআনের সুরা আলে ইমরানের ১৭৩ নম্বর আয়াতের অংশ ও সুরা আনফালের ৪০ নম্বর আয়াতের আবার সুরা হজের ৭৮ নম্বর আয়াতের অংশ থেকে পাওয়া। ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল, নিমাল মাওলা ওয়া নিমান নাসির।’

সুরা আলে ইমরানের ১৭৩ নম্বর আয়াত

اَلَّذِیۡنَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ اِنَّ النَّاسَ قَدۡ جَمَعُوۡا لَكُمۡ فَاخۡشَوۡهُمۡ فَزَادَهُمۡ اِیۡمَانًا ٭ۖ وَّ قَالُوۡا حَسۡبُنَا اللّٰهُ وَ نِعۡمَ الۡوَكِیۡلُ

বাংলা অর্থ: এদেরকে লোকেরা বলেছিল, তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জড়ো হয়েছে, কাজেই তোমরা তাদেরকে ভয় কর; কিন্তু এ কথা তাদের ঈমানকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, 'আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কত উত্তম কর্মবিধায়ক।

সুরা আলে ইমরানের ১৭৩ নম্বর আয়াতটির শানেনজুল

যখন সাহাবায়ে কিরাম হামরাউল আসাদ নামক স্থানে গিয়ে পৌছালেন, তখন সেখানে নু'আইম ইবনে মাসউদের সাথে সাক্ষাত হল। সে সংবাদ দিল যে, আবু সুফিয়ান নিজের সাথে আরও সৈন্য সংগ্রহ করে পুনরায় মদীনা আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

আহত-দুর্বল সাহাবায়ে কেরাম এই ভীতিজনক সংবাদ শুনে সমস্বরে বলে উঠলেন, আমরা তা জানি না 'আল্লাহ আমাদের জন্যে যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম সাহায্যকারী’৷ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনিই আমাদের জন্য উত্তম যিম্মাদার’। 

এ কথাটি ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল তখন তিনি বলেছিলেন। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথাই বলেছিলেন, যখন লোকজন তাকে এসে খবর দিলো যে, তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সেনাদল প্রস্তুত করা হয়েছে। 

তাদেরকে ভয় করো। এ কথা শুনে তাদের ঈমান আরো মজবুত হলো, তারা বললঃ আল্লাহ্ই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর আমাদের পক্ষ থেকে কাজের জন্য তিনিই উত্তম যিম্মাদার। [বুখারীঃ ৪৫৬৩]

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি'মাল ওয়াকিল এর বাংলা অর্থ

বাংলা অর্থ: আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।

নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান-নাসির’ এর বাংলা অর্থ

বাংলা অর্থ: আল্লাহ তাআলাই হচ্ছে উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী।

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল পড়ার ফজিলত

আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং বলেছেন তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। তিনি আরো বলেছেন বান্দা যদি আমার দিকে এক পা এগিয়ে আসে তাহলে আমি বান্দার দিকে দুই পা এগিয়ে যাব। 

আল্লাহ তায়ালা কে খুশি করার জন্য, তাকে ডাকার জন্য পবিত্র কুরআনে ছোট ছোট অনেক আমল বলে দিয়েছেন যা নাজাতের জন্য যথেষ্ট কিন্তু আমাদের অনেকেরই এখনো অজানা। চলুন জেনে নেওয়া যাক হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল পড়ার ফজিলত।

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল দোয়াটিতে বলা হয়েছে আল্লাহই আমাদের সাহায্য করার জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম সাহায্যকারী। মারাত্মক বিপদ-আপদ, সুস্থতা বা শত্রুর হাত থেকে রক্ষায় অথবা যে কোন দুঃখ, কষ্ট, দুশ্চিন্তায় মন থেকে হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল, নিমাল মাওলা ওয়া নিমান নাসির দোয়াটি পড়া যায় তাহলে আল্লাহ তায়ালা মূহুর্তের মধ্যেই উক্ত বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। 

তবে মনে রাখতে হবে দোয়াটি করতে হবে মন থেকে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে।

এ দোয়াটি হলো আল্লাহর রহমত লাভের দোয়া। এ দোয়াটি পড়া মানে সম্পূর্ণ আল্লাহ তাআলার উপর তাওয়াক্কুল করা। অন্য দোয়ার মতো আল্লাহর কাছে সরাসরি কিছু চাওয়া হয় না। তবুও এ দোয়া কারীকে সাহায্য করার জন্য আল্লাহ তাআলা প্রস্তুত থাকেন। 

কোন ব্যক্তি প্রতিদিন এ দোয়াটি পড়লে তার জন্য আল্লাহ তায়া’লাই হবে যথেষ্ট। হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল পড়ার ফজিলত এত বেশি যে হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) সবচেয়ে কঠিন সময় গুলোতে এই দোয়া পড়তেন।

হজরত ইব্রাহিম (আ.)–কে যখন অবিশ্বাসী অত্যাচারী শাসক নমরুদ আগুনে নিক্ষেপ করে, তখন তিনি ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল’ দোয়াটি পাঠ করেন। যার ফলে আল্লাহ হজরত ইব্রাহিম (আ.)–কে আগুন থেকে রক্ষা করেছিলেন।

হাদিসে রয়েছে- ইবরাহিম (আ.)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হলো এবং রাসুল (সা.) (মুশরিকদের হামলা হবে এমন খবর শুনে) উক্ত দোয়াটি পাঠ করেন (বুখারি, হাদিস : ৪৫৬৩)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোয়াটি পড়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। হাদিসে রয়েছে- আল্লাহর রাসুল (সা.) এই বিশেষ দোয়াটি পাঠ করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৪৩; আল-আহাদিস আস-সাহিহা : ১০৭৯)

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, কিয়ামতের বর্ণনা শুনে সাহাবারা ভীত হলে রাসুল (সা.) এই দোয়া পড়তে বলেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪৩১)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং সর্বাবস্থায় বেশি দোয়া পড়ার তৌফিক দান করুন। (আমিন)

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url