রুপচর্চায় তেজপাতার গুনা-গুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
রুপচর্চায় তেজপাতার গুনা-গুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
___________________________________________________________________________________
রুপচর্চায় তেজপাতার গুনা-গুন সম্পর্কে জানলে আপনারা আবাক হবেন। রুপচর্চার জন্য বাজারে যেসব দামি দামি পণ্য পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করার চেয়ে ঘরোয়া উপায়ে, কম খরচে ঘরোয়া প্রসাধনী ব্যবহার করে রুপচর্চা করা বেশি নিরাপদ। তাই আমরা আজকে হাজির হয়েছি রুপচর্চায় তেজপাতার গুনা-গুন নিয়ে। চলুন এবার জানা যাক রুপচর্চায় তেজপাতার গুনা-গুন সম্পর্কে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তেজপাতায় থাকে ভিটামিন, মিনারেল এবং বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ উপাদান যা ব্যাকটেরিয়া নিধন করা, জ্বালাপোড়া কমানোসহ আরও অনেক উপকার করে।
তেজপাতার পরিচয়
তেজপাতা এক প্রকারের উদ্ভিদ, যার পাতা মসলা হিসাবে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নামঃ Cinnamomum tamala। এই গাছটি মূলত ভারত,নেপাল,ভুটান ও চীনের পাওয়া যায়। গাছটি ২০ (৬৬ ফু) মিটারের বেশি লম্বা হয়ে থাকে।
তেজপাতার পুষ্টি গুণ
তেজপাতায় রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, খাদ্য শক্তি, ফাইবার, ভিটামিন সি, ফ্যাট ও প্রোটিন ইত্যাদি নানা ধরনের পুষ্টিগুণ। এই পাতায় রয়েছে ভরপুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এই পাতা। এছাড়াও তেজপাতায় আছে ভিটামিন ‘ই’ ও ফলিক অ্যাসিড।
রূপচর্চায় তেজপাতার ব্যবহার
তরুণ্য ত্বক ধরে রাখে
রূপচর্চায় তেজপাতার গুনা গুণ অনেক বেশি উপকারী। তেজপাতার উদ্ভিজ্জ উপাদান ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টির জন্য দায়ি ‘ফ্রি র্যা ডিকেল’ নিষ্ক্রিয় করে। ঘরে সহজেই ‘অ্যান্টি-এইজিং সলিউশন’ বানাতে চাইলে তেজপাতা ভেজানো ফুটন্ত পানির বাষ্প মুখে লাগানো যায়।
শরীরের দুর্গন্ধ কমায়
তেজপাতা থাকতে সুগন্ধিযুক্ত গোসলের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করার প্রয়োজন নেই। কেননা এক টুকরা পরিষ্কার কাপড়ে গুঁড়া তেজপাতা কুসুম গরম পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে, এই পানি দিয়ে গোসল করলে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়।
ত্বক ও দাঁত উজ্জ্বল করে
রুপচর্চায় তেজপাতার গুনাগুণ সম্পর্কে বলতে গেলে দেখা যায় তেজপাতা দাঁতের জন্যও উপকারী ভূমিকা রাখে। তেজপাতা সিদ্ধ করুন। ঠাণ্ডা হলে তা দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বক ফর্সা করার পাশাপাশি এই মিশ্রণ ব্রণ শুকাতেও সহায়ক। সপ্তাহে কয়েকবার দাঁতে তেজপাতা ঘষলে দাঁত উজ্জ্বল থাকে।
খুশকি এবং চুলপড়া কমায়
তেজপাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে চুল ধুলে খুশকি কমে এছাড়াও রূপচর্চায় তেজপাতার গুনাগুন সম্পর্কে বলতে গেলে দেখা যায় তেজপাতা চুলপড়া বন্ধ করতে উপকারী। চুল কমে যাওয়ার স্থানগুলোতে তেজপাতার এসেনসিয়াল অয়েল মাখা উপকারী।
চুল পড়া বন্ধ করতে
রূপচর্চায় তেজপাতার গুনা গুণ বলতে গেলে দেখা যায় তেজপাতা ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্যও অনেক উপকারী। তেজপাতা থেকে পাওয়া নির্যাস মাথার তালুর অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং চুলের গ্রন্থিকোষ গুলোতে বাড়তি শক্তির সংযোগ দেয়।
ফলাফল হিসেবে, চুলের বৃদ্ধি আরও দ্রুততর হয়। তেজপাতা পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে তা দিয়ে চুল ধুলে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়। তবে তেজপাতার পানি ব্যবহারের কিছুক্ষণ পর অবশ্যই পরিষ্কার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। চুল পড়া বন্ধ করতে প্রতিদিন এই তেজপাতার নির্যাস মাথার তালুতে ব্যবহার করুন।
মাথার খুশকি দূর করতে
অনেক সময় বিভিন্ন কারণে আমাদের মাথায় খুশকির আক্রমণ হয়। খুশকি হবার অন্যতম কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস। খুশকির ফলে চুলের স্বাস্থ্যহানি হয়ে থাকে। একই সাথে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে যায়।
তেজপাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। তিন থেকে চারটি তেজপাতা ভালো করে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এরপর পরিমাণ মতো নারকেল তেলের সঙ্গে তপজপাতার গুড়ো মিশিয়ে হালকা গরম করে মাথার তালুতে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন।
এরপর একটি তোয়ালে গরম পানিতে ডুবিয়ে পানি নিংড়ে নিয়ে তা চুলে ভালো করে পেঁচিয়ে নিন। এ অবস্থায় ৩০মিনিট রেখে তারপর মাথা ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত (সপ্তাহে একবার) করলে মাথা খুশকিমুক্ত থাকবে।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে
রুক্ষ চুলে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে তেজপাতার বিকল্প নেই। তেজপাতাকে কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে আধা লিটার পানিতে চার থেকে পাঁচটি তেজপাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে।
এরপর একটি পাত্রে ঢেলে ঠান্ডা করে নিতে হবে এবং তেজপাতাগুলো ছেকে আলাদা করে ফেলতে হবে। চুলে শ্যাম্পু করার পর এই পানি চুলে মাখিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে তাহলেই আপনার চুল প্রাকৃতিক ভাবেই কন্ডিশনার হয়ে যাবে। চুলের রুক্ষতা দূর হবে এবং চুল হবে ঝলমলে ও মসৃণ।
মাথার চুলকানি কমাতে
অনেক সময় মাথার তালুতে বিভিন্ন রকম ফাঙ্গাল বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দেখা দেয়। এর ফলে মাথার ত্বকে চুলকানি, খুশকি বা র্যাশের মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যা দূর করতে নিয়মিত তেজপাতার পানির ব্যবহার উপকারী।
আধা লিটার পানিতে তেজপাতা দিয়ে তিন থেকে চার মিনিট ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এরপর মাথার তালুতে প্রয়োগ করতে হবে। তেজপাতার এ পানি নিয়মিত মাথার তালুতে ব্যবহার করলে ফাঙ্গাল বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন দূর হয়। তবে এই সমস্যা গুরুতরো হলে দ্রুত কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত
সতর্কতা
রূপচর্চায় তেজপাতার গুনা গুণ থাকার পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। যেমন তেজপাতা গর্ভবতী মা ও সদ্য মায়েদের প্রস্রাবের ইনফেকশন ঘটাতে পারে। তাই তেজপাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে বা ব্যাবহারের ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন।
কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url