করলা খাওয়ার উপকারিতা! এটি খেলে যেসব রোগের আশংঙ্কা কমানো যায় তা জেনে নিন!

বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষ করলা খেলেও করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি সেটা জানে না। আজকে আমরা আলোচনা করবো  করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। চলুন জেনে নেওয়া যাক করলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। 


করলা একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি যার উপকারিতা অনেক। করলা খেলে অনেক রোগের আশঙ্কা কমানো সম্ভব। 

যেমন :- ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, রক্ত পরিস্কার করে, দৃষ্টি শক্তি বাড়ায় ইত্যাদি। করলার গুণাগুণ বলে শেষ করা সম্ভব না। এতো উপকারি এই করলা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর অপকারিতাও রয়েছে। তাই পোস্ট টি সম্পূর্ণ পড়ুন। নাহলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যাবে।

করলা খাওয়ার উপকারিতা 

অনেকেই জানতে চান করলা খাওয়ার উপকারিতা কি? করলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু করলা খাওয়ার উপকারিতা দেওয়া হলো :-
  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে: প্রতিদিন করলা খাওয়ার ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে: নিয়মিত করলা খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।
  • পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ : করলায় ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাসিয়াম, ফোলেট এবং আয়রনসহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজগুলো পাওয়া যায় উৎকৃষ্ট পরিমাণে। যার ফলে প্রতিদিন সবজিটি খেলে মুক্ত থাকা যায় অনেক রোগ থেকে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস করলা: করলায় ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনল উপাদান থাকে। শক্তিশালী এই দুই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও উন্নত বিপাকীয় স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে থাকে।
  • হজমে সহায়তা করে : করলায় পাওয়া ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে হজমে সহায়তা করে থাকে।
  • অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভূমিকা পালন করে : উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির মাধ্যমে করলা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে : কয়েকটি গবেষণা দেখা গেছে , করলা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করতে সাহায্য করে থাকে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কম করে।
  • ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে: করলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বায়োঅ্যাকটিভ যৌগগুলো নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।
  • ডিটক্সিফিকেশন : করলাকে ডিটক্সিফাইং এর উপাদান রয়েছে। এটি শরীর থেকে টক্সিন রোধ করতে সাহায্য করে থাকে।
  • ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে : করলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো বার্ধক্যের লক্ষণ রোধ করে। এছাড়া শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বাহির করে ত্বক পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে : করলার ভিটামিন এবং খনিজ, বিশেষ করে ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা উন্নত করতে থাকে।
  • চোখ ভালো রাখতে সহায়তা করে : করলা ভিটামিন এ এর একটি ভালো উৎস, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে।

খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা 

সকালে খালি পেটে করলার জুস খেলে হজম শক্তি বাড়ানো এবং পেট পরিষ্কার হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখে। করলার জুসে থাকা বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ চোখের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এগুলো দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।

তবে খালি পেটে কারলার জুস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় না কারণ এটি হজমের অস্বস্তি যেমন বমি বমি ভাব, বমিভাব এবং পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে। খাবারের সাথে বা খাওয়ার পর করলার জুস পান করা উত্তম।

কাঁচা করলার উপকারিতা

করলার রসে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান, যা শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করতে সহায়তা করে। করলার রসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং চর্মরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। 

করলার রস ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও অনেক উপকারী। করলার রস ফ্যাট সেল বার্ন করে নতুন ফ্যাট সেল তৈরি হতে বাধা দেয়।

করলার রস খেলে কি হয়?

করলার রস ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। করলাতে আছে পলিপেপটাইড পি এবং চারেন্টিন নামের যৌগ, যা শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। করলার রস শরীরের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ানোর মাধ্যমে চিনির মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া রোধ করে। 

তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা করলার জুস খেলে উপকার পেতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং মানব শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ায় করতে সাহায্য করে এই সবজি। করলায় পাওয়া যায় ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করার উপাদান। 

তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করলা হতে পারে উপকারী একটি সবজি। আবার মধু ও পানির সঙ্গে করলার রস মিশিয়ে খেলে মুক্তি পাওয়া যায় অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসরোগ ও গলার প্রদাহের মতো সমস্যা থেকে।

করলা খেলে যেসব রোগের আশঙ্কা কমানো যায়

করলার গুণের শেষ নেই। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সবাই বেছে নেয় করলাকে। করলার রস পেটের মেদ খুব সহজে কমিয়ে ফেলতে পারে আবার সেই সাথে ওজন নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে আরো শক্তিশালী করে তুলে। আবার অনেকে ব্লাড সুগার বেড়ে গেলে চোখ বন্ধ করে করোলার রস খাওয়া শুরু করে।

করলা খেলে যেসব রোগের আশংকা কমে তা হলো.
  • ক্যান্সার প্রতিরোধের আশংকা কমায়: করলায় উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরে ক্যান্সার সেলের বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে। ফলে এই মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সাথে, অ্যানিমিয়া এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের চিকিৎসাতেও এই করলা দারুনভাবে কাজ করে থাকে।
  • শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে দূরে রাখে: যাদের শ্বাসকষ্ট হয় বা ফুসফুসে সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বেশ ভালো কাজ করে করলার রস। করলার রস নিয়মিত পান করলে ফুসফুসগুলিতে জমে থাকা কফ দূর করে দীর্ঘস্থায়ী কাশি এবং শ্বাসকষ্টের নিরাময়ে সহায়তা করে।
  • ত্বকের লাবণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে: করলা রক্ত বিশুদ্ধ করে। সেই সাথে ডিটক্সের কাজ করে। এতে করে ত্বক পরিষ্কার হয় ও লাবণ্য ফিরে আসে।
  • হজমে সহায়তা করে থাকে : করলার রস খাবার হজম করতে সহায়তা করে। এর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত শরীরে খাবার হজম হয়।
এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, দৃষ্টিশক্তি উন্নত করা, পাইলসের চিকিৎসায় করলার রসের কার্যকারিতার কোন ত্রুটি নেই।

করলার রস উপকারী হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে খেয়াল রাখা উচিত।

যেমন:
  • একটা করলা রস করলে যতটুকু হয়, প্রতিদিন ততটুকুর বেশি খাওয়া যাবে না।
  • গর্ভাবস্থায় করলার জুস খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • শিশুরা এটি খেলে তাদের পেটে ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া হতে পারে।
  • অতিরিক্ত করলার রস খেলে লিভারের প্রদাহ এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
  • যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করে তাদের করলার রস পানের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • করলার রস একাটানা না খেয়ে মাঝেমাঝে বিরতি দিয়ে খাওয়া উচিত। ৩ মাস খাওয়ার পর ১২-১৫ দিন বিরতি দিয়ে খাওয়া উত্তম।

গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া যাবে কি?

হ্যাঁ, খাওয়া যাবে। করলা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী হয়ে থাকে কারণ, এটি প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে ভরপুর একটি সবজি যা মা এবং শিশু উভয়ের জন্য প্রয়োজনীয়। 

তাজা করলা ভিটামিন সি, ফোলেট, আয়রন এবং পটাসিয়ামের একটি উত্তম উৎস, যা শিশুর স্নায়ুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পরিমিতভাবে এবং শুধুমাত্র একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরে এটি খাওয়া উচিত।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, গর্ভবতী মায়ের জন্য করলা আর কি কি উপকার করে থাকে 
  • পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ : করলা অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে পরিপূর্ণ, যা গর্ভাবস্থার ডায়েটে একটি মূল্যবান সংযোজন করে থাকে। এটি ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফোলেট, আয়রন এবং পটাসিয়ামের একটি মুখ্যম উৎস।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: করলাতে থাকা ভিটামিন সি এর উচ্চ উপাদান ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে থাকে, যা গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। একটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম মা এবং শিশু উভয়কে সংক্রমণ এবং অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে এবং সাহায্য করতে পারে।
  • স্বাস্থ্যকর ত্বক 
  • রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
  • জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি কমায়
  • হজম স্বাস্থ্য উন্নত করে : করলা পরিপাক এর জন্য অনেক ভালো কাজ করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে সাহায্য করে থাকে, যা গর্ভাবস্থায় একটি সাধারণ সমস্যা, এবং স্বাস্থ্যকর হজমকে উন্নত করতে পারে।এটি অর্শ্বরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে।
  • গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ পরিচালনা করে : করলাতে এমন যৌগ রয়েছে যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। গর্ভবতী মহিলার খাদ্যতালিকায় করলা অন্তর্ভুক্ত করলে তা রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদান করে
  • ওজন ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে

করলার সাথে যে ৫ খাবার খাওয়া যাবে না 

  • দুধ 
  • আম 
  • মুলা 
  • ঢ্যাঁড়স 
  • দই 

করলা খাওয়ার অপকারিতা

করলা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হলেও অতিরিক্ত বা ভুলভাবে খাওয়া হলে, এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক করলা খাওয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো:
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য: গর্ভবতী মহিলারা অতিরিক্ত পরিমাণে করলা খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি হতে পারে। করলা মাসিকের প্রবাহ বাড়িয়ে দিতে পারে এবং গর্ভনিরোধকের মতো কাজ করে থাকে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য: ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করলা ভীষণ উপকারী হলেও, অন্যান্য ওষুধের সাথে একসাথে খেলে রক্তের শর্করা খুব বেশি কম হয়ে যেতে পারে এবং কোমা পর্যন্ত চলে যেতে পারে।
  • হৃদরোগীদের জন্য: করলা হৃদয়ের জন্য উপকারী হলেও, কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, অতিরিক্ত পরিমাণে করলা খাওয়ার ফলে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে।
  • শিশুদের জন্য: শিশুদের পেট খারাপ, বমি এবং পেট ফাপার মতো সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে।
  • হিপগ্লিসেমিক কোমা: অতিরিক্ত করলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা অনেক কমে যেতে পারে এবং হিপগ্লিসেমিক কোমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • লিভারের সমস্যা: অতিরিক্ত করলা খাওয়ার ফলে লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
করলা খাওয়ার উপকারিতা পোস্টি এখানেই শেষ করছি। আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন করলা খাওয়ার উপকারিতা কি। এরপরেও যদি আপনাদের করলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন বা জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাতে পারেন। আমরা তার উত্তর দেওয়ার সম্পূর্ণ চেষ্টা করবো

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url