দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয় কেন? জেনে নিন
দুধ আমাদের অতি পরিচিত একটি খাদ্য। দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয় জানা থাকলেও অনেকেই দুধের পুষ্টি গুণ ও দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে না জানার কারণে দুধ এড়িয়ে চলি। প্রকৃতি থেকে পাওয়া একটি খাদ্য হচ্ছে দুধ। প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পুষ্টির একটি উৎস দুধ। মানবদেহকে সুস্থ রাখতে এটি অতুলনীয় ভূমিকা রাখে। চলুন জেনে নেই দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয় কেন।
ভূমিকা
শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে নিয়মিত দুধ খাওয়ার। প্রতি বছর ১ জুন পালন করা হয় ‘বিশ্ব দুগ্ধ দিবস’। ২০০১ সাল থেকে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এ বছরের বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- ‘বৈশ্বিক পুষ্টিতে দুধ অপরিহার্য’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, একজন মানুষের দৈনিক গড়ে ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা দরকার।
বাংলাদেশের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ মানুষ নিয়মিত দুধ পান করে। যদিও দেশে দুধের উৎপাদন বেড়েছে, তারপরও মানুষ দুধের গুনগুন সম্পর্কে অজানা থাকার জন্য দুধ কম খায়। দুধের উৎপাদন বিভিন্ন কারণে কম হওয়া, জনসচেতনতার অভাব, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও জনগনের দুধের উপকারিতা সম্পর্কে অসচেতনতা।
আদর্শ খাদ্য কাকে বলে?
যে খাদ্যের মধ্যে ছয়টি (শর্করা, আমিষ, স্নেহ, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, পানি) পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকে তাকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়। দুধের মধ্যে ছয়টি (শর্করা, আমিষ, স্নেহ, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, পানি) পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকায় দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়।
দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয় কেন?
দুধ এমন একটি খাবার যা হলো প্রোটিনের উৎস। "দুধের নানাবিধ উপকারী গুনাগুনের জন্য দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়।" মানবজীবনের শুরু হয় দুধ দিয়ে। শিশু তার জীবনের শুরুতে মাতৃদুগ্ধ পান করে তার পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। শিশুর জন্মের পরপরই মায়ের স্তন থেকে যে হলুদ রঙের শালদুধ নিঃসরিত হয়, তা নবজাতকের রোগ প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর জন্মের পর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধই একমাত্র ও আদর্শ খাবার। ছয় মাস পর থেকে শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণে অর্থাৎ স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার খাওয়ানো দরকার। মায়ের দুধে সব ধরনের খাদ্য উপাদানই থাকে।
নবজাতককে দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখা জরুরি। নবজাতক শিশুকে পরিমিত পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করতে হলে মাকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। তবেই শিশু পরিপূর্ণ পুষ্টি পাবে।
আরও পড়ুনঃ লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা
সব বয়সের মানুষের জন্যই দুধ অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। দেহের অপূর্ণ পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে দুধ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। আমাদের নিত্য দিনে আহার্য খাদ্য তালিকার মধ্যে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান গুলো থাকে না। যার ফলে অপুষ্টি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এ অপুষ্টি জনিত সমস্যা থেকে বাচার অন্যতম মাধ্যম হলো খাদ্য তালিকায় দুধ রাখা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশু জন্মের পর বিভিন্ন কারণে ঠিকভাবে দুধ পান করতে পারে না, তারা অধিকাংশ সময়ই নানা ধরনের অপুষ্টি জনিত সমস্যায় ভোগে।
একটি খাদ্যকে আদর্শ খাদ্য বলা হয় তার মধ্যে ছয়টি (শর্করা, আমিষ, স্নেহ, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, পানি) পুষ্টি উপাদান থাকলে আর দুধের মধ্যে এ ছয়টি (শর্করা, আমিষ, স্নেহ, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, পানি) পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। অর্থাৎ বলা যায়, একের ভিতর সব। দুধের এ গুনের কারনেই দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়।
দুধের অপরিহার্য উপাদান হলো ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন ও মেধাবিকাশে সাহায্য করে। দুধে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ (ক্রোমিয়াম, আয়রন, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, জিংক ও আয়োডিন)।
গরুর দুধে পানি থাকে ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ থাকে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, চর্বি থাকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রোটিন থাকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয় কারণ হলো দুধের মধ্যে থাকা ছয়টি পুষ্টি উপাদান। মানুষের দেহের হাড় ও দাঁত মজবুত রাখার জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। আর দুধের মধ্যকার খনিজ হলো খনিজ পদার্থের সেরা উৎস। অস্টিওপরোসিস অর্থাৎ হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া ও ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হওয়া এবং দাঁতের নানা সমস্যা তৈরি হওয়া থেকে বাঁধা সৃষ্টি করে প্রতিরোধে সহায়তা করে দুধ।
শৈশব ও কৈশোরে যখন হাড়ের বৃদ্ধি হয় তখন ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা আরও বেশি জরুরি। এ সময়টা হলো দৈহিক বৃদ্ধির সময় সুতরাং এ সময় শরীরের হাড় মজবুত না হলে তা সারা জীবনের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। একই সাথে প্রাপ্তবয়স্কদেরও নিয়মিত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসময় ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে হাড়ের ঘনত্ব ঠিক থাকে এবং হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
এছাড়াও দুধে রয়েছে ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি১২,ও পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। ক্যালসিয়াম এর পাশাপাশি ভিটামিন ডি ও হাড় ভালো রাখতে উপকারী ভূমিকা রাখে। ভিটামিন ডি হাড় সুস্থ রাখার পাশাপাশি দাঁত, নখ, চুল ও ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
ভিটামিন-এ সব বয়সের মানুষের চোখের জন্য উপকারী। এটি দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন বি১২ লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন করে, শরীরের স্নায়বিক কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন-বি বেরিবেরি অসুখ প্রতিরোধ করে ও স্নায়ুকে রাখে কর্মক্ষম।
পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। দুধে রয়েছে আয়োডিন, যা শরীরে থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুধের মধ্যে আরও আছে ফোলেট ও ম্যাগনেশিয়াম, যা আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং রোগ-জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে।
দুধে রয়েছে অফুরন্ত পুষ্টি উপাদান। আর এই অফুরন্ত পুষ্টি উপাদান ও গুনাগুনের জন্যই দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়। দুধ খাওয়ার ফলে যেমন বর্তমান প্রজন্ম সুস্থ থাকে তার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও হয় সুস্থ সবল।
দুধ দেহে প্রোটিন সরবরাহ করে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে এবং উচ্চমানসম্পন্ন প্রোটিন ও অ্যামাইনো এসিড সরবরাহ করে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। আর দুধ হতে যে উচ্চমানের প্রোটিন পাওয়া যায় তা শরীরে প্রচুর শক্তি যোগায়। যার ফলে দীর্ঘ সময় আর ক্ষুধা অনুভব হয় না এবং অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।
মানবদেহের টিস্যু তৈরি ও মেরামত করতে, এনজাইম ও হরমোন তৈরি করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রোটিন। এটি একটি অপরিহার্য ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট। দুধে থাকে নয়টি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড। এর কারণে, দুধ সম্পূর্ণ প্রোটিনের একটি উৎস। তাছাড়া দুধে উপস্থিত লিনোলেয়িক এসিড ও দ্রবীভূত ক্যালসিয়ামও মেদ কমাতে সহায়তা করে।
নিয়মিত দুধ পান করলে বা দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুধ রাখলে তা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। দুধে থাকে প্রোটিন ও স্নেহজাতীয় উপাদানের যার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে সেটা পেটে থাকে। ফলে ক্ষুধা কম লাগে। এর ফলে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা যায় এবং ক্যালোরি গ্রহণ কম হয়। ফলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেন, তারা স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখতে পারেন। যাদের শরীরে অতিরিক্ত ওজন জনিত সমস্যা রয়েছে তারা সুষম খাদ্য খেলে ও নিয়মিত ব্যায়াম করলে তাদের ওজন কমার সম্ভাবনাও বেশি।
দুধে প্রায় ৯০ শতাংশ পানি রয়েছে। ফলে, শরীরে তরল বা পানির চাহিদা পূরণে এটি খুবই ভালো উৎস। দুধের ইলেক্ট্রোলাইট অর্থাৎ পটাসিয়াম ও সোডিয়াম শরীরে তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকা বা শরীর হাইড্রেটেড থাকা অত্যাবশ্যক। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টি পরিবহন এবং বর্জ্য বের করে দেওয়ার জন্য এটি জরুরি। এ ক্ষেত্রে দুধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আশা করি আপনা বুঝতে পেরেছেন দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয় কেন। সুতরাং, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার জন্য আমাদের প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
লেখকের মন্তব্য
আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন।
কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url