একজন পূর্ণবয়স্ক মানবদেহের ২০৬ টি হাড়ের নাম গুলো জেনে নিন!
আপনারা অনেকেই জানেন, একজন পূর্ণবয়স্ক মানবদেহের ২০৬ টি হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। (আপনি কি তা আগে থেকে জানতেন?) তবে একজন পূর্ণবয়স্ক মানবদেহের ২০৬ টি হাড়ের নাম অনেকেরই অজানা। আপনি যদি মানবদেহের ২০৬ টি হাড়ের নাম জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন। পোস্টটিতে আপনাদের সুবিধার জন্য খুব সহজভাবে মানবদেহের ২০৬ টি হাড়ের নাম বলে দেওয়া হয়েছে।
মানবদেহ সাধারণত ২০৬ টি হাড় দ্বারা গঠিত। কিন্তু শিশু অবস্থায় এর সংখ্যা ভিন্ন থাকে। শিশু যখন মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয় তখন তার দেহ মূলত ৩০০ টি হাড় দ্বারা গঠিত থাকে।
শিশু যখন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে তখন তার বয়স বাড়ার সাথে সাথে কতক গুলো অস্থি বা হাড় একত্রে হয়ে নতুন অস্থি বা হাড় গঠন করে। এর ফলে হাড়ের সংখ্যা কমতে থাকে। শিশুটি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন হাড়ের সংখ্যা ৩০০ টি থেকে কমে ২০৬ টি তে পরিণত হয়।
অস্থি বা হাড়ের সমন্বয়ে কঙ্কালতন্ত্র গঠিত। যে তন্ত্র দেহের কাঠামো সৃষ্টির মাধ্যমে দেহকে নির্দিষ্ট আকৃতি দান করে, দেহের ভার বহন করে, পেশি সংযোগের স্থান প্রদান করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন অঙ্গসমূহ রক্ষা করে তাকে কঙ্কালতন্ত্র বলে।
মানবদেহ যে ২০৬ টি অস্থি বা হাড় দ্বারা গঠিত তাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ১. অক্ষীয়- ৮০ টি হাড় ২. উপাঙ্গীয়- ১২৬ টি হাড়। চলুন এবার জেনে নেই একজন পূর্ণবয়স্ক মানবদেহের ২০৬ টি হাড়ের নাম।
অক্ষীয়
করোটি বা মস্তক
করোটি বা মস্তকে মোট ২৯ টি হাড় রয়েছে। এর মধ্য করোটিকা তে ৮ টি এবং মুখমণ্ডলীয় অস্থিতে ১৪ টি । আর কর্ণাস্থিতে রয়েছে ৭ টি হাড় মোট ২৯ টি।
করোটিকার অস্থি গুলোর নাম হলো
- ফ্রন্টাল অস্থি- ১ টি
- প্যারাইটাল অস্থি- ২ টি
- টেম্পোরাল অস্থি- ২ টি
- অক্সিপিটাল অস্থি- ১ টি
- স্ফেনয়েড অস্থি- ১ টি
- এথময়েড অস্থি- ১ টি
মুখমণ্ডলীয় অস্থিগুলোর নাম হলো
- ম্যাক্সিলা- ২ টি
- ম্যান্ডিবল- ১ টি
- জাইগোম্যাটিক অস্থি- ২ টি
- ন্যাসাল অস্থি- ২ টি
- ল্যাক্রিমাল অস্থি- ২ টি
- ইনফিরিয়র ন্যাসাল কঙ্কা- ২ টি
- ভোমার- ১ টি
- প্যালেটিন অস্থি- ২ টি
কর্ণাস্থি গুলোর নাম হলো
- ম্যালিয়া- ২ টি
- ইনকাস- ২ টি
- স্টেপিস- ২ টি
- অধোজিহ্বাস্থি বা হাইওয়েড- ১ টি
মেরুদন্ডে মোট ২৬ টি হাড় রয়েছে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে মেরুদন্ডের হাড় ৩৩ টি। মেরুদন্ডের অস্থি বা হাড় গুলোর নাম হলো-
- সারভাইকাল কশেরুকা- ৭ টি
- থোরাসিক কশেরুকা- ১২ টি
- লাম্বার কশেরুকা- ৫ টি
- স্যাক্রাল কশেরুকা- ১ টি (৫ টি)
- কক্কিক্স- ১ টি (৪ টি)
বক্ষের অস্থি সমূহ বক্ষপিঞ্জর ও বক্ষ অস্থি চক্র নিয়ে গঠিত। বক্ষ পিঞ্জরে রয়েছে মোট ২৫ টি হাড়। আর বক্ষ অস্থি চক্রে রয়েছে মোট ৪ টি হাড়।
বক্ষপিঞ্জরের হাড় গুলোর নাম হলো
- স্টার্নাম- ১ টি
- পর্শুকা- ২৪ টি (প্রতিপাশে ১২ টি)
উপাঙ্গীয়
বক্ষ অস্থি চক্রের হাড় গুলোর নাম হলো
- স্ক্যাপুলা- ২ টি
- ক্ল্যাভিকল- ২ টি
দুই হাতে বা বাহুতে ৩০ টি করে মোট ৬০ টি হাড় রয়েছে। মানবদেহের ২০৬ টি হাড়ের মধ্যে দুই হাতে রয়েছে ৬০ টি হাড়। তা দেখে বোঝার উপায় নেই একটি হাতে ৩০ টি হাড় রয়েছে তাই না! চলুন জেনে নি হাতের হাড় গুলোর নাম
- হিউমেরাস- ২ টি
- রেডিয়াস- ২ টি
- আলনা- ২ টি
- কার্পাল- ১৬ টি
- মেটাকার্পাল- ১০ টি
- ফ্যালাঞ্জেস- ২৮ টি
শ্রেণী অস্থি চক্রে ২ টি হাড় রয়েছে। হাড় গুলোর নাম হলো-
- ইলিয়াম- ১ টি
- ইশ্চিয়াম- ১ টি
- পিউবিস- ১ টি
(তবে প্রতি পাশে অস্থিগুলো ৩+৩ মিলিত হয়ে একটি করে হিপ বোন গঠন করে। সে হিসেবে দু'পাশে ২ টি হিপ বোন থাকে।
দুটি পায়ে মোট ৬০ টি হাড় রয়েছে। হাড় গুলোর নাম হলো-
- ফিমার- ২ টি
- টিবিয়া- ২ টি
- ফিবুলা- ২ টি
- প্যাটেলা- ২ টি
- টার্সাল- ১৪ টি
- মেটাটার্সাল- ১০ টি
- ফ্যালাঞ্জেস- ২৮ টি
সবমিলিয়ে একজন পূর্ণবয়স্ক মানবদেহ ২০৬ টি হাড়ের সমন্বয়ে গঠিত।
হাড়ের কাজ
মানব শরীরের কাঠামো গঠনে হাড়ের গুরুত্ব অনেক। মানবদেহের একটি হাড় না থাকলে মানুষ বিকলগ্ন হয়ে যায়। তার শরীরের নির্দিষ্ট কাঠামো বা আকৃতি ঠিক থাকে না। হাড় মানব দেহের কাঠামো গঠন ও আকৃতি ঠিক করে।
মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ যেমন মস্তিষ্ক, ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, সুষুমা কান্ড, ইত্যাদি কে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। দেহকে দৃড়তা প্রদান করে,দেহের ভার বহন করে এবং চলাফেরায় সাহায্য করে।
ইতিমধ্যেই আপনা একজন পূর্ণবয়স্ক মানবদেহের ২০৬ টি হাড়ের নাম ও কাজ সম্পর্কে জানলেন। আশা করি পোস্ট টি আপনাদের জন্য সহজলভ্য ও বোধগম্য ছিলো।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি পোস্ট টি থেকে আপনি অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছেন। পোস্ট টি হতে কোনো উপকার পেলে বা পোস্ট টি ভালো লাগলে পরিচিত দের সাথে সেয়ার করুন। আর আপনার কোনো সমস্যা বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। আর এমন পোস্ট পেতে অবশ্যই আমাদের গুগলে ফোলো করে রাখুন।
কেননা আমরা প্রতিনিয়ত এমন পোস্ট করে থাকি। যা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি তে ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের জন্য নির্ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের আর্টিকেলে যদি কোন প্রকার ভুল থাকে তবে তা কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। এর ফলে আমরা পরবর্তীতে সে ভুল সংশোধন করতে পারবো এবং আপনাদের নির্ভুল ও সঠিক তথ্য প্রদান করতে পারবো।
ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;
comment url