বেগুনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
বেগুন বাংলাদেশের একটি পরিচিত সবজি হলেও অনেকেই বেগুনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানে না। আজকে আমরা আলোচনা করবো বেগুনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। অতএব বেগুনের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন।
ভূমিকা
বেগুন বেশ পরিচিত একটি সবজি হলেও আমরা অনেকেই সবজির উপকারিতা সম্পর্কে সঠিক জানি না। বেগুনের ভাজি, বিভিন্ন সবজির সাথে যুক্ত করে ও ভর্তা করে খাওয়া যায়। অনেক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় হার্টের ধমনি ভালো থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কম করে। পটাসিয়াম এবং অ্যান্থোসায়ানিন থাকার ফলে বেগুন খেলে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বেগুনে কার্বোহাইড্রেট কম থাকে এবং ফাইবার বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিকস রোগীরা খুব সহজে বেগুন খেতে পারে। বেগুন খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে। বেগুনে রয়েছে অনেক পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে ফেলে। কোলন ক্যানসারের আক্রমণ রোধে সাহায্য করে বেগুন।
বেগুনে পাওয়া যায় ভিটামিন বি-সিক্স, ফ্ল্যাভোনয়েডস যা হার্টের রোগ প্রতিরোধ করে। প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় হার্টের ধমনি ভালো রাখে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কম করে। সুগন্ধী গোবিন্দভোগ চালের খিচুড়িই হোক কিংবা ঘরে ভাজা মুড়ি। সব কিছুর সাথেই যার নাম এক সাথে করা যায় তা হল বেগুন।
এক হাত লম্বা বেগুনিই হোক, বা গোল গোল করে কাটা বেগুন ভাজা। নাম শুনলেই মুখে পানি চলে আসে। বেগুনের মধ্যে কি কি উপকার পাওয়া যায় চলুন জেনে নেওয়া যাক এবার:
বেগুনের উপকারিতা
- বেগুনে আছে ভীষণ পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে ফেলে। কোলন ক্যানসারের আক্রমণ রোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে বেগুন।
- বেগুনে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, যা খুদা কম করতে সাহায্য করে। তাই যাঁরা খুদামন্দা রোগে ভোগে তাঁরা বেগুন খেলে ওজন কম হবে।
- বেগুনে পাওয়া যায় ভিটামিন বি-সিক্স, ফ্ল্যাভোনয়েডস যা হার্টের রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকায় হার্টের ধমনি রাখে ভালো এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম করতে সহায়তা করে।
- পটাসিয়াম এবং অ্যান্থোসায়ানিন থাকায় বেগুন খেলে ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- বেগুনে কার্বোহাইড্রেট পরিমাণে কম থাকে এবং ফাইবার বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিকস রোগীরা সহজেই বেগুন খেতে পারে। বেগুন খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে।
- বেগুনে আছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের মতো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টোরলের মাত্রা কম করতে সহায়তা করে।
- কেবল হার্টই নয় মস্তিষ্কও ভালো রাখতে সহায়তা করে বেগুন। বেগুনে থাকা ফাইটোনিউট্রিন্টস মস্তিষ্কের কোষ সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে।
- প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জল একত্রে থাকায় বেগুন খেলে ত্বক সতেজ এবং উজ্জ্বল থাকে। বলিরেখা রোধ করে দেয় বেগুন।
- প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকায় ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে বেগুন।
- ত্বকের ক্যানসারের আশঙ্কা কম করতে সহায়তা করে বেগুন।
- ত্বকের শুষ্কতা কম করে তুলতুলে ভাব আনতে সহায়তা করে বেগুন।
- চুলের উজ্জ্বল ভাব এবং স্লিকি রাখতে সহায়তা করে বেগুন।
আরও পড়ুনঃ লেবুর রস খাওয়ার উপকারিতা
বেগুনের যেসব পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে
বেগুনে ফাইবারের পাশাপাশি রয়েছে ভিটামিন। যেমন:- ভিটামিন বি ১, বি ৬, বি ৩, সি ও কে। তাছাড়াও বেগুনে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েড যা হৃৎপিণ্ডের জন্য বেশ উপকারি। এছাড়াও বেগুনে খনিজ উদাপান রয়েছে।
বেগুনে রয়েছে রিবোফ্ল্যাভিন নামক উপাদান যা মুখ ও ঠোঁটের কোণে, জিহ্বার ঘা এর মতো সমস্যা গুলি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও বেগুনে উচ্চমাত্রার আশ-জাতীয় খাদ্য রয়েছে যা বদ হজম দূর করতে সাহায্য করে।
১০০ গ্রাম বেগুনে রয়েছে ০.৮ গ্রাম খনিজ, ১.৩ গ্রাম আঁশ, ১.৮ গ্রাম আমিষ, ২.২ গ্রাম শর্করা, ২৮ মি.লি.গ্রাম ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। এছাড়াও বেগুনে এক ধরনের এসিড থাকে যা শরীরের জীবাণু, টিউমারের জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে আপনাকে সুস্থ রাখবে।
বেগুন কখন খাওয়া যাবে না?
যদি বেগুন তার সতেজতা হারিয়ে ফেলে এবং কুঁচকানো হয়ে যায়, তবে এটি তার গুনাগুন হারিয়ে ফেলেছে এবং তা রান্না করা ভালো নয়। যদি দেখা যায় বেগুনের চারপাশে বাদামী দাগের দেখা যাচ্ছে তাহলে সেটা আর খওয়ার উপযোগী নয়। এই দাগগুলো হলো আরেকটি চিহ্ন যা বেগুন নষ্ট হওয়ার পথে।
বেগুন খেলে কি পেট খারাপ হয়?
কিছু মানুষের জন্য, বেগুন খাওয়ার ফলে অ্যালার্জির সমস্যা যেমন চুলকানি, ফোলাভাব এবং ত্বকের লালভাব হয়ে থাকে। এটি গুরুতর ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব, বমি বা ডায়রিয়ার কারণও হতে পারে। তাছাড়াও বেগুনে সোলানিন থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে বিষক্রিয়া হতে পারে।
বেগুন খাওয়া কি উপকারী?
বেগুনে ভিটামিন এ এবং সি এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা মানুষের দেহের কোষকে ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে । এটি পলিফেনল নামক প্রাকৃতিক উদ্ভিদ রাসায়নিকেও বেশি, যা ডায়াবেটিস থাকলে কোষগুলিকে সুগার প্রক্রিয়াকরণে আরও ভাল কাজ করতে সাহায্য করতে পারে।
বেগুন কি মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর?
না। বেগুন হল ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা স্মৃতি শক্তি বাড়াতে এবং সামগ্রিক মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে ভূমিকা রাখে। এই ফাইটোনিউট্রিয়েন্টগুলো মানুষের শরীর থেকে রোগ সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেলগুলিকে দূর করে এবং মানুষের মস্তিষ্ককে ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।
আরও পড়ুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
বেগুন কাদের খাওয়া উচিত নয়?
- বেগুন খাওয়ার ফলে কিছু কিছু মানুষের শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা যায়, যেমন : চুলকানি, গলা জ্বালা, ত্বক লাল হওয়া, বমি বমি ভাব ইত্যাদির মতো অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- হজম সংক্রান্ত সমস্যা: যারা নিয়মিত হজমের সমস্যা এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় থাকে তাদের বেগুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত কারণ এটি বদহজমের কারণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়ার উপকারিতা
- বেগুন খেতে অনেকেই ভালোবাসে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এই সবজিটি কি শরীরের জন্য নিরাপদ? বিশেষজ্ঞরা বলে থাকে, মাঝে মাঝে খাওয়া যেতে পারে। তবে খুব বেশি খাওয়া গর্ভবতী মহিলা ও ভ্রুণের ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ায়।
- বেগুন ভ্রুণের জন্মগত ত্রুটি কম করতে সহায়তা করে ; ভ্রূণের বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। জেসটেশনাল ডায়াবেটিস রোধ করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে থাকে।
তবে গর্ভাবস্থায় বেগুন খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। এটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। গর্ভাবস্থায় বেশি বেগুন খাওয়া যাবে কি না এই বিষয়ে চিকিৎসকের মতামত নিতে হবে।
- অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, বেগুনের মধ্যে ফাইটো-হরমোন থাকার ফলে এটি বেশি খাওয়ার কারণে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ছাড়া অপরিপক্ব শিশুও জন্ম নিতে পারে এর কারণে।
- বেগুন এসিডিটি বাড়ায়। গর্ভাবস্থায় এসিডিটির সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকে। তাই ভেবে চিন্তে খাওয়া উচিত।
- বেগুন ভালোভাবে রান্না করা না হলে হজমে ঝামেলা হতে পারে। এ ছাড়া অনেকের বেগুন খাওয়ার ফলে অ্যালার্জি হয়। এই অ্যালার্জি গর্ভবতী মাকেও অসুস্থ করে তুলতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞের মতামত, গর্ভাবস্থায় বেগুন কম খাওয়া উচিত। আর খুব বেশি খেতে ইচ্ছে হলে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
বেগুন কত প্রকার?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে সাধারণ বেগুনের জাত হল গ্লোব বেগুন : এই বিশাল জাতটির চকচকে, গভীর-বেগুনি ত্বক এবং স্পঞ্জি ফল রয়েছে। অন্যান্য সাধারণভাবে চাষ করা জাতগুলির মধ্যে রয়েছে সাদা বেগুন (বাবা গণৌশের মতো মধ্যপ্রাচ্যের খাবারে ব্যবহৃত), থাই বেগুন, ব্ল্যাক বিউটিস, ইচিবান, রোজা বিয়ানকা এবং লিটল ফিঙ্গারস।
বেগুনের জাত কয়টি?
উন্নত জাতঃ বারি বেগুন-১, বারি বেগুন-২, বারি বেগুন-৪, বারি বেগুন-৫, বারি বেগুন-৬, বারি বেগুন-৭ , বারি বেগুন-৮, বারি বেগুন-৯, বারি বেগুন-১০, বারি হাইব্রিড বেগুন-৩, বারি হাইব্রিড বেগুন-৪, বারি বিটি বেগুন-১, বারি বিটি বেগুন-২, বারি বিটি বেগুন-৩ , বারি বিটি বেগুন-৪।
দেশি বেগুনের জাতের মধ্যে রয়েছে
ইসলামপুরী: এটি শীতকালীন বেগুন। এ জাতের গাছে ও ফলে কাঁটা নেই। গাছের উচ্চতা মাঝারি ধরনের ও শাখা প্রশাখাযুক্ত। পাতার রং বেগুনি সবুজ। ফল গোলাকার, কচি অবস্থায় গাঢ় বেগুনি, পরিপক্ব অবস্থায় সবুজাভ বেগুনি।
তবে কোন কোন সময় ত্বকে সবুজ বর্ণের ছোপ থাকতে পারে। ফলের শাঁস মোলায়েম ও সুস্বাদু, বীজের সংখ্যা কম। প্রতিটি ফলের ওজন ২০০-৪০০ গ্রাম। গড়ন ফলন ৩৬ টন/হেক্টর। গাছ প্রতি গড় ফল ধরার সংখ্যা ১৩টি।
খটখটিয়া: শীতকালে চাষ হয়। শীতকালীন বেগুন। গাছ উচ্চতায় ও বিস্তৃতিতে মাঝারি, পাতা মাঝারি চওড়া। ফল দন্ডাকার ও কালচে বেগুনি। ফল লম্বায় ১৬-২০ সেমি. ও বেড়ে ৩.৫০-৫.৫০ সেমি.। প্রতিটি ফলের ওজন ১০০-১২৫ গ্রাম। গড় ফলন ২৯ টন/হেক্টর।
লাফফা: শীতকালীন বেগুন রং বেগুনি এবং গোলাকার। শীতকালীন জাত ফলের রং বেগুনি এবং গোলাকার। ফলের উপরিভাগ সামান্য খাদালো। ময়মনসিংহের গফরগাঁও এলাকার একটি জনপ্রিয় জাত।
ঈশ্বরদি ১: শীতকালীন বেগুন। তবে অন্যান্য সময়ও চাষ করলে কিছু ফলন পাওয়া যায়। গাছ কাঁটাযুক্ত, পাতা খাটো ও চওড়া ধরনের। ফল বড়, গোলাকার এবং রং সবুজ ও তার উপর হালকা ডোরা। ফলে বীজ খুব ও খুব সুস্বাদু নয়। এ জাতে পোকা মাকড়ের উপদ্রব খুব কম। প্রতিটি ফলের ওজন ১৫০-২৫০ গ্রাম।
উত্তরা বা বারি বেগুন ১: শীতকাল এ বেগুন চাষের উপযুক্ত সময়। গাছের পাতা ও কাণ্ড হালকা বেগুনি এবং পাতার শিরাগুলো গাঢ় বেগুনি হয়। পাতার নীচের দিকে সামান্য নরম কাটা দেখা যায়। গাছ খাটো আকৃতির ও ছড়ানো হয়ে থাকে।
প্রতি গুচ্ছে ৫-৬টি ফল ধরে। ফলের রং বেগুনি এবং ১৮-২০ সেমি. লম্বা। ফলের ত্বক খুব পাতলা, শাঁস মোলায়েম এবং খেতে সুস্বাদু। হেক্টর প্রতি গড়ে ৬৪ টন ফলন পাওয়া যায়। এ জাতটি ‘ঢলে পড়া’ নামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। গাছ প্রতি গড়ে ১৯৫টি ফল ধরে।
তাল বেগুন বা তল্লা বেগুন: গাছ উচ্চ, বিস্তৃতিতে কম, শাখা ও পাতার সংখ্যা কম। পাতা বড় ও চওড়া। ফল গোলাকার ও চ্যাপ্টা আকৃতি। ফলের বেড় দৈর্ঘ্য অপেক্ষা বেশী। ফলের শাঁস মোলায়েম ও সুস্বাদু, বীজের সংখ্যা মধ্যম। প্রতিটি ফলের ওজন ২০০-৪০০ গ্রাম।
নয়ন কাজল: শীতকালীন বেগুন। গাছের উচ্চতা মাঝারি ধরনের ও শাখা প্রশাখা যুক্ত। ফল বেলুন আকৃতি, লম্বা ২০ সেমি. পর্যন্ত হতে পারে, ফলের রং হালকা সবুজ, বোঁটার কাছে হালকা বেগুনি। চোখের কাজলের মত আঁচড় আছে। সম্ভবত এ কারণে জাতটির নাম নয়ন কাজল।
একটি অধিক ফলনশীল জাত, ফলে বীজের পরিমাণ কম, শাঁস মোলায়েম এবং খেতে সুস্বাদু। প্রতি ফলের ওজন ৩০০-৬০০ গ্রাম।
কেজি বেগুন: শীতকালীন বেগুন। গাছের উচ্চতা মাঝারি, পাতা চওড়া, ঢেউ খেলানো ফল বোঁটার দিক থেকে ক্রমান্বয়ে মোটা, অনেকটা লাউয়ের মত দেখতে হয়। ফলের রং হালকা সবুজ এবং গায়ে লম্বালম্বি হালকা আঁচড় আছে। বীজ অত্যন্ত কম, শাঁসালো, নরম এবং অত্যন্ত সুস্বাদু।
বেগুন ভাজা, বেগুনি, চপ ইত্যাদি তৈরিতে এর জুড়ি নেই। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে প্রতিটি ফলের ওজন গড়ে ১ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়। এ কারণে এ জাতটি এখন খুব জনপ্রিয় নয়।
ঝুমকো: গাছ ছোট হয়, খুবই ফলনশীল বেগুন। ফল খাটো, সরু ও ৮-১০ সেমি. লম্বা। বেগুন গাছের গুচ্ছভাবে উৎপন্ন হয়। ফলের ত্বক খুব পাতলা ও শাঁস মোলায়েম। ডগা ও ফলের মাজরা পোকার আক্রমণ কম হয়।
মুক্তকেশী: এটি বারমাসী বেগুন, আগস্ট (মধ্য শ্রাবণ-মধ্য ভাদ্র) মাস থেকে বেগুন বাজারে বিক্রির জন্য উঠানো হয়। গাছ মাঝারি আকৃতির, ফল উপবৃত্তাকার ও চকচকে বেগুনি। প্রতিটি বেগুনের ওজন ১৫০-২৫০ গ্রাম।
আরও পড়ুনঃ কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
কোন জাতের বেগুন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী
সাধারনত বেগুন চাষে ফল ডগা ছিদ্রকারি পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করতে মৌসুমে ৭০-১০০ বার কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়। বিটি বেগুন প্রাকৃতিক ভাবেই ফল ডগা ছিদ্রকারি পোকা প্রতিরোধ করতে পারে এতে আলাদা করে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়না তাই বিটি বেগুন পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারি।
বেগুন খেলে কি এলার্জি হয়?
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁদের টোমেটো, আলু এবং বেল পেপারের মতো সবজি খেলে অ্যালার্জি হয়, তাঁদের বেগুন খেলেও সেই একই রকম সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের সবজিতে 'স্যালিসাইলেট' নামক এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে।
যা শরীরে বিষের মতো কাজ করে থাকে। তাই বলা যায়, অনেকেরই বেগুন খাওয়ার ফলে এই অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। আর যাদের এই ধরনের সমস্যা আছে তাদের অবশ্যই বেগুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
বেগুন খেলে কি ওজন কমে?
বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইবার, যা শরীরের ভিতর থেকে টক্সিন বের করে ফেলে। কোলন ক্যানসারের আক্রমণ রোধ করতে সহায়তা করে বেগুন। বেগুনে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, যা খিদে মিটাতে সাহায্য করে। তাই যারা সব সময় খিদে পেতেই থাকে তারা বেগুন খেলে খিদে কম লাগবে এবং ওজন কমতে সহায়তা করবে।
বেগুন কাদের খাওয়া উচিত নয়?
যদি কারো চোখে জ্বালাপোড়া হয় এবং কোনো ধরনের ব্যাধি থাকে তাহলে তাদের বেগুন খাওয়া উচিত হবেনা। কারণ এটি সম্ভব যে এটা চোখের কোন ব্যাধি বাড়াতে শুরু করতে পারে এবং সমস্যা আরও খারাপ করতে পারে। যদি কেউ পাইলস এর মতো রোগে ভুগে থাকে তাহলে তারও বেগুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
বেগুন খাওয়ার অপকারিতা
বেগুন খেতে ভালবাসে অনেকেই। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। আর দামও খুব একটা বেশি নয়। শীতে বেগুনের তরকারি বা ভর্তা খাওয়ার মজাই অন্যরকম। ঠান্ডার দিনে এর ব্যবহার ওজন কম করতেও সাহায্য করে। এর পাশাপাশি রক্তে শর্করা ও হৃদরোগও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
এত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও বেগুন খাওয়া সবার জন্য উচিত না। কারণ এমন কিছু রোগ রয়েছে, যেগুলোতে আক্রান্ত রোগীদের ভুলেও বেগুন খাওয়া উচিত না। তাহলে চলুন দেখা নেওয়া যাক কোন কোন আক্রান্ত রোগীদের বেগুন খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দেওয়া উচিত —
- পেটে পাথর : যাঁদের পেটে পাথরের সমস্যা আছে, তাঁদের ভুলেও বেগুন খাওয়া উচিত নয়। কারণ হলো, বেগুনে অক্সালেট নামক উপাদান পাওয়া যায়। যার কারণে পাথরের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং, এই ধরনের মানুষেরা বেগুন খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।
- রক্তাল্পতা থাকলে: যাঁদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে, বেগুন খাওয়া তাঁদের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। এটি খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি আরও বাড়তে পারে। যার কারণে সমস্যা কমার বিপরীতে বাড়তে পারে।
- যে কোনও ধরনের এলার্জি: যে কোনও ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেগুন খাওয়া উচিত নয়। বেগুনে এমন অনেক উপাদান রয়েছে, যা অ্যালার্জির সমস্যাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।এই অবস্থায় ত্বক বা অন্য ধরনের অ্যালার্জির রোগী যদি বেগুন খায়, তাহলে তাঁর সমস্যা বাড়তে পারে।
- পরিপাকতন্ত্রে ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে : যাঁদের পেট প্রায়শই খারাপ থাকে বা যাদের গ্যাস-অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে , তাঁদের কখনও বেগুন খাওয়া উচিত নয়। এতে তাঁদের পেটের সমস্যা বাড়তে পারে এবং গুরুত্বর হয়ে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হতে পারে।
- চোখ জ্বালাপোড়া: যাঁদের চোখ জ্বালার মতো সমস্যা আছে তাঁদের পক্ষে বেগুনের সবজি বা ভর্তা খাওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে। এই কারণে তাদের চোখে ব্যথা, ফোলাভাব ও জ্বালাপোড়ার সমস্যা দেখা দেয়।
আরও পড়ুনঃ করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
লেখকের মন্তব্য
আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন।
কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url