আমলকী খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমলকী খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়েই থাকছে আজকের আমাদের এই পোস্ট। আমলা বা আমলকীর আয়ুর্বেদিক উপাদান হিসাবে ধরা যেতে পারে। এটা খাদ্য ও ঔষধ উভয়ই ক্ষেত্রেই ব্যবহারযোগ্য। এই ছোট ফলটি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ উপকারী। আমলকী মূলতঃ টক জাতীয় হয়।
এই ভেষজ ঔষধ আসলে একটি খুব শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা বিনামূল্যে র্যাডিকেল থেকে সেল অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে। ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধে করার ক্ষেত্রে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমলকী খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন।
আমলকী (বৈজ্ঞানিক নাম: Phyllanthus emblica) ফাইলান্থাসি পরিবারের ফাইলান্থুস প্রকৃতির এক প্রকার ভেষজ ফল। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম 'আমলক'। ইংরেজি নাম amla বা Indian gooseberry .
আমলকীর ব্যবহার
আমলকী খাওয়ার উপকারিতা অনেক। সঠিক নিয়মে আমলকীর ব্যবহার করতে অনেল উপকার পাওয়া যায়। আমলকীর বহু ভেষজি গুণ রয়েছে। ফল ও পাতা দুটিই ওষুধি কাজে ব্যবহার করা হয়। আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন 'সি' থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
আমলকীতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি,আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।একজন বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার হয়। প্রতিদিন দুটো আমলকী খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া সম্ভব।
আমলকী খেলে মুখে রুচি বাড়ে। স্কার্ভি বা দন্তরোগ সারাতে টাটকা আমলকী ফলের তুলনা নেই। এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও ভীষণ উপকারী। লিভার ও জন্ডিস রোগ সারাতে উপকারী বলে আমলকী ফলটিকে বিবেচনায় রাখা হয়। এটিকে আমলকী, হরতকী ও ত্রিফলাও বলা হয়। আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ত্রিফলা স্বাস্থ্যের জন্য বহুমাত্রিক উপকারী।
এ তিনটি শুকনো ফল একত্রে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা ছেঁকে খালি পেটে শরবত বানিয়ে খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়। বিভিন্ন ধরনের তেল তৈরিতে আমলকী ব্যবহার হয়। কাঁচা বা শুকনো আমলকী বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।
কাঁচা আমলকী বেটে রস প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে দুতিন ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এভাবে একমাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত, চুল উঠা এবং তাড়াতড়ি চুল পাকা বন্ধ হবে।
আরও পড়ুনঃ লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা
আমলকীর ঔষধী গুনাগুন
আমলকীর অনেক ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। নিচে তা দেওয়া হলো।
- আমলকী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর ভালো কাজ করে।
- বমি বন্ধে কাজ করে।
- দীর্ঘমেয়াদি কাশি সর্দি হতে উপকার পাওয়ার জন্য আমলকীর নির্যাস উপকারী।
- এটি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক।
- এটি দাঁত,চুল ও ত্বক ভাল রাখে।
- এটি খাওয়ার রুচি বাড়ায়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য, মাথাব্যথা, অম্ল,রক্তশূন্যতা, বমিভাব দূর করতে সাহায্য করে।
- বহুমূত্র রোগে এটি বেশ উপকারী।
- চোখ উঠলে কাঁচা আমলকীর রস দিনে ২ ফোটা করে দুই বার দিলে ভাল আরাম পাওয়া যায়।
- চুল ওঠা রোধ করতে আমলকী খুবই উপকারী।
- চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে।
ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে আমলকীর কার্যক্ষমতা
আমলকী খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তার মধ্যে অন্যতম হলো ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।আমলকীর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিষেধক গুণ। গবেষণায় বলা হয়েছে যে, আমলকী ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়াও:
- প্রতিদিন সকালে আমলকীর জুস খেলে তা পেপটিক আলসার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
- আমলকী শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে।
- হাই ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে আমলকী খুব দ্রুত কাজ করে। আমলকীর গুঁড়ো মধু দিয়ে প্রতিদিন খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমলকীর পুষ্টিগুন
চোখের জন্য
মধুর সাথে আমলকীর রস মিশিয়ে পান করলে দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়। গবেষণায় দেখা যায় যে, এটি চোখের ভিতরের চাপকে দূর করে, দূরের জিনিস দেখতে পায় এবং ছানি পড়া হতে বিরত রাখে। ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিনিক মেলাননিক রাতের অন্ধত্ব কমাতে এবং মানুষের দৃষ্টিকে প্রবল করে।
ডায়াবেটিসের জন্য
আমলা বিচ্ছিন্ন গ্রুপের কোষকে উদ্দীপিত করে, যা হরমোনটি ইনসুলিনকে বের হতে দেয় না এবং ডায়াবেটিসে রক্তের গ্লুকোজ রোধ করে এবং শরীরকে সুষম ও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত ক্রোমিয়াম শরীরের এলডিএল কোলেস্টেরলকে কমায় যা হৃদগত স্বাস্থ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা বিটা-ইনহিবিটারের প্রভাবকে বাড়িয়ে তুলে।
বিপাকের জন্য
আমলাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে যা অন্ত্রের মাধ্যমে খাদ্য বহন করতে সাহায্য করে এবং মানুষের অন্ত্রের গতিবেগ নিয়মিত রাখে। ফাইবার এছাড়াও আলগা পায়খানা বৃদ্ধি এবং ডায়রিয়া কমাতে সহায়তা করে।
হৃৎপিণ্ডের জন্য
এটি হৃৎপিন্ডের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জমা রোধ করে, আমলাতে ক্রোমিয়াম থাকে যা এথেরোস্ক্লোরোসিসের সম্ভাবনা কমাতে পারে এবং রক্তনালী এবং ধমনীতে পর্দায় চর্বির উৎপাদন কমাতে সহায়তা করে।
চুলের জন্য
চুল বৃদ্ধি করতে এবং ঘন কালো করতে আমলকীর তুলনা নেই। এটি অনেক চুলের টনিকগুলিতে ব্যবহৃত হয়। চুলের শিকড়গুলিতে তাজা আমলা বা তার পেস্ট প্রয়োগ করলে চুলের বৃদ্ধি এবং রঙ সুন্দর হয়।
মেটাবলিক ক্রিয়াকলাপ
আমলাতে প্রোটিন রয়েছে। প্রোটিন সেলুলার ডেভেলপমেন্ট, পেশীবহুল উন্নয়ন, অঙ্গ স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপের বিস্তৃত জন্য অপরিহার্য।
মূত্র বৃদ্ধিতে
আমলা প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে।মানুষের কিডনি সুস্থ, মূত্রাশয় সংক্রমণ এবং গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ এর হাত থেকে রক্ষা করতে আমলকী অপরিহার্য উপাদান।
আরও পড়ুনঃ থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
মাসিক ঋতুচক্রের জন্য
আমলাতে উপস্থিত কিছু খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন মাসিক ঋতুচক্রের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভীষণ উপকারী।
সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে
যেহেতু এতে ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু নাশক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই আমলা শরীরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে সুরক্ষা দেয় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধের প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। আমলাতে উপস্থিত ভিটামিন সি শরীরের শ্বেত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে থাকে।
বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না
আমলা শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে শরীরে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত হাইপারলিপিডেমিয়া বন্ধ করে। মুক্ত কোষগুলো যেমন বলিরেখা এবং বয়সের ছো্প পড়ে না।
এছাড়াও আমলকীর রয়েছে বহু গুন
আমলকী সিদ্ধ করে খেলে এর ভিটামিন সি অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়, তাই সিদ্ধ না খাওয়ায় শ্রেয়। পেয়ারা, কাগজিলেবু, কমলালেবু, আম, আপেলের চেয়েও বেশি ভিটামিন সি আছে আমলকীতে। তাই ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তুলতে প্রতিদিন একটা করে আমলকী খাওয়া যেতে পারে। আবার অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর হওয়ায় শরীরের টক্সিন বার করতেও সাহায্য করে আমলকী।
- দীর্ঘমেয়াদি সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বরের সমস্যার সমাধান হিসেবেও আমলকী দারুন কার্যকর। টিউবারকিউলোসিস (টিবি) রোগ থেকেও সুরক্ষা দিয়ে থাকে আমলকী।
- ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যাজ়মা থেকে মুক্তি পেতেও আমলকীর উপকারিতার শেষ নেই।
- আমলকীতে পলিফেনল থাকায় তা ক্যানসারাস কোষের বৃদ্ধিতেও বাধা সৃষ্টি করে থাকে।
- প্রতিদিন খাওয়ার ফলে লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ে। পেটের গোলযোগ ও বদহজম রোধ করতেও সাহায্য করে।
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে অনেকটাই।
- এর ফাইবার শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট ঝরাতে সহায়তা করে থাকে।
- মুখের আলসার বা দাঁতের ক্ষত রোধ করতেও এর জুড়ি নেই।
- আমলকীতে থাকা ক্রোমিয়াম শরীরের ইনসুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে, চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- বয়স্কদের জন্যও খুব উপকারী একটি ফল। এতে ক্যারোটিন থাকায় দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ছানি পড়া, চোখে চুলকানি বা জল পড়ার সমস্যা থেকেও রক্ষা করে।
- এর রস স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন ঘটিয়ে চুলের টনিক হিসেবেও ভীষণ ভালো কাজ করে।
- আমলকীতে অ্যান্টিএজিং উপাদান রয়েছে, যা তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
আমলকীর অপকারিতা
আমলকী খাওয়ার উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। অর্থাৎ আমলকী খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। আমলকী খাওয়ার অপকারিতা উপস্থাপন করা হলো। অন্যান্য সব জিনিসের মতোই আমলারও নানা ধরনের উপকার ও ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
সুপারফুডও ক্ষতিকারক প্রমাণিত হয়ে থাকে যদি ডাক্তার বা ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ না নিয়েই অতিরিক্ত পরিমাণে বা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে খাওয়া হয়। অতএব, আমলকির এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি জেনে থাকা দরকার যেগুলো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শরীরের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
যদিও গবেষণায় কোনো বিষাক্ত বা, নেতিবাচক প্রভাবের উল্লেখ নেই, তবুও আমলার ব্যবহার সম্পর্কিত কিছু হালকা, প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া আছে। হাইপারঅ্যাসিডিটি ট্রিগার করতে পারে: কারো যদি হাইপার অ্যাসিডিটি বা ভিটামিন সি খাবারের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে কোন সমস্যা থাকে বা আগে থেকেই অসুবিধা থেকে থাকে তবে তার এই ফলটি খাওয়া মোটেও উচিত নয়।
যদি কেউ বেশী পরিমাণে আমলকী খায়, তাহলে মোটা হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। হাইপারগ্লাইসেমিক মানুষের জন্য পরামর্শ হল যে বীজযুক্ত ফল ব্যবহার থকে এড়িয়ে চলা কারণ এটি তাদের স্বাস্থ্য অবস্থা খারাপ করতে পারে।
আমলকী খাওয়ার ফলে কিছু জনের মধ্যে যে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা যায় সেগুলো হল ডায়রিয়া, পেট ব্যাথা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, লবনতা এবং মুখের চারপাশে ফুসকুড়ি, মুখের লোভ, ত্বকের চামড়া এবং মুখ, শ্বাস প্রশ্বাস। মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, এসব হতে পারে।
আবার, অতিরিক্ত আমলকী খেলে গলা দিয়ে টকভাব ওঠা, প্রবল অম্বল, গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি দেখা যায়। আমলকীতে থাকা ফাইবার অনেকসময় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার কারণও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমলকীর জুস করে খাওয়ার চেয়ে চিবিয়ে খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত আমলকী খেলে পায়খানা কষা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ থেকে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ানো ইত্যাদিতে যথেষ্ট সাহায্যকারী বিবেচিত হয় আমলকি। কিন্তু এত গুণ থাকা সত্বেও এটি এমন একটি ফল যার মধ্যে থাকা উপাদানে কিছু কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্থও হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মাশরুম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আমলকী বেশি খাওয়ার ফলে যা যা হয়
- অ্যাসিডিটি বেড়ে যেতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
- হার্ট ও কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
- লিভারের সমস্যা হতে পারে।
যদিও আমলা সাধারণত একটি স্বাস্থ্যকর সুপারফুড এবং মানুষের অনেক দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, অনুপযুক্ত সেবনের ফলে বিরূপ প্রভাব তৈরি করতে পারে । আমলা জুসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে : ১. হাইপারসিডিটি - যেহেতু আমলা প্রতিটি ফলের মধ্যে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, তাই এটি অ্যাসিডিক হয়ে থাকে।
কিছু মানুষের জন্য আমলকি খাওয়া একেবারেই অনুচিত
এই সব মানুষ যদি আমলকি খায়, তাহলে তাঁদের স্বাস্থ্যের উপকারের পরিবর্তে অপকার হয় বেশি।
জেনে নেওয়া যাক কাদের আমলকি খাওয়া উচিত নয়;
- ডিহাইড্রেশনের সমস্যা থাকলে বেশি আমলকি খাওয়া যাবে না। কারো যদি শরীরে শুকিয়ে যাওয়া বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যা থাকে, তাহলে আমলকি খাওয়ার ফলে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বেশি করে জল পান করতে হবে। কারণ আমলকির কিছু উপাদান ডিহাইড্রেশনের সমস্যাও তৈরি করে থাকে।
- প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যা থাকলে আমলকি এড়িয়ে চলতে হবে। আমলকিতে থাকা ভিটামিন-সি বেশি পরিমাণে খেলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া আরো বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, অনেকের প্রস্রাবের গন্ধও হতে থাকে।
- সদ্য অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে আমলকি খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণে এই ফল খেলে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। দীর্ঘায়িত রক্তপাত হাইপোক্সেমিয়া, গুরুতর অ্যাসিডোসিস বা মাল্টিঅর্গান ডিসফাংশন হতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও কারও কারও ক্ষেত্রে বাড়তে পারে আমলকি খাওয়ার ফলে। বেশি করে আমলকি খেলে মল শক্ত হয়ে যায়। যাঁরা প্রতিদিন আমলা খায়, তাঁদেরও বেশি পরিমাণে পানি পান করা উচিত। নাহলে বাড়তে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও।
- অ্য়াসিডিটির সমস্যায় ভুগলে এড়িয়ে যেতে হবে আমলকি খাওয়া। এতে উপস্থিত ভিটামিন সি-এর আধিক্য হাইপার অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- আমলকির কিছু উপাদান রক্তচাপকে প্রভাবিত করে। উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির সমস্যায় যারা জর্জরিত , এমন ব্যক্তিদের আমলকি খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। এটি খেলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, যার ফলে কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।এর কারণে শরীরে জল জমতে শুরু করে এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়।
- রক্তের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আমলকি খাওয়া পরিহার করা উচিত। এতে উপস্থিত অ্যান্টিপ্লেলেটলেট উপাদান রক্তের জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে পারে। আমলার এই বৈশিষ্ট্যগুলো হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়, কিন্তু যাঁরা ইতিমধ্যেই কোনও ধরনের রক্তের রোগে আক্রান্ত , তাঁদের জন্য আমলকি খাওয়া উচিত নয়। এই ধরনের ব্যক্তিদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই আমলা খাওয়া উচিত।
- যাঁদের শরীরে ব্লাড সুগারের মাত্রা কম, তাঁদেরও আমলকি খাওয়ার আগে সাবধান হওয়া দরকার। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কম করতে সাহায্য করে। এছাড়াও যারা ডায়াবেটিসের ওষুধ খাচ্ছেন তাদেরও আমলা খাওয়া উচিত হবে না, খেলেও কম পরিমাণে খেতে হবে।
- সর্দি-কাশির সমস্যা থাকলে আমলা এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, আমলকিতে ঠান্ডা ভাব রয়েছে। যার ফলে সর্দি কাশির ধাঁচ থাকলে এটি খাওয়ার ফলে এই সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। একটুতেই যাঁদের ঠান্ডা লেগে যায় তাঁরা আমলকি থেকে দূরে থাকায় উত্তম।
পরিশেষে বলা যায়, প্রত্যেকটা জিনিসের যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে। একটা জিনিস কারো জন্য ভালো হতে পারে, আবার কারো জন্য খারাপও হতে পারে। আমলকীর ব্যাপারটাও ঠিক তেমনি। আমলকী খাওয়ার উপকারিতা থাকলে অপকারিতাও রয়েছে। তবে আপনারা সাবধানতা অবলম্বন করলে অবশ্যই আমলকীর উপকারিতায় পাবেন।
আমাদের সকলের উচিত নিজের শরীরের ন্যাচার বুঝে যেকোনো জিনিস গ্রহণ করা। কোনটা আমার জন্য ভালো কোনটা খারাপ এইটা মাথায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ডালিম এর উপকারিতা ও অপকারিতা
এই ধরনের আরো বিভিন্ন জিনিসের তথ্য জানতে আমাদের সাথে থাকুন এবং কারো কোন বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট এর মাধ্যমে জানান। "ধন্যবাদ"
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url