পুঁটি মাছের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

মাছ তো আমরা সবাই খায়। কথায় আছে মাছে-ভাতে বাঙালি। মাছ বাঙালির অনেক জনপ্রিয় একটি খাবার। তবে আমরা কি জানি কোন মাছ খেলে কি কি উপকার হয়? আমরা আজকে আলোচনা করবো খুবই পরিচিত মাছ পুঁটি নিয়ে। পুঁটি মাছের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন।


পুঁটি মাছ আমাদের বেশ পরিচিত একটি মাছ। পুঁটি মাছ মিঠা পানির মাছ। আর মিঠা পানির মাছ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এটা প্রায় অনেকেরই জানা। ঠিক তেমনি পুঁটি মাছের উপকারিতাও অনেক।

পুঁটি মাছের উপকারিতা

সাইজে ছোট, দাম কম"! তবে পুঁটি মাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনারা চমকে যাবেন। এত উপকারি এই ছোট মাছ। নিচে উল্লেখযোগ্য পুঁটি মাছের কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো :-
  • পুঁটি মাছকে ভিটামিনের খনি বলা হয়ে থাকে। কেননা ছোট এই পুঁটি মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও বি।
  • পুঁটি মাছে রয়েছে অধিক পরিমাণে ফসফরাস, যা আমাদের দেহের হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
  • পুঁটি মাছ খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
  • দৃষ্টি শক্তি উন্নত হয়: লোকো মুখে শোনা যায় পুঁটি মাছ খেলে চোখের জ্যোতি বাড়ে। এটা সত্য। পুঁটি মাছ খেলে চোখের অনেক উপকার হয়। চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। চোখের জ্যোতিও বৃদ্ধি করে।
  • প্রোটিনের খনি: পুঁটি মাছ কে প্রোটিনের খনিও বলা হয়। পুঁটি মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। পুঁটি মাছ শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে দেয়।
  • হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে: পুঁটি মাছে রয়েছে ওমেগা -৩ ফ্যাট যা অ্যাসিডের ভালো উৎস। এটা হার্টের জন্য বেশ উপকারি।
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে: পুঁটি মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। যারা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করছেন তাদের জন্য এটা বেশ স্বাস্থ্যকর খাবার।
পুঁটি মাছ সাধারণত আকারে ছোট হয় এবং চ্যাপ্টা আকৃতির হয়। পুঁটি মাছ বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় সকল জলাশয়ে দেখা যায়। নদী-নালা, খাল-বিলে পুঁটি মাছ ভরপুর পাওয়া যায়। অনেকে পুকুরের চাষ করে থাকে। 

তবে এই মাছ চাষ করার জন্য তেমন খাটুনির প্রয়োজন। অল্প কিছু পুঁটি পুকুরে ছাড়লে তা থেকেই পুকুর ভরে যাবে। এই মাছ খেতেও বেশ মজা। ঝোল থেকে ভাজা নানাভাবে এই মাছ রান্না করা যায়। পুঁটি মাছের দামও কম বাজারে। 

অর্থাৎ অল্প দামে পাচ্ছেন একাধিক উপকারিতা। দামে কম কাজে ভালো। পুঁটি মাছ আকারে ছোট হলেও এর উপকারিতা প্রচুর। 

পুঁটি মাছের বৈশিষ্ট্য

পুঁটি মাছ আমরা সবাই চিনি। তবুও আপনাদ সুবিধার্থে পুঁটি মাছের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য গুলো তুলে ধরলাম :-
  • গোত্র: পুঁটিমাছ Cypriniformes বর্গের Cyprinidae গোত্রের অন্তর্গত।
  • পুঁটি মিঠা পানির মাছ।
  • আকার: পুঁটি মাছ আকারে ছোট ও চ্যাপ্টা আকৃতির হয়।
  • সাইজ: একটা পূর্ণবয়স্ক পুঁটি মাছ ২৫-১০ ইঞ্চির চেয়ে ছোট হয়।
  • বাসস্থান: এদের সাধারণত নদী-নালা, খাল-বিলে বেশি পাওয়া যায়। বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব-দক্ষিণ এশিয়ার জলাশয়ে এদের দেখা মিলে।
  • খাদ্য : পুঁটি মাছ ক্ষুদি পানা, এ্যাজোলা, নরম ঘাস, কলাপাতা, নেপিয়ার ইত্যাদি খেয়ে থাকে।

পুঁটি মাছে কি এলার্জি আছে?

আপনাদের আগে এটা জানা প্রয়োজন আসলে এলার্জি কি?

দেখুন, মানুষের শরীরে এক একটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম রয়েছে। এটা হচ্ছে মূলত শরীরের নিজস্ব এন্টিবডি তৈরির ক্ষমতা, যা শরীরের নতুন কোন আমিষ ঢোকার পরে তৈরি হয়। কোন কারণে এই ইমিউন সিস্টেমে গণ্ডগোল দেখা দিলে আমাদের শরীরে এলার্জির বহির্প্রকাশ ঘটে। 

কখনও কখনও আমাদের শরীর ক্ষতিকর নয় এমন বস্তকে ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধ করে। সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন বস্তর ওপর শরীরের এমন অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াই হলো এলার্জি। এজন্য একেক জনের একেক জিনিসে এলার্জি হয়ে থাকে। 

যার শরীর যে বস্তকে ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধ করে তা তাতেই এলার্জি হয়। অতএব আপনার পুঁটি মাছে এলার্জি আছে কিনা এটা আমাদের দ্বারা বলা সম্ভব নয়। এটা আপনার শরীরের ওপর নির্ভর করে। তবে সাধারণত পুঁটি মাছে এলার্জি নেই।

পুঁটি মাছ খেলে কি হয়?

পুঁটি মাছের উপকারিতা অনেক। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই মাছে রয়েছে অনেক পরিমাণে ভিটামিন। এজন্য পুঁটি মাছ কে ভিটামিনের খনিও বলা হয়। পুঁটি মাছে অধিক পরিমাণে ভিটামিন থাকায় এটি আমাদের রাতকানা রোগ সহ দৃষ্টি শক্তির স্বল্পজনিত চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 

এছাড়াও পুঁটি মাছ ক্যালসিয়ামেরও একটি ভালো উৎস। কেননা এই মাছ কাঁটাসহ খাওয়া যায় বলে, এ মাছ থেকে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম পেতে পারি। তাছাড়া পুঁটি মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। পু্ঁটি মাছ খেলে প্রোটিনের চাহিদা মিটানো সম্ভব। 

যারা স্বাস্থ্যকর ওজন পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন তাদের জন্য পুঁটি মাছ একটি দারুণ বিকল্প হতে পারে। কেননা পুঁটি মাছে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম থাকে, যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে। একটি পুঁটি মাছে ১০ ক্যালোরি থাকে।

পুঁটি মাছে যেসকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে

পুষ্টিগুণে ভরপুর পু্ঁটি মাছ। পুঁটি মাছের উপকারিতা অনেক। গবেষণা থেকে জানা যায় ১০০ গ্রাম পুঁটি মাছে প্রায় ১০৫-১০৬ ক্যালোরি পাওয়া যায়। এছাড়াও ১৮.১ গ্রাম প্রোটিন, ২.৪ গ্রাম চর্বি ১১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। দাঁত ও হাড় মজবুত করতে এটি সাহায্য করে। 

এছাড়াও এতে অসম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে, যা রক্ত ও শরীরের জন্য বেশ ভালো। এতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় এটি আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। পুঁটি মাছে ভিটামিন এ ও বি রয়েছে।

পুঁটি মাছ খেলে যেসব রোগের আশঙ্কা কমানো যায়!

ছোট মাছ খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। আর মাছ টি পুঁটি হলে আরও ভালো। কেননা পুঁটি মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং প্রচুর মিনারেল বা খনিজ। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

এতে ভিটামিন এ থাকায় রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। পুঁটি মাছে রয়েছে ওমেগা -৩ ফ্যাট এটি এসিডের ভালো উৎস যা হার্টের জন্য বেশ উপকারি। এটা হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও পুঁটি মাছে ক্যালোরির পরিমাণ অনেক কম থাকে, যা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url