শীতকালীন সবজি পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।

পালং শাকের উপকারিতা

পালং শাক একটি শীতকালীন সবজি। পালং শাকের উপকারিতা অনেক। পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনারা অনেকেই অবাক হবেন যে, একটি শাক হতে এত বেশি উপকার পাওয়া যায়! 


এই শাকে শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী শক্তি গড়ে তুলে। 

পালং শাকের বর্ণনার প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেছে চীনে। সেখানে বলা হয়েছে, এই শাক নেপাল থেকে চীনে এসেছে (সম্ভবত ৬৪৭ খ্রি.)। ভিটামিন-বি৯, ১৯৪১ সালে প্রথম পালং শাকে আবিষ্কৃত হয়েছিল।

পালং শাক অত্যন্ত পুষ্টিকর ও রুচিকর একটি খাদ্য। এতে আছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট। তাজা এবং অল্পসেদ্ধ করে খেলে বেশি এন্টিঅক্সিডেন্ট লাভ করা যায়। এছাড়াও কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত এই শাক হজমে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে। 

রোজ একটি নির্দিষ্ট নিয়মে পালং শাক খেলে শরীর চাঙ্গা থাকবে আর ওজনও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।পালং শাক শীতকালীন সবজি হওয়া সত্তেও সারা বছর এই শাক পাওয়া যায়। তবে শীতকালে দেশি পালংয়ের স্বাদই হয় আলাদা। 

সব রকম টাটকা সবজি দিয়ে বানানো পালং শাকের ঘণ্ট খেতে কি যে সুস্বাদু লাগে। আর এই শাক খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যকরও। পালং শাকে থাকা ভিটামিন এ, সি এবং কে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

দৃষ্টিশক্তি ভাল করতেও পালং শাক উপকারী দিক লক্ষ্য করা যায়। এই শাক শরীরে অক্সিজেন পাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান আয়রনে পরিপূর্ণ। রক্তাল্পতা বা রক্তশূন্যতার বিরুদ্ধে লড়াই করে এই শাক।

পালং শাকে আছে উচ্চ মাত্রার ম্যাগনেসিয়াম, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পালং শাকে থাকা অধিক মাত্রার ভিটামিন সি, লিম্ফোসাইট বা রক্তের শ্বেত কণিকা দেহকে বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

এই শাকে থাকা ১০টিরও অধিক ভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। পালং শাকে থাকা উচ্চ মাত্রার বিটা ক্যারোটিন চোখের ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

পালং শাকে থাকা ভিটামিন 'এ' ত্বকের বাইরের স্তরের আর্দ্রতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এই শাকের মধ্যে থাকা ফলিক এসিড হৃদ যন্ত্রের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

ঘন সবুজ ও প্রাপ্তবয়স্ক পালং শাকের পাতায় উচ্চ মাত্রায় ক্লোরোফিল থাকায় এতে ক্যারটিনয়েড বিদ্যমান থাকে। আর তা আমাদের শরীরে ব্যাথা নাশক ও ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে।

এছাড়াও পালং শাকের উপকারিতার মধ্যে আরও কিছু উপকারিতা রয়েছে। পালং শাক সাহায্য করে এবং অন্ত্রের ভেতরে জমে থাকা মল সহজে বের করে দিতে সহায়তা করে। পালং শাকের এই উপকারী ভূমিকার জন্য যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের জন্য এ শাক খুব উপকারী। 

এছাড়াও পালং শাকের বীজ কৃমি ও মূত্রের রোগ সারায় ও এর কচি পাতা ফুসফুস, কণ্ঠনালীর সমস্যা, শরীর জ্বালাপোড়া সমস্যা দূর করেতে সাহায্য করে। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্যও পালং শাকের উপকারিতা অনেক। 

পোড়া ঘায়ে, ক্ষত স্থানে, ব্রণে বা কোথাও ব্যথায় কালচে হয়ে গেলে টাটকা পালং শাকের পাতার রসের প্রলেপ লাগালে উপকার পাওয়া যায়। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং আয়রন যার কারণে পালং শাক খেলে রক্তে আয়রনের মাত্রা বেড়ে যায়।

এখানেই শেষ নয় পালং শাকের আারও কিছু উপকারিতা রয়েছে। ক্লান্ত হলে চলবে না চলুন শেষ পর্যন্ত জানা যাক পালং শাকের উপকারিতা।

বয়সের ছাপ লুকানোর জন্য আপনারা অনেকেই নানান ধরনের বাজারজাত পণ্য সামগ্রী ব্যবহার করেন। নানান ধরনের দামি ক্রিম মাখা থেকে শুরু করে ঘরোয়া ভাবেও অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকেন। 

অথচ আপনাদের হাতের কাছেই থাকা শীতকালীন সহজলভ্য এই সবজি পালং শাকেই রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট। আর এই এন্টি-অক্সিডেন্টই কোষের ক্ষয়রোধ করে শরীরকে তারুণ্যদীপ্ত এবং সুস্থ-সবল রাখে। ত্বকের বার্ধক্য বা বয়সের ছাপ দূর করে।

এছাড়াও পালং শাকের এন্টি-অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের কোষগুলোকেও সতেজ এবং কর্মক্ষম রাখে। তাই মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এর জুড়ি মেলে না। তাছাড়া পালং শাকের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। সব মিলিয়ে পালং শাক শীতকালের এক অসাধারণ উপকারী সবজি।

পালং শাকের পরিচয়

পালং শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Spinacia oleracea। এটি জনপ্রিয় শাক ও সবজি। এর আদিবাস মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া। পালং শাক এমারান্থাসি পরিবারভুক্ত, একবর্ষজীবি ও এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। 

তবে দ্বিবর্ষজীবি পালং শাকের গাছও হয়ে থাকে তবে তা বিরল। পালং শাকের গাছ ৩০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়। বাংলাদেশে শীতকালে এর চাষ হয়। এর পাতা একান্তর, সরল, ডিম্বাকার বা ত্রিভূজাকার হয়ে থাকে। এই শাকের পাতার আকার ২-৩০ সেমি লম্বা ও ১-১৫ সেমি চওড়া হতে পারে। 

এই গাছের উপরের দিকের পাতাগুলো ছোট হয় এবং গোড়ার দিকের পাতাগুলো বড় বড় হয়। এর ফুল হলদেটে সাদা, ৩-৪ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট হয়। এর ফল ছোট, শক্ত, দানাকৃতির ও গুচ্ছাকার। ফলের আকার আড়াআড়ি ৫-১০ মিমি; এতে বেশ কয়েকটি বীজ থাকে।

পালং শাকের পুষ্টিগুণ

পালং শাকের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে হলে পালং শাকের মধ্যে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো জানাও গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে আপনারা কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন যে পালং শাক আমাদের জন্য কতটা উপকারী ভূমিকা রাখে। পালং শাকে প্রচুর ভিটামিন বিদ্যমান রয়েছে। 

পালং শাকে ভিটামিন-এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রোটিনের পরিমাণ ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ২.৮ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম, ফসফরাস ২০.৩ মি. গ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ০.৫ মি. গ্রাম, অক্সালিক এসিড ৬৫২ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা। 

এতে আঁশের পরিমাণ ০.৭ গ্রাম। এতে রিবোফ্লোবিন ০.০৮ মি. গ্রাম, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রা, ও থায়ামিন ০.০৩ মি. গ্রাম।

এছাড়াও এই শাকে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ফলিক অ্যাসিড ও সেলেনিয়াম। একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য এই উপাদানগুলো খুবই জরুরি। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, এক কাপ পালং শাক শরীরের দৈনিক ফাইবার চাহিদার ২০% পূরণ করে। 

পালং শাককে বলা হয় রক্ত পরিষ্কারক খাদ্য। প্রচুর আয়রন থাকায় এই শাক শরীরে রক্ত বাড়াতেও সহায়তা করে। পালং শাকের মধ্য বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি গুণ থাকার কারণেই মূলত পালং শাকের উপকারিতা অনেক।

পালং শাক কিভাবে খেলে শরীরের ওজন কমানো যায়

পালংয়ের অমলেট: পালং শাকের অমলেট খেলে শরীরের ওজন কমানো যায়। পালং শাকের অমলেট বানাতে হলে প্রথমে দুইটি ডিম নুন, গোলমরিচ, টোম্যাটো দিয়ে ফেটিয়ে নিন। এবার খানিকটা পালং শাক নিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন। 

এরপর একটি ছোট ননস্টিক প্যানে সামান্য তেল নিয়ে অল্প আচে গরম করে তাতে পালং শাকগুলি ছড়িয়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে দিন। খুব বেশি নাড়াচাড়া করার দরকার নেই। পালং শাক নরম হয়ে এলে ফেটিয়ে রাখা ডিম দুটি পালং শাকের উপর ঢেলে দিয়ে ভাল করে ভেজে নিলেই পালং শাকের অমলেট তৈরি। সকালে পালং শাকের অমলেট খাওয়ার অভ্যাস করুন।

পালং শাকের স্মুদি: শরীরের ওজন কমাতে পালং শাকের স্মুদিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পালং শাকের স্মুদি বানাতে হলে একটি মিক্সারে পালং শাক, অর্ধেকটা কলা, গ্রিক ইওগার্ট, কয়েকটি কাঠবাদাম আর সামান্য মধু দিয়ে ভাল করে বেটে নিন। সকালে এক গ্লাস এই স্মুদি খেলেই পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকবে।

পালং-পনির পরোটা: শরীরের ওজন কমাতে পালং শাবের পরোটাও সাহায্য করে। পালং শাকের কুচি, ছানা, কাঁচালঙ্কা কুচি, নুন, গোলমরিচ, কসৌরি মেথি, জোয়ান ভাল করে মিশিয়ে আটার সঙ্গে ভাল করে মেখে নিন। 

এরপর পরোটার মতো করে বেলে অল্প অলিভ অয়েলে সেঁকে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে পালং-পনির পরোটা। দইয়ের সঙ্গে ও এই পরোটা খাওয়া যেতে পারে।

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি থাকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ শাক সবজি ছাড়া সুষম খাদ্য তালিকা পূর্ণ হয়না। আর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সুষম খাদ্য তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই সুষম খাদ্য তালিকা পূর্ণ করতে আমাদের সবারই উচিত প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাক সবজি রাখা। 

আর শাক সবজির মধ্যে সুষম খাদ্য তালিকা জন্য পালং শাক হতে পারে একটি আদর্শ সবজি। সবজি টি পালং শাক হলে আরও ভালো। কেননা পালং শাকের উপকারিতা অনেক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url