সকাল বেলা খালি পেটে কলা খেলে কি হয়? জেনে নিন
আপনরা অবশ্যই সকাল বেলা কলা খাবেন। তবে মোটেও খালি পেটে না। খালি পেটে কলা খেলে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য তা মোটেও কল্যাণকর হবে না। আপনারা সকাল বেলা কোনো ভারী খাবারের সাথে কলা খেতে পারেন। তাহলে উপকার পাবেন।
যেকোনো ফল খেলেই উপকার পাওয়া যায়, তবে ফল খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে খেতে হবে নইলে উপকারের চাইতে অপকারিই বেশি হবে। তেমনি, সকালবেলা শুধু কলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, তাই সকালের নাস্তায় শুধু কলা না খাওয়াই উচিত। স্মুদি হিসেবে কলা খাওয়া যেতে পারে। কলা ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজের ভালো উৎস।
তাছাড়াও কলায় প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সুগার থাকে, তাই খালি পেটে কলা খাওয়া এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস এর রোগীদের এটা এড়িয়ে চলা উত্তম। পুষ্টিবিদরা বলছেন, সকালে কলা খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই খালি পেটে নয়। ভারি কোন খাবার না খেয়ে প্রথমেই কলা খেলে অ্যাসিড হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এছাড়াও খালি পেটে কলা খেলে রক্তে ক্যালশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। কলা এমন একটি খাবার যা যেকোনো সময় খেয়ে খিদা মিটানো যায় ৷ তবে সকাল বেলা খালি পেটে কলা খেলে বা খাওয়ার অভ্যাস করলে তা আপনার স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে।
এক দিনে কয়টি কলা খাওয়া যাবে?
মাঝারি সাইজের কলা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে দুই থেকে তিনটি করে কলা খাওয়া যেতে পারে। তবে, শিশুদের ক্ষেত্রে দিনে একটি করে কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষজ্ঞদের কথায় মাঝারি সাইজের কলায় ১৮ মিলিগ্রামের মতো পটাসিয়াম রয়েছে।
সকাল বেলা কলা খাওয়ার উপকারিতা হল
আগেও বললাম, সকাল বেলা খালি পেটে কলা খেলে আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারেন। তবে কোন ভারী খাবারের সাথে কলা খেলে পাবেন উপকারিতা। চলুন কি কি উপকারিতা পাবেন তা জেনে নিন :-
- শক্তি প্রদান সহায়তা করে: সকালে কলা খেলে শরীরে শক্তির জোগান দেয়। এটিতে থাকা কার্বোহাইড্রেট শরীরের দ্রুত শক্তির উৎস।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে: কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- কষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে সহায়তা করে: কলার মধ্যে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। দেহের পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে প্রতিদিন একটি কলা খাওয়া উপকারী।
- শরীরে তাৎক্ষণিক এনার্জি বা শক্তি বাড়াতে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। শরীরে দুর্বলতা দেখা দিলে তাই এই ফল খাওয়া যায়। এতে শরীরে শক্তি পাওয়া যাবে।
- কলা একটি মিষ্টি ফল। তবে মিষ্টি হলেও সুগার বাড়ায় না এই ফল। এর জিআই ভ্যালু বেশ ভালো হওয়ায় ডায়াবেটিসের রোগীরাও এটি খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।
- এই ফলে পটাশিয়ামের পাশাপাশি রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম। আর এ দুই উপাদানই দেহের হাড়কে শক্ত করে।
- ছোট বাচ্চাদের নতুন নতুন শক্ত খাবার খাওয়ানোর সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফল হিসেবে কলা খাওয়ানো যেতে পারে।
- কলা পেট পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি হজমশক্তিও বাড়ায়। এতে থাকা ফাইবার এই কাজে সহায়তা করে থাকে।
এ ছাড়া কলায় আরও আছে ক্যারোটিনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
প্রতিদিন একটি করে কলা খাওয়ার উপকারিতা
কলায় পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ এবং ডায়েটারি ফাইবার সহ প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা এগুলোকে একটি পুষ্টির দিক থেকে ঘন ফল করে তোলে। কলা হল পটাশিয়ামের অন্যতম সেরা প্রাকৃতিক উৎস, যা সঠিক হৃদপিন্ড এবং পেশীর কার্যকারিতা বজায় রাখার পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাতে কলা খেলে কি হয়?
কলা দিনের যে কোনো সময় খাওয়া যাবে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু রাতে মানুষের শরীরের মেটাবলিজম সবচেয়ে কম থাকে। তাই আদর্শভাবে সকালে বা সন্ধ্যায় কলা খাওয়া উচিত, তবে রাতে কলা খাওয়া ঘুমের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
যেসব রোগীদের কলা খাওয়া উচিত নয়
কিডনির সমস্যাজনিত রোগী, মাইগ্রেন বা ল্যাটেক্স অ্যালার্জির রোগীদের কলা খাওয়া মোটেও উচিত নয়। কলায় উচ্চ মাত্রায় পটাসিয়াম থাকে, যা কিডনির কার্যকারিতা ব্যাহত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। কলার প্রাকৃতিক সুগার কিছু লোকের মধ্যে মাইগ্রেনকে ট্রিগার করে থাকে।
ওজন কমাতে যতটুকু কলা খাওয়া প্রয়োজন
ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের অংশ হিসেবে যেকেউ দিনে একটি পর্যন্ত কলা খেতে পারে। কিন্তু ২ থেকে ৩টি কলা খেলে ৩৫০ অতিরিক্ত ক্যালোরি যোগ হবে যা মানুষের ওজন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ওজন কমাতে বা ওজন বাড়াতে কলা খাওয়ার আগে বুঝতে হবে ফলটি মানুষকে কীভাবে সাহায্য করে থাকে।
কলার সাথে ঘুমের সম্পর্ক
যদি কেউ রাতে একটি কলার সাথে দুধ মিশিয়ে জুস করে পান করতে পারে। এটি একটি সন্তোষজনক এবং পুষ্টিকর ঘুমের জলখাবার হতে পারে যা ভালো ঘুম প্রচারে সাহায্য করে থাকে।
কলা খাওয়ার অপকারিতা
- পরিমাণের চেয়ে বেশি কলা খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। একটি মাঝারি সাইজের কলাতে ১০৫ ক্যালরির মতো শক্তি থাকে। তাই বেশি কলা খাওয়ার ফল ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে।
- যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা সমস্যা আছে তাদের দৈনিক একটা বেশি কলা খাওয়া উচিত নয়। কলায় টাইরামইন থাকে, যা মাইগ্রেনের কারণ সৃষ্টি করতে পারে।
- কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম থাকে। রক্তে পটাসিয়াম বেড়ে গেলে ক্লান্তি অনুভব হয়। হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তাই বেশি পরিমাণে কলা খাওয়া উচিত নয়।
- কলায় প্রচুর শর্করা থাকে। এটি দন্তক্ষয়ের কারণও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চকোলেটের থেকেও বেশি শর্করা রয়েছে কলায়। যদিও প্রাকৃতিক, তাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হলেও দাঁতের জন্য খারাপ।
আবার, অনেক বেশি কলা বা অন্যান্য উচ্চ-পটাসিয়ামযুক্ত খাবার খেলে শরীরে অতিরিক্ত পটাসিয়াম হয়ে থাকে , যাকে হাইপারক্যালেমিয়াও বলা যায়। এটি হার্টের সমস্যা সহ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। যদিও বেশিরভাগ মানুষ এটি ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় কলার সংখ্যা পেটে রাখতে সক্ষম হবে না, তবে এটি মনে রাখার মতো কিছু।
শীতকালে কলা খাওয়ার অপকারিতা
চিকিৎসকরা বলেন, কলা খেলে ঠান্ডা লাগে, এ ধারণা একেবারে সঠিক নয়। তবে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, যেমন- অ্যাজমা, নাকে পানি ঝরা, হাঁচি এসব সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কলা খেলে সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে কলা খাওয়ার পর ব্যক্তি যদি মনে করে, তার সমস্যা হচ্ছে, তবে এড়িয়ে যাওয়ায় ভালো হয়। কারণ শীতকালে এসব সমস্যা গুলো বেশি দেখা যায়।
কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক তবে খালি পেটে কলা খেলে তা বিপরীত মুখী হয়ে যাবে। অর্থাৎ আপনার দেহের ক্ষতিসাধন করবে। তাই আপনাদের সকাল বেলা খালি পেটে কলা খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন।
কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url