ইসলামিক দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যু কাকে বলে জেনে নিন

ইসলামিক দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যু কাকে বলে এটা অনেকের ই অজানা। আর তাদের জন্যই আমাদের এই পোস্টটি। প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। ইসলামিক দৃষ্টিতে প্রকৃত শহীদ তাদেরকেই বলা হয় যারা আল্লাহর রাস্তায় কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে শহীদ হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইসলামিক দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যু কাকে বলে? চলুন শুরু করা যাক।

ইসলামিক দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যুর মর্যাদা

প্রত্যেক মানুষকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এক আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে। তবে সবার মৃত্যু একরকম হবে না। কেউ পাবে শহীদি মর্যাদার মৃত্যু আবার কেউ পাবে স্বাভাবিক মৃত্যু। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জীবন দান করেছেন তার ইবাদত করার জন্য আর তার জন্যই আমাদের জীবন মরণ। 

এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ তাআলা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বলেছেন, ‘আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।’ (সুরা আনআম : ১৬২)

ইসলামিক দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যু এক মর্যাদা পূর্ণ মৃত্যু। তাইতো আল্লাহ তায়ালা শহীদদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করেছেন। তারা মৃত নয় রং তারা জীবিত, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক প্রাপ্ত। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৫৪)

তিনি আরও বলেন, আল্লাহ্‌র পথে যারা জীবন দিয়েছে, তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত, তোমার সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে রিজিক দেন। আল্লাহ্‌ তাদেরকে যে অনুগ্রহ করেছেন তাতে তারা খুশি। তোমাদের পরবর্তীদের থেকে যারা তাদের সাথে এখনো মিলিত হয়নি তাদের ব্যাপারে তারা অনেক উৎফুল্ল। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং কোন দুঃখ নেই। ( সূরা আল-ইমরান, আয়াত :১৬৯–১৭০)

আর এ মর্যাদাপূর্ণ শহীদি মৃত্যু আমাদের সকলেরই আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ও শহীদি মৃত্যু পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করতেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল অথচ জিহাদ করেনি এমনকি মনে জিহাদের তথা শহীদি মৃত্যুর চিন্তাও করেনি, সে যেন মুনাফেকির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল। (সহিহ মুসলিম)

শহীদি মৃত্যু পাওয়ার দোয়া

ইসলামিক দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যুর মর্যাদা পেতে এবং মুনাফিকের হাত থেকে বাঁচতে আমাদের সকলের শহীদি মৃত্যু পাওয়ার জন্য দোয়া করা উচিত। শহীদি মৃত্যু পাওয়ার দোয়াটি হলো-

'আল্লাহুম্মার যুকনি শাহাদাতান ফি সাবিলিক।' অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথে শাহাদাত নসীব করো।

ইসলামিক দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যু কাকে বলে?

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃত শহীদ তাদেরকেই বলা হয় যারা আল্লাহর রাস্তায় দ্বীন কায়েম করার জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রাণ হারিয়েছেন। এক বর্ণনায় রয়েছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 

যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার জন্য জীবন দিল সে শহীদ; যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষার জন্য নিহত হলো সে শহীদ, যে ব্যক্তি তার ধর্ম রক্ষার জন্য জীবন দিল সে শহীদ, যে ব্যক্তি তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন রক্ষার জন্য জীবন দিল সে শহীদ। (আবু দাউদ ও তিরমিজি, হাদিস: হাসান-সহিহ)

তবে ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যু দুই ধরনের। এক নাম্বার হলো প্রকৃত শহীদ। যারা আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিজের প্রাণ হারিয়েছেন তাদেরকে প্রকৃত শহীদ বলা হয়। প্রকৃত শহীদের মর্যাদা অনেক বেশি। তাদের মর্যাদা এত বেশি যে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে জীবিত ঘোষণা করেছেন। 

এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৫৪)

অন্য এক আয়াতে এসেছে, তারা রবের পক্ষ থেকে রিজিকপ্রাপ্ত। (সুরা ইমরান: ১৬৯)

দুই নাম্বার হলো হুকুমী শহীদ। যারা বিভিন্ন মহামারিতে, পীড়ায়, আঘাতে, আক্রমণ ইত্যাদিতে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের হুকুমী শহীদ বলা হয়। এদের কেউ শহীদের মর্যাদা দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। এরাও শহীদের সওয়াব প্রাপ্ত হবে। এদের কেউ শহীদি মৃত্যুর মর্যাদা দেওয়ার কারণ হলো এদের শরীরের আঘাত কিছুটা শহীদদের মতোই এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-

ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, শহীদ ও বিছানায় মৃত্যুবরণকারী আল্লাহ তাআলার সঙ্গে মহামারিতে মৃত্যুবরণকারীর ব্যাপারে বিতর্ক করে। শহীদ বলে, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের মতোই মৃত্যুবরণ করেছে, সুতরাং তাদের আমাদের মতো মর্যাদা দান করুন। আর বিছানায় মৃত্যুবরণকারীরা বলবে আমাদের ভাইয়েরা আমাদের মতো মৃত্যুবরণ করেছে। 

সুতরাং তাদের আমাদের মতো সম্মান দেওয়া হোক। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, মহামারিতে মৃত্যুবরণকারীদের আঘাতের দিকে তাকাও। যদি শহীদদের আঘাতের মতো তাদের আঘাত থাকে, তাহলে তারা শহীদের মর্যাদা পাবে। 

অতঃপর দেখা যাবে যে মহামারিতে মৃত্যুবরণকারীদের আঘাত শহীদদের আঘাতের মতো। ফলে তাদের শহীদের মর্যাদা দেওয়া হবে (মুসনাদ আহমদ, নাসারী, মিশকাত : হাদিস : ১৫৯৬)।

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া ছাড়া শহীদ সাতজন। যেমন—১. প্লেগে মৃত্যুবরণকারী, ২. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ৩. আঘাতে মৃত্যুবরণকারী, ৪. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, ৫. আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী, ৬. কূপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী ও ৭. সন্তান প্রসব যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণকারী নারী। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। (ইবনে মাজাহ)

কোন ব্যক্তি যে কোন ধরনের দুর্যোগ মহামারিতে অধৈর্য না হয়ে মনোবল না হারিয়ে, ধৈর্য ধারণ করলে এবং ধৈর্যশীল অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে সে শহীদের সমান পুণ্য লাভ করবে। 

এ সম্পর্কে হাদিসে রয়েছে, জাবের (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মহামারি থেকে দূরে থাকা, ভয় করা, পালানোর চেষ্টা করা যুদ্ধের ময়দান থেকে পালানোর মতো। অর্থাৎ কবিরা গুনাহ। যে ব্যক্তি মহামারিতে মৃত্যুবরণ করল অথবা ধৈর্যধারণ করল সে শহীদের সমান পুণ্য লাভ করবে। (মুসনাদ আহমদ, মিশকাত : ১৫৯৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার জন্য জীবন দিল সে শহীদ; যে ব্যক্তি তার জীবন রক্ষার জন্য নিহত হলো সে শহীদ, যে ব্যক্তি তার ধর্ম রক্ষার জন্য জীবন দিল সে শহীদ, যে ব্যক্তি তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন রক্ষার জন্য জীবন দিল সে শহীদ। ' (আবু দাউদ ও তিরমিজি, হাদিস: হাসান-সহিহ)

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শহীদ পাঁচ প্রকার। যেমন—১. প্লেগ বা মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী, ২. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, ৩. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ৪. কুপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী ও ৫. আল্লাহর রাস্তায় শহীদ (বুখারি ও মুসলিম)

ইসলামিক দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যুর মর্যাদা পাওয়ার শর্তাবলী

  • মুসলমান হওয়া।
  • প্রাপ্ত বয়স্ক ও বোধসম্পন্ন হওয়া।
  • গোসল ফরজ হয় এমন নাপাকি থেকে পবিত্র হওয়া।
  • বে-কসুর নিহত হওয়া।
  • আহত হওয়ার পর কোন রূপ চিকিৎসা, খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমানো ইত্যাদির সুযোগ না পাওয়া।
  • এক ওয়াক্ত নামাযের সময় অতিবাহিত না হওয়া।

প্রকৃত শহীদ ও হুকুমে শহীদের মধ্যে পার্থক্য

ইসলামের দৃষ্টিতে প্রকৃত শহীদ ও হুকুমী শহীদের মধ্যে পার্থক্য হলো প্রকৃত শহীদকে গোসল ছাড়ায় কবর দেওয়া হয় কিন্তু হুকুমী শহীদদের গোসল ও জানাজা করার পর কবর দেওয়া হয়।

ইসলামিক দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যুর পূর্ব শর্ত

ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যুর পূর্ব শর্ত হচ্ছে মুমিন হতে হবে। ইসলামে ঈমান ছড়া শহীদি মর্যাদা পাওয়া সম্ভব নয়। ইসলামে দৃষ্টিতে শহীদি মৃত্যু সবচেয়ে বেশি মর্যাদার। তাই শহীদি মৃত্যুকে অন্যান্য মৃত্যুর সমপরিমাণ মর্যাদার ভাবা থেকে নিষেধ করেছেন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url