সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

পুষ্টিগুণে ভরপুর সজনে পাতার উপকারিতা অনেক। বিশেষজ্ঞদের মতে, সজনে পাতা প্রায় ৩০০ টি রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। সজনে পাতা বেশ জনপ্রিয় বাঙালির কাছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর সজনে পাতার অপকারিতাও রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

সজনে পাতার পুষ্টি উপাদান 

এছাড়াও এগুলোতে রয়েছে ফোলেটের দৈনিক প্রস্তাবিত খাদ্যমধ্যস্থ পরিমাণ বা রেকমেন্ডেড ডায়াটরি অ্যালাউয়েন্স(RDA), ক্যালসিয়াম (RDA এর ১৯%), আয়ণ বা লোহা (RDA এর ৩১%) এবং অল্প পরিমাণে অপরিহার্য খনিজগুলি যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস এবং জিঙ্ক বা দস্তা। 

আবার সজনে পাতাতেও রয়েছে ভিটামিন 'এ' (RDA এর ৪৭%), ভিটামিন B১ বা থায়ামিন (RDA এর ২২%), ভিটামিন B২ বা রিবোফ্ল্যাভিন (RDA এর ৫৫%), ভিটামিন B৬ (RDA এর ৯২%), এবং ভিটামিন B৩, B৫ ও C ।

সজনের দানাগুলোকে বের করে নেওয়া যেতে পারে এবং সেগুলোকে ভেজে নিয়ে বাদাম অথবা মটরশুঁটির মতও খাওয়া যায়।এগুলোর মধ্যে থাকে ভিটামিন C এবং একটা ভাল পরিমাণে ভিটামিন B এবং বিভিন্ন খনিজ।

সজনে পাতার উপকারিতা

মানুষের শরীরের প্রায় ২০% প্রোটিন যার গাঠনিক একক হলো এমাইনো এসিড। শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মেটাবোলিজম এবং অন্যান্য শারীরবৃত্ত্বীয় কার্যাবলী পরিপূর্ণ ভাবে সম্পাদনে এমাইনো এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষের শরীরের যে ৯ টি এমাইনো এসিড খাদ্যের মাধ্যমে সরবরাহ করে।

সজনে পাতা শরীরে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মত কঠিন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। নিয়মিত দৈনিক সেবন শরীরের ডিফেন্স মেকানিজমকে আরো শক্তিশালী করে এবং ‘ইমিউনিটি স্টিমুল্যান্ট’ হওয়ার দরুন এটি ‘এইডস’ আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

সজনে পাতা শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে পুষ্টিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। শরীরের ওজন কমাতেও ব্যায়ামের পাশাপাশি এটি বেশ কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। সজনে পাতা মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। 

সজনে পাতাতে ৩৬ টির মত এন্টি-ইনফ্ল্যামমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এছাড়াও সজনে পাতা অকাল বার্ধক্যজনিত সমস্যা দূর করে থাকে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। 

প্রতি গ্রাম সজনে পাতায় একটি কমলার চেয়ে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম ও দুই গুণ বেশি প্রোটিন, গাজরের চেয়ে চার গুণ বেশি ভিটামিন এ এবং কলার চেয়ে তিন গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান। 

ফলে এটি অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতা সহ বিভিন্ন ভিটামিন ঘাটতি জনিত রোগের বিরুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা হিসেবে কাজ করে থাকে।

সজনে পাতায় আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড। যা মেয়েদের চুলের কোষকে মজবুত করতে সাহায্য করে এবং চুল ঘন করে। সজনে পাতায় আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা চুল ভালো রাখতে ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা 

ডায়াবেটিসে সজনে পাতার ভূমিকা অনেক। কাঁচা, রস করে, পাতার গুঁড়া চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে, ডাল হিসেবে, শাক, সস, স্যুপ কিংবা সালাদ হিসেবেও ব্যবহার করা যায় সজনে পাতা। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সজনে পাতার উপকারিতা অনেক। খালি পেটে ও খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।  

যাঁরা ইনসুলিন ব্যবহার করে থাকে, তাঁদের ইনসুলিনের পরিমাণ কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সজনে গাছের বহুল ব্যবহৃত অংশটি হলো এর পাতা, যা বর্তমানে বেশি ব্যবহার হচ্ছে ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসেবে। কিন্তু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সজনে পাতা ব্যবহার কতটা যৌক্তিক, সে সম্পর্কে রয়েছে অস্পষ্টতা।

যেসব উপায়ে সজনে পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে, সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত গবেষণার স্বল্পতা রয়েছে। গবেষণায় তেমন আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। কিছু গবেষণায় দেখা যায়, সজনে পাতার অতিব্যবহারে লিভার ও কিডনির ক্ষতি করতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে অ্যালার্জির সমস্যা এত বেশি হতে পারে, যার ফলে মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন ৭ গ্রাম বা আধা চামচ গ্রহণের ফলে ভিটামিন বা খনিজ লবণজনিত বিষক্রিয়া হতে পারে। সর্বোচ্চ কত মাত্রায় কত দিন সেবন করা যাবে, তা জানা যায়নি। কতটুকু সেবন করলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে, তার পরিমাণ অজানা।

সজনে পাতা কখন গ্রহণ করতে পারবে না

  • থাইরয়েড হরমোনের অভাব থাকলে।
  • লিভারের সমস্যা থাকলে।
  • গর্ভাবস্থায়।
  • রক্তে শর্করার পরিমাণ খুব কম থাকলে।

সতর্কতা

যাঁরা ডায়াবেটিসের ওষুধের পাশাপাশি সজনে পাতা গ্রহণ করছে, তাঁদের ক্ষেত্রে সজনে পাতা ও ওষুধ একসঙ্গে গ্রহণের ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার আশঙ্কা হয়। ওষুধ ছাড়া শুধু সজনে পাতা গ্রহণ করলে দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকার ফলে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সজনে পাতা গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে সজনে পাতা গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে।

সজনে পাতা খাওয়ার নিয়ম

সজনে পাতা খাওয়ার সব থেকে সহজ এবং প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে একে চায়ের সাথে মিশিয়ে পান করা। কারণ যখন মরিঙ্গা গুঁড়া চায়ের সাথে মেশানো হয় তখন তা গলে সব পুষ্টিগুণ পানির সাথে মিশে যায়। যখন সেই পানীয় গ্রহণ করা হয় তখন তা দেহের জন্য উপকারী হিসেবে কাজ করে।

গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খাওয়া কি নিরাপদ?

গর্ভদশায় সজনে খাওয়া একদমই নিরাপদ। তবে খাওয়ার আগে এগুলোকে অবশ্যই খুব ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে এর গায়ে লেগে থাকা ধূলো ময়লা এবং জীবাণুগুলো থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য।যেকোনও পুষ্টিকর খাবারের মতই এটিও সিমীত পরিমাণে সংযমের সাথে খাওয়া উচিত।সজনের পাতা,বীজের শুঁটি এবং বীজ সবকিছুই পুষ্টিতে পরিপূর্ণ এবং খাবারযোগ্য।

গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার উপকারিতা

সজনেগুলো বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।একজন হবু মা এবং তার গর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে, অন্তঃসত্ত্বাকালে সজনে খাওয়ার বহুবিধ উপকারিতা আছে।  যেমন:
  • সজনে পাতার গুঁড়া: গর্ভকালীন সময়ের জন্য সজনে পাতার গুঁড়া ভীষণ উপকারী। এতে আমিষ, ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন 'এ' এবং ভিটামিন 'সি' থাকে যা দেহের আত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানের মধ্যে অন্যতম উপাদান। দৈনিক ৬ চা চামচ সজনে পাতার গুঁড়া গর্ভবতী মহিলাদের চাহিদার সবটুকু পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে।
  • প্রাতঃকালীন অসুস্থতা কমায়: গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খেলে তা প্রাতঃকালীন অসুস্থতার লক্ষণগুলো কমাতে সাহায্য করে থাকে। এই সময় প্রাতঃকালীন অসুস্থতার কারণে হয়ে থাকা অবসাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে,বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা কমাতেও এটি ভীষণ ভাবে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত ভাবে সজনে পাতা খেলে তা একজন গর্ভবতী মহিলাকে সতেজ বোধ করাতে এবং সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।
  • জন্মগত ত্রুটিগুলো রোধে সহায়তা করে: সজনে পাতায় রয়েছে ফোলেট, যা শিশুর নিউরাল টিউব গঠণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন যা শিশুর ব্রেন এবং মেরুদণ্ড গঠণ করতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় ফোলেটের অভাবের কারণে স্পাইনা বিফিডার মত নিউরাল টিউবের ত্রুটি দেখা দিতে পারে যা শিশুর গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরী করতে পারে। তবে সজনে পাতার মত ফোলেটের পরিমাণ বেশি এমন খাবার গ্রহণের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় জন্মগত ত্রুটিগুলি রোধ করতে সহায়তা করা যেতে পারে।
  • রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে : রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে সজনে পাতা খুব কার্যকরী। প্রতিদিন সজনে খেলে তা শরীরের রক্ত শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের মত জটিলতাগুলো রোধ করতে সহায়তা করে থাকে।
  • হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে: সজনে পাতাতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম, আয়রণ বা লোহা এবং বিভিন্ন খনিজ যা শক্তিশালী হাড় গঠণে এবং হাড়ের ভাল স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে।
  • রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে : অ্যানিমিয়া, বিশেষ করে আয়রণের ঘাটতি জনিত অ্যানিমিয়া, গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকা একটি সাধারণ ব্যাপার। গর্ভাবস্থায় আয়রণের ঘাটতি দেখা দেওয়াটাও সাধারণ ব্যাপার, তবে অন্তঃসত্ত্বাকালে সজনে পাতা খেলে তা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে এবং অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোধে সাহায্য করে থাকে।
  • ইনফেকশন বা সংক্রমণ রোধ করে থাকে : সজনে পাতার মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যবলী যা সংক্রমণ রোধ করতে এবং কোনও গর্ভবতী মহিলার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে স্বস্তি দিতে পারে: বেশিরভাগ মহিলারাই তাদের গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হয়ে থাকে। কারো যদি সেই সমস্যা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে তার ডায়েটের মধ্যে সজনে পাতা অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়ে থাকে। সজনে পাতার মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে খাদ্য মধ্যস্থ তন্তু বা ডায়াটরি ফাইবার যা মলকে নরম করতে সহায়তা করে আর তার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মিলে।
  • পেট ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে: সজনে পাতার মধ্যে কিছু ঔষধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের পেট ব্যথা বা পেটের সমস্যা রোধে বা প্রশমিত করতে সহায়তা করে থাকে।আমাশয়, কলেরা, ডায়রিয়া ইত্যাদির মত রোগের লক্ষণগুলো লাঘব করতে সজনে পাতার সাথে কচি নরম নারকেলের পানি দেওয়া থাকে।
  • প্রসবে সহায়তা করতে পারে: সজনে পাতা জরায়ুর সঙ্কোচনগুলির উন্নতি ঘটাতে এবং শ্রমের বেদনা কম করতে পারে আর এইরূপে এটি পরোক্ষভাবে সন্তান প্রসবে সহায়তা করে এবং প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জটিলতাগুলো রোধ করে।
  • শ্বাকষ্ট কমাতে সাহায্য করে : এক বাটি গরম সজনে পাতার স্যুপ নাক বন্ধ হওয়া দূর করতে এবং গলা ব্যথা ও সর্দি কমাতে সাহায্য করতে পারে। সজনে পাতা ব্রঙ্কাইটিস এবং হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার জন্য প্রাকৃতিক প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে থাকে।

গর্ভাবস্থায় সজনে পাতার অপকারিতা 

যদিও সজনে পাতা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে পরিপূর্ণ এবং একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য অনেক উপকারি হয়, তবুও সজনে গাছের এমন কিছু অংশ রয়েছে যেগুলো থেকে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়াও অতিমাত্রায় সেবনের ফলে তা আবার দেহের মধ্যে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

সজনে গাছের ছাল এবং মূলের মধ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে যা গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটাতে সক্ষম।সুতরাং সেগুলো কোনও সম্ভাবনাতেই খাওয়া উচিত নয়।এর মূলে এমন এক রাসায়নিক থাকে যা থেকে আবার প্যারালাইসিসের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে।

গর্ভবতী মহিলা এবং বাচ্চাকে দুধ পান করানো মায়েদের সজনে ফুলটিও খাওয়া নিরাপদ নয়। কারণ সেগুলোতেও বিষাক্ত রাসায়নিক থাকতে পারে।

অতএব, গর্ভাবস্থায় বা অন্য যেকোনও সময় খাওয়ার আগে সমস্ত সবজিগুলোকে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত।

গর্ভাবস্থায় সজনে ডাটা খাওয়া যাবে কি?

গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। সজনের পাতা সংলগ্ন ডালে যে বিষাক্ত উপাদান আছে সেটি এ সময় শরীরে প্রবেশ করলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়। সজনে পাতা গুঁড়া বা রসের ক্ষেত্রে এ ডাল মিশ্রিত থাকতে পারে। তাই গর্ভকালীন সময় এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

সজনে ফুল খেলে কি হয়?

সজনে ফুলের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ১, বি২, বি৩ এবং সি রয়েছে। এছাড়াও এই ফুলের মধ্যে রয়েছে ক্যালশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ। যা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে থাকে সজনে ফুল। এছাড়াও সজনে ফুল খেলে জ্বর-সর্দি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কিন্তু এই ফুলের উপকারিতা এখানেই সীমিত নয়। অনেকেই হয়তো জানে না, সজনে ফুল যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করে থাকে।

পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করতে সজনে ফুলের কোন বিকল্প নেই। আমেরিকান জার্নাল অফ নিউরোসায়েন্স থেকে প্রকাশিত একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে, সজনে ফুলের মধ্যে টেরিগোস্পারমিন নামের একটি যৌগ রয়েছে।যা যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি করতে,বন্ধ্যাত্বে‌র সমস্যা দূর করতে এবং শুক্রাণুর মান ও সংখ্যা উন্নত করতে সহায়তা করে। সুস্থ যৌন জীবনের চাবিকাঠি হচ্ছে সজনে ফুল।

সাধারণত সজনে ফুল ভেজে কিংবা চচ্চড়ি বানিয়ে খাওয়া যায়। এভাবে সজনে ফুল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তবে, যৌন জীবনকে ভাল রাখতে একটু অন্য উপায়ে সজনে ফুল খাওয়া যায়। দুধের সঙ্গে সজনে ফুল সেদ্ধ করে নিয়ে। এতে এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এক গ্লাস করে এভাবে সজনে ফুলের দুধ খেলেই বাড়বে যৌন মিলনের ইচ্ছা শক্তিও।

সজনে পাতার গুড়ার কি উপকারিতা রয়েছে?

সজনে পাতা গুড়া বা মরিঙ্গায় ভিটামিন সি এর পর্যাপ্ততা আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভীষণ কার্যকর। এ ভিটামিন শ্বেত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে, যা সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। 

এছাড়াও, মরিঙ্গাতে প্রদাহ বিরোধী এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা প্রদাহ কমাতে এবং সংক্রমণের সাথে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।

ত্বকের যত্নে সজনে পাতার উপকারিতা 

  • বয়সের ছাপ এবং পিগমেন্টেশন রোধ করতে সাহায্য করে থাকে।
  • ব্রণ বা পিম্পল প্রতিরোধে দারুণভাবে সাহায্য করে থাকে।
  • এতে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে থাকে।
  • সজনে পাতার ব্যবহারে ত্বকের প্রয়োজনীয় প্রোটিন তৈরি হয়, যা পোরের সমস্যা দূর করতে কাজ করে থাকে।
  • ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে এবং শুস্কভাব দূর করতে সাহায্য করে থাকে।

সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়মাবলি 

  • চা এর সাথে মিশিয়ে সজনে পাতা খাওয়ার সব থেকে সহজ এবং প্রচলিত পদ্ধতি হচ্ছে একে চায়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • শরবত বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে।
  • স্মুদি হিসেবে।
  • সালাদ ড্রেসিং হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
  • ওটমিল বা সিরিয়ালের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • মশলা হিসেবেও তরকারিতে ব্যবহার করা যায়।
  • স্যুপের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • ভাতের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

কিডনির রোগীরা কি সজনে পাতা খেতে পারবে?

যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তাদের সজনে পাতা না খাওয়াই উচিত। কারন কিডনি রোগীদের পটাসিয়াম ফসফরাস এবং প্রোটিন রেস্ট্রিক্টেড করা হয়। তাই কিডনির রোগীদের সজনে পাতা খাওয়া থেকে এড়িয়ে যাওয়া উচিত। অন্যদিকে, সজনে পাতায় অনেক পটাসিয়াম ফসফরাস এবং প্রোটিন থাকে।

সজনে পাতা খেলে কি ওজন বাড়ে?

না, ওজন কমায়: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা যায়, সজনে পাতা মেটাবলিক রেট বাড়ায়, যা ওজনকে বশে রাখতে ভীষণ ভাবে জরুরি। মেটাবলিক রেট বেশি হলে শরীর ক্যালোরি পোড়াতে সক্ষম হয়। 

এছাড়া সজনে পাতায় ফাইবার রয়েছে, যা দীর্ঘক্ষণ পেটকে ভর্তি রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে দূরে রাখে যার ফলে ওজন বাড়ার আশংকা কমে যায়। তাই নিঃসন্দেহে সজনে পাতা খাওয়া যাবে ওজন বাড়ার ভয় নেই।

সজনে পাতা খেলে কি প্রেসার কমে?

সজনে পাতার চা খেলে ওজন কমার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর মধ্যে থাকা কিউএরসেটিন উপাদান উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। একই সঙ্গে এই চা প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে থাকে। রক্তে শর্করা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে এই পাতার চা খেতে পারেন।

সজনে পাতার অপকারিতা

সজনে পাতার অনেক উপকারিতা থাকলেও এটি অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। সজনে পাতা অতিরিক্ত খাওয়া হলে বমি বমি ভাব, পেটের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। ব্লাড প্রেসারের ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত শজনে পাতার গুঁড়া বা রস খেতে থাকলে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url