ঋণ ও দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তির জন্য ফাতিমা (রাঃ) কে নবীজির শিখানো দোয়া

আমাদের আজকের আলোচনা ঋণ ও দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তির দোয়া। দোয়াটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার সর্ব কনিষ্ঠ, আদরের দুলালি কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ) কে শিক্ষা দিয়েছিলেন। ঋণ ও দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি পেতে নবীজির তার কন্যাকে বলে দেওয়া দোয়াটি আপনারাও আমল করে ঋণ ও দারিদ্র্যতা দেখে মুক্তি পেতে পারেন। চলুন এবার দোয়াটি জেনে নেই।

দোয়াটি সম্পর্কে আবু হোরায়রা রা. বলেন

একবার ফাতিমা (রাঃ) নবীজির (সাঃ) কাছে একটি খাদেম চাওয়ার জন্য এলেন। তিনি তাকে বললেন, আমার কাছে এমন কিছু নেই যা তোমাকে দিতে পারি। তিনি ফিরে গেলেন। পরে নবিজি (সাঃ) তার কাছে গিয়ে বললেন, যা তুমি চেয়েছো, সেটিই কি তোমার কাছে অধিক প্রিয়, না যা তার চেয়ে উত্তম সেটি? 

আলি (রাঃ) স্ত্রীকে পরামর্শ দিলেন, বলো যা তার চেয়ে উত্তম সেটি। ফাতেমা (রাঃ) তাই বললেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বললেন, তুমি বলো,

اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَرَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ رَبَّنَا وَرَبَّ كُلِّ شَىْءٍ مُنْزِلَ التَّوْرَاةِ وَالإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنِ الْعَظِيمِ أَنْتَ الأَوَّلُ فَلَيْسَ قَبْلَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الآخِرُ فَلَيْسَ بَعْدَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الظَّاهِرُ فَلَيْسَ فَوْقَكَ شَىْءٌ وَأَنْتَ الْبَاطِنُ فَلَيْسَ دُونَكَ شَىْءٌ اقْضِ عَنَّا الدَّيْنَ وَأَغْنِنَا مِنَ الْفَقْرِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বিস-সামাওয়াতিস-সাবই ওয়া রাব্বিল আরশিল আযিম। রাব্বানা ওয়া রাব্বি কুল্লি শাইইন মুনাযযিলাত-তাওরাতি ওয়াল ইনজিলি ওয়াল কুরআনিল আযিম আনতাল আওয়ালু ফালাইসা কাবলাকা শাইউন ওয়া আনতাল আখিরু ফালাইসা বা’দাকা শাইউন ওয়া আনতাযযাহিরু ফা লাইসা ফাওকাকা শাইউন ওয়া আনতাল বাতিনু ফালাইসা দুনাকা শাইউন ইকজি আন্নাদ-দাইনা ওয়া আগনিনা মিনাল ফাকরি।

অর্থ: হে আল্লাহ, সাত আসমানের প্রতিপালক ও মহান আরশের রব, আমাদের রব ও প্রতিটি জিনিসের রব, তাওরাত, ইনজিল ও মহান কোরআন নাজিলকারী, তুমি আদি, তোমার পূর্বে কিছু নাই, তুমি অন্ত, তোমার পরেও কিছু নাই, তুমি প্রবল, বিজয়ী ও প্রকাশ্য, তোমার ওপরে কিছু নাই, তুমি গুপ্ত, তুমি ছাড়া আর কিছু নাই। তাই তুমি আমাদের ঋণ পরিশোধ করে দাও এবং আমাদেরকে দারিদ্র্য থেকে স্বাবলম্বী বানাও। (সুনানে ইবনে মাজা: ২/৩৮৩১)

হযরত ফাতিমা (রাঃ) কে তার পিতা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম সৎ উপদেশ দিয়েছেন, একই সাথে বিভিন্ন রকম আমল ও দোয়া শিখিয়েছেন। যা আমাদের সবার জন্য উপকারী। ঋণ ও দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি এবং স্বচ্ছলতার জন্য নবী (সাঃ) হযরত ফাতিমা (রাঃ) কে এটি দোয়া বলে দিয়েছিলেন।

প্রিয় নবীর বয়স যখন ৩৫ বছর অর্থাৎ নবীজির নবুয়ত প্রাপ্তির পাঁচ বছর পূর্বে হযরত ফাতিমা (রাঃ) এর জন্ম হয়। হযরত ফাতিমা (রাঃ) নবী (সাঃ) এর চার কন্যার মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ কন্যা। নারীদের মধ্যে যত নারী জান্নাতে যাবেন, সবার নেত্রী হবেন হযরত ফাতেমা যাহরা।

রাসুল (সাঃ) এর কাছে যখনই তার আদরের দুলালি ফাতিমা (রাঃ) আসতেন তখনই রাসূল (সাঃ) তার মাথায় অভ্যর্থনার চুমো দিতেন। নবীজির ইন্তেকালের পর ফাতিমা (রাঃ) মাত্র ৬ মাস বেঁচে ছিলেন। পিতা হারাবার শোকে এ সময় তিনি অনেক ভেঙে পড়েছিলেন। 

পিতা হারাবার শোকে তিনি এতটাই কাতর হয়ে গেছিলেন যে, তার পিতা ইন্তেকালের পর যে ৬ মাস তিনি জীবিত ছিলেন এর মধ্যে তাকে একবারও হাসতে দেখা যায়নি। ২য় হিজরিতে বদরের যুদ্ধের পর আলী (রাঃ) এর সাথে ফাতিমা (রাঃ) এর বিবাহ হয়। 

তাদের বিয়ের সময় যে মোহরানা ধার্য করা হয়েছিলো সেই মোহরানাকে ইসলামের ইতিহাসে মোহরে ফাতেমি বলা হয়। মুসলিম পরিবারের মেয়েদের বিয়েতে এই মোহরানা ধার্য করার প্রচলন রয়েছে। যে বিয়েতে খরচ যত কম সে বিয়ে তত বেশি বরকতময়। 

এ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সর্বাধিক বরকতপূর্ণ বিয়ে হচ্ছে, যার খরচ যত সহজ ও স্বাভাবিক হয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৪৫২৯)

আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে দোয়াটির একজন বর্ণনাকারী আবু সালেহ (রহ.) তার ছাত্রদের নির্দেশ দিতেন ঘুমানোর আগে ডান কাতে শুয়ে দোয়াটি পড়তে। (সহিহ মুসলিম: ৬৬৪১)

ঋণ ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে এবং সচ্ছলতা অর্জনের জন্য নবী (সাঃ) এর শিখানো এ দোয়াটি আমরা সকলেই প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে আমল করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সকলকে নেক আমল করার তৌফিক দান করুন (আমিন)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ব্লগারের জিহাদের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন;

comment url