গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ কত থাকা উচিত জেনে রাখুন

গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ কত থাকা উচিত জেনে রাখুন|

_________________________________________

গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ কত থাকা উচিত তা প্রতিটি গর্ভবতী মহিলার জানা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ ৫ সেমি থেকে ২৫ সেমি থাকা গর্ভবতী মহিলা ও তার সন্তানের জন্য জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যায় গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ ৫ সেমি থেকে ২৫ সেমি এর কম বেশি হলে কি সব অসুবিধা হতে পারে-


গর্ভাবস্থায় শিশু অ্যামিওনেটিক স্যাক এর মধ্যে বেড়ে ওঠে। গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ স্বাভাবিক থাকা শিশুর সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানিকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স বলা হয়। গর্ভের পানি শিশুকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে, শিশুর নড়াচড়ায় সাহায্য করে এবং শিশুকে পুষ্টি দেয় । 

গর্ভের পানি শিশুকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সুরক্ষিত রাখে। শিশুর জন্য সহনশীল একটা পরিবেশ তৈরি করে। তাই গর্ভাবস্থায় পানির পরিমাণ ঠিক থাকা অত্যন্ত জরুরি। গর্ভাবস্থায় পানির পরিমাণ ঠিক থাকলে শিশু সুস্থ ভাবে জন্মগ্রহণ করতে পারবে। 

শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ কম থাকার জন্য কোন রকমের সমস্যা দেখা দিবে না। অন্যথায় যদি গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ কম থাকে তাহলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এতে অনেক সময় মা ও শিশুর প্রাণের ঝুঁকি থাকে।

গর্ভাবস্থায় শিশু এই পানির মধ্যেই মাল-মূত্র ত্যাগ করে আবার এই পানি পান করে। তাই গর্ভের পানি অর্থাৎ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স পরীক্ষা করলেই বোঝা যায় শিশুর কোন সমস্যা আছে কিনা? গর্ভবতীর গর্ভের মায়ের ফুল থেকে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স নিঃসৃত হয়। 

অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স এক ধরনের পিচ্ছিল পদার্থ। এটি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শিশুর হাড়, পেশি ও হাত-পা গঠনে সাহায্য করে। এটি বাচ্চা প্রসবণের সময় জরায়ুতে চাপ সৃষ্টি করে এবং প্রসবণ প্রক্রিয়াকে সহজ করে। 

অর্থাৎ অ্যামিওনেটিক ফ্লুইড ইনডেক্স এর ওয়াটার ব্রেক হলে শিশু বাইরে বেরিয়ে আসে। গর্ভাবস্থার সময় বৃদ্ধির সাথে সাথে অ্যামিওনপটিক ফ্লুইড ইনডেক্স এর রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ এর পরিবর্তন ঘটে থাকে। 

প্রথম কয়েক মাস ৯৮% থাকে পানি ও মিনারেল আর ২% থাকে পুষ্টি উপাদান, হরমোন ও আন্টিবডি। পুষ্টি উপাদানগুলো হলো প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ইত্যাদি। তবে ২০ সপ্তাহের পর অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্সের মধ্যে প্রধানত শিশুর মূত্র থাকে।

গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ কত থাকা উচিত?

গর্ভাবস্থায় গর্ভের স্বাভাবিক পানির পরিমাণ অর্থাৎ স্বাভাবিক অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স এর পরিমাণ ৫ সেমি থেকে ২৫ সেমি। এ পরিমাণের কম বা বেশি হলে শিশুর নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স এর পরিমাণ গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ ৫ সেমি থেকে ২৫ সেমি এর মধ্যে থাকলে গর্ভের শিশু পানির মধ্যে সুরক্ষিত থাকে।

গর্ভধারণের প্রথম দশ সপ্তাহে ৩০ মিলি, ২০ সপ্তাহে ৩০০ মিলি এবং ৩০ সপ্তাহে ৬০০ মিলি অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স থাকা স্বাভাবিক। গর্ভধারণের পর ৩৮ সপ্তাহ পর্যন্ত অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স এর পরিমাণ বাড়তে থাকে। 

এর পরবর্তী সময়ে গর্ভের পানি অর্থাৎ অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স এর পরিমাণ কমতে থাকে। গর্ভধারণের ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতির মাধ্যমে বা সাহায্যে অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স এর পরিমাণ পরীক্ষা করা যায়। 

যাবে ২৪ সপ্তাহের পরের সময় এএফআই এর সাহায্যে অ্যামনিওটিক ইনডেক্স অর্থাৎ গর্ভের পানির পরিমান পরীক্ষা করা হয়।

গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ বেড়ে গেলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হলে একে পলিহাইড্রামনিওস বলা হয়। গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানি পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যাওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট ও পেট ব্যথা বা পেট শক্ত হয়ে আসা (কনট্রাকশন) লক্ষণ গুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

চিকিৎসক প্রয়োজনে মুখে খাওয়ার ‘এন্ডোমিথাসিন’ নামের ঔষধ দিতে পারেন। এটি ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত ব্যবহার হয়, যেটি জরায়ু সংকোচন ও অ্যামনিওটিক তরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। তবে এটি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ কমে গেলে করণীয়

অ্যামনিওটিক ফ্লুইড ইনডেক্স এর পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম হলে একে অলিগোহাইড্রামনিওস বলা হয়।সাধারণত গর্ভধারণের ১২ দিনের মধ্যেই অ্যামিনিওটিক ফ্লুইড উৎপন্ন হওয়া শুরু হয়। এর পরবর্তীতে বাড়তে বাড়তে ৩৪-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে এর পরিমাণ হয় প্রায় এক লিটার। 

৩৬ সপ্তাহ থেকে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে পর্যন্ত গর্ভের পানির পরিমাণ কমতে থাকে। অ্যামিনিওটিক ফ্লুইড কমে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং এটা কতটা কমে গেছে আর কোন ট্রাইমেস্টারে আছে তার ওপর চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে। 

যদি গর্ভধারণের শেষ পর্যায়ে থাকে, তাহলে সাধারণত ডেলিভারি করে দেওয়া হয়। আর যদি মায়ের প্রি একলামশিয়া এবং বাচ্চার গ্রোথ কম থাকে সেক্ষেত্রে আগে আগে অনেক সময় ডেলিভারি করতে হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে এ সমস্যা নিরূপণ করা সম্ভব।

গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ কম বেশি হওয়ার কারণ

বিভিন্ন কারণে গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ কম বেশি হতে পারে। যেমন: প্লাসেন্টা স্বাভাবিকভাবে কাজ না করলে।

মায়ের শরীরে স্থূলতা, ডিহাইড্রেশন, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি শারীরিক জটিলতা থাকলে। শিশুর কিডনিতে কোন সমস্যা হলে এবং মুত্র ত্যাগে বাধাপ্রাপ্ত হলে। অ্যামনিওটিক স্যাক এর পর্দা ফেটে গেলে।

গর্ভাবস্থায় কতটুকু পানি পান করা উচিত?

আমাদের শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশই হলো পানি। পানি শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিনকে ধুয়ে বের করতে সাহায্য করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মস্তিষ্ককে সচল রাখে।একজন সুস্থ-স্বাভাবিক গর্ভবতী নারীর প্রতিদিন গড়ে ২–৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। 

গ্লাসের হিসাবে সারাদিনে মোট ৮–১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে। তাহলেই গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ ঠিক থাকবে। মা ও শিশু দুজনেই থাকবে সুস্থ। গর্ভাবস্থায় গর্ভের পানির পরিমাণ কত থাকা উচিত আপনারা নিশ্চয় জেনে গেছেন। 

গর্ভাবস্থায় আমাদের সকলের উচিত গর্ভবতীর প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া। গর্ভাবস্থায় পানির পরিমাণ ঠিকঠাক আছে কিনা সেটি লক্ষ্য রাখা। তার শরীরের দিকে লক্ষ্য করা এবং নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন ধারণ করা।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url