তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

তুলসী একটি ঔষধি গাছ। যার পাতা আমাদের অনেক উপকার করতে সক্ষম যদি আমরা তার সঠিক ব্যবহার করতে পারি। তবে তুলসী পাতার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। অর্থাৎ তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। আপনাদের  অবশ্যই এগুলো জেনে রাখা উচিত। 


তুলসি পাতা উপকারী এটা সবারই জানা কথা। তবে তুলসি পাতা খেলে কোন উপকারগুলো পাওয়া যায় সেটা অনেকেরই অজানা। ওষুধ হিসেবে তুলসি পাতার ব্যবহার অনেক প্রাচীণ। এই পাতায় আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টের মতো উপাদান। 

আর এই উপাদান গুলো মারাত্মক সব রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে। এটি নানা গুণে অনন্য বলেই হাজার বছর যুগ ধরে যোগ আছে ওষুধের তালিকায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

তুলসী পাতা যেসকল রোগ নিরাময় করতে সক্ষম

  • সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে : এটি সবারই জানা, ঠান্ডা লাগলে সুতরাং, সর্দি - কাশি হলে তুলসী পাতা খাওয়া হয় সর্দি - কাশি কমাতে। সর্দি ও কাশি সারাতে তুলসী পাতা খুব ভালো কাজ করে। 
  • গলা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে : গলা ব্যাথার সমস্যায় যারা ভুগে তারা আস্থা রাখতে পারে তুলসী পাতায়। কারণ এই সমস্যা দূর করতে তুলসি পাতার কোন বিকল্প নেই। শ্বাসকষ্টের সমস্যা কম করতেও তুলসী পাতা খুবই উপকারী। কয়েকটি তুলসী পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে গার্গল করলে গলা ব্যথা দ্রুত কমে যায়।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে 
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
  • ওজন কমাতে সাহায্য করে 
  • ডায়াবেটিস দূরে রাখতে সাহায্য করে : তুলসী পাতা ইনসুলিন উৎপাদনের ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসী পাতা খেলে রক্তে চিনির মাত্রা কমে যায়। তুলসী পাতা অ্যান্টি ডায়াবেটিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। তুলসী পাতাতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাবোনয়েড ডায়বেটিস দূর করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে : প্রায় সময় গ্যাস্টিক এর সমস্যা হলে, সকালে উঠে খালিপেটে কয়েকটি তুলসী পাতা খেয়ে নিতে হবে। তাহলেই দেখা যাবে পেটের সমস্যা আর হবে না। কারণ তুলসীতে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা পেটের পিএইচ লেভেল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ফলে গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা ধারের কাছেও আসতে পারবে না। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতাকে মজবুত করার কাজেও এর কোন বিকল্প নেই। সুতরাং এইসব সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে, তুলসীর ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে : অনেকেরই মুখে দুর্গন্ধ হয়। মুখ নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে হয় অনেকের। চিকিৎসকদের মতে, তুলসী পাতা খেলে মুখের ব্যাকটেরিয়াও দূর করে যার ফলে মুখ থেকে বের হওয়া বাজে দুর্গন্ধ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় তুলসী পাতায়।
  • মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে : অনেকেই রয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকে। মানসিক চাপ তাদের যেন ঘিরে রেখেছে। তাই মানসিক চাপ কমাতে চাইলে প্রতিদিন তুলসী পাতা খাওয়া যেতে পারে।
  • হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে : হার্ট ভালো রাখতে তুলসী পাতার কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন যদি খালি পেটে সকালে তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া যায় তাহলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমবে অনেকটাই।

তুলসী পাতার ব্যবহার 

তুলসী হচ্ছে একটি ভেষজি গাছ যার পাতায় রয়েছে সুগন্ধিযুক্ত, রুচিকর, কটু তিক্তরস। এটি সর্দি, কাশি, কৃমি ও মুত্রকর এবং বায়ুনাশক, এন্টিসেপটিক ও হজমকারক ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তুলসী পাতার ব্যবহার: আমাদের দেশে ছেলে - মেয়ে, বাচ্চা, বয়োবৃদ্ধ থেকে সকলেই তাদের সর্দি-কাশিতে তুলসী পাতার রস ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করে থাকে।

তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম 

বিশেষজ্ঞদের মতে, তুলসী পাতায় রয়েছে ভীষণ উপকারী কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভনয়েডস। আর এই দুই উদ্ভিজ্জ উপাদানের গুণেই মানব শরীর সুস্থ-সবল রাখতে সহায়তা করে। এমনকি এর মাধ্যমে এড়িয়ে চলা যায় একাধিক ক্রনিক রোগব্যাধি। তবে দিনের যে কোনও সময় তুলসী খাওয়ার তুলনায় রোজ সকালে খালিপেটে ৩-৪টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা 

একাধিক গবেষণা যায় যে, প্রতিদিন যদি তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে ব্রেস্ট এবং ওরাল ক্যান্সার কম হতে শুরু করে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস করে তুলসী পাতার রস খেলে পরিবেশে উপস্থিত নানা ক্ষতিকর উপাদান মানুষের শরীরকে ধ্বংস করতে পারে না। ফলে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমতে থাকে।

শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার পদ্ধতি 

তুলসী পাতার সাথে এক টুকরো আদা শিলপাটায় বেটে নিতে হবে। দিনে দুবার এ পেস্ট শিশুদের খাওয়াতে হবে। তুলসী পাতার এই পেস্টের সাথে মিশানো যেতে পারে মধু। একটি পাত্রে পানি গরম করে তাতে আদা কুচি, তুলসী পাতা ও দারুচিনি গুঁড়া করে নিতে হবে এবং সে পানি শিশুকে পান করাতে হবে। তুলসী পাতার সাথে গুড় মিশিয়ে বা সরাসরি চিবিয়েও শিশুকে খাওয়ানো যাবে।

তুলসী পাতার অপকারিতা 

সকল কিছুরই যেমন ভালো দিক থাকে, ঠিক তেমনি খারাপ দিকও থাকে। তুলসী পাতার ক্ষেত্রেও একই। তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। তবে তুলসী পাতার তেমন ক্ষতিকর দিক নেই। চলুন জেনে নি তুলসী পাতার অপকারিতা সম্পর্কে।

গর্ভাবস্থায় তুলসী পাতা গ্রহণ করা গর্ভবতীদের জন্য ক্ষতিকর। মেয়েদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তুলসী পাতার রস সেবনে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত তুলসী পাতা সেবনে রক্তচাপ কম হতে পারে সে ক্ষেত্রে শরীরে দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। সাধারণত, তুলসী পাতায় তেমন কোন ক্ষতি নেই কিন্তু নিয়ম মেনে অল্প পরিমাণে খেলে শরীর ভালো থাকে।

তুলসী পাতা উপকারী। কিন্তু সব ক্ষেত্রে নয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে যাওয়া বা না খাওয়াই উত্তম। যেমন :
  • গর্ভাবস্থা বা স্তন্যপান করানোর সময়: তুলসী পাতা খেলে নানা রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই এই সময়গুলোতে তুলসী পাতা না খাওয়ায় উত্তম। 
  • রক্তপাতের সমস্যাও দেখা দিতে পারে 
তুলসী পাতার মধ্যে ঔষধি গুনাগুন থাকলেও তার ও রয়েছে কিছু খারাপ দিক যা অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলে হয়ে থাকে। তাই যেকোন জিনিসই নিয়ম মেনে পরিমিত খেতে হবে তাহলেই উপকার পাওয়া যাবে। তেমনি তুলসী পাতাও পরিমাণ মতো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে যেন সেটা ক্ষতির কারণ না হয়।

আশা করি আপনারা তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে বা কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্টে বলতে পারেন।

আশা করি তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা বুঝতে পেরেছেন। তারপরও যদি তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন বা জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাতে পারেন। আমরা তার উত্তর দেওয়ার সম্পূর্ণ চেষ্টা করবো

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url