পুঁই শাক খেলে কি হয়? পুঁই শাকের উপকারিতা ,অপকারিতা এবং পুষ্টিগুন

পুঁই গাছ হলো লতা জাতীয় উদ্ভিদ। পুঁই গাছের পাতা ও ডাঁটা শাক হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলে সচরাচর এটাকে পুঁই শাক হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এটা একটি নরম বহু শাখাযুক্ত উদ্ভিদ। এর লতা দ্রুত বেড়ে উঠে, দৈর্ঘ্যে ১০ মিটারও হয়।


পুঁইয়ের মোটা, রসাল, হরতন আকৃতির পাতায় মৃদু সুগন্ধ থাকে।পাতাটি মসৃণ, খানিকটা পিচ্ছিল ভাব দেখা যায়। এই শাক দুই ধরনের। একটি সবুজ পাতা ও ডাঁটা হালকা সবুজ। অন্যটি সবুজ পাতা কিন্তু কাণ্ড বা ডাঁটা লালচে বেগুনি রঙের, যা লাল পুঁই হিসেবে পরিচিত।

পুঁই শাকে থাকে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি যা ত্বকের রোগজীবাণু দূর করতে সাহায্য করে, শারীরিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে কাজ করে, সাথে চুল মজবুত করতেও ভূমিকা রাখে। 

প্রতিদিন পুঁই শাক খেলে পাইলস, ফিস্টুলা ও হেমোরয়েড হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। পুঁই শাকে প্রচুর পরিমাণ আঁশ বা ফাইবার থাকে, যা পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।

নিচে পুঁই শাকের উপকারিতা, অপকারিতা এবং পুষ্টিগুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো —

পুঁই শাকের উপকারিতা 

পুঁই শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, দেহের বর্জ্য বের করতেও সাহায্য করে থাকে।যাঁদের ত্বকে ব্রণের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য পুঁই শাক অত্যন্ত ভালো একটি শাক।

বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটিসহ নানা ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়াও পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় পুঁই শাক রোগ প্রতিরোধে ভীষণ কার্যকরী একটি উদ্ভিদ। পুঁইশাকে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি গুণ। শরীরের কোনো জায়গা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ফলে ফুলে গেলে পুঁই শাকের শিকড় বেটে লাগালে দ্রুত ব্যাথা দূর হয়।

শরীরে খোসপাঁচড়া বা ফোঁড়ার মতো অনাবশ্যক সংক্রমণের বিরুদ্ধেও লড়তে সাহায্য করে পুঁইশাক। যাঁরা প্রায় প্রতিদিনই মাথাব্যথায় ভুগে, প্রতিদিন পুঁই শাক খেলে তাঁরা উপকার পেতে পারে খুব জলদি। তাই পরিবারের স্বাস্থ্যসচেতনতার কথা মাথায় রেখে খাদ্যতালিকায় রাখতে পারে পুঁইশাক।

পুঁই শাক খেলে কি কি ভিটামিন পাওয়া যায়?

পুঁই শাকের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, লোহা, ও ক্যালসিয়াম। পুঁই শাক খেলে এই ভিটামিন গুলোর অভাব গুলো অনায়াসে পূরণ করা যায়। যদি কেউ এই ভিটামিন গুলোর অভাব বোধ করে তাহলে তার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন পুঁইশাক রাখতে পারে।

পুঁই শাক খেলে কি কি পুষ্টিগুন পাওয়া যায়?

পুঁই শাকের পুষ্টিগুনঃ ১০০ গ্রাম পুঁই শাকে প্রোটিন থাকে ২.২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট রয়েছে ৪ গ্রাম, আয়রন ১০ মি. গ্রাম, জলীয় অংশ ৯২.০ গ্রাম, ১.৪ গ্রাম খনিজ,২৭ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি, চর্বি ০.২ গ্রাম, ১৬৪মিগ্রা ক্যালসিয়াম, ৬৪ মিগ্রা ভিটামিন-সি, ১২৭৫০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন।

পুঁই শাক খেলে কি প্রেসার বাড়ে?

এটি বিটা ক্যারোটিন এজমার হাত থেকে রক্ষা করে থাকে।ব্লাড প্রেসার রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় হচ্ছে পটাশিয়াম। পুঁই শাক পটাশিয়ামের অনেক ভালো একটি উৎস। পটাশিয়াম ব্লাড প্রেসার কমাতে এবং পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে।

পুঁই শাকের বিচি খেলে কি হয়?

পুঁই শাকের বিচি আয়রনের অভাবে সংক্রামক এনেমিয়ার প্রতিরোধে একটি হাই উৎপাদনশীল উপাদান। এনেমিয়া রোগের কারণে শরীরের হেমোগ্লোবিন মাত্রা কমে যায়, এটা হেমোগ্লোবিন উৎপাদন ও রক্তক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে। 

পুঁই শাকের বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সহায়তা করে থাকে। পাকস্থলী অথবা বিভিন্ন ক্যানসার রোগ নিরাময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বলা যায় পুঁই শাকের বিচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান যা মানব শরীরের কঠিন থেকে কঠিন রোগ করতেও সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে।

পুঁই শাকের অপকারিতা 

যাদের পারিবারিক ঠান্ডার সমস্যা রয়েছে তাদের পুঁই শাক এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ পুঁই শাকের মধ্যে থাকা কিছু উপাদান ঠান্ডা লাগার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও পুঁই শাকের কিছু খারাপ দিক রয়েছে। যেমন :

পুঁইশাক অক্সালেট সমৃদ্ধ একটা খাবার যা গ্রহণ করলে শরীরে তরল পদার্থে অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা যেতে পারে। তার মধ্যে একটা সমস্যা হলো পুঁইশাক কিডনি রোগীদের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরুপ। 

পুঁই শাকে পিউরিন নামক উপাদান আছে যা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।আবার অতিরিক্ত পুঁই শাক খাওয়ার ফলে হতে পারে গেটে বাঁতের মতো সমস্যাও। এই সমস্যা গুলো হয়ে থাকে মূলত পুঁই শাকে থাকা পিউরিন নামক উপাদানের কারণে যা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়। 

যারা কিডনি বা পিত্তথলির সমস্যায় আক্রান্ত তারা পুঁই শাক খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।

পুঁই শাক খেলে কি অ্যালার্জি হয়?

জি হ্যা, যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা ভুল করেও পুঁই শাক খেতে যাবেন না নইলে পড়তে হবে বিপদে। 

যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা পুঁই শাক খাওয়ার ফলে তাদের শরীরে দেখা দিতে পারে নানা রকম সমস্যা যেমন ; চুলকানি, মুখে লাল লাল দানা, পুরো শরীর লাল হয়ে যাওয়া, হাত পা ফুলে যাওয়া। 

এই রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে অ্যালার্জির কারণে। তাই যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা পুঁই শাক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

পুঁই শাক খেলে কি গ্যাসটিক এর সমস্যা হয়?

না, পুঁই শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাছাড়াও যাঁরা ত্বকে ব্রণের সমস্যায় জর্জরিত, তাদের জন্য পুঁইশাক অত্যন্ত ভালো একটি উপাদান। বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটিসহ নানা সমস্যা দূর করে থাকে পুঁই শাক।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url