আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি মানুষের মৃত্যু হয়? সত্য নাকি কুসংস্কার?

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে মানুষের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এমন কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটা শুধুমাত্রই একটি কুসংস্কার। আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কোন ধরনের বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। আনারস হলো টকজাতীয় ফল। যার কারণে দুধের মধ্যে যে টক জিনিসই দেওয়া হোক না কেন দুধ ফেটে যেতে পারে। যার দরুন হতে পারে বদহজম, পেট ফাঁপার মতো সমস্যা। কিন্তু বিষক্রিয়া হওয়ার কোনো আশঙ্কা নাই।

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কি হয়?

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে বা পর পর খেলে মানুষের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এমন কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। এই ধারণাকে ‘ফুড ট্যাবু’ বা ‘খাবারের কুসংস্কার’ বলা হয়। কিন্তু একসাথে বা পর পর খাওয়ার ফলে পেটের পীড়া বা হজমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা এই দুটো খাবারকে একসাথে না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। 

আনারস আর দুধের মিশ্রণে বিষক্রিয়ায় মানুষ মারা যাওয়ার কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। এটা রাসায়নিকভাবে প্রমাণিত। দুধ হলো অ্যামাইনো এসিডের একটি পলিমার। আনারসে থাকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও সুক্রোজ। তাই এই দুটো খাবারের মিশ্রণ হলে সেটা বিষ হয়ে যাবে, এমন কোন সত্যতা নেই।

আবার আনারস ও দুধ একসাথে খেলে মানুষের মৃত্যু হয়, এই ধারণাটি সত্য না। এটি অনেকের পেটে সহ্য হয় না এবং খেলে সামান্য অসুস্থ হতে পারে। এজন্য একসাথে না খাওয়াই ভালো। কিন্তু মারা যাওয়ার আশঙ্কা নাই। আনারস আর দুধ বিরতি দিয়ে খাওয়াই উচিত। 

দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিরতি নিয়ে খাওয়া হলে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নাই। নাহলে অনেক সময় পেটে গিয়ে হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে সঠিক নিয়ম মেনে খাবার বানানো হলে এবং খাদ্যের সমন্বয় ঠিক রাখলে কোনও সমস্যা হয় না। দুধ ফুটিয়ে নিলে টক্সিটিক বিষয়টি আর থাকে না, তখন খাওয়া যেতে পারে।

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে বিষক্রিয়ায় মানুষ মারা যায়, এই ধারণা একেবারেই ভুল। এগুলো হলো এক ধরনের কুসংস্কার। উপাদানগত কারণে দুধের মধ্যে কোনও টকজাতীয় জিনিস মেশালে তা ফেটে যায়। 

এটা আনারসের ক্ষেত্রে যেমনটা হতে পারে, তেমন কমলা বা লেবুর ক্ষেত্রেও হতে পারে। ফেটে যাওয়া দুধ খেলে খুব বেশি হলে বদ হজম, পেট ফাঁপা, পেট খারাপ–এ ধরনের সমস্যা হতে পারে, বিষক্রিয়ার কোনও সম্ভাবনা নাই।

এক বিজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, অনেক দেশেই ‘পাইনঅ্যাপল মিল্কশেক’ জনপ্রিয় একটি খাবার, যা আনারস ও দুধের মিশ্রণে তৈরি হয়। এছাড়া পাইনঅ্যাপল ফ্লেভারের দই এবং কটেজ চিজের (এক ধরনের পনির) এর সাথে আনারসের টুকরো খাওয়ার প্রচলন অনেক দেশেই রয়েছে।

বাংলাদেশেরও অনেক রেস্তোরাঁয় এখন পাইনঅ্যাপল মিল্কশেক পাওয়া যায়। যেগুলো খাওয়ার ফলে বিষক্রিয়া হওয়ার খবর এখনও পাওয়া যায়নি।

আনারস ও দুধ একসাথে খেলে বা পরপর খেলে কি সত্যিই মানুষের মৃত্যু হয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধই একমাত্র তরলজাতীয় খাবার, যেখানে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রোটিন, ফ্যাট আর কার্বোহাইড্রেটের দারুণ এক ‘মিক্সচার’ দুধ। তাই যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য দুধ গুরুত্বপূর্ণ।

অপরদিকে আনারস ভিটামিন সি এ পরিপূর্ন। তাছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাসের উত্তম এক উৎস। এদেশেই প্রচুর চাষ হয় বলে গ্রাম থেকে শহর—সব জায়গায় আনারস সহজেই পাওয়া যায়।

তবে এই দুই খাবার আনারস ও দুধ একসাথে খেলে বিষক্রিয়া হয়, এটা নিতান্তই প্রচলিত একটি কুসংস্কার।

যুক্তি হিসেবে কাস্টার্ডের কথা বলা যায়। এতে অন্যান্য ফলের সাথে আনারস তো থাকেই, সাথে থাকে দুধও। আবার আইসক্রিম অথবা মিল্কশেকেও আনারসের সাথে দুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসব খাবার খেলে মৃত্যু তো দূরে থাক, ছোটখাটো সমস্যার অভিযোগও কেউ করেছে বলে জানা যায়নি।

অর্থাৎ বোঝা যায়, এই সমস্যাগুলো দুধ ও আনারস একসাথে খাওয়ার জন্য তৈরি হয় না। সমস্যাগুলো দেখা যায় আমাদের শারীরিক কিছু সমস্যা বা সীমাবদ্ধতার ফলে।

তাহলে আনারস ও দুধ একসাথে খেলে মানুষের মৃত্যু হয় ধারণাটি কীভাবে আসলো?

দেখুন, এটা বলা খুবই মুশকিল যে, এমন ধারণা মানুষের মনে আসলো কোথা থেকে। কেনইবা মানুষ এটা বিশ্বাস করে আসছে। তবে এটা যে শুধুমাত্রই একটি লোককাহিনী এতে কোন সন্দেহ নেই। কেননা এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি বা চোখে পড়েনি যে, তা থেকে বোঝা যাবে আনারস ও দুধ একসাথে খেলে মানুষের মৃত্যু হয়। 

এটা শুধুমাত্রই মানুষের একটি ভুলধারণা। তবে এর একটি লোককাহিনী আছে। পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো বলেন, আনারস মূলত ঝোপঝাড়ের মধ্যেই মিলে। আর ঝোপঝাড় মানেই সাপের চলাচল। প্রচলিত আছে, একবার এক বিষধর সাপ আনারসের ঝোপে ঘাপটি মেরে ছিল। 

কোনোভাবে সাপটি আনারসের গায়ে বিষ ঢেলে দিয়েছিলো। তারপর সেই বিষাক্ত আনারস খেয়ে ফেলে এক লোক। এর পরপরই চুমুক দেয় দুধের গ্লাসে। ব্যস, খানিক পরেই মৃত্যু সজ্জায় ঢলে পড়ে লোকটি। যার ফলে মানুষজন ধরেই নিয়েছিলো, আনারসের পর দুধ পান করায় তার প্রাণ হারিয়েছেন এবং তারপর থেকেই ছড়িয়ে পড়ে সেই কুসংস্কার, আনারস আর দুধ একসাথে খেলেই নিশ্চিত মৃত্যু!

তবে এটা সত্য এটারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটি শুধুমাত্র একটি লোককাহিনী। যায় হোক, আনারস ও দুধ একসাথে খেলে মানুষের মৃত্যু হয় না এটা নিশ্চিত থাকেন।

আনারস ও দুধের বিক্রিয়া

আনারস ও দুধ বিক্রিয়া করে বিষ তৈরি হয় নিতান্তই ভুল ধারণা। এগুলো একধরনের ফুড ট্যাবু বা খাদ্য কুসংস্কার। আনারস ও দুধ একসাথে খেলে কেউ মরে না। এটি সম্পূর্ণই একটি কুসংস্কার মাত্র। তবে আনারস ও দুধ একসাথে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন সেগুলো কি জেনে নিই:-
  • বদ হজম, পেট ফাঁপা, পেট খারাপ: আনারস ও দুধ একসাথে খেলে বিষক্রিয়া হয়না। আনারস একটি অ্যাসিডিক ও টকজাতীয় ফল। দুধের সাথে যে কোনো টকজাতীয় কিছু দিলেই দুধ ফেটে ছানা হয়ে যেতে পারে। যার ফলে হতে পারে বদহজম, পেট ফাঁপা, পেট খারাপ। তবে বিষক্রিয়ার কোনো আশঙ্কা নাই।
  • গ্যাসট্রিকের সমস্যা: আনারস ও দুধ একসাথে খেলে বিষক্রিয়া হয়না। কিন্তু যাদের গ্যাসট্রিকের সমস্যা আছে, খালি পেটে আনারস খেলে তাদের এই সমস্যা বেড়ে যায়। তাই খালি পেটে আনারস ও টকজাতীয় কোনো খাবার খাওয়া উচিত না।
  • কুসংস্কার: এমন কখনো হয়নি যে দুধ-আনারস একসাথে খাওয়ার জন্য মানুষ মরে গেছে। এটি একটি কুসংস্কার। ডেজার্ট, কাস্টার্ড বা স্মুদিতে আনারস-দুধ একসাথে মিশিয়ে খেতে দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়না। এটি সম্পূর্ণই একটি কুসংস্কার।
  • খাদ্যের সমন্বয়: পাইনঅ্যাপেল কাস্টার্ড, ডেজার্ট, পাইনঅ্যাপেল স্মুদি, পাইনঅ্যাপেল মিল্ক সেক, পাইনঅ্যাপেল সালাদ, পাইনঅ্যাপেল ইয়োগার্ট ইত্যাদি খাবারগুলো সবাই একসাথে খাই। এই খাবারগুলোর মধ্যে খাদ্যের সঠিক সমন্বয় থাকে। সুতরাং, কোনো সমস্যা নেই। অপরদিকে এক গ্লাস দুধ খেয়ে, সাথে সাথে আনারস খেলে সঠিক খাদ্যের সমন্বয় হয় না। সেক্ষেত্রে সঠিক সমন্বয় না হওয়ার দরুন পাতলা পায়খানা, বদ হজম, অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।

আনারস-এর গুণাগুণ

আনারসে ক্যালরির পরিমাণ খুব কম থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে ৪০ থেকে ৫০ ক্যালরি রয়েছে। তাছাড়াও ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, ফোলেট ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাঙ্গানিজ থাকে। তাছাড়াও যথেষ্ট পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবারও রয়েছে আনারসে। আনারসের উপকারিতা অনেক। 

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় আনারস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া, আমাদের দেশে প্রায় ক্যানসার রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। আনারসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

মূলত জ্বর, জন্ডিস এ ধরনের সমস্যায় লিভার অনেক দুর্বল হয়ে যায়, মুখের রুচি কম হয়ে যায়। এসব সমস্যায় আনারস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।শুরু থেকেই কৃমিনাশক হিসেবেও আনারসের বেশ চাহিদা ছিলো। এখনও কৃমিনাশক হিসেবে এর কার্যকারিতার গুরুত্ব দেয়া হয়। তাছাড়া আর্থ্রাটিসের ঝুঁকি কমাতেও আনারসের ভূমিকা আছে।

দুধ -এর গুণাগুণ

দুধকে সবাই আর্দশ খাবার হিসেবেই চিনে। দুধে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলস। তাছাড়া, দুধে আছে ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লাভিন।প্রোটিনের সেরা উৎস হওয়ায় পেশি তৈরিতে সাহায্য করে থাকে দুধ। তাছাড়া অনেকেই লো অ্যানার্জেটিক হয়, শক্তির সেরা উৎস হিসেবে তাদের জন্য দুধকে প্রাধান্য দেয়া হয়।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন। 

কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url